সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হেফাজতের উত্থান নিয়ে কথা হোক

জনজীবনে বহুল আলোচিত যাঁরা, তা সে রাজনীতিকই হোন বা তারকাজগতের কেউ অথবা আধ্যাত্মিক নেতা, তাঁদের ব্যাক্তিগত জীবনযাত্রায় সাধারণ মানুষের অফুরান আগ্রহ নতুন কিছু নয়। এই অনুসন্ধিৎসার ওপর ভিত্তি করে সাংবাদিকতার একটি ধারা বেশ ভালোই বিকশিত হয়েছে, যা ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলোর উত্থানের অন্যতম প্রধান কারণ। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিল ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলো। তবে, ব্যাক্তিগত গোপনীয়তা লংঘনের প্রশ্নে এই শতাব্দীর প্রথম দশকে যে তোলপাড় হয়েছিল, তার কারণে এদের অনেকেই সংযত হতে বাধ্য হয়েছে।

চলতি সপ্তাহে অন্যতম বহুলপ্রচারিত ট্যাবলয়েড ডেইলি মিরর তাদের ভাষায় এক ওয়ার্ল্ড এক্সক্লুসিভে  প্রকাশ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রাক্তন প্রেমিকা আমেরিকান তরুণী জেনিফার আর্কুরির সাক্ষাৎকার। ঘটনার সময়কালে তিনি ছিলেন লন্ডনের মেয়র এবং তাঁদের গোপন প্রণয়ের সুবাদে তাঁর প্রণয়িনী বিশেষ আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। অভিযোগটি আগেও উঠেছিল বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের আগে। তখন বরিস জনসনও যেমন প্রণয়-সম্পর্কিত কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি, তেমনই মিস আর্কুরিও মুখ খোলেননি। যে কাজের জন্য তাঁকে লক্ষাধিক পাউন্ডের কাজ দেওয়া হয়েছিল, সেই কাজের তিনি যোগ্য ছিলেন না বলে দূর্নীতি হয়েছে কিনা, তা তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ। তদন্তে অবশ্য পুলিশ কোনো অভিযোগ দাঁড় করাতে পারেনি। এখন মিস আর্কুরি তাঁদের সম্পর্কের যে বিবরণ দিয়েছে তার ভিত্তিতে কোনো নাটক-সিনেমা বানানো হলে তা নিশ্চিতভাবেই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সীমিত করে দিতে হবে।

আর আটলান্টিকের অপর পারে, গত সপ্তাহখানেকের বেশি সময় ধরে সংবাদমাধ্যমে যৌন কেলেংকারির এক আলোচনা বেশ গুরুত্বর্পূণ হয়ে উঠেছে, যার কেন্দ্রেও আছেন একজন রাজনীতিক। গতমাসের শেষ দিকে নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায় যে ফ্লোরিডার একজন কংগ্রেসম্যান ম্যাথু লুইস গ্যাটজ, ২০১৯ সালে ১৭ বছরের এক কিশোরীর সঙ্গে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক কারো সঙ্গে যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ  হওয়ায় সম্ভাব্য অপরাধের বিষয়ে দেশটির বিচার মন্ত্রণালয় তদন্ত করছে বলে ওই খবরে জানানো হয়। কংগ্রেসম্যান গ্যাটজ রিপাবলিকান পার্টির সদস্য এবং ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক। কিন্তু তদন্তটি শুরু হয়েছে ট্রাম্পের শাসনামলে। তিনি অভিযোগটিকে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং তাঁর কাছ থেকে বেআইনীভাবে টাকা আদায়ের অপচেষ্টা বলে দাবি করেছেন। তিনি এবং তাঁর ব্যাক্তিজীবন এখন সঙ্গত কারণেই সংবাদমাধ্যমের নিবিড় অনুসন্ধান ও নজরদারিতে আছে।

কংগ্রেসম্যান গ্যাটজের নেতা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ঘিরেও একাধিক যৌন সম্পর্কের নানারকম মুখরোচক কাহিনির কথা পাঠকেরা নিশ্চয়ই এত দ্রুত বিস্মৃত হননি। তাঁর বাণিজ্য সাম্রাজ্য এবং নির্বাচনী তহবিলের হিসাবনিকাশ নিয়ে যেসব তদন্ত চলছে, সেগুলো সম্পন্ন হলে এসব বিষয়ে আরও অনেক তথ্য যে ভবিষ্যতে আলোচনায় আসবে, তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। তবে এসব কেলেঙ্কারি যে জনতুষ্টিবাদী রাজনীতিতে খুব একটা প্রভাব ফেলে না, তা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গেছে। এঁদের অনুসারীদের নেতার ব্যাক্তিগত চরিত্রের আইনগত বা নৈতিক শুদ্ধতার প্রশ্নগুলো একেবারেই বিবেচ্য নয়। এসব অনুসারীদের কাছে বরং তাঁদের রাজনীতির যে ব্যাখ্যা কিম্বা জনজীবনের বিদ্যমান সমস্যার প্রস্তাবিত সমাধান, সেটাই হচ্ছে প্রধান বিচার্য বিষয়। আর, অধিকাংশক্ষেত্রেই এসব রাজনীতিকের জনসমর্থনের ভিত্তি হচ্ছে কথিত উগ্র জাতীয়তাবাদ, ধর্মবিশ্বাস কিম্বা কর্তৃত্ববাদী (স্ট্রংপারসন বা তিনিই পারেন) চরিত্র।

একই প্রবণতার অজস্র নজির ধর্মীয় নেতাদের ক্ষেত্রেও আছে এবং তা সব ধর্মেই। মাত্র কয়েক দশক আগে খ্রিষ্টান যাজকদের যৌন অনাচারের কাহিনি প্রকাশ্যে আলোচনাই ছিল দু:সাহসের একটি কাজ। কিন্তু, এখন সেই অবস্থা বদলেছে। কিছুদিন আগেই ভ্যাটিকানের অত্যন্ত ক্ষমতাধর এক যাজকের স্বদেশে কারাভোগের বিরুদ্ধে আপিল খারিজ হয়েছে অষ্ট্রেলিয়ার আদালতে। ভারতেও এরকম ঘটনা কম নয়। ওড়িষার হিন্দু ধর্মগুরু সারথী বাবা এরকম একজন। হায়দরাবাদের এক হোটেলে তাঁর স্ত্রী পরিচয় দিয়ে এক নারীর সঙ্গে দুদিন কাটানোর খবর সেখানকার এক টিভি চ্যানেলে প্রচার হলে তুমুল হইচই হয়। পরে, পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে এবং প্রতারণার মামলা হয়। ধর্মগুরুদের অপরাধ তাঁদের ভক্তকুলকে খুব কমই প্রভাবিত করে। ভারতেই এবিষয়ে নানারকম রেকর্ড আছে। হত্যা মামলার আসামী রামপাল মহারাজাকে ২০১৫ সালে হরিয়ানা রাজ্যে গ্রেপ্তার করতে গেলে তাঁর ভক্তরা তাঁর আশ্রমে যে মানবঢাল তৈরি করেছিলেন, তা ভেদ করতে সেখানে পুলিশকে দুই সপ্তাহ ধরে চেষ্টা চালাতে হয়েছিল। পাঁচজন নারীর ও একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল এবং পুলিশ প্রায় আড়াইশো ভক্তকে গ্রেপ্তার করেছিল।

যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যে নারীরা যে মি টু আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, তার ধারাবাহিকতায় অক্সফোর্ডের ইসলামবিষয়ক পন্ডিত তারিক রামাদানের বিরুদ্ধে ফ্রান্সে চারটি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। তারিক রামাদান মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্নার পৌত্র। তিনি নিজেকে প্রতিটি মামলায় নির্দোষ দাবি করেছেন এবং তাঁর অনুসারীরা বিশ্বাস করেন তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।

আমাদের দেশেও ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত যৌন অপরাধের অভিযোগ ওঠে না, তা নয়। তবে, সর্বসাম্প্রতিক বিতর্কটি একটু আলাদা। এর কারণ, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই মাওলানা মামুনুল হক একইসঙ্গে ধর্মীয় নেতা এবং রাজনীতিবিদ। আলোচনায় অবশ্য তাঁর ধর্মীয় সংগঠন, হেফাজতে ইসলামের নাম যতটা উচ্চারিত হচ্ছে, তাঁর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নাম ততটা নয়। তবে, তিনি হেফাজতের যুগ্ম-মহাসচিব হলেও খেলাফতে মজলিসের মহাসচিব। হেফাজতের পক্ষ থেকে ঘটনাক্রম সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনসহ নানাভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা হলেও তাঁর রাজনৈতিক দলের কোনো বক্তব্য এখনও কোথাও নজরে আসেনি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে বিক্ষোভ ও সহিংসতার পটভূমিতে তাঁর প্রতি জন-আগ্রহ কিছুটা বেশিই থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। সুতরাং, সংবাদমাধ্যম তাঁকে নিবিড়ভাবে অনুসরণ করলে অবাক হই না।

রিসোর্ট ও টেলিফোন কাহিনিগুলো গত কয়েকদিন ধরে সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং সংসদের বিতর্কে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। তবে, আলোচনাগুলো প্রধানত উপসর্গকেন্দ্রিক। বিয়ে অথবা বিবাহবর্হিভূত সম্পর্ক প্রমাণের জন্য দুটো পক্ষের প্রাণান্তকর চেষ্টা চলছে। নৈতিকতার কথাও উঠেছে। যে আন্দোলনে এতজনের প্রাণ গেল, সেই নিহতদের পরিবারগুলো শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই আন্দোলনের সংগঠকদের একজন কীভাবে অবকাশযাপনে যেতে পারেন, সে কথাও উঠেছে। ঘটনাটির বিভিন্ন ভাষ্য ও আলোচনায় কয়েকটি বিষয় মোটামুটি স্পষ্ট: ১. বহুল বিতর্কিত ফোনে আড়িপাতার একটি ব্যবস্থা চালু আছে এবং রাজনৈতিক কারণে তা ব্যবহৃত হচ্ছে; ২. ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধীদের নৈতিকতার বিষয়েও নজরদারি করছেন এবং নিজেরা শক্তিপ্রয়োগে বেশি উৎসাহী; ৩. হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের কাছে পুলিশ ও প্রশাসন মাঝেমধ্যেই অসহায় হয়ে পড়ছে অথবা নিষ্ক্রিয়তার নীতি অনুসরণ করছে। এগুলোর কোনোটিই সমথর্নযোগ্য নয়।     

সন্দেহ নেই, অরাজনৈতিক পরিচয় দাবি করা হেফাজতে ইসলাম মাত্র এক দশকেই সাংগঠনিকভাবে বেশ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় শক্তি অর্জন করেছে। ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক শক্তির তুলনায় তা লক্ষণীয়ভাবে বেশি। সম্ভবত সেকারণেই মুমিনুল হকের রাজনৈতিক পরিচয় ও তাঁর দল খেলাফত মজলিসের চেয়ে আলোচনাটি বেশি হচ্ছে হেফাজত নিয়ে এবং তাঁর হেফাজতের পরিচয় ঘিরে। যদিও ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ এই খেলাফত মজলিসের সঙ্গেই একটি নির্বাচনী সমঝোতায় সই করেছিল, পরে বামদলগুলোর চাপে যা বাতিল করা হয়। এখানে তাই হেফাজতের পরিচয়, তার উত্থান এবং বিকাশের ইতিহাসের দিকে নজর দেওয়া বেশি জরুরি। হেফাজতে ইসলাম যদি কখনো সরকারের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে, তাহলে কি সরকারবিরোধী রাজনীতি হেফাজতমুখী হয়ে উঠবে না? সুতরাং, হেফাজত কার পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আসছে ? কেন ওই পৃষ্ঠপোষকতা ? নির্বাচনী রাজনীতির ভূমিকাই বা কী? এসব প্রশ্নের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। অবশ্য রাজনীতির খেলায় আমরা শুধুই বিনোদিত হতে চাইলে এসব প্রশ্ন নিতান্তই অবান্তর!

(৭ এপ্রিল, ২০২১-র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...