সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গ্লাসগো চুক্তি ও জলবায়ু ন্যায়বিচারের প্রশ্ন

গ্লাসগোতে এবারের জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজনের ব্যাপকতা ও প্রচার অতীতের সম্মেলনগুলোর চেয়ে অনেক বেশি আলোচিত এবং বেশি অংশগ্রহণমূলক ছিল। এর অন্যতম কারণ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের রাজনৈতিক আকাংখা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বিশ্ব রাজনীতিতে ব্রিটেন নিজের নেতৃত্বের দাবিটি ধরে রাখতে মরিয়া। জলবায়ু সনদে অংশগ্রহণকারী প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণের উদ্দেশ্যেই নির্দিষ্ট বিরতিতে এই ফোরামে মিলিত হয়ে থাকেন। 


ছয় বছর আগে প্যারিস চুক্তিতে চলতি শতকের শেষে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দুই ডিগ্রিতে সীমিত রাখার লক্ষ্য নির্ধারন করা হলেও এপর্যন্ত গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নে ধীরগতি ও ঘাটতি প্রকট। বিজ্ঞানীরা তাই হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেন যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দেড় ডিগ্রির মধ্যে আ্টকাতে না পারলে বিশ্বে জলবায়ুর কারণে যেধরণের সংকট তৈরি হবে, তা এতোটাই গুরুতর হবে যে তার জন্য এখনই লাল সতর্কতা জারি করা দরকার। গত দশকে বিশ্বে যেভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির নতুন নতুন রেকর্ড হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ইতোমধ্যেই বিশ্বের তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি বেড়ে গেছে। বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তে ঘন ঘন আবহাওয়াজনিত চরম দূর্যোগ দেখা দিচ্ছে। এই পটভূমিতে বৃটিশ সরকার তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ডিগ্রিতে সীমিত করার লক্ষ্যে সব দেশের নেতাদের কাছ থেকে রাজনৈতিক অঙ্গীকার আদায়ের উচ্চাকাংখা নিয়ে শীর্ষ সম্মেলনের পর্ব যোগ করে। রাজনৈতিক অঙ্গীকারের সেই প্রত্যাশা যে পূরণ হয়নি, তা বোঝা যায় যখন বরিস জনসন নিজেই সম্মেলনের অর্জন ১০ এর মধ্যে ৬ বলে স্বীকার করেন। আর, জাতিসংঘের হিসাবে সবাই গ্লাসগোর অঙ্গীকার পূরণ করলেও তাপমাত্রা বাড়ার হার ২ ডিগ্রির উপরেই থাকবে। 


সম্মেলনের অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ হাজার হবে বলে বলা হলেও পরে জানানো হয়েছে গ্লাসগো শহরে প্রায় ৫০ হাজার অতিথির পদচারণ ঘটেছে। শহরটিতে সবার আবাসনের ব্যবস্থা সম্ভব না হওয়ায় আমাদের অনেককেই প্রতিদিনই কমপক্ষে ঘন্টাখানেকের দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়েছে। তবে বিপুল উপস্থিতি মানেই যে সবচেয়ে বিপন্নবোধ করা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা তাঁদের কথা তুলে ধরতে পেরেছেন, তা নয়। সম্মেলনের বাইরে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া হাজার হাজার শিশু, তরুণ, নারী, আদিবাসী, শিক্ষাবিদ, কৃষক ও শ্রমিক প্রতিনিধি সেরকম অভিযোগই করেছেন। এমনকি, সম্মেলনে গৃহীত চূড়ান্ত ঘোষণার তৃতীয় খসড়া প্রকাশের পর বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী বা এনজিওর প্রতিনিধিরা মিছিল করে সম্মেলনকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে গেছেন। 


তাঁরা এবং রাস্তার বিক্ষোভকারীরা একটি গুরুতর অভিযোগও করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, শতকোটিপতি ব্যবসায়ীদের সম্মেলনের মঞ্চে সুযোগ দেওয়া হয়েছে পরিবেশবান্ধব পরিচয় ধারণের, যাকে বলা হয় গ্রিনওয়াশিং। এছাড়াও, অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় যাচাই করে দেখা গেছে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতের  প্রতিনিধি ছিলেন পাঁচশো জনেরও বেশি। তাঁরা যে তেল-গ্যাস-কয়লায় বিনিয়োগকারীদের পক্ষে তদবির করবেন, সেই অনুমান নাকচ করা সহজ নয়। পরিবেশবাদী বিক্ষোভকারীদের অনেকের দাবি, কপ ২৬ এ বহুল উচ্চারিত নেট জিরো কথিত নয়া-উপনিবেবেশবাদী কৌশল। কার্বন উদগিরণ যতটা হবে, ঠিক ততটাই বায়ুমন্ডল থেকে অপসারণের মাধ্যমে ভারসাম্য বজায় রাখাই হচ্ছে নেট জিরো। নেট জিরো অর্জনের জন্য বড় দূষণকারী শিল্প, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারগুলো যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করে, তার মধ্যে সবচেয়ে সহজ সমাধান জমির সদ্ব্যবহার ও গাছ লাগানো। কেননা, গাছ কার্বন শুষে নেয়। 


এই কৌশলকে বন ও জমিকে পণ্যে রুপান্তরের প্রক্রিয়া অভিহিত করে অনেকে বলছেন বৃহৎ কর্পোরেশনগুলোকে এর মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের সম্পদ শোষণের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়ামস কলেজের পরিবেশবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক লরা জে মার্টিন উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন বিদেশি কোম্পানি কীভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বিপুল পরিমাণে জমির মালিক হয়ে যাচ্ছে এবং আদিবাসীসহ স্থানীয় জনগোষ্ঠী কীভাবে বাস্তুচ্যূত হচ্ছেন (এভয়ডিং কার্বন কলোনিয়ালিজমঃ ডেভলপিং নেশ্নস কান্ট পে দ্য প্রাইস ফর পলুশন, দ্য হিল)। কার্বনের দায় বিক্রির শীর্ষে আছে যে দেশগুলো, সেগুলো হচ্ছেঃ যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড। আর, যেসব দেশ দায় নিরসনে লেনদেনে এগিয়ে আছে, সেগুলো হলো পেরু, ব্রাজিল, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে, বলিভিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়া। , 


ধনী দেশগুলো এজন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গাছ লাগাতে এবং কম দূষণকারী জ্বালানি ব্যবহারের জন্য অর্থ দিয়ে নিজেদের কার্বনের দায় স্থানান্তর (অফসেটিং) করতে পারে। এই সুবিধাকেও পরিবেশবাদীরা গ্রিণওয়াশিং বলে থাকেন। পজিটিভ মানি  নামের একটি পরিবেশবাদী গোষ্ঠীর জেষ্ঠ্য অর্থনীতিবিদ ডেভিড বার্মস বিবিসিকে বলেন কার্বনের দায় স্থানান্তর গ্রিনওয়াশিংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি। এটি জালিয়াতিতে ভরা এবং এতে করে কোম্পানিগুলো বায়ুমন্ডলে গ্যাস উদগিরণ অব্যাহত রেখেও গ্যাস নির্গমন লক্ষ্যপূরণের দাবি করতে পারছে। এই কার্বন লেনদেনের ব্যাপারটির সুবাদে বড় বড় কর্পোরেশন গ্যাস নির্গমন সত্ত্বেও দায়মুক্তি ভোগ করে যাচ্ছে এবং ধনী দেশগুলোও লক্ষ্যপূরণের দাবি করতে পারছে। বিজ্ঞানীদের অনেকেই বলছেন, এই ব্যবস্থায় অনেক ধনী দেশই কার্বন নিঃসরণ বন্ধের পথে এগোবে না। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অষ্ট্রেলিয়ায় তেল ও কয়লা উত্তোলনের নতুন প্রকল্প বাতিল না করাকেও এর আলামত হিসাবে উল্লেখ করেন। গ্লাসগোর সম্মেলন কেন্দ্রটি ছিল দুটি অংশে বিভাজিত - ক্লাইড নদীর এক পারে ব্লু জোনে সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও দরকষাকষির রুদ্ধদ্বার বৈঠক; আর, অপর তীরে গ্রিন জোনে প্রযুক্তিগত সমাধানের নানা বাণিজ্যিক উদ্যোগের প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে দূষণমুক্ত যানবাহন, পণ্যবাহী ডুবোজাহাজ, হালকা বিমান থেকে শুরু করে এমনকি বন ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তিও ছিল, অর্থাৎ বাণিজ্যিক আকাংখাও সেখানে গুরুত্ব পেয়েছে । 


কপ ২৬ এ আরেকটি বহুলশ্রুত কথা ছিল জলবায়ু বিষয়ক ন্যায়বিচার (ক্লাইমেট জাস্টিস)। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সব দেশে, সব জনগোষ্ঠী এবং বিভিন্ন প্রজন্মের ওপর সমান হয় না। ফলে, ন্যায্যতার প্রশ্ন অবশ্যম্ভবী। আন্তর্জাতিক পরিসরে এই অন্যায্য বৈষম্যের ঐতিহাসিক দায়ও অনস্বীকার্য। গ্লাসগো চুক্তি যেদিন গৃহীত হয়, সেদিনের নিঊইয়র্ক টাইমস পত্রিকার যুক্তরাষ্ট্র সংস্করণের প্রথম পাতার এক বিরাট অংশ জুড়ে ছাপা গ্রাফ বলছে ১৭০ বছরের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের ১২ শতাংশ মানুষের বসতি যে ২২টি শিল্পোন্নত দেশ, তারা গ্রিনহাউস গ্যাসের ৫২ শতাংশের জন্য দায়ী; আর, বাকি দেশগুলোর জনগোষ্ঠী বিশ্বের ৮৮ শতাংশ হলেও তাদের গ্যাস উদগিরণ হচ্ছে ৪৮ শতাংশ। ধনী দেশগুলোর মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্র একাই দায়ী ২৪ দশমিক ৬ শতাংশের জন্য। বিপরীতে, ঝুঁকির দিকে থেকে শীর্ষে আছে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসহ বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলো। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধি পেলে অনেক দ্বীপরাষ্ট্রই তলিয়ে যাবে। যে কারণে মালদ্বীপের মন্ত্রী তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারতের কয়লার অবসায়ন বিষয়ক সংশোধনীতেও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, `মালদ্বীপের জন্য এতে খুব দেরি হয়ে যাবে`। 


শিল্পায়নের সিংহভাগ সুফল ভোগকারী ধনী দেশগুলোর ঐতিহাসিক দায় ঘিরেই অপূরণীয় ক্ষতি ও লোকসানের ক্ষতিপূরণের দাবি উঠেছে, যার ন্যায্যতা নিয়ে তেমন একটা প্রশ্নের অবকাশ নেই। কিন্তু ধনী দেশগুলোর আশঙ্কা, ক্ষতিপূরণের দাবি স্বীকার করার পরিণতি হবে সীমাহীন দাবি। এই ক্ষতিপূরণের ভিত্তি ও পদ্ধতি ঠিক করার প্রশ্ন দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। তবে এবার কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। দূর্ভোগের শিকার দেশগুলোর হতাশার আরও একটা বড় কারণ দূষণমুক্ত জ্বালানি ও প্রযুক্তিতে উত্তরণ, ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য ধনী দেশগুলো যে পরিমাণে সহায়তার অঙ্গীকার করেছিল, তা ২০২০ সালের মধ্যে পূরণের কথা থাকলেও সেই প্রতিশ্রুতি পালিত হয়নি। 


এসব কারণে ক্ষুব্ধ উন্নয়নশীল দেশগুলোর আকুতি সবচেয়ে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মোটলি। তাঁর কথায়, ক্ষয়ক্ষতি পূরণে অর্থায়নের ব্যবস্থা বাদ দিয়ে কোনো ভালো সমাধান মিলবে না। উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষতির পরিমাণ বিপুল উল্লেখ করে তিনি বলেন চলতি বছরে জার্মানিতে যে বন্যা হয়েছে তাতে ক্ষতির পরিমাণ দেশটির জিডিপির ১ শতাংশেরও কম। আর, বা্ররবাডোজে মাত্র চার ঘন্টার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির পরিমাণ তাদের জিডিপির আড়াই গুণ বা ২৫০ শতাংশের বেশি। এই অসম ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে যে সহমর্মিতা ও সংহতি ধনী দেশগুলোর কাছে আশা করা হয়েছিল, তা পূরণ তো হয়ইনি, উপরন্তু ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫ শতাংশ গ্যাস নির্গমন কমানো, আর ২০৫০ এর মধ্যে নেট জিরো অর্জনে সব দেশের কাছে সমমাত্রার অঙ্গীকার দাবি করা হয়েছে। অর্থায়নের জন্য বেসরকারি সূত্রের শরণাপন্ন হতেই উতসাহ দেওয়া হয়েছে।   


গ্লাসগো সম্মেলনের আগে থেকেই বলা হচ্ছিল সময় নষ্ট করার সময় আর নেই। কিন্তু সেই সময় নষ্ট এড়ানো যায় নি। ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর ঝুঁকি সহসা না কাটলেও ন্যায্যতার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই, সে লড়াইকে নয়া-উপনিবেশবাদবিরোধী বলা হোক, আর না হোক।  


(২১ নভেম্বর, ২০২১-এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...