সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও অবাধ হচ্ছে কি?

দেশের ভেতরে ও বাইরে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে, আর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। উদ্বেগ প্রধানত দুটি। প্রথমত, নির্বাচনের আগে ও পরে শান্তি বজায় থাকবে তো? দ্বিতীয়ত, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে সবাই থাকবে তো? প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হলে নির্বাচন কি গ্রহণযোগ্য হবে? কারও কারও ধারণা, ক্ষমতাসীন দল এমন নির্বাচন চায় না, যেখানে ক্ষমতা হারানোর ন্যূনতম ঝুঁকি আছে। সুতরাং, প্রতিদ্বন্দ্বীদের সমসুবিধার ভিত্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। উপরন্তু, ভোটের দিনে সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচনের কৌশল অনুসরণে ক্ষমতাসীন দল সফল হলে বিরোধীদের সাময়িক প্রতিবাদ সামাল দেওয়া সরকারের পক্ষে খুব একটা কঠিন হবে না।
নির্বাচনে তাদের আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার চেষ্টায় অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগ ও দমন–পীড়নের কারণে বিরোধীরা হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে। তবে বিরোধীরা মোটামুটি একটা অবস্থান তৈরি করতে না পারলে নির্বাচনের পর তাদের ওপর মামলা-হামলা আরও বাড়বে এবং দলটি অস্তিত্বের ঝুঁকিতে পড়বে। আরেকটি মত হচ্ছে বিএনপির সঙ্গে উদারপন্থী ও আওয়ামী লীগের সাবেক মিত্র বা ঘনিষ্ঠদের বৃহত্তর জোট যদি ভোটারদের মধ্যে আবেদন সৃষ্টি করে ভোটকেন্দ্রে হাজির করাতে সক্ষম হয় এবং ভোটের ফলাফল বদলে দেওয়ার চেষ্টা ঠেকাতে পারে, তাহলে তাদের বিজয় অসম্ভব নয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তাদের প্রতিশোধপরায়ণ হওয়ার বিপদের কথা অন্য অনেকের মতো ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মুখেও শোনা গেছে।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন নির্বাচন একটা বাধ্যবাধকতার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া অন্য কিছু হবে না। বিএনপির রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পূর্বশর্তগুলোর একটিও পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল, তখনো বোঝা যাচ্ছিল না যে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন এখনো সম্ভব। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ১৫ তারিখে যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়, তাতে উত্থাপিত একটি প্রস্তাবের খসড়া সূত্রে স্পষ্ট হয়েছে যে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না—এমন ধারণাই ইউরোপীয় কমিশনের পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্তের কারণ। সাম্প্রতিক এসব আলোচনায় দেখা যাচ্ছে, অনেকের আশঙ্কা নির্বাচন অবাধ হবে না, সরকারবিরোধীদের নানাভাবে বঞ্চিত করা হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা ১৩ নভেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বলেছেন, ‘নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখবেন। প্রার্থী ও দলকে প্রতিপক্ষ হিসেবে নেবেন না। আইনের মধ্যে থেকে তাঁদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলবেন এবং সহযোগিতা করবেন। আপনাদের কোনো কাজ যেন ভোটারদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি না করে।’ কথাগুলো একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য খুবই জরুরি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সিইসি তাঁর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের যে নীতি মেনে চলতে বলছেন, সেই নীতি নিজেরা কতটুকু মানছেন?
নির্বাচন নিয়ে যখন দেশে-বিদেশে সবার মধ্যে এ ধরনের শঙ্কা, তখন কার্যত কমিশন এবং সরকারের ওপর নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করানোর চাপ বৃদ্ধি পাওয়াই স্বাভাবিক। সরকারের ওপর যে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে, তার জন্য অবশ্য দায়টা পুরোপুরি সরকারের ওপরই বর্তায়। প্রথমত, প্রায় ২৭ বছর পর এই প্রথম একটি রাজনৈতিক সরকারের অধীনে বিরোধী দল কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। দ্বিতীয়ত, আগের নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক না হওয়ার কারণে একতরফা হওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে সরকারের আস্থা কতটা আছে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তৃতীয়ত, গত মেয়াদের গণতান্ত্রিক বৈধতার ঘাটতির কারণে সাধারণের মধ্যে ধারণা জন্মেছে যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়তে প্রস্তুত নয়। চতুর্থত, সংলাপে বিরোধীদের দাবিগুলোর একটিও না মানায় সমসুবিধার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরকারের অনাগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। পঞ্চমত, মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে 
দেশ-বিদেশের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা উপেক্ষা করায় সরকারের মানসিকতায় গণতান্ত্রিক উপাদানের ঘাটতি প্রকটভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এই বাস্তবতায় ক্ষমতাসীন দল বিজয়ী হলে সেই সাফল্য নিবিড় নিরীক্ষার মুখে পড়তে বাধ্য। আর বিজয়ের মাত্রা যদি সামান্য সন্দেহের জন্ম দেয়, তাহলে পুরো নির্বাচনপ্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
পাশাপাশি নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের প্রস্তুতি, অনভিজ্ঞতা, অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি এবং সমসুযোগ সৃষ্টিতে ব্যর্থতা প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আস্থা তৈরির বদলে সংশয়ের জন্ম দিচ্ছে। যেসব ক্ষেত্রে এসব অসংগতি চোখে পড়ছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:
১. রিটার্নিং কর্মকর্তাদের জন্য যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তাতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত পদে থেকে নির্বাচন করা যাবে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর নেই।
২. নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিটি গঠন হয়নি।
৩. নির্বাচন কর্মকর্তাদের বিষয়ে পুলিশ যে অননুমোদিত এবং সম্ভাব্য বেআইনি অনুসন্ধান চালিয়েছে, সে বিষয়ে কমিশনের কোনো ভূমিকা নেই কেন? সরকারের সাজানো প্রশাসন এবং পুলিশ বাহিনীর পদায়নের প্রশ্নেও বিরোধীদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিরসনে কমিশনের কোনো উদ্যোগ এখনো চোখে পড়ে না।
৪. গণমাধ্যমের জন্য কোনো নীতিমালা বা নির্দেশনা দেওয়ার কোনো প্রস্তুতি বা উদ্যোগ কমিশনের আছে বলে মনে হয় না। বরং একজন কমিশনারের বক্তব্যে ইঙ্গিত মেলে যে বেসরকারি টিভি চ্যানেল বা সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন হিসেবে যে–কেউ বা কোনো প্রতিষ্ঠান যেকোনো দল বা প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে পারবে। অথচ একমাত্র আমেরিকা ছাড়া দুনিয়ার অধিকাংশ দেশেই এ ধরনের বিজ্ঞাপন বা প্রচারের সুযোগ নেই। ব্রিটেনসহ অধিকাংশ দেশেই তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর খবর ও বিজ্ঞাপন প্রচারে ভারসাম্য বজায় রাখা বাধ্যতামূলক।
৫. জোটের প্রতীক বরাদ্দ না পেলে জোট শরিক কোনো দলের প্রার্থী বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন নাকি তাঁর মনোনয়ন বাতিল হবে? জোটগুলোর কাছে জোটের দলগুলো কোন কোন প্রতীক ব্যবহার করবে, তা জানতে চাওয়ার আগেই এ বিষয়ে অবস্থানটি স্পষ্ট করা উচিত ছিল।
৬. বিরোধীদের কেন্দ্রীয় দপ্তরের সামনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ও সমর্থকদের ঘিরে যে অনাকাঙ্ক্ষিত অঘটন ঘটে গেছে, তাতে কমিশনের অনভিজ্ঞতা ও অসামর্থ্য যে কিছুটা হলেও দায়ী, সে কথা তাদের বক্তব্যেই প্রতিফলিত হয়েছে। বিএনপির প্রার্থী বাছাইয়ে দলটির নির্বাসিত ও দণ্ডপ্রাপ্ত নেতার ভূমিকা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন এ বিষয়ে আইনগতভাবে তার অক্ষমতার কথা জানানোর পর ইন্টারনেটে প্রতিবন্ধক সৃষ্টির (স্কাইপে অ্যাপস অচল করা) অঘোষিত ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপকে দলীয় সরকারের যথেচ্ছাচার হিসেবে বিবেচনা করা হলে তা কি খুব অযৌক্তিক হবে? ক্ষমতার এ ধরনের অপব্যবহার বন্ধে কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট নয়।
৭. এসব অতীব জরুরি বিষয়ে যখন কমিশনের নজর দেওয়ার কথা, তখনো তারা ইভিএমের প্রস্তুতিকে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে মেলা আয়োজনে সময় ও সম্পদের অপচয় করছে। অথচ ইঙ্গিত মিলছে যে ইভিএম ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করবে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত দুদিনের ইভিএম মেলায় অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধিত ব্যক্তিদের অনুপস্থিতির হার দেখলেই তার প্রমাণ মিলবে। আবার নির্বাচনের সময় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীকে অতীতের মতো একই মাত্রায় কাজে লাগাতে কমিশন অনাগ্রহী হলেও ইভিএম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তির অভাব মেটাতে তারা সেনাবাহিনীর দ্বারস্থ হয়েছে। কাগজে রেকর্ড রাখার ব্যবস্থা ছাড়া এই ইভিএম যে সমূহ বিপত্তির জন্ম দিতে পারে, সে কথা অস্বীকারের উপায় নেই। সবচেয়ে বড় বিপত্তি দেখা দেবে ভোট পুনর্গণনার প্রশ্ন উঠলে। কাগজে রেকর্ড ছাড়া এর কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধান নেই।
সুতরাং, কমিশনের উচিত হবে অবিলম্বে এই ঝুঁকির পথ পরিহার করে অত্যাবশ্যকীয় কাজগুলোয় মনোযোগী হওয়া। না হলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও তা অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হবে—এমনটি বলা যাবে না। বরং তাদের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের দায় বহন করতে হবে। কোনো দেশেই নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হয় না—কবিতা খানমের এই অজুহাতে পার পাওয়া যাবে না।
(২১ নভেম্বর, ২০১৮‘র প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখকের নিবন্ধ।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...