সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাজনীতিমুক্ত এক বছর


টানা তৃতীয়বারের মত ক্ষমতা ধরে রাখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন সরকারের একবছর র্পূণ হয়েছে। সরকারটি নতুন, কেননা, ৪৭ সদস্যের মন্ত্রীসভায় দুই-তৃতীয়াংশের বেশিই প্রথমবারের মত মন্ত্রণালয় পরিচালনার দায়িত্ব পান। মন্ত্রণালয় পরিচালনার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ রাজনীতিকরা কার্যত অবসরে। সরকারটির নতুনত্বের আরেকটি দিক হচ্ছে টানা ১০ বছর সরকারের চরিত্র ছিল মহাজোটের, যা এবারে একান্তই আওয়ামী লীগের। মহাজোটের শরীকদের দ্বিতীয় প্রধান দল জাতীয় পার্টি দ্বিতীয় মেয়াদে বিরোধীদলের আসনে বসেও সরকারের অংশীদার ছিল, যা এবারে নেই। ছোট শরীকদের মধ্যে ডান-বাম নির্বিশেষে যাঁরা আগের দুই মেয়াদে ক্ষমতার স্বাদ ভোগের সুযোগ পেয়েছিলেন, তাঁদের এখন গণভবনে আর ডাক পড়ে না।
আওয়ামী লীগের প্রায় আনকোরা সরকারের গতবছরটির নানাখাতে নানাধরণের কর্মযজ্ঞের বিবরণ বিশদভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরেই প্রকাশিত হচ্ছে। সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পগুলো যেমন পদ্মা সেতু কিম্বা কর্ণফুলি নদীর তলদেশের সুড়ঙ্গপথ নির্মাণের অগ্রগতির সচিত্র প্রতিবেদনগুলো বেশ ফলাও করেই প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ব জুড়ে বাণিজ্যক্ষেত্রে নানাধরণের অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশে তুলনামূলক উচ্চহারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে এবং নতুন অর্থমন্ত্রী সদ্যই বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ভাষ্যমতে সরকারের কৃতিত্বের তালিকা দীর্ঘ । তবে, তালিকায় যা অনুপস্থিত তা হচ্ছে বিরাজনীতিকরণের সাফল্য। সরকার তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার ক্ষমতা প্রায় পুরোটাই রহিত করে দিয়েছে। তা সেটি নির্বাচনী লড়াইয়েই হোক কিম্বা রাজপথে শক্তি প্রদর্শনে। ফলে, একটা প্রায় রাজনীতিমুক্ত বছর পেয়েছি।
রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ অপসারিত হওয়ার কারণে অবশ্য যে কোনো অসন্তোষ বা অস্থিরতা নেই, এমনটি ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও দাবি করতে পারছেন না। এসব অস্থিরতা ও অসন্তোষের নজির অসংখ্য। তা সে সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে ছাত্রবিক্ষোভই হোক, মজুরি বাড়ানোর দাবিতে শ্রম অসন্তোষ, কিম্বা পেঁয়াজের মত নিত্যব্যবহার্য পণ্যের সংকটই হোক। নতুন মুখে ভরা মন্ত্রীসভা হলেও সরকার যে নতুন নয় সেটা পরিষ্কার হতে খুব একটা সময় লাগেনি। মন্ত্রীসভা গঠিত হওয়ার পরদিনই গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে পোশাকশ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে এবং পুলিশের গুলিবর্ষণে একজন শ্রমিক নিহত হন। আন্দোলন গাজীপুরের বাইরে অন্যান্য শিল্পাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। সরকার, পোশাকশিল্পমালিক এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠনের পরও কয়েকদিন ধরে পরিস্থিতি উত্তাল ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষপর্যন্ত শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া হয়। সরকারের ধারাবাহিকতার আরও একটি নজির মেলে অবশ্য পোশাকখাত ঘিরেই। নতুন মন্ত্রীসভা গঠনের আগেই ২ জানুয়ারি  শিল্পমালিকদের জন্য পণ্য রপ্তানির জন্য উৎসে কর পরিশোধের হার দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়, যাতে প্রধান সুবিধাভোগী হলো পোশাকশিল্প।    
এরপর নতুন মন্ত্রীসভা দায়িত্বগ্রহণের পর মাস না পেরোতেই দেখা যায় স্কুলছাত্ররা আবারও রাস্তায় নেমে এসেছে সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে। কিশোর-তরুণদের ক্ষোভ প্রশমনে নতুন আইন কার্যকরের অঙ্গীকারও সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। পরিবহনব্যবসায়ীদের চাপের মুখে অনেক ছাড় দিয়ে আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সড়কে নৈরাজ্যের প্রধান মদদদাতার রাজনৈতিক অবস্থান বরং আরও জোরদার হয়েছে। সড়ক পরিবহন খাতে বিশৃংখল পরিস্থিতির কারণে যদি কেউ বিকল্প হিসাবে রেলের কথা ভেবে থাকেন তাহলে সেখানেও পরিস্থিতি সুখকর ছিল না। একাধিক বড় র্দূঘটনা ছাড়াও চালকবিহীন ট্রেনযাত্রার মত ভৌতিক ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। সরকারের পক্ষ থেকে রেলব্যবস্থায় নাশকতার আশংকা প্রকাশ করা হয়। অবশ্য, সেরকম কোনো প্রমাণ মেলেনি।       
ধানের মৌসুমে সরকারের ক্রয়নীতির ত্রুটি, অদূরদর্শী ও অপ্রয়োজনীয় আমদানি, গুদাম সংকট মিলিয়ে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয় যে ভালো ফসল ফলানোর কারণে কৃষকরা পুরষ্কৃত না হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। অন্যদিকে মৌসুমে পিঁয়াজের দাম না পেয়ে বছরশেষে রেকর্ডদামেই তা আবার তাঁদের খেতে হয়েছে। এখানেও দেশের চাহিদা, উৎপাদন এবং আমদানির হিসাবে যেমন আছে গরমিল, তেমনই আছে অতি মুনাফালোভীদের বাজারনিয়ন্ত্রণের অদৃশ্য ক্ষমতা।    
হল-মার্ক কেলেংকারির মত হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের বিষয়কে আগের মেয়াদের অর্থমন্ত্রী তেমন কিছু নয় বলে যেভাবে নাকচ করে দিয়েছিলেন, তাঁর উত্তরসুরি অবশ্য তেমন কিছু করেন নি। বরং, দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ঘোষণা করেছিলেন যে খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না। বাস্তবে তার উল্টোটা ঘটতে থাকায় মন্দ ঋণের সংজ্ঞা বদলেও তিনি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন নি। বরং, তা নয় মাসে আরও প্রায় সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। সুদের হার এক অংকের ঘরে নামিয়ে আনার সময়সীমা বেঁধে দিয়েও দ্বিতীয়বারের মত তিনি তা বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। ঋণখেলাপি এবং ব্যাংকারদের প্রতি তাঁর নমনীয়তাকে পেঁজাতুলোর সঙ্গে তুলনা করলে খুব একটা ভুল হবে না। শেয়ারবাজারেও আস্থাহীনতা চরমে পৌঁছেছে। বাজারব্যবস্থায় স্বচ্ছ্বতা ও নিয়মনীতি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা কার্যকরে তদারকিতে অযোগ্যতা ও দায়িত্বহীনতা বাজারে আস্থাহীনতার প্রধান কারণ হলেও আগের মতই কথিত তারল্য বাড়ানোর বাইরে আর কিছুই হয় নি। বড় বড় সরকারি প্রকল্পের বিনিয়োগ এবং প্রবাসী আয়ের কল্যাণে সামগ্রিক অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় থাকলেও কর্মসংস্থানের চিত্র মোটেও সুখকর নয়। ফলে, জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশের মধ্যে বেকারত্বের হতাশা আরও প্রকট হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে ছাত্রলীগের দাপট আরও বেড়েছে এবং ‍ঘুরেফিরে বারবারই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে তাদের বিরুদ্ধে নানাধরণের অপরাধ ও সন্ত্রাসের অভিযোগ ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের ক্ষুব্ধ করেছে। বছরের শুরুতে ডাকসু নির্বাচনে আগের রাতে ব্যালটবাক্স ভরা এবং ভোটারদের নানাকৌশলে ভোটবঞ্চিত করার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলংকের এক নতুন নজির তৈরি হয়েছে। তবে, এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও কোটাসংস্কার আন্দোলনের নেতা কোনোধরণের রাজনৈতিক সমর্থন ছাড়াই ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়ে বিস্ময়ের জন্ম দেন। ছাত্রলীগ সেই বাস্তবতা এখনও মেনে নিতে পারে নি। বছরশেষে ডাকসু ভবনে তাঁকে যে বেধড়ক মারধোর করা হয়, আওয়ামী লীগের নেতারাও তার নিন্দা জানাতে বাধ্য হন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের কাছ থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের কমিশন দাবিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক তাঁদের পদ হারান। তবে, বিভিন্ন জায়গায় তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি এবং প্রশাসনের পক্ষে লাঠিয়ালের ভূমিকা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ও আন্দোলন দমনে সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। ফেসবুকে ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে ছাত্রলীগ কর্মীদের নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হন বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ। রাজশাহীতে একজন অধ্যক্ষকে তাঁর দপ্তর থেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়ার মত ঘটনার নজির সৃষ্টি করে সংগঠনটির কর্মীরা।
ইত্যবসরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে লাগামছাড়া দূর্নীতির তথ্য ফাঁস হতে শুরু করে। পরমাণু প্রকল্পের বালিশ থেকে শুরু করে হাসপাতালের পর্দা কেনার মত বিভিন্নধরণের কেনাকাটায় সাগরচুরির এসব কেলেংকারিতে দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি হলে হঠাৎ করেই দূর্নীতি মোকাবেলায় সরকার সরব হয়ে ওঠে। তবে, শেষ পর্যন্ত দূর্নীতি দমনের অঙ্গীকার কার্যত শুধু ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে রুপান্তরিত হয় এবং শেষপ র্যন্ত সেটাও থেমে যায়। বিশেষত দল, প্রশাসন ও পুলিশের যাঁরা সুবিধাভোগী তাঁরা সবাই আড়ালেই রয়ে যান।সেই অভিযানেও দেখা যায় দায়ীরা ক্ষমতাসীনদেরই সহযোগী যুবলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা। প্রায় রাতারাতি ওইসব সংগঠনের নেতৃত্ব বদল হলেও পরিস্থিতি কতটা বদলেছে, সে প্রশ্ন রয়েই গেছে।
ধানের দাম নিয়ে যেমনটি ঘটেছে, ঠিক একইধরণের পরিস্থিতি দেখা যায় ডেঙ্গুর প্রকোপে। মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পাশাপাশি ওষুধের স্বল্পতা, হাসপাতালে প্রয়োজনীয় শয্যার অভাব, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঘাটতি সব মিলিয়ে যে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয় তা দেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এক নতুন অভিজ্ঞতার জন্ম দিয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে একই সময়ে দেশে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা নতুন মাত্রা পায়। এমনকি, সরকারী কর্মকর্তা, পুলিশবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও এধরণের অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। নারী অধিকার বিশেষজ্ঞরা এজন্যে বিচারহীনতাকেই বড় সমস্যা বলে অভিহিত করেছেন। আইনের শাসনের এই বিচ্যূতি মানবাধিকারের ক্ষেত্রেও খুব বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে থেকেছে। মাদকবিরোধী অভিযান থেকে শুরু করে ধর্ষণের মত অপরাধের সমাধান হিসাবে বিচারবর্হিভূত হত্যার কৌশল অনুসৃত হয়েছে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আরও সংকুচিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য প্রকাশের জন্য মামলার শিকার হয়েছেন কতজন তার কোনো নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান না মিললেও তাঁদের সংখ্যা মোটেও উপেক্ষণীয় নয়। তবে, এগুলোর কোনোটিই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য কোনো রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে নি। কেননা, এই সময়ে দেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট অসহায় কৃষক, শ্রমিক ও ছাত্রদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানোর মত যোগ্যতা ও সাহসের প্রমাণ দিতে পারে নি। রাজনীতিতে ভারসাম্য না ফিরলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুশাসন আসাবে বলে যাঁরা প্রত্যাশা করেন, তাঁরা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে আছেন।
(৮ জানুয়ারি, ২০১৯র প্রথম আলোয় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...