সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দুর্বল গণতন্ত্রের দ্বিতীয় সম্মেলনে আমন্ত্রণের আশা

যত দিন যাচ্ছে ততই আমরা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সৃজনশীলতায় মুগ্ধ হচ্ছি।  তাঁর সর্বসাম্প্রতিক ব্যাখ্যা এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। ৯ ও ১০ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে গণতন্ত্র সম্মেলন আয়োজন করেছেন, সেই সম্মেলনে বাংলাদেশ কেন আমন্ত্রণ পেল না - এ রকম এক প্রশ্নের উত্তরেই তাঁর ওই ব্যাখ্যা; সিদ্ধান্তটি যদিও আয়োজক বাইডেন প্রশাসনের। তাছাড়া কারো অনুষ্ঠানে আমি কেন আমন্ত্রণ পেলাম না, এ প্রশ্ন খুব একটা শোভনীয়ও নয়। তবুও আমাদের আগ্রহের অন্ত নেই। তাই আয়োজকের ব্যাখ্যার অপেক্ষায় না থেকে প্রশ্নটি ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের প্রতি। আয়োজক দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত ভয়েস অব আমেরিকার রিপোর্ট বলছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশগুলোকে গণতন্ত্র সম্মেলনে ডেকেছে, যে কারণে আমন্ত্রিতদের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই।


আমরা যে উন্নত গ্ণতন্ত্র সে বিষয়ে যাতে কেউ সন্দেহ পোষণ করতে না পারেন, এ জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে পরিষ্কার করে বলেছেন, সেখানে অনেক লোককে ভোট দিতে দেয়া হয়নি। আফগানিস্তানেও একই অবস্থা ঘটছে। মিয়ানমারে বর্তমানে চলছে সেনা শাসন, আর আফগানিস্তানে তালেবান, যাদের কোনোভাবেই গণতন্ত্র বলা যাবে না। তুলনার দিক থেকে নিশ্চয়ই আমরা মিয়ানমার ও আফগানিস্তানের থেকে উন্নত গণতন্ত্র। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি যে উদাহরণসহ একটি ব্যাখ্যা আমাদের সামনে হাজির করলেন, তার প্রশংসা না করে পারা যায় না। দূর্মুখদের কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন, মিয়ানমার এবং আফগানিস্তান - দুই জায়গাতেই ভোট হয়েছিল এবং যথাক্রমে সামরিকবাহিনী ও তালেবান ক্ষমতা দখল না করলে তাদের নির্বাচিত নেতারা আমন্ত্রিতদের তালিকায় উপরের দিকেই জায়গা পেতেন।   


গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাওয়া ১১০টি দেশের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দক্ষিণ এশিয়া থেকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এবং মালদ্বীপের নাম আছে।  ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিতব্য গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রিতদের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার যে চারটি দেশ বাদ পড়েছে সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান এবং ভুটান। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর গণতন্ত্র সম্মেলন নিয়ে আলাদা যে ওয়েবসাইট চালু করেছে, সেখানে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নিজের কথায় বলা আছে, তিনটি প্রধান উদ্দেশ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে এ সম্মেলন - ১. কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াই, ২. দুর্নীতি মোকাবিলা ও দমন এবং ৩. মানবাধিকারের প্রসার। সেখানে আরও বলা হয়েছে, সম্মেলনের লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে যেসব দেশ অকৃত্রিম আগ্রহ প্রকাশ করবে, সেগুলোর সাথে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। 


তবে প্রথম আলোর এ-সংক্রান্ত ই-মেইল জিজ্ঞাসার জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র কোন দেশকে কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বা হয়নি, তা আলোচনায় অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছেন, `সম্মেলনে প্রতিষ্ঠিত এবং উদীয়মান গণতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃত দেশের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।। কোনো গণতন্ত্রই নিখুঁত নয়—এটা মেনে নিয়েই আমন্ত্রিতরা সমবেত হচ্ছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। একটু মনোযোগ দিয়ে পর্যালোচনা করলেই দেখা যাচ্ছে, আমন্ত্রিত দেশগুলোর নাগরিকরা অন্তত ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও কংগ্রেস সেসব নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেনি। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর যে তাদের নিজস্ব বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্টকেও বিবেচনায় রাখবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র সউদি আরব কিম্বা মিশরকেও তারা তালিকায় রাখতে পারেনি। 


গণতন্ত্র সম্মেলনের বিষয়টি যে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক রাজনীতির অংশ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পূর্বসুরি ডোনাল্ড ট্রাম্প যে দুটি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে পিছনের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন, তার একটি হচ্ছে গণতন্ত্র এবং অন্যটি জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আস্থা পুনরুদ্ধারে দেশটি যে কতটা তৎপর হয়েছে, তা বোঝা গেছে সদ্য অনুষ্ঠিত কপ ২৬ নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিশেষ দূত জন কেরির কূটনৈতিক তৎপরতায়। তিনি বাংলাদেশও সফর করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেন জলবায়ু বিষয়ক এক বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনে যে ৪০টির মত দেশের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তাতে বাংলাদেশও ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি অভিঘাত যে কয়টি দেশকে সহ্য করতে হবে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে প্রথম সারিতেই আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জোট ভালনারেবল কান্ট্রিজ ফোরাম (ভিসিএফ) এর চেয়ারও  এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং, বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে কেউ জলবায়ু সম্মেলন আয়োজন করবে সেটা ভাবনারও অতীত। 


গণতন্ত্র সম্মেলনের বিষয়টিকে তাই জলবায়ু সম্মেলনের সঙ্গে তুলনা করা চলে না। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগ বিশ্বে তার প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে কোণঠাসা করার একটা প্রচেষ্টা। চীন ও রাশিয়াও সম্মেলনে আমন্ত্রিত নয় এবং তারা আনুষ্ঠানিকভাবে একইধরণের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রভাব বলয় সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে।  পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের ভাষ্যমতে আমরা যেহেতু দূর্বল গণতন্ত্র নই, সেহেতু নিজেদের এখন চীন ও রাশিয়ার সমকক্ষ ভেবে কিছুটা আত্মতৃপ্ত হতে পারি। 


চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা বা উন্নয়নে চীনের ওপর নির্ভরতার কারণে বাংলাদেশকে এই গণতন্ত্র সম্মেলনে ডাকা হয় নি বলেও কেউ কেউ যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা সম্ভবত ধারণা করছেন যে পাকিস্তানের চীন নির্ভরতা যে আমাদের চেয়ে কত বেশি, সেটা বাংলাদেশের লোকজন জানে না।  


শ্রীলংকার আমন্ত্রণ না পাওয়ার কথা উল্লেখ করেও অনেকে সান্ত্বনা খুঁজেছেন। কেননা তাঁদের বিবেচনায় শ্রীলঙ্কার গণতন্ত্র নিয়ে তো প্রশ্ন করা চলে না, যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। শ্রীলঙ্কার মানবাধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ-উৎকন্ঠার কথা তাঁরা হয়তো ভুলে গেছেন। তামিল বিদ্রোহ দমনের সময়ে পরিচালিত গণহত্যার তদন্ত ও বিচারে শ্রীলংকা সরকারের অনাগ্রহ ও গড়িমসির কারণে দেশটির ওপর পাশ্চাত্যের দেশগুলোর চাপ বাড়ছে। যে কারণে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাভেন্দ্র সিল্ভাকে শ্রীলঙ্কার সেনাপ্রধান নিযুক্ত করায় যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর ও তাঁর পরিবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।  


আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন অবশ্য একথাও বলেছেন যে বাংলাদেশকে বাদ দেয়া হয়েছে - সেটা বলা ঠিক হবে না । হয়তো পরে তারা বাংলাদেশেকেও বলবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের তথ্যটুকু যথার্থ, বাকিটা আশাবাদ। গণতন্ত্র সম্মেলনের ওয়েবসাইটেই বলা হয়েছে, দ্বিতীয় গণতন্ত্র সম্মেলন হবে এক বছর পর। কিন্তু, গণতান্ত্রিক সংস্কার ছাড়া আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রায় এক দশক ধরে চুক্তিবদ্ধ লবিস্ট বিজিআর দ্বিতীয় সম্মেলনে আমন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে পারবে তো? স্টকহোমভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেকটোরাল অ্যাসিস্ট্যান্স (আইডিইএ) এর সর্বসাম্প্রতিক গণতন্ত্র পরিস্থিতি ২০২১ প্রতিবেদন সেদিক থেকে উদ্বেগ বাড়ায়। তাদের ওই প্রতিবেদন বাংলাদেশকে এখন আর হাইব্রিড গণতন্ত্রও বলছে না, ‘কর্তৃত্ববাদী শাসনের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।


(৪ ডিসেম্বর, ২০২-`র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...