সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কৃতিত্ব দাবি করলে দায়টাও স্বীকার করুন

লকডাউন নিয়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই অস্বস্তি, অসন্তোষ ও ক্ষোভ-বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে।  এক বছর ধরেই তা চলছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বন্ধ রেখে অস্বাভাবিক দম বন্ধ করা পরিবেশে জীবনযাপনের আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক চাপ সহ্য করা প্রায় অসাধ্যসাধনের মত একটি বিষয়। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও সংক্রমণ রোধে লকডাউনের কোনো বিকল্প কেউ এখনো দেখাতে পারেনি। কথিত হার্ড ইমিউনিটির তত্ত্ব যে দেশটিতে প্রয়োগ করা হয়েছিল, সেই সুইডেনও গত নভেম্বরেই স্বীকার করেছে, কৌশলটি ভুল ছিল। সর্বসাম্প্রতিক হিসাবে ইউরোপে এখন সংক্রমণ হার সবচেয়ে বেশি সুইডেনে ( প্রতি দশ লাখে ৬২৫ জন)।

সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের সময়ে যে সব দেশ লকডাউনের প্রশ্নে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেছে, সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেছে, তাদের চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। লকডাউন দিতে যত দেরি হয়েছে, তার স্থায়ীত্ব তত বেশি দীর্ঘ হয়েছে। ব্রিটেন এর সবচেয়ে বড় নজির। বিশ্বে আর কোনো দেশেই এত বেশি দিন ধরে তৃতীয় দফায় এতটা কড়া লকডাউন দিতে হয়নি। কিন্তু তারপরও মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে এবং অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে তা তিন শ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। গতবছর বড়দিনের উৎসবকে রক্ষা করতে অক্টোবর-নভেম্বর থেকেই বিশেষজ্ঞরা সীমিত আকারে লকডাউনের কথা বললেও সরকার তা গায়ে মাখেনি। কিন্তু, ডিসেম্বরে অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে যে বড়দিনের মাত্র কয়েকদিন আগে পুরোমাত্রায় লকডাউন দিতে সরকার বাধ্য হয়। সেই লকডাউন আংশিকভাবে শিথিল হয়েছে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে, পুরোপুরি খুলবে ২১ জুন। এতটাই কড়াকড়ি যে এখনো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিদেশে গেলে জরিমানা গুণতে হবে পাঁচ হাজার পাউন্ড। ইতিমধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর অর্ধেকেরও বেশি মানুষ প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন। কিন্তু, তারপরও নিয়ন্ত্রণছাড়া  সামাজিকতা ও মেলামেশা করলে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের আশংকার কথা প্রধানমন্ত্রীই জানিয়েছেন।

সংক্রমণের এই প্রবণতা দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়েও দেখা গেছে। লকডাউন যে দেশ ঠিক সময়ে ঠিক মাত্রায় দিয়েছে, সেই দেশ তত কম ক্ষতির শিকার হয়েছে এবং দ্রুততম সময়ে নিয়ন্ত্রণমুক্ত হতে পেরেছে বা পারছে। কার্যকর টিকা উদ্ভাবনের কারণে অনেকে একটু বেশিই আশান্বিত হয়েছেন। কিন্তু একদিকে যেমন চাহিদা মেটানোর মত যথেষ্ট টিকার উৎপাদন সম্ভব হয়নি, অন্যদিকে ভাইরাসের বৈশিষ্ট্যের সতত পরিবর্তন সংক্রমণের গতি এবং ভয়াবহতাও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশও এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম নয়। প্রথম দফায় মৃত্যু এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় সরকার কৃতিত্ব দাবি করলেও দ্বিতীয় দফার বিপদের মাত্রা আঁচ করতে পারেনি এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের প্রায় সর্বসম্মত অভিমত এবারও লকডাউন দিতে দেরি হয়ে গেছে এবং যেভাবে তা কার্যকরের কথা বলা হয়েছে, তা যথেষ্ট ছিল না। সাম্প্রতিককালে বড় বড় আয়োজনগুলোতে নানাধরণের সতর্কতা নেওয়ার পরও তা কতটা ঠিক হয়েছে, সেই প্রশ্ন কোনোভাবেই নাকচ করে দেওয়া যায়না। কর্তৃপক্ষ ছাড়া আর কেউ সীমিত আকারের লকডাউনের সময়ে বইমেলা সচল রাখার সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন বলে প্রমাণ মেলে না। অযৌক্তিক এবং সামঞ্জস্যহীন নির্দেশনা জারি করেও শেষপর্যন্ত সেগুলো বদলাতে হয়েছে। মহানগরীর ভিতরের গণপরিবহন যেমন চলতে দেওয়া হয়েছে, তেমনই দোকানপাটও খুলে দেওয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্য বিভাগ মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষাকে মহাসংক্রমণের উৎসবে রুপান্তরিত করেছিল।

একইভাবে ফিল্ড হাসপাতালের প্রস্তাবও প্রয়োজনীয় গুরুত্ব পায়নি। ফিল্ড হাসপাতালের ধারণা নিয়েও বিভ্রান্তি আছে বলে মনে হয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা যুদ্ধাবস্থায যেভাবে তাঁবু খাটিয়ে অস্থায়ী হাসপাতাল চালানো হয়, সেরকম ব্যবস্থা সীমিত আকারে কার্যকরে কয় সপ্তাহ প্রয়োজন হয়? দাতাদের সহায়তায় কেনা ৩০০ ভেন্টিলেটর, ১২০০ অক্সিজেন কনসেট্রেটর ১০ মাস যাবৎ বিমানবন্দরে পড়ে থাকার রেকর্ড থেকে ভালোই ধারণা মেলে যে স্বাস্থ্যখাতের সক্ষমতা বাড়াতে আমাদের আমলারা কী প্রাণান্তকর চেষ্টাই না করে চলেছেন! সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আইনগত দায়িত্ব যাঁর, সেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার খুরশীদ আলম অবশ্য এজন্য সরকারের আইনকানুনের জটিলতার কথা বলেছেন। প্রথম আলোর খবরেই বলা হয়েছে এডিবির অর্থায়নে ১৭০টি আধুনিক আইসিইউ শয্যা, ১৭০টি ভেন্টিলেটর, ১০৭টি আরটি-সিপিআর যন্ত্র কেনার কথা ছিল। এর মধ্যে শুধু ২৫টি আরটিপিসিআর যন্ত্র কেনা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ ছিল প্রায় ৬৭৮ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত খরচ ৭৮ কোটি টাকাও খরচ হয়নি।

অথচ অভিনেত্রী ও সাবেক সাংসদ কবরীর জন্য আইসিইউর ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়েছে। প্রবণি সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ারের জন্য আইসিউই মেলেনি। গণমাধ্যমে এখন যেসব ছবি আসতে শুরু করেছে, তা মেনে নেওয়া কঠিন। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে রোগীদের মৃত্যু হবে, অক্সিজেনের অভাবে হাহাকার পড়বে এগুলোর দোষও কি জনসাধারণের ? এখন যে হারে সংক্রমণ ঘটছে তা দ্বিগুণ হলে অবস্থাটা কী দাঁড়াবে?  ব্রিটেনে গত অক্টোবরে দেখা গেছে সংক্রমণ দ্বিগুণ হয়েছে প্রতি নয়দিনে।

প্রশ্ন উঠেছে আমাদের শ্রমজীবি এবং ন্ম্নি আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার পদক্ষেপ বাস্তবসম্মত নয়। এই বক্তব্যের যৌক্তিকতা মেনে নিয়েই দেশের ভেতর এবং বাইরে থেকে পরামর্শ এসেছে এসব জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য ও নগদ অর্থের সহায়তা দেওয়ার। আর্ন্তজাতিক দাতারাও এক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু, গত একবছরের অভিজ্ঞতা হচ্ছে পঞ্চাশ লাখ দরিদ্র লোকের কাছে এক মাসের আড়াই হাজার টাকা পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতাও সরকারের নেই ( ২০০০ কোটি টাকা পড়ে আছে, প্রথম আলো, ১২এপ্রিল, ২০২১)। ৬৪ জেলায় সচিবদের আবারও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগেরবার দায়িত্ব পেয়ে তাঁরা কতটুকু সাফল্য পেয়েছিলেন? মাঠের মধ্যে লোক জড়ো করে চালডাল দেওয়ার ছবি তুলে প্রচারমুখী রাজনীতিকদের মতো তাঁদের ছবি তোলার কাজটা অবশ্য ভালোই হয়েছে!

এতকিছুর পরও প্রথম দফায় সংক্রমণ মোকাবিলায় সব সাফল্য সরকারের! এখন দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের বিষয়ে সরকারের বক্তব্য দুটো। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথায় লোকজনের স্বাস্থ্যবিধি না মানায় সংক্রমণ বাড়ছে, আর সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাষ্যে বিএনপির অপরিণামদর্শী বক্তব্য ও উস্কানিতে অনেকে স্বাস্থ্যবিধির প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী অবশ্য স্বাস্থ্যবিধি না মানার কথাটা বলেছিলেন গতমাসের তৃতীয় সপ্তাহে। কিন্তু তখন বিশেষজ্ঞেদের পরামর্শ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সরকারের বক্তব্যের মূল কথা সংক্রমণের সব দায় হয় স্বাস্থ্যবিধি না মানা জনগেণের, নয়তো বিএনপির। সরকারি বিধিমালা অমান্য করতে জনসাধারণকে প্রভাবিত করার এতোটা সামর্থ্য যদি সত্যিই বিএনপির থেকে থাকে, তাহলে তো সরকারের উচিত হবে মির্জা ফখরুলের প্রস্তাব অনুযায়ী তাঁর দলসহ সব দলকে সঙ্গে নিয়ে সংকট মোকাবিলায় জাতীয় দূর্যোগ মোকাবিলার উদ্যোগ নেওয়া।

টিকার মাধ্যমে সংকট উতরানোর যে আশা সরকার দেখিয়েছিল, তা যে বাস্তবসম্মত ছিল না, সেটাও এখন প্রমাণিত। টিকা আমদানির ক্ষেত্রে বেক্সিমকোর তরফে যে গ্যারান্টি ছিল, তা পূরণ হবে কি না, সেই সন্দেহ রয়েছে। এখন পর্যন্ত যে ৭০ লাখ টিকা এসেছে এবং ১২ লাখ ডোজ উপহার পাওয়া গেছে,  ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে শুধু একটি ডোজের হিসাবেও তা চাহিদার মাত্র ৪ শতাংশের মতো। ধনী দেশগুলোর স্বার্থপরতার পাশাপাশি ভারতের নিজস্ব চাহিদার বিপুলতার কারণে ঝুঁকিমুক্তির পর্যায়ে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট টিকা আগামী একবছরেও যোগাড় হবে কিনা তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেন না।  

লকডাউনের ঘোষণায় গ্রামমুখী জনস্রোত দেখে যাঁরা অবাক হয়েছেন, তাঁরা সম্ভবত গতবছরের মার্চ-এপ্রিলের কথা ভুলে গেছেন। ঢাকা শহরের শ্রমজীবিদের একটা বড় অংশেরই কাজ না থাকলে গ্রামে ফেরার বিকল্প নেই। একইকথা নিম্ন আয়ের কর্মচারীদের জন্যও প্রযোজ্য। মহামারির আগে ২০১৯ সালের সরকারি  (বিবিএস) জরিপের তথ্য ছিল শহরের ১২ শতাংশ দরিদ্র পরিবারে খাবার নেই। এঁদের খাবারের সংস্থান নিশ্চিত করা গেলে তাঁদের এভাবে ঢাকা ছাড়তে হতো না। বৈশাখী বোনাস পাওয়া এবং ঈদ বোনাসের অপেক্ষায় থাকা সরকারি কর্মচারি ছাড়া অন্যরা রুটি-রুজির দুশ্চিন্তায় কাতর। ক্ষমতাসীন দল এবং সরকার কেউ নীতিমালা কিম্বা তার বাস্তবায়ন কোনোটিতেই মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন কি? সুতরাং, জনসাধারণের কথিত দায়িত্বহীনতা কিম্বা বিরোধীদলের উসকানিকে দায়ী করে সমস্যার সমাধান মিলবে না।

(১৬ এপ্রিল, ২০২১-র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

How to Describe the Awami League Accurately?

In an article titled ‘How Not to Describe the Awami League’ , published in this paper, British journalist David Bergman rightly underscores the importance of accuracy in labeling a political party—particularly when such labels carry potential legal consequences. Those familiar with Bergman’s work over the years know that he has consistently taken on politically sensitive and controversial subjects, often at significant personal and professional cost. His courage and commitment to journalistic integrity deserve recognition. Bergman is correct in asserting that “while serious criticisms of the Awami League are both valid and necessary, they must be proportionate and grounded in fact.” His analysis focuses primarily on the legal validity and appropriateness of labeling the Awami League as “fascist” or “Nazi.” He argues that comparing the party to the Nazi regime trivialises the scale of Nazi atrocities and misrepresents the complexities of Bangladeshi politics. Indeed, any historical comp...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...