সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রথম আলোর মামলা ঘিরে কিছু প্রশ্ন

স্কুলছাত্র নাইমুল আবরারের অবহেলাজনিত মৃত্যুর মামলায় পুলিশি তদন্তকাজ বেশ দ্রুততার সঙ্গেই শেষ হয়েছে আদালতও নালিশি মামলায় পুলিশের তদন্ত রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য অভিযুক্তদের তদন্তের ফলাফল জানার সুযোগ না দিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আবরারের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর পেছনে কোনো পর্যায়ে কোনো অবহেলা আছে কিনা তার তদন্ত হওয়া উচিত কিন্তু পুরো বিষয়টিকে প্রথম আলোকে শায়েস্তা করার উপলক্ষ হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা হচ্ছে কি না সেই প্রশ্ন শঙ্কা উঠে আসছে আদালতের বিচার্য বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমেখুব একটা আলোচনার সুযোগ নেই উচ্চ আদালতে মতিউর রহমান জামিন পেলেও  প্রথম আলোকে দেখে নেওয়ার আশঙ্কা কেন তৈরি হয়েছে, সেটি আলোচনা করা খুবই জরুরি
দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যে সংকুচিত হয়ে চলেছে, তা সবারই জানা দেশের ভেতরে এবং বাইরে যাঁরা গণতন্ত্র মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কথা বেশ জোরের সঙ্গেই বলে আসছেন গণমাধ্যমের বহুত্ব প্রচার করে সরকার তা নাকচ করতে চাইলেও সমালোচনা এবং ভিন্নমত প্রকাশের কারণে যেসব দমন-পীড়নের নজির স্থাপিত হয়েছে, তাতে এই ধারণা আরও সুদৃঢ় হয়েছে আর সেই প্রতিকূলতার মধ্যে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সমালোচনা সাধ্যমতো প্রকাশের চেষ্টা প্রথম আলো চালিয়ে এসেছে প্রথম আলোকে তাই প্রতিনিয়তই নানা ধরনের অঘোষিত অপ্রকাশ্য প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় এই পটভূমিতেই মামলাটি ঘিরে বিভিন্ন অসংগতি বিবেচনা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ
. এই আশঙ্কার প্রথম প্রধান কারণ পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ঘটনাস্থলে অনুষ্ঠানের কোনো পর্যায়েই যিনি উপস্থিত ছিলেন না, তাঁকে যেকোনোভাবে জেলের ভাত খাওয়ানোর একটা চেষ্টা এখানে সুস্পষ্ট কিশোর আলোর প্রকাশক হিসেবে মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনতে হলে বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর সব কটির প্রধান নির্বাহীরা অভিযুক্ত হবেন তা সেটি গার্মেন্টস কারখানা হোক, সরকারি দপ্তর, কিংবা রেল-সড়ক-নৌ-বিমান দুর্ঘটনায়ই হোক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন যেসব মৃত্যু হচ্ছে তার জন্য সড়কের অবকাঠামোগত সমস্যা, বিশৃঙ্খলা অনিয়মের দায় রয়েছে ফলে সে ক্ষেত্রে সড়ক সেতুমন্ত্রকে অভিযুক্ত করা যায় ২০১৯ সালে অন্তত তিনটি বড় রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে বছর জুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৯ জন এসব দুর্ঘটনার পেছনে ব্যবস্থাপনাগত নানা অনিয়ম দায়িত্বহীনতা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে এতগুলো মৃত্যুর দায় এসে পড়ে রেলমন্ত্রীর ওপরবিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ছাত্র নিহত হয়েছেন, সে জন্য কজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে? একজন প্রয়াত রাজনীতিকের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে গত বছরেই যে দশজনের প্রাণহানি ঘটেছিল, সেই আয়োজনের জন্য দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধেও কোনো মামলার রেকর্ড নেই ভোট আয়োজন নিয়ে যেসব মানুষ নিহত হয়েছেন, সে জন্য কখনো কি কোনো প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে? রকম আরও অনেক দৃষ্টান্ত টানা যায়
. লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, পুলিশি তদন্তে জরুরি সেবায় নিয়োজিতদের কেউ অভিযুক্ত হননি দুর্ঘটনার দিন আমি ঢাকায় ছিলাম এবং রাতের বেলায় টক শোগুলোতে বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন ধরে যেসব আলোচনা-বিতর্ক হয়েছে, তার অনেকগুলোই আমি দেখেছি এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি আলোচনা ছিল, অনুষ্ঠানস্থলে যে হাসপাতালের দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন, সেই হাসপাতালে প্রধান নির্বাহীর সাক্ষাৎকার ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেই কর্মকর্তা কেন আবরারকে কাছের হাসপাতালগুলোতে নেওয়া হয়নি, তার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন তাঁর বক্তব্যে যে বিষয়টি জোরালোভাবে উঠে এসেছে, তা হলো হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল ওই দুজন চিকিৎসকের, অন্য কারও নয় কেউ আহত হলে বা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর উপযুক্ত চিকিৎসা কী হবে এবং কোথায় হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে চিকিৎসকের কোনো দুর্ঘটনায় এই সিদ্ধান্ত জরুরি সেবাদানকারীদেরযাঁরা ফার্স্ট রেসপন্ডার নামে পরিচিত তাঁরা হলেন বিশেষজ্ঞ অন্য কেউ সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার যোগ্যতা রাখেন না বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার অন্য কারও নেই সে তিনি দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী পত্রিকার সম্পাদক হোন, কিংবা জনপ্রিয় সাহিত্যিক বা রাজনীতিকযে- হোন না কেন
. ঘটনাস্থলটি যে স্কুল কলেজের মাঠ, সেই ভেন্যু কর্তৃপক্ষের কোনো দায় কিন্তু নির্ধারণ করা হয়নি অথচ, অধিকাংশ দেশেই দেখা যায়, আইনগতভাবে অনুষ্ঠানস্থলের কর্তৃপক্ষের দায়ই হচ্ছে প্রধান আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে বিবিসিতে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করলে বাইরে থেকে খাবার আনতে দেওয়া হতো না বেশি দামে হলেও বিবিসি ক্লাব বা ক্যাফেটেরিয়া থেকে খাবার পানীয় নিতে হতো কেননা, বিবিসির দপ্তরে খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে কেউ অসুস্থ হলে তার দায় বিবিসি কর্তৃপক্ষের ওপরই পড়ত একইভাবে কোথাও কোনো মিলনায়তন ভাড়া করলে সেখানকার নিরাপত্তার দায়িত্ব মিলনায়তন কর্তৃপক্ষকেই বহন করতে হয়
. কলকারখানা বা বিভিন্ন স্থাপনায় প্রাণঘাতী নানা দুর্ঘটনার কারণে আমরা জানি যে এসব স্থাপনার নিরাপত্তা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন আছে এবং বিভিন্ন সময়ে সেগুলোর যুগোপযোগী হালনাগাদ করা হয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প ক্ষেত্রে একটি বড় নজির কারখানা ভবনগুলো সংস্কারে বিশেষ উদ্যোগ এবং সেখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা আরোপিত হয়েছে কিন্তু কোনো মিলনায়তন বা উন্মুক্ত জায়গায় নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিধানের বিষয়ে আইন কতটা হালনাগাদ করা হয়েছে অতীতে যাত্রাপালা বা মেলা আয়োজনে জেলা প্রশাসকেরা অনুমতি দিতেন, যাতে বিভিন্ন ধরনের শর্ত জুড়ে দেওয়া হতো তবে তাতে উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকের নিরাপত্তার চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পেত রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছু প্রচার হচ্ছে কি না, সেই রাজনৈতিক দিকটি সুনির্দিষ্ট আইনের অনুপস্থিতিতে বিচারের নামে ক্ষমতার অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা তাই মোটেও উপেক্ষণীয় নয়
. দুর্ঘটনার সপ্তাহখানেক পরে মামলাটি দায়েরের পেছনে যে সরকার এবং কোনো প্রতিষ্ঠানের   ভূমিকা রয়েছে তা টের পাওয়া যায় মামলা হওয়ার আগে পরে সরকারের অনেকের মুখ থেকেই শোনা গেছে যে, দৈনিক প্রথম আলোর আয়োজকদের অবহেলার কারণে রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী নাইমুল আবরারের মৃত্যু হয়েছে ফলে প্রথম আলোর সম্পাদকের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে সরকার ক্ষমতাসীন দলের ভূমিকা বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন এরপর সম্পাদকের বিচারের পাশাপাশি প্রথম আলো বন্ধের দাবি নিয়ে নাম না জানা অজ্ঞাত-অখ্যাত বিভিন্ন সংগঠন ধারাবাহিকভাবে মানববন্ধন করে গেছে এসব মানববন্ধনের দুই-একটিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও অংশ নিয়েছেন পত্রিকাটির কার্যালয়ের সামনে এসব মানববন্ধন কী ইঙ্গিত দেয়?
. মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারির সুযোগ থাকলেও তা না করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিকে আইন বিশেষজ্ঞরা ব্যতিক্রম হিসেবেই বিবেচনা করছেন সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে প্রকাশ্যে প্রথম আলোকে দায়ী করে দেওয়া বক্তব্য ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে বলে ধারণা করা কি অযৌক্তিক হবে?
. প্রথম আলোর বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে কয়েক বছর ধরে যেসব নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এই মামলায় সম্পাদককে অন্তর্ভুক্ত করাকে সেগুলো থেকে আলাদা করে দেখার সুযোগ আছে কি? প্রথম আলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং তাঁর সব অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে থেকে বেসরকারি বিজ্ঞাপনদাতাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অন্তত ৫০ টি প্রতিষ্ঠানকে পত্রিকাটিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়েছে পরে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এই অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা থেকে সরে আসতে পারলেও এখনো বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠান প্রথম আলোতে বিজ্ঞাপন দিতে পারছে না সংসদে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে মন্ত্রী-সাংসদেরা বহুবার বিষোদ্‌গার করেছেন এবং গত ১০ বছরে প্রথম আলো এর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে এক শর বেশি মামলা হয়েছে এর মধ্যে ৫০ টি মামলা এখনো চলমান রয়েছে এগুলো ধারাবাহিক হয়রানি ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা ছাড়া আর কী হতে পারে?  জন্যই প্রশ্ন উঠছে, ভিন্নমত প্রকাশের জন্য দেশের শীর্ষ পত্রিকার কণ্ঠরোধী পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাখ্যা করা কঠিন বলেই কি একজন ছাত্রের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা?
. বিভিন্ন দুর্নীতি অনিয়মের তথ্য প্রকাশের কারণে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রথম আলোর বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ করে আসছেন সরকারে বিভিন্ন পর্যায় থেকে পত্রিকাটি না রাখতে, না পড়তে, এমনকি বয়কট করার কথাও প্রকাশ্যে বলা হয়েছে এসবের মধ্য দিয়ে এমন একটি পরিবেশের সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের মধ্যে প্রথম আলোর বিষয়ে ভীতি তৈরি হয় সুতরাং, পত্রিকাটির ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে এই দুর্ঘটনাকে ব্যবহারের আশঙ্কা তাই প্রবল
. ক্রমশ অপস্রিয়মাণ ব্যক্তিস্বাধীনতা, নাগরিক গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোর পটভূমিতে যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার এখনো সাহসের সঙ্গে অধিকারগুলোর কথা বলে চলেছে মতিউর রহমান গত কয়েক বছরে অনেকবার প্রকাশ্য বক্তৃতা, সাক্ষাৎকার এবং লেখায় বলেছেন যে তিনি যেসব কথা বলতে চান, তা বলতে পারছেন না মাহ্‌ফুজ আনাম লিখেছেনলিখতে পারি না লেখার স্বাধীনতাটুকুনিয়েও তাঁর উদ্বেগের কথা বিপরীতে, মন্ত্রী-সাংসদ এবং সরকার-সমর্থক মিডিয়া শুধু প্রকাশনা টিভি-রেডিওর সংখ্যা দিয়ে দাবি করে চলেছেন, দেশে বহুমতের গণতন্ত্র রয়েছে সুতরাং কথা বলার স্বাধীনতা নেই এই কথাগুলোর উচ্চারণও বন্ধ করতে সরকার যে উৎসাহী হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই প্রথম আলোর ওপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্য তাই একটাইগণমাধ্যমকে পুরোপুরি বশীভূত করা
তবে প্রথম আলোর সম্পাদক কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনাকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি বলে মনে করেন না এমন লোকজনও রয়েছেন এঁদের এই অবস্থানের কারণটি রাজনৈতিক আর কিছু আছেন, যাঁরা ব্যক্তিগত ক্ষোভ ঈর্ষার কারণে প্রথম আলোর ক্ষতি হলে উল্টো খুশি হবেন রাজনৈতিক কারণে যাঁরা মামলাটিকে সমর্থন করছেন, তাঁরা প্রধানত ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সমর্থক আবার আরেকটি গোষ্ঠী মামলাটিকে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের চেষ্টা মনে করার পরও নীরবতা পালনের নীতি অনুসরণ করছে তাদের অভিযোগ, বিএনপির সাবেক নেতা আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশনা দৈনিক সংগ্রাম-এর সম্পাদক আবুল আসাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রথম আলো তাঁদের পাশে দাঁড়ায়নি
ছাড়া যাঁরা প্রথম আলোর সাফল্যে ঈর্ষান্বিত, তাঁরা এটিকে একটি সুযোগ হিসেবে গণ্য করছেন প্রথম আলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাঁরা নিজেদের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা উন্মোচিত হবে বলে ধারণা করেন এঁদের কাছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা গৌণ গুরুত্বহীন এঁরা রাজনৈতিক অর্থনৈতিক দিক থেকে যাঁরা ক্ষমতাধর, তাঁদের তোষণকেই সাফল্যের ভিত্তি হিসেবে গণ্য করেন
আশার কথা হচ্ছে, প্রথম আলোর সাফল্যই তার প্রধান শক্তি লক্ষ কোটি পাঠক পত্রিকাটির প্রতি আস্থা রেখেছেন যার মানে হচ্ছে, পত্রিকাটির সম্পাদকীয় নীতির প্রতি আস্থা রেখেছেন এই কৃতিত্ব অবশ্যই পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমানের প্রথম আলোর সম্পাদকীয় স্বাধীনতা রক্ষায় তাই সবারই অকুণ্ঠ সমর্থন জানানো প্রয়োজন  কেননা, প্রথম আলোর ক্ষতি গণমাধ্যমের অন্যদেরও কন্ঠ রুদ্ধ হওয়াই স্বাভাবিক।

(২৩ জানুয়ারি, ২০২০‘র প্রথম আলোয় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

How to Describe the Awami League Accurately?

In an article titled ‘How Not to Describe the Awami League’ , published in this paper, British journalist David Bergman rightly underscores the importance of accuracy in labeling a political party—particularly when such labels carry potential legal consequences. Those familiar with Bergman’s work over the years know that he has consistently taken on politically sensitive and controversial subjects, often at significant personal and professional cost. His courage and commitment to journalistic integrity deserve recognition. Bergman is correct in asserting that “while serious criticisms of the Awami League are both valid and necessary, they must be proportionate and grounded in fact.” His analysis focuses primarily on the legal validity and appropriateness of labeling the Awami League as “fascist” or “Nazi.” He argues that comparing the party to the Nazi regime trivialises the scale of Nazi atrocities and misrepresents the complexities of Bangladeshi politics. Indeed, any historical comp...

স্বৈরতন্ত্রের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার নিকৃষ্ট পরিণতি

ছাত্র–জনতার অভ্যূত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কথিত মন্তব্যে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। গত ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশ্য দেওয়া ভাষণ এবং সম্প্রতি মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপচারিতায় পরস্পরবিরোধী মন্তব্য – এই দুইয়ের একটি যে অসত্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিতর্ক শুরু হওয়ার পর তাঁর দপ্তর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা–ও অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ। তিনি সর্বশেষ বিবৃতিতেও মতিউর রহমান চৌধুরীকে অসত্য কথা বলার বিষয়টি স্বীকার যেমন করেন নি, তেমনি এমন দাবিও করেননি যে তাঁকে ভূলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।  ৫ আগস্ট যদি তিনি পদত্যাগপত্র গ্রহণের প্রশ্নে অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তা খুবই গুরুতর হিসাবে বিবেচিত হতে বাধ্য। কেননা তা ছিল জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের তথ্য। আবার যদি তিনি মানবজমিন সম্পাদকের কাছে আলাপচারিতায় অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তাঁর কাছে যে দেশবাসী প্রশ্নের জবাব চাইতে পারে, তা হলো অর্ন্তবর্তী সরকার যখন সবকিছু গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছে, দেশে স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টা চলছে, তখন তিনি কেন এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন? তাঁর উদ্দ...