সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হেফাজতের বিলুপ্তি, নাকি নবরুপ গ্রহণ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া সহিংসতার রেশ ধরে গত কয়েকদিন ধরে দেশ জুড়ে চলছে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান। গ্রেফতারের তালিকায় প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে ইসলামপন্থী সংগঠন, হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের। তবে শুধু তাঁদেরকেই যে আটক করা হচ্ছে, তা নয়। বিরোধীদল বিএনপি অভিযোগ করেছে, তাঁদের দলের সদস্যদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের ভাষ্যমতে, তাঁর দলের নেতাকর্মীরা উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভয়ে রাতে ঘরে ঘুমাতে পারছেন না। আরও একটি গোষ্ঠী তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের অভিযোগ করেছে। এঁরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের সদস্য।

গত ২৬ মার্চে শুরু হওয়া এবং দিন তিনেক ধরে চলতে থাকা সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, আহত হয়েছেন অনেকে এবং বিপুল পরিমাণে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ওইসব ঘটনাল কোনোটিতেই ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদ জড়িত থাকার কথা জানা যায় না। বরং তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের যে হাঙ্গামা হয়েছে, তা ঘটেছে নরেন্দ্র মোদির সফরের আগে, মার্চের ২৪ ও ২৫ তারিখে। কিন্তু ছাত্র-যুব অধিকার পরিষদের অন্তত অর্ধশতাধিক সদস্যকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।তাঁদের ধরপাকড়ে তাই প্রশ্ন উঠছে যে মোদিবিরোধী বিক্ষোভের জন্যই তাদেরকে ধরপাকড়ের লক্ষ্য করা হয়েছে কি না। নইলে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ তো সংবিধান প্রদত্ত অধিকার।   

বিএনপির অভিযোগ আরও গুরুতর এবং স্পষ্টতই একটি প্রবণতার প্রতিফলন। গত প্রায় সাত-আট বছরের ঘটনাবলী পর্যালোচনায় স্পষ্ট আলামত মেলে যে সরকারবিরোধী সবকিছুতেই বিএনপিকে দায়ী করা সরকার এবং পুলিশের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এই চর্চার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, মামলায় অজ্ঞাতসংখ্যক অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা এবং প্রয়োজনমত ও সুযোগ পেলেই বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক করে ওইসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো।        

হেফাজতবিরোধী অভিযান নিয়ে অবশ্য রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হিসাবে তাদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা অন্তত ৭৭টি, যেগুলোতে আসামীর সংখ্যা ৪৯ হাজার। তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মামলার সংখ্যা শতাধিক এবং আসামীর সংখ্যা আরও বেশি। গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে সংগঠনটির নেতাদের অনেকেই আছেন এবং তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে কী তথ্য মিলছে, তার নিয়মিত ধারাববিরণীও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। পুলিশের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া এসব তথ্যের মধ্যে এমনকি সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিশদ বিবরণও আছে।

হেফাজতের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে কয়েকটি গোষ্ঠী বেশ উচ্ছ্বসিত। এদের মধ্যে বামপন্থী এবং ডানপন্থী উভয় মতাদর্শের দল ও গোষ্ঠী রয়েছে। ডানপন্থীদের মধ্যে আছে প্রতিদ্বন্দী ইসলামী গোষ্ঠীগুলো। মতাদর্শের দিক থেকে এসব গোষ্ঠী যে হেফাজত থেকে খুব একটা আলাদা, তা মোটেও নয়। এরাও কট্টর রক্ষণশীল ইসলাম কায়েমের পক্ষে। এরাও পাকিস্তানের মতো আহমদীয়াদের অমুসলিম ঘোষণার জন্য মিছিল করেছে, নারী নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, পাঠ্যসূচির ইসলামীকরণের কথা বলেছে। আর বামপন্থীদের মধ্যে সরকারের সহযোগী ওয়ার্কাস পার্টি এবং জাসদের কথা বলা যায়। জাসদ হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করার দাবি জানিয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, সরকার যখন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে, পাঠ্যপুস্তকে নীরবে পরিবর্তন ঘটিয়েছে এবং নির্বাচনের প্রাক্কালে সমর্থন চেয়েছে, তখনও তাঁরা সরকারের সঙ্গত্যাগ করেন নি। যতক্ষণ পর্যন্ত ইসলামপন্থী কোনো গোষ্ঠী সরকারের কথায় চলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে সহাবস্থানে এদের খুব একটা আদর্শগত সমস্যা হয়েছে, তা বলা যায় না। এক অর্থে হেফাজত আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকলে তাতে কোনো সমস্যা বা বিপদের ঝুঁকি নেই বলেই তাদের ধারণা বা বিশ্বাস।    

সবধরণের সহিংসতার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার অবশ্যই হওয়া উচিত। কিন্তু চলমান অভিযানের উদ্দেশ্য কতটা স্বচ্ছ্ব এবং ন্যায্য তা নিয়ে যৌক্তিক কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়, যেগুলো উপেক্ষা করা চলে না। এরকম একটি প্রশ্ন হচ্ছে আট বছর আগের মামলাগুলোর হঠাৎ করে পুনরুজ্জীবন। ২০১৩ সালের ৫ মের ঢাকা অবরোধের ঘটনায় যেসব মামলা হয়েছিল, সেগুলোর তদন্ত বা বিচারের প্রশ্নে এত দিন কারও কোনো মাথ্যাব্যাথা দেখা যায়নি। এখন সেগুলোর পুনরুজ্জীবনে ইঙ্গিত মেলে, যেভাবেই হোক সরকার হেফাজতের বর্তমান নেতাদের অনেককেই শিক্ষা দিতে চান। এখানে স্মরণ করা যায়, ২০১৩ সালের হেফাজত দমনের পর সংসদে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা শাহ আহমদ শফী ব্যপকভাবে সমালোচিত হন এবং সেই সমালোচনার সূত্র ধরে তাঁকে অনেকেই তেঁতুল হুজুর নামে অভিহিত করেন। কিন্তু তাঁর আর্শীবাদই ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় আবশ্যিক হয়ে পড়েছিল। সরকারের যেসব মন্ত্রী-সাংসদ মাঝেমধ্যেই হাটহাজারিতে তাঁর আর্শীবাদের জন্য হাজিরা দিতেন, এখন শক্তিপ্রয়োগে হেফাজত নির্মূলের নীতি কি তাঁরা সমর্থন করছেন?

বিএনপির সঙ্গে হেফাজতের যোগসূত্রের কথাও আলোচিত হওয়ার দাবি রাখে, কেননা হেফাজতের শরীক যে চারটি রাজনৈতিক দল, তার মধ্যে একাধিক দল তাদের জোটসঙ্গী। হেফাজতের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব বা বৈরিতা তৈরি হলে বিএনপি যে তা থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অপেক্ষায় থাকবে, সেটাও কারো অজানা নয়। তবে বিএনপির চেয়ে হেফাজতের প্রতি সরকারের শরিক জাতীয় পার্টির ঘনিষ্ঠতা যে আরও বেশি সেই তথ্যটিও মনে রাখা দরকার। যার মানে দাঁড়াচ্ছে, গত এক দশকে মাদ্রাসাভিত্তিক এই সংগঠনটি দেশের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের সহানুভূতি ও সমর্থন পেয়ে এসেছে, যা একটি অনন্য ঘটনা। তবে, একটানা ১২ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটির পৃষ্ঠপোষকতার গুরুত্ব যে আলাদা সেকথা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না।

হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী রোববার রাতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা দেওয়ার পর একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। জাতীয় পার্টি এবং সরকারের নেপথ্য ভূমিকার তথ্য তো ইতিমধ্যেই প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় কমিটির বিলুপ্তি মানে হেফাজতের বিলুপ্তি নয়। ধারণা করা অযৌক্তিক হবে না যে সরকার-সমর্থক অংশটি এই সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। তবে তার ফলে গোষ্ঠীটির রক্ষণশীল মতাদর্শের কোনো পরিবর্তন ঘটবে এমনটি ধারণা করার কোনো কারণ নেই। 

একইদিনে হেফাজতের মূল ভিত্তি যে কওমী মাদ্রাসাগুলো, তার তদারককারী সংগঠন আল-হাইআতুল উলাইয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের প্রচলিত সব ধরনের রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়। আল-হাইআতুলের অধীনেই কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা হয়ে থাকে। আপাতদৃশ্যে এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক ভাবার বিভ্রম ঘটতে পারে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, মাদ্রাসার যে সব ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে আছেন, তাঁরা রাতারাতি অরাজনৈতিক হয়ে যাবেন এমন প্রত্যাশা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। তা ছাড়া রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাজনিত কারণে নিষিদ্ধঘোষিত না হয়ে থাকলে যেকোনো রাজনৈতিক মত সমর্থন বা দলের সদস্য হওয়া প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের অধিকার এবং সে কারণে তাঁদের সেই অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না। 

রাজনীতিকরা ইহকালের পাপমোচন এবং পরকালের জন্য পূণ্য সংগ্রহের আশায় স্কুলের বদলে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করবেন; স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের যে স্বায়ত্ত্বশাসন অনুপস্থিত, মাদ্রাসায় তার চেয়েও বেশি স্বশাসন বহাল থাকবে; ক্লাব এবং নাগরিক সংগঠন পরিচালনায় আইনগত কর্তৃপক্ষের তদারকির নামে নানারকম নিয়ন্ত্রণ থাকলেও ধর্মীয় সংগঠন ও তার অর্থায়ন থাকবে আইনী বিধিমুক্ত; সর্বোপরি, নির্বাচনের প্রয়োজনে রাজনীতিতে তাদের বিশেষ অবস্থান বজায় থাকলে মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনগুলোর প্রভাব নানা আবরণে যে অক্ষুন্ন থেকে যাবে, তা মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। মাদ্রাসাভিত্তিক রাজনীতিতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার সুদূরপ্রসারী প্রভাব এত সহজেই কি নাকচ করা সম্ভব?

(২৮ এপ্রিল, ২০২১-র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...