সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গণমাধ্যম যেভাবে অদৃশ্য প্রভাবমুক্ত গণমাধ্যম হবে

শেখ হাসিনার স্বৈরতান্ত্রিক শাসন অবসানের ছাত্র–জনতার আন্দোলনে অন্তত তিনজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন বলে  নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহতের সংখ্যা অনেক। তবে নিশ্চিত করে কোনো সংখ্যা কোনো কর্তৃপক্ষীয় সূত্র বা সংগঠন এখনও জানাতে পারেনি। সাংবাদিকেরা প্রধানত: পুলিশ ও সরকারসমর্থক অস্ত্রধারীদের হামলার শিকার হয়েছেন। অন্দোলনের সব শহীদ ও আহতদের মতোই সাংবাদিক হত্যা ও জখমের ঘটনাগুলো নিন্দনীয় এবং এগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হওয়া প্রয়োজন। হতাহতদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও প্রয়োজন। 


তবে দু:খজনক অধ্যায় হলো, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা আন্দোলনকারীদের ক্ষোভের লক্ষ্য হয়েছেন। কয়েকটি টিভি চ্যানেল ও পত্রিকার অফিস আক্রান্ত হয়েছে, তাদের সম্প্রচার ও প্রকাশনা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। খুলনায় প্রেসক্লাব পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামসহ আরও কয়েকটি জায়গায় প্রেসক্লাবে হামলা ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা হয়েছে। এসব ঘটনা কেন ঘটলো, গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীরা কেন এসব জায়গা রোষের আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো, সেই আত্মজিজ্ঞাসা খুবই জরুরি। পেশাদার ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় ঝুঁকি আছে, এ কথা সত্য। তবে সেই ঝুঁকির কারণ ক্ষমতাধরদের জবাবদিহি আদায়ের চেষ্টার কারণে ক্ষমতার হুমকি। কিন্তু নিষ্ঠাবান সাংবাদিকতা তো কখনোই জনরোষের কারণ হওয়ার কথা নয়।


সরকারের নিপীড়ণ–নিগ্রহ ও ভীতি প্রদর্শনের কারণে সত্য প্রকাশ যে কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়ছিল, তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। ভয় এতটাই পেয়ে বসেছিল যে সম্পাদকেরা কয়েক বছর আগেই অকপটে স্বীকার করেছিলেন, তাঁরা যা লিখতে চান, তা লিখতে পারছেন না। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, এটিই পূর্ণাঙ্গ চিত্র নয়। সংবাদমাধ্যমের একটি বড় অংশ স্বৈরতন্ত্রের সহযোগী হয়েছিল, স্বৈরাচারকে ভিন্নমত দমনে উৎসাহ যুগিয়েছিল, রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপবাদ ছড়িয়ে তাদের হয়রানির জন্য উস্কানি দিয়েছিল। 


বিপরীতে, রাজনৈতিক নিপীড়ণ ও মানবাধিকারের গুরুতর লংঘনের ঘটনা, শাসকচক্রের দুর্নীতি, বেআইনিভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পদক্ষেপগুলো হয় এড়িয়ে গেছে, নয়তো তা যথাযথভাবে তুলে ধরার দায়িত্ব পালন করেনি। এখন গুমের শিকার ব্যক্তিদের আয়নাঘরে নির্যাতনের কাহিনী , কিম্বা মহাদুর্নীতির যেসব ঘটনা বড় করে সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে, সেগুলো অধকিাংশ সংবাদমাধ্যমই প্রকাশ করেনি। 


কেন করেনি, তার উত্তর অনেক, এককথায় বলা সম্ভব নয়। এর পেছনে যেমন আছে দলীয় সমর্তকদের যথেচ্ছভাবে টিভি–রেডিও ও সংবাদপত্রের অনুমতি দেওয়া, তেমনি বিদ্যমান গণমাধ্যমের মালিকদের ব্যবসায়িক স্বার্ধ বা সুবিধা আদায়ের জন্য নিজেদের মালিকানাধীন টিভি বা পত্রিকাকে ব্যবহার করা, মালিক ও কিছু সাংবাদিকের রাজনৈতিক অভিলাষ, আর্থিক ও বৈষয়িক সুবিধার জন্য আপস এবং রাজনৈতিক আনুগত্যের মতো বিষয়গুলো। 


আর্থিক সামর্থ্য ও পেশাগত দক্ষতা ও সক্ষমতা বিবেচনায় না নিয়েই বিপুল সংখ্যায় অনুমতি ( লাইসেন্স) দিয়ে গণমাধ্যমের সংখ্যাধিক্যকে দেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রমাণ হিসাবে তুলে ধরার কৌশল নিয়েছিল সরকার। ফলে গণমাধ্যম জগতে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। 


গণমাধ্যমের মালিকানা ও পরিচালনার যে মডেল বর্তমানে চালু আছে, তা বহাল থাকলে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সাময়িক স্বস্তিদায়ক পরিবর্তনে এরা অনেকেই স্বত:প্রণোদিত হয়ে উৎসাহ দেখালেও, তা স্থায়ী হবে না এবং আবারও তা আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। তাই গণমাধ্যমের মৌলিক চরিত্রের পরিবর্তন প্রয়োজন এবং সেই লক্ষ্যে জরুরি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

সংস্কারের লক্ষ্য কী হবে?

১. গণমাধ্যমকে সবার আগে গণমাধ্যম হতে হবে, যার অর্থ হচ্ছে, এগুলো পরিচালনার মূল লক্ষ্য হতে হবে জনস্বার্থ (পাবলিক ইন্টারেস্ট)। ব্যক্তি স্বার্থ, কোম্পানির স্বার্থ, ব্যবসায়িক স্বার্থ, গোষ্ঠীগত স্বার্থ ও রাজনৈতিক স্বার্থে কোনো গণমাধ্যম চলতে পারে না। এমনকি, রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমেরও মূল পরিচালন নীতি হবে জনস্বার্থ, কথিত সরকারের (দল বা ব্যক্তি) স্বার্থ নয়।

২. গণমাধ্যমে বহুত্ব (প্লুরালিটি) নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সব মত ও বৈচিত্রপূর্ণ চিন্তার প্রতিফলন ঘটে।

৩. একচেটিয়াতন্ত্রের সুযোগ দূর করতে হবে। একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে একাধিক মাধ্যম (পত্রিকা, টেলিভিশন ও রেডিও) এবং একই মাধ্যমের একাধিক প্রতিষ্ঠান (একাধিক চ্যানেল) অবাধ প্রতিযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করে। এই বাধা দূর করে গণমাধ্যমের পরিবেশকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ করতে হবে। গণমাধ্যমের প্রতিযোগিতা গণতন্ত্রকে সমৃদ্ধ করে। বিপরীতে একচেটিয়া কেন্দ্রীকরণ গণতান্ত্রিক বিতর্ক ও পরিবেশে প্রতিকূলতা তৈরি করে।

৪. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান – বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব থেকে এগুলোকে যেমন মুক্ত রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, ঠিক তেমনই কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি মালিকানাধীন টিভি–রেডিও ও সংবাদপত্রকে মালিকের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক স্বার্থের প্রভাব থেকে মুক্ত করার একটা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় মালিকপক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ এ ক্ষেত্রে অন্যতম বড় বাধা। পেশাদার সাংবাদিকদের সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান রুপে স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং পেশাদার নির্বাহীদের ব্যবসা পরিচালনের দায়িত্ব দেওয়া হলে মালিকপক্ষের অনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব বন্ধ করা সম্ভব। মালিকপক্ষকে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান পরিচালনা থেকে দূরত্ব (আর্মস লেংথ ডিসট্যান্স) বজায় রাখতে হবে। 

৫. সম্পাদকীয় নীতির কেন্দ্রে থাকতে হবে বস্তুনিষ্ঠতা (অবজেক্টিভ/ফাক্চুয়াল) এবং সত্যনিষ্ঠা (ট্রুথফুল)। 

৬. মালিকানাসূত্রে টিভি–রেডিও বা পত্রিকায় নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ও কর্মকান্ড কিম্বা সহযোগী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবার প্রচারের ক্ষেত্রে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। একতরফা প্রচার যেমন চলবে না, তেমনই মালিকানার বিষয়ে স্বচ্ছ্বতা নিশ্চিতকারী ঘোষণা থাকতে হবে। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে দেখা গেছে, মালিকানার কারণে একটি প্রতিষ্ঠান একজন প্রার্থীর পক্ষে নগ্ন পক্ষপাত বা একচেটিয়া প্রচারণার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, যা কার্যত রাজনৈতিক প্রচারপত্রের সমতুল্য। 

আবার বিটুমিন বা সিমেন্ট ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন গণমাধ্যম ওই শিল্পের সমস্যা সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা মতামতে তাদের নিজেদের স্বার্থের কথা ঘোষণা করছে না। ফলে, নিজস্ব স্বার্থের বয়ান স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মতামত মনে করে পাঠক বিভ্রান্ত হচ্ছে। ওয়াশিংটন পোস্টের সত্ত্বাধিকারা জেফ বেজোসের অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান – যেমন আমাজনের স্বার্থরক্ষায় কোনো প্রতিবেদন প্রকাশে স্বার্থের ঘোষণা না থাকার কথা যেমন অকল্পনীয়, সেরকম ব্যবস্থা আমাদের দেশেও প্রয়োজন। 

৭. টিভি–রেডিও ও সংবাদপত্রের তদারকিব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। রেডিও–টিভির লাইসেন্স প্রদানে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিটিআরসিকে যেভাবে সরকারের ডাকঘরে পরিণত করা হয়েছে, তার অবসান ঘটাতে হবে। বিটিআরসিকে পুরোপুরি ঢেলে সাজাতে হবে এবং স্বাধীন ও অভিজ্ঞ পেশাদারদের মতামতই লাইসেন্স প্রদানের মূল ভিত্তি হবে। লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ হলে সেই অভিযোগের তদন্ত ও নিষ্পত্তি কিম্বা শাস্তি নির্ধারণে প্রতিষ্ঠানটি পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। 

আর সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে এই শিল্পে স্বনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাকে অন্যান্য উন্নত গণতান্ত্রিক দেশের অনুকরণে পুর্নগঠন করতে হবে। সরকারি অর্থায়নের কারণে বর্তমান প্রেস কাউন্সিল সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এটির পরিবর্তন প্রয়োজন এবং সংবাদপত্র শিল্পের সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকিতে তাদের সরকারি প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করতে হবে।

সংস্কার বাস্তবায়নে সম্ভাব্য বাধা ও তার প্রতিকার কী?

১. বর্তমানের বিদ্যমান আইনে সংশোধনী প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা আইন এবং বেসরকারি টিভি–রেডিওর লাইসেন্সিং নীতি ও বিধিমালায় সংশোধন।

২. একাধিক গণমাধ্যমের মালিকানা আছে, এমন মালিকদের ব্যবসা পুর্নগঠনে উৎসাহিত করা। সরকার কোনো গণমাধ্যম বন্ধ করবে না। কিন্তু একাধিক টিভি চ্যানেল বা একাধিক মাধ্যমের কেন্দ্রীকরণের ইতি টানার জন্য বিকল্প অনুসন্ধান করতে হবে। এরা কেউ স্বেচ্ছায় হয়তো কোনো প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দিতে সম্মত হবে না। একই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে একাধিক দৈনিক পত্রিকা, একাধিক টিভি চ্যানেল, রেডিও এবং অনলাইন পোর্টালের নিয়ন্ত্রণের মতো  এ ধরনের কেন্দ্রীকরণ কোনো স্বাভাবিক রীতি নয়। 

একই মিডিয়া কোম্পানির অধীনে একাধিক টিভি চ্যানেল কিম্বা টিভি চ্যানেল ও পত্রিকার মতো দ্বৈত মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ গণমাধ্যমের বাজারে ভারসাম্য নষ্টের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা ক্ষুণ্ণ করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠান মুনাফা করে না, কিন্তু মালিকপক্ষের অন্য ব্যবসা থেকে দেওয়া ভর্তুকিতে চলে। ফলে অনৈতিক ব্যবসায়িক সুবিধা গ্রহণ তখন মূখ্য হয়ে দাঁড়ায়। যেসব প্রতিষ্ঠান লাভজনকভাবে চলে না, সেগুলোর একীভূতকরণ বা অন্য আগ্রহীদের কাছে বিক্রি করে দিয়ে তাকে লাভজনক ও টেকসই করার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।  

৩. গণমাধ্যম নীতিমালা প্রতিপালনে যেসব প্রতিষ্ঠান সক্ষম নয়, তাদের নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়ে সেই সক্ষমতা অর্জনের সুযোগ দিয়ে সৃজনশীল সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব। শুধুমাত্র ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে কোনো গণমাধ্যমের অনুমতির নবায়ন হতে পারে না। বিদ্যমান সব প্রতিষ্ঠানকে এসব নীতিমালা অনুসরণের অঙ্গীকার ও বাস্তবায়নের প্রমাণ দিয়ে অপেশাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর অবসায়নের ব্যবস্থা করার কথাও ভাবা প্রয়োজন। 

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক পত্রিকা, কিম্বা কর্পোরেট স্বার্থে কর্পোরেট বুলেটিন প্রকাশের সুযোগ অবারিত রেখে মূলধারার গণমাধ্যমকে গণমাধ্যম হয়ে উঠতে দেওয়া প্রয়োজন। কেননা গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা সহসা ফুরাবে না এবং এটি গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। যারা সোশ্যাল মিডিয়াকে সংবাদমাধ্যমের বিকল্প গণ্য করতে চান, তাঁরা গুজব, ভুয়া বা অপতথ্য ছড়ানো বন্ধে এসব মাধ্যমের ব্যর্থতা দেখেছেন এবং দেখছেন। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরির যে অপচেষ্টা চলছে, তা নিশ্চয়ই কারও নজর এড়ায়নি। 

আশার কথা, অংশীজনদের তরফ থেকে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। সাংবাদিকদের একটি অংশ তাঁদের মূল্যায়ন ও সুপারিশমালা তুলে ধরেছেন। আশা করি সরকার দ্রুতই উদ্যোগী হয়ে গণমাধ্যমের সব অংশীজনের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সংস্কারে হাত দেবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস নির্বাচনের আগে যে কটি বিষয়ে সংস্কারের কথা বলেছেন, গণমাধ্যমও তার একটি। এখন বাস্তব পদেক্ষেপ দেখার অপেক্ষা।  সামগ্রিকভাবে দেশের গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা গেছে, সেখান থেকে সংবাদমাধ্যমকে এখন আস্থা ফিরে পেতে দীর্ঘ সংগ্রামে নামতে হবে।

(২১ আগস্ট, ২০২৪–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...