সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ: অক্ষমতা ঢাকতেই কি মূর্তির প্রয়োজন?

পর্যবেক্ষণ করতে হবে মূর্তির মতো, নির্বাচন কমিশন সচিবের এ উক্তিতে অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। অনেকে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করছেন। কিন্তু আশঙ্কার কথা হচ্ছে, এই কথাটা শেষ পর্যন্ত না পুরো নির্বাচনে আমাদের সবার ওপরেই প্রযোজ্য হয়ে যায়। ভোট হবে এমনই, যেখানে আমাদের সবাইকে মূর্তির মতোই অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে থেকে তা প্রত্যক্ষ করতে হবে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ খুব বেশি দিনের ঘটনা নয়। ১৯৯১-এর নির্বাচনেও পর্যবেক্ষণের কথা কেউ শোনেনি। আমাদের দেশে এর শুরু গত শতাব্দীর শেষ দশকে, ১৯৯৫-এর জানুয়ারিতে ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স (ফেমা) গঠন এবং তার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণও খুব বেশি দিনের কথা নয়। আগে সাধারণত কূটনীতিকেরাই তাঁদের মূল্যায়ন নিজ দেশের সরকারগুলোকে জানিয়ে দিতেন।
আন্তর্জাতিক পরিসরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের শুরু ইউরোপে ১৯৯০-এ প্যারিস চার্টারের মাধ্যমে। এরপর জাতিসংঘ ২০০৫ সালের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নীতিমালা নেয়। ডিক্লারেশন অব প্রিন্সিপ্যালস ফর ইন্টারন্যাশনাল ইলেকশন অবজারভেশন অ্যান্ড কোড অব কনডাক্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইলেকশন অবজারভারস নামের এই নীতিমালাই হচ্ছে বিশ্বের স্বীকৃত মানদণ্ড ও নীতিমালা।
আমাদের নির্বাচন কমিশন স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের জন্য ২০১৭ সালে একটি নীতিমালা ঘোষণা করে এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য আলাদা আরেকটি নীতিমালা ঘোষণা করে ২০১৮-তে। এই দুই নীতিমালার মধ্যে কিছু বিষয়ে মিল আছে, অমিলও আছে। তবে কোনোটিতেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হিসেবে স্বীকৃত জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নীতিমালার উল্লেখ নেই। সেটি আমাদের বর্তমান কমিশনের আমলারা পড়ে দেখেছেন কি না সন্দেহ। অবশ্য কমিশনের সচিব পদটিতে যেভাবে সরকারের আস্থাভাজনদের পদায়নের ঐতিহ্য তৈরি হয়েছে, তাতে নির্বাচনের আইনকানুন বা বৈশ্বিক মানদণ্ডগুলোর দিকে তাঁদের নজর দেওয়ার প্রয়োজনই পড়ে না।
নির্বাচন কমিশনের সচিব ‘পর্যবেক্ষণ করতে হবে মূর্তির মতো’ মন্তব্যটি করেছেন স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে। হয়তো দেশীয় পর্যবেক্ষকেরাই তাঁর বক্তব্যের লক্ষ্য ছিলেন। তবু আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য গৃহীত জাতিসংঘ নীতিমালার ১৬ নম্বর দফার বক্তব্যটি দেশীয় পর্যবেক্ষকদের অধিকার নির্ধারণেও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নাগরিকদের তাঁদের দেশের সরকারি এবং জনশাসনবিষয়ক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ও যুক্ত হওয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অধিকার রয়েছে। এসব অধিকার নির্বাচন এবং সেই সম্পর্কিত প্রক্রিয়াগুলো পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত বেসরকারি সংগঠনগুলোর মাধ্যমে প্রয়োগ করা যেতে পারে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে ভোটকেন্দ্র, গণনাকেন্দ্র ও অন্যান্য নির্বাচনবিষয়ক কেন্দ্রের ভেতরে ইলেকট্রনিক এবং অন্যান্য নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির কার্যক্রম, ব্যালট এবং অন্যান্য স্পর্শকাতর সামগ্রীর পরিবহন পর্যবেক্ষণও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। দেশীয় নির্দলীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং পর্যবেক্ষণ সংগঠনগুলো অন্যায় নিষেধাজ্ঞা বা হস্তক্ষেপ ছাড়া এবং কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার না হয়ে তাঁদের কাজ করতে পেরেছেন কি না, সেই রিপোর্টও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মূল্যায়ন করা উচিত। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উচিত দেশীয় নির্দলীয় পর্যবেক্ষকদের অবাধে এবং অন্যায় নিষেধাজ্ঞা ছাড়া পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিতে সুপারিশ করা।’
পর্যবেক্ষকদের জন্য কমিশনের প্রকাশিত নীতিমালা এবং সংবাদমাধ্যমে পাওয়া সচিবের বক্তব্যের বিবরণ থেকে ধারণা হয়, কমিশনের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ধারণাটি খণ্ডিত। তাদের এসব নির্দেশনা মূলত ভোটের দিন এবং ভোটকেন্দ্রকেন্দ্রিক। কিন্তু ভোটের দিন একটি অংশমাত্র। নির্বাচন-পূর্ব পরিবেশ, নির্বাচনের প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক বিশ্বাস, ধর্ম-বর্ণ-গোত্রনির্বিশেষে সবার অবাধে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ, সরকার বা নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি বা হস্তক্ষেপমুক্ত প্রচার, সভা-সমাবেশ আয়োজনের ক্ষেত্রে সবার সমসুযোগ, ভোটের অধিকার, গণমাধ্যমের ভূমিকা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণও পর্যবেক্ষকদের দায়িত্বের অংশ। পর্যবেক্ষকেরা ভোটের আগেও সময়ে সময়ে এসব বিষয়ে তাঁদের মতামত এবং সুপারিশ যেমন কমিশনে পেশ করতে পারেন, তেমনই জনসমক্ষে তুলে ধরতে পারেন। কমিশন এগুলো পুরোপুরি উপেক্ষা করেছে।
দেশীয় পর্যবেক্ষকদের জন্য ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন বহনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ওপর সে নির্দেশনা নেই। একাধিক নির্দেশনায় দেশীয় পর্যবেক্ষকদের কাজের ক্ষেত্র সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে তাঁদের যাওয়ার সুযোগ নেই। আবার তাঁরা একই ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণের পুরোটা সময় থাকতে পারবেন না। ভোটকেন্দ্রেও তাঁরা দর্শকের ভূমিকার বাইরে কিছু করতে পারবেন না। কোনো অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলার ছবিও তুলতে পারবেন না। স্পষ্টতই এসব পর্যবেক্ষকের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ ও অধিকারকে মারাত্মকভাবে সংকুচিত করবে। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) ১২ অক্টোবর প্রকাশিত প্রাক্-নির্বাচন মূল্যায়নে বলেছে যে কমিশনের অনেক বিধান পর্যবেক্ষকের অধিকারের ওপর অন্যায় নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতির পরিপন্থী।
কমিশন অবশ্য এনডিআইয়ের প্রতিবেদন ও সুপারিশকে বিবেচনায় নিয়েছে বলে মনে হয় না। এনডিআই বলেছে, বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে তাদের কাছে উদ্বেগ জানানো হয়েছে যে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যবেক্ষকদের তালিকা চেয়েছে এবং পর্যবেক্ষকেরা আইন প্রয়োগকারীদের কাছ থেকে টেলিফোনে হুমকি পেয়েছেন। নির্বাচন কর্মকর্তাদের তালিকা ধরে পুলিশের অনুসন্ধান চালানোর খবর স্মরণ করলে পর্যবেক্ষকদের উদ্বেগকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের লক্ষ্য নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি করা নয়। বাংলাদেশে তার নজিরও নেই। ভোট গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হওয়ার মতো কিছু করা পর্যবেক্ষণের মৌলিক নীতির পরিপন্থী। পর্যবেক্ষকেরা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর বাইরে বিচ্ছিন্নভাবে মন্তব্য করতে পারেন না, করেন না। কমিশনে প্রতিবেদন পেশ করাই তাঁদের একমাত্র কাজ নয়। কমিশনে দেওয়া প্রতিবেদনের মূল্যায়ন তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই গণমাধ্যমে প্রকাশ করবেন। ভোট গ্রহণ শেষে তার একটি প্রাথমিক মূল্যায়ন এবং পরে চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রকাশের রীতিও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কমিশন তা নিষিদ্ধ করতে পারে না।
কমিশনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে যে তারা নিজেদের ঘোষিত নীতিমালা নিজেরাই অনুসরণ করছে না। নীতিমালায় আছে, নিবন্ধিত পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করতে হলে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার অভিযোগ করেছে যে তাদের সে সুযোগ না দিয়ে এনজিও অধিদপ্তরে নিবন্ধন না থাকার অজুহাতে পর্যবেক্ষকের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এনজিও অধিদপ্তরে অধিকারের নিবন্ধন নবায়নের আবেদন রাজনৈতিক কারণে অনিষ্পন্ন থাকার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আপত্তি জানানোয় কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা তাদের স্বাধীন ভূমিকার পরিচায়ক নয়।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অংশগ্রহণের বিষয়টিতে অবশ্য স্বাগতিক দেশ হিসেবে আমাদের সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের আগ্রহই প্রধান। কমিশন এবং পররাষ্ট্রসচিবের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে ১৮ নভেম্বর। অথচ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের জাতিসংঘ নীতিমালা অনুযায়ী প্রথম শর্তই হচ্ছে নির্বাচন আয়োজক দেশের আমন্ত্রণ। সেই আমন্ত্রণ কাদের, কবে জানানো হয়েছে, সে বিষয়ে কিছুই প্রকাশ করা হয়নি। জাতিসংঘ নীতিমালায় বর্ণিত ডজনখানেকের বেশি শর্তপূরণে স্বাগতিক দেশ রাজি না হলে কোনো বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা পর্যবেক্ষণে যান না। এসব শর্তের মধ্যে তাঁদের স্বাধীনভাবে কাজ করার অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
জাতিসংঘ নীতিমালায় স্পষ্টতই বলা আছে, কোনো অগণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেওয়ার ধারণা তৈরি করতে পারে—এমন কোনো পর্যবেক্ষণ মিশনে কোনো সংস্থারই অংশগ্রহণ করা উচিত নয়। ২০১৪-এর নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণও সেটিই ছিল। যদিও রাজনৈতিক বিবেচনায় কিছু ভারতীয় পর্যবেক্ষক সেবার হাজির ছিলেন। আগামী নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক না পাঠানোর বিষয়ে প্রস্তুতির অভাবের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বিতর্কে আমরা জেনেছি, এই সিদ্ধান্তের অন্যতম কারণ নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না হওয়ার ধারণা। কমনওয়েলথ এবং অন্য কোনো আন্তর্জাতিক জোট বা সংস্থার পর্যবেক্ষক পাঠানোর সম্ভাবনাও সময়ক্ষেপণের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষীণ হচ্ছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হওয়ার যেসব আলামত দেখা যাচ্ছে, সেই পটভূমিতে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে সরকার এবং কমিশন কি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের দূরে রাখার কৌশল নিচ্ছে? অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে অক্ষমতা আড়াল করা ছাড়া মূর্তির প্রয়োজন হবে কেন?
(২৩ নভেম্বর, ২০১৮‘র প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখকের বিশ্লেষণ।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...