সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কোভিড–১৯ টিকার সংকট কেন

রাশিয়ার স্পুতনিক ভি টিকা আগামী মাসে পাওয়ার যে চুক্তি হয়েছে, তা চারদিকের চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক ঘটনা কেননা, কোভিড-১৯-এর টিকা পাওয়া এখন মোটেও সহজ কোনো কাজ নয় আগামী এক-দেড় বছরে প্রয়োজনীয় টিকার সংস্থান আদৌ কি সম্ভব? কাজটা আরও কঠিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত টিকাগুলোর ক্ষেত্রে টিকার এই সংকট কেন? এটা কি শুধুই চাহিদা সরবরাহের ফারাকের কারণে? নাকি এর পেছনে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, কূটনীতিরও ভূমিকা আছে? টিকা উদ্ভাবক প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর ভূমিকাই-বা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯-এর টিকা সংগ্রহের কাজটি কঠিন হয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ দেশগুলোর মধ্যে বৈষম্য অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বাজারে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তিন কোটি ডোজ কেনার চুক্তি সই করাও তাই কম সাফল্য নয় কারণে বাংলাদেশ আগেভাগে টিকা কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছিল তবে মোট জনসংখ্যার মাত্র শতাংশের টিকা হাতে পাওয়ার ক্ষেত্রে একটু আগাম এবং বেশি সাফল্যই দাবি করা হয়েছে
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার ভারতীয় উৎপাদক সেরাম ইনস্টিটিউট এখন বলছে যে তারা জুন-জুলাইয়ের আগে টিকা রপ্তানি করতে পারবে না বাংলাদেশে সেরামের টিকা সরবরাহকারী বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান এখন নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলছেন, বাংলাদেশ যেহেতু আগাম টাকা দিয়েছে, তাই সেরামের সরবরাহ বন্ধ করার কোনো অধিকার নেই তিনি সরকারের কাছে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, যাতে খুব একটা ফল হয়নি আর মহামারির যে সংক্রমণ মৃত্যুর রেকর্ড এখন ভারতে দেখা যাচ্ছে, তাতে খুব শিগগির টিকা রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা দেশটি শিথিল করবে, তেমন সম্ভাবনা নেই বলেই মনে হয়
টিকা সরবরাহ বিশ্বজুড়েই একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল রাজনৈতিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইতিমধ্যে এটি ইউরোপ আমেরিকা মহাদেশের প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে ব্রিটিশ-সুইডিশ অ্যাস্ট্রাজেনেকা তার প্রতিশ্রুতসংখ্যক টিকা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় জানুয়ারি মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাজ্যের মধ্যে একটি কূটনৈতিক টানাপোড়েন দেখা গিয়েছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে সেই বিরোধ এখনো মীমাংসা হয়নি সংস্থাটির বিরুদ্ধে মামলাও করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় ভর করে ভারত চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রতিযোগিতায় নেমেছিল এবং বাংলাদেশসহ দুই ডজনের বেশি দেশে অন্তত কোটি ৫৭ লাখ ডোজ টিকা উপহার দিয়েছে (সূত্র: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) এমনকি, বছরের শুরুতে রপ্তানি বন্ধ রেখে আগে পাঠানো হয়েছে উপহার, যার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ তখন পেয়েছে ২০ লাখ ডোজ পরে আরও দুই দফায় উপহার হিসেবে এসেছে ১৩ লাখ ডোজ তবে আগাম পরিশোধিত মূল্য বাবদ পর্যন্ত যে দেড় কোটি টিকা পাওয়ার কথা ছিল, তার মধ্যে পাওয়া গেছে ৫০ লাখ আমেরিকা মহাদেশেও টিকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডা, মেক্সিকোসহ প্রতিবেশীদের মধ্যে রাজনৈতিক অস্বস্তি দেখা গেছে
 
ধনী দেশগুলো মজুত গড়ার সুযোগ পেল যেভাবে
এই সমস্যার উৎসে আছে টিকার বিষয়ে একটি বৈশ্বিক সমঝোতার অনুপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় যে অগ্রাধিকার বিতরণ নীতিমালা প্রস্তাব করেছিল, তাতে ধনী দেশগুলো সাড়া দেয়নি একটি বৈশ্বিক চুক্তির অভাবে প্রকৃত প্রয়োজনের তুলনায় কে কতটা কিনতে পারে, সে সম্পর্কে দেশগুলোর জন্য কোনো সীমা নির্ধারিত নেই ফলে কিছু ধনী দেশ তাদের প্রয়োজনের তুলনায় থেকে গুণ পর্যন্ত বেশি টিকা কেনার চুক্তি করতে পেরেছে টিকার বৈশ্বিক জোটের হিসাবে সম্ভাব্য উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি ধনী দেশ তাদের নাগরিকদের জন্য কিনে নিয়েছে অথচ ওই দেশগুলোর নাগরিকসংখ্যা বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ১৪ শতাংশ নিজেদের নাগরিকদের প্রতি সরকারগুলোর দায়বদ্ধতা নিয়ে কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত কেনা কিংবা মজুত করা কি ন্যায়সংগত হতে পারে?
পছন্দের টিকায় অজানা কোনো সমস্যা হলে বিমা হিসেবে বিকল্প বিভিন্ন ধরনের টিকা অতিরিক্ত ডোজ কিনেছে এসব দেশ ফলে তাদের অপ্রয়োজনীয় মজুতও গড়ে উঠেছে এর একটি বড় উদাহরণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোটি কোটি ডোজ মজুত রেখেছে এবং দেশটির কোনো নাগরিকের জন্যই তা অনুমোদন করা হয়নি সেই মজুত থেকে এখন ছয় কোটি ডোজ ভারতসহ বিভিন্ন দেশের জন্য ছাড় করার কথা গত সোমবার হোয়াইট হাউস ঘোষণা করেছে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এসব টিকা যে নিরাপদ, তা তারা যাচাই করার পরই অন্যান্য দেশে পাঠানো হচ্ছে অবশিষ্ট মজুতের ক্ষেত্রেও এই পরীক্ষা চালানো হবে
যুক্তরাষ্ট্রের মতো কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছেও টিকার বাড়তি মজুত আছে এসব দেশের সরকারগুলোর প্রতি বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তাঁদের বাড়তি মজুত অন্যদের দেওয়ার জন্য আহ্বান জানালেও তারা এখনো তাতে সাড়া দেয়নি
 
প্রস্তুতকারকদের দায়মুক্তির শর্তে বাড়তি সমস্যা
ধনী দেশগুলো বাড়তি যেসব টিকা কিনেছে বা সরবরাহের আদেশ দিয়ে রেখেছে, সেগুলো অন্যান্য দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে অবশ্য অন্য একটি সমস্যা বাধা হয়ে আছে টিকা প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো যেসব চুক্তি করেছে, সেই চুক্তিতে তারা ক্রেতা রাষ্ট্রের কাছ থেকে দায়মুক্তির অঙ্গীকার আদায় করে নিয়েছে টিকা প্রয়োগের কারণে কোনো বিরূপ প্রভাব দেখা দিলে কোম্পানির বিরুদ্ধে ফৌজদারি এবং দেওয়ানি বা ক্ষতিপূরণ দাবি করে কোনো নাগরিক কোনো মামলা করতে পারবে না বা করলে তার আর্থিক দায় দেশটির সরকারকেই বহন করতে হবে, কোম্পানি তার কোনো দায়ভার নেবে না এই দায়মুক্তির শর্তের কারণে এসব দেশ তৃতীয় কোনো দেশের কাছে টিকা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে আইনগত সমস্যার মুখে পড়ছে
শর্তগুলো কতটা কঠোর, তা সব পক্ষই গোপন রেখেছে তবে গত ফেব্রুয়ারিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় নিবেদিত ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাইজার লাতিন আমেরিকায় কয়েকটি সরকারের কাছে সার্বভৌম সম্পদের গ্যারান্টি দাবি করেছিল এসব সার্বভৌম সম্পদের মধ্যে আছে ফেডারেল ব্যাংকের রিজার্ভ, দূতাবাস ভবন বা সামরিক ঘাঁটি ফাইজার অবশ্য বলেছে, কোনো দেশের সামরিক, সাংস্কৃতিক বা কূটনৈতিক সম্পদে হাত দেওয়ার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জুভেলি এমকিজে ফাইজারসহ টিকা উৎপাদকদের সঙ্গে আলোচনার পরকঠিন এবং কখনো কখনো অযৌক্তিকশর্তাদির বিষয়ে ১৪ এপ্রিল তাঁর হতাশার কথা জানান ফাইজারের রকম আরেকটি শর্ত হচ্ছে কোম্পানির নিজস্ব গাফিলতি, জালিয়াতি বা তথ্য গোপনের জন্য তার বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া যাবে না ডোমিনিকান রিপাবলিক, আলবেনিয়া পেরুর চুক্তির খসড়ায় ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের সাংবাদিকেরা দেখেছেন মোড়কজাতকরণ, উৎপাদন সংরক্ষণের কোনো পর্যায়ে সমস্যা দেখা দিলেও কোম্পানি দায়মুক্তি দাবি করেছে বিশেষজ্ঞরা ধরনের শর্তকে অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেছেন সেরামের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তিতে কী ধরনের শর্ত ছিল, তা যেমন আমরা জানি না, তেমনই রাশিয়ার সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে গোপনীয়তার শর্তের কারণে সে বিষয়েও আমাদের জানার সুযোগ কার্যত নেই
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পুনেওয়ালা সম্প্রতি এক টুইটে টিকা তৈরির কাঁচামাল রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি অনুরোধ জানান টুইটে তিনি বলেন যে এগুলোর অভাবে টিকার উৎপাদন প্রয়োজন সামর্থ্য অনুযায়ী বাড়ানো যাচ্ছে না এরপর থেকে আলোচনায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স প্রোডাকশন অ্যাক্ট ওই আইনের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের সব কোম্পানিকে সবার আগে দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে নজর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মহামারির শুরুতেই এই আইন কার্যকরের কথা ঘোষণা করেছিলেন, যার প্রভাব পড়ে ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই), ভেন্টিলেটর ওষুধপত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে
 
বিশ্বে আসলে কত টিকা দরকার
যুক্তরাষ্ট্রের ওই আইনে বাধার কারণে ভারতে কাঁচামাল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় যে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউসের কোভিড-১৯-বিষয়ক সরবরাহ সমন্বয়কারী টিম ম্যানিং কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন, যা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তিনি জানাচ্ছেন, বিশ্বে প্রতিবছর ফ্লু হামের মতো নানা রোগের প্রতিষেধক টিকা তৈরি হয় ৪০০ কোটি ডোজ কোভিডের কারণে এখন বিশ্বে প্রয়োজন হচ্ছে অতিরিক্ত হাজার ৪০০ কোটি ডোজ টিকা টিকা তৈরির কাঁচামাল যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রের ওই আইনের ব্যাখ্যায় তিনি বলছেন যে এর ফলে কোনো কোম্পানির ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে বলা হয়েছে, তারা যা উৎপাদন করবে, সেগুলো থেকে প্রথমে দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে হবে এর প্রভাব যে বিদেশে রপ্তানির ওপর কিছুটা হলেও পড়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই সোমবার অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ভারতের জন্য কিছুটা ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে
বিশ্বে কোভিডের টিকার সরবরাহ, উৎপাদন এবং বিভিন্ন দেশের ক্রয় চুক্তির বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য মেলে ইউনিসেফের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন মার্কেট ড্যাশবোর্ডে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে কোভিড-১৯ টিকার ন্যায্য সমন্বিত সরবরাহের বৈশ্বিক ব্যবস্থা কোভ্যাক্সের টিকা সরবরাহ কার্যক্রমের সমন্বয় করছে ইউনিসেফ ওই পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে পর্যন্ত হাজার ১৬০ কোটি ডোজের ব্যবস্থা হচ্ছে এর মধ্যে কোভ্যাক্স ৩৫৬ কোটি ডোজের সংস্থান করেছে বাস্তবে এগুলোর সরবরাহ কবে নাগাদ সম্ভব হবে, তার অবশ্য কোনো ইঙ্গিত নেই বিশ্বে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ১৪টি কোভিড-১৯ টিকার জরুরি/শর্তাধীন ব্যবহার অথবা রাষ্ট্রীয় অনুমতি পেয়েছে এগুলোর মধ্যে জরুরি ব্যবহারের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাভুক্ত হচ্ছে ফাইজার-বায়োএনটেক, অ্যাস্ট্রাজেনেকা জেনসেন এপ্রিলে চূড়ান্ত হওয়ার কথা হিসেবে তালিকায় আছে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না এবং চীনের সিনোফার্ম চীনের সিনোভ্যাক মে মাসে চূড়ান্ত হতে পারে আর রাশিয়ার স্পুতনিক ভি অতিরিক্ত তথ্য-উপাত্ত এবং পরিদর্শন প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের আগে অবশ্য আমাদের ওষুধ প্রশাসন এর জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে বিশ্বের ৬০টির মতো দেশ স্পুতনিকের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে
 
মেধাস্বত্ব ছাড় দিলে উৎপাদন বাড়বে
২০২০ সালের মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য সব দেশের প্রতি স্বেচ্ছায় জ্ঞান, মেধাসম্পদ, প্রযুক্তি এবং তথ্য-উপাত্ত ভাগাভাগি করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল গ্লোবাল জাস্টিসের মতো বৈশ্বিক নাগরিক গোষ্ঠীগুলো বড় বড় ওষুধ কোম্পানির প্রতি কোভিড-১৯ গবেষণা প্রযুক্তি এবং পেটেন্ট-মুক্ত টিকার মুক্ত লাইসেন্স দেওয়ার জন্য সুস্পষ্ট অঙ্গীকারের আহ্বান জানিয়েছিল তাদের কথায় কোভিড মোকাবিলায় এটি হবে জনগণের টিকা এই দাবিতে এখন আরও অনেকেই কণ্ঠ মিলিয়েছে ১৪ এপ্রিল ১৭০টি দেশের রাষ্ট্র/সরকারপ্রধান এবং নোবেল বিজয়ীরা কোভিড-১৯-এর টিকার মেধাস্বত্বের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ২৪ এপ্রিল নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলী এক বিশেষ সম্পাদকীয়তেও একই আহ্বান জানিয়েছেন
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নতুন প্রধান . এনগোজি ওকনজো-আইওয়ালা অবশ্য তৃতীয় একটি বিকল্পের কথা বলেছেন পেটেন্টের অধিকার স্থগিতের বদলে তিনি স্বেচ্ছা ভিত্তিতে লাইসেন্স দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের সেরামের সঙ্গে অ্যাস্ট্রাজেনেকার চুক্তির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখন অব্যবহৃত কিছু সক্ষমতা রয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের মতো একই ধরনের ব্যবস্থা অন্যদের ক্ষেত্রেও অনুসরণ করা যায় তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং তার লাইসেন্সধারী সেরাম ইনস্টিটিউট উভয়েই প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের বাণিজ্যিক সমঝোতার দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে পড়েছে বিশ্বের সর্বাধিক টিকা উত্পাদকের পরিচিতি সত্ত্বেও সেরাম আমাদের অঞ্চলের বিশাল চাহিদা পূরণে যে সক্ষম নয়, তা স্পষ্ট হয়েছে
এই পটভূমিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত যেকোনো টিকা সংগ্রহের পাশাপাশি উত্পাদন অংশীদারির সম্ভাবনা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করা প্রয়োজন বিশ্ব যে শিগগিরই মহামারি থেকে মুক্তি পাবে, এমন সম্ভাবনা নেই রোগ নিরাময়ে কার্যকর কোনো ওষুধেরও দেখা নেই সুতরাং, পেটেন্ট অব্যাহতির দাবি এবং নিজেদের টিকা নিজেরা বানানোর প্রস্তুতিই জরুরি
(২৯ এপ্রিল, ২০২১-‘র প্রথম আলোয় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime in N

একটি জরিপ, নৈরাশ্য ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্ন

উন্নত গণতন্ত্রে সরকার , সরকারপ্রধান, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল এবং বিভিন্ন বিতর্কিত ইস্যুতে প্রায়ই জনমত জরিপ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কখনো বিশ্ববিদ্যালয়, কখনো সংবাদমাধ্যম, আবার কখনো বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব জরিপ করায়। বেশ কিছু পেশাদার জরিপকারী প্রতিষ্ঠানও আছে, যারা শুধু জরিপের কাজ করে। এসব জরিপ আমাদের গণমাধ্যমগুলোর অনলাইন ভোটের মতো নয়, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুধু সেই ওয়েবসাইটের নিয়মিত ব্যবহারকারীদের মতামত ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের দেশে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের প্রায় দুই দশক বার্ষিক জরিপে রাজনীতির গতিপ্রকৃতির চমৎকার প্রতিফলন দেখা যেত। কিন্তু গণতন্ত্রের ক্ষয়সাধনের সঙ্গে সঙ্গে সেই চর্চা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়িক প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে জরিপ করতে গেলে সরকারের সায় আছে কিনা সেটা দেখা হয়, নইলে পেশাদার বিশেষজ্ঞরা বা তাঁদের প্রতিষ্ঠানগুলো ওই দায়িত্ব নিতে চান না। কথা বলার ভয়ের মতো মতামত জানতে চাওয়াতেও এক ধরনের ভয়ের আসর পড়েছে। গণতন্ত্র প্রসারে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট, আইআরআই এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তারা এখনো মাঝে মধ্যে স্পর্শকাতর রাজন

ভিসা নিষেধাজ্ঞা গুরুতর, সাংবাদিক নির্যাতন কী

একই দিনের দুটি সংবাদ শিরোনাম, ’৯ মাসে ২১৭ সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার: আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ এবং ’পিটার হাসের বক্তব্য স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর চাপ, সমাবেশে সাংবাদিকনেতারা’। দুটো খবরই সাংবাদিকতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে। তবে একটি খবর, যাতে আছে সেই সব সাংবাদিকদের কথা, যাঁরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শারীরিক ক্ষতি অথবা গ্রেপ্তার ও মামলার কারণে হয়রানির শিকার হয়েছেন; আর অন্যটিতে ভবিষ্যতে কোনো গণমাধ্যমকর্মী যুক্তরাষ্ট্র যেতে চাইলে ভিসা না পাওয়ার কারণে তিনি বা তাঁর যে সম্ভাব্য ক্ষতি হতে পারে, তা নিয়ে আশঙ্কা। সাংবাদিকদের নিপীড়ন–নির্যাতন ও হয়রানির বিষয়ে গবেষণার কাজ ও তা প্রকাশের দায়িত্ব পালন করেছে একটি মানবাধিকার সংগঠন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার দুশ্চিন্তায় প্রতিবাদী হয়েছেন সাংবাদিকদের অপেক্ষাকৃত নতুন একটি প্লাটফর্ম জাস্টিস ফর জার্নালিস্ট।  বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নিয়মিত কাজের একটি হচ্ছে বিভিন্ন নিপীড়ন–নির্যাতন ও হয়রানির মত অধিকার লংঘনের তথ্য সংগ্রহ করা এবং তারই অংশ হিসাবে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ পেশা সাংবাদিকতার ওপর তাদের আলাদা মনোযোগ। তাদের প্রকাশিত হিসাব