সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

২০১৮ সালের ভোটের কালিমা মোছা কি সম্ভব

আজকের দিনটি আওয়ামী লীগ কীভাবে উদযাপন করছে, তার কোন ইঙ্গিত মঙ্গলবার পর্যন্ত খবরের কাগজে চোখে পড়েনি। তবে গত বছর তারা গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসাবে দিনটি উদযাপন করেছে। সেটাই তাদের করার কথা। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে যত কথাই থাকুক, কিম্বা বিতর্ক-সমালোচনা হোক না কেন, তা উপেক্ষা করায় আওয়ামী লীগের খুব একটা সমস্যা হয় নি। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ, বিএনপির ছয়জন ও তাদের নির্বাচনী জোটের অপর দুই সঙ্গী গণফোরামের দুজন সাংসদ শপথ নিয়ে যেভাবে গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছেন, তা তো নিশ্চয়ই উদযাপন করার বিষয়! 


বিএনপির এসব সাংসদের সংসদে যোগদান অনেকটা মহাজোটের শরীক ওয়ার্কাস পার্টির মতো, যেখানে তাঁরা নিজেরাই বলেছেন মানুষ ভোট দিতে পারেননি, তাঁরা নির্বাচিত ঘোষিত হয়েছেন অদৃশ্য আশীর্বাদে। মহাজোটের শরীকদের কথা আলাদা। কেননা, তাঁরা কোনো না কো্নোভাবে ক্ষমতার নানা সুযোগ-সুবিধার কমবেশি ভাগীদার। কিন্তু বিএনপির সাংসদদের প্রাপ্য সুবিধাগুলো সে তুলনায় নগণ্য হলেও তাঁরা তা হারাতে প্রস্তুত ছিলেন না। দলটির নেতাকর্মীরা যে বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি, নানা ঘটনায় তা বোঝা যায়। দলীয় কর্মসূচিগুলোতে তাঁদের জন্য কোন আসন বরাদ্দ থাকতে দেখা যায় না। তাঁদের দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়া হলে এখন আবার তাঁরা পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন। তাঁদের পদত্যাগে গণতন্ত্রের কতটা ক্ষতি হবে, তা তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন। 


বাম জোট আজকের দিনটিকে `কালো দিবস` হিসাবে পালনের ঘোষণা দিয়েছে, যারা আগের দুই বছরেও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে। তাদের বক্তব্য ছিল, `২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ক্ষমতাসীন দল পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে দিনের ভোট রাতে করার মধ্য দিয়ে অবৈধভাবে পুনঃক্ষমতাসীন হয়েছে`। একই অভিযোগ করে বিএনপি গতবছর দিনটি `গণতন্ত্র হত্যা দিবস` হিসাবে পালন করলেও এবার সে রকম কোনো কর্মসূচির কথা শোনা যায় নি। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়ার দাবিতে তারা অবশ্য অন্য কিছু কর্মসূচি পালন করছে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে জানা গেল, পিপলস একশন কমিটি নামের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন তাদের ভাষায় `ভোটের তৃতীয় শাহাদত বার্ষিকী` উপলক্ষে আজ বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।


২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে নিশ্চয়ই আরও অনেকের অনেক কিছু করার আছে। বিশেষ করে বর্তমান হুদা কমিশন এবং পুলিশ ও প্রশাসনের। স্মরণ করা যেতে পারে, হুদা কমিশন তাঁদের দপ্তরে পিঠা উৎসব করেছিলেন। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের যে কষ্ট করে যেতে হয়নি, কিন্তু ক্ষমতাসীন দলকে তাদের প্রত্যাশার চেয়েও বড় বিজয় তুলে দিতে পারার আনন্দেই ওই উৎসব হয়েছিল বলে তখন অভিযোগ উঠেছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা কমিশন ভবনের সামনের জলাধারে মাছ ধরতে বসেছিলেন বলেও তখন খবর বেরিয়েছিল। `মৎস্য ধরিব খাইবো সুখে` কমিশন এরপর যত নির্বাচন আয়োজন করেছে, সেগুলো কেমন ছিল তার বিবরণ সমালোচকদের মুখ থেকে না শুনে বরং অন্যতম নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সর্বসাম্প্রতিক মন্তব্য থেকে জেনে নেওয়া ভালো। কমিশনে একঘরে হয়ে থাকা মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ``নির্বাচন এখন আইসিইউতে এবং তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় গণতন্ত্র এখন লাইফসাপোর্টে``। পুলিশেরও কথিত নির্বাচনী সাফল্যের বিরল উদযাপনের খবর পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছিল, যাতে দেখা যায় থানায় থানায় বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয়েছে।  


প্রশ্ন উঠতে পারে, এখন পুরোনো এসব কথা স্মরণ করার প্রয়োজন কী? কারণে হচ্ছে, এখন নতুন একটি কমিশন গঠনের প্রস্তুতি চলছে। পরপর দুটি কমিশন - কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন কমিশন এবং কে এম নুরুল হুদা কমিশন - নির্বাচনী ব্যবস্থার যে ভয়াবহ ক্ষতিসাধন করেছেন, তা বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিবেশে কাটিয়ে ওঠা আদৌ সম্ভব বলে মনে হয় না। বহুলনিন্দিত আজিজ কমিশন ভুয়া ভোটারের তালিকা করলেও রাজনৈতিক প্রতিরোধের মুখে নির্বাচন করতে না পারায় তার ক্ষতিটা ঠেকানো গেছে। কিন্তু রকিব কমিশন ও হুদা কমিশন ভোটারদের ভোটের অধিকার জলাঞ্জলি দিয়ে কমিশনের প্রতি জন-আস্থা ধ্বংস করেছেন। শুধু সংসদীয় নির্বাচন নয়, এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকেও তাঁরা `জোর যার মুল্লুক তার` নীতির ভিত্তিতে প্রার্থীদের অর্থ ও পেশিশক্তির ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। 


পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রেকর্ডটি হচ্ছে রকিব কমিশনের, যার অধীনে ২০১৬ সালে ১৪৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ প্রাণহানির রেকর্ডটি সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের আমলে ১৯৮৮ সালে, যখন মৃত্যু হয়েছিল ৮০ জনের। নির্বাচনী সহিংসতার নিরিখে বর্তমান কমিশনও খুব একটা পিছিয়ে নেই। এখন পর্যন্ত এই সংখ্যা ৭০। গণতান্ত্রিক পরিবেশে, অর্থাৎ কার্যকর বিরোধীদল থাকলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সমঝে চলতে হয় এবং প্রতিদ্বন্দিতায় একধরণের ভারসাম্য থাকে। কিন্তু নির্বাচনী সহিংসতায় সামরিক শাসনামলের সঙ্গে যে মিল পাওয়া যাচ্ছে, তা গণতন্ত্রের ক্ষয়সাধনেরই সাক্ষ্য দেয়। 


গত সপ্তাহে বিতর্কিত রকিব কমিশনের এক সদস্য একটি পত্রিকায় লিখেছেন, ভোটের সময় সহিংসতা বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণে তাঁদের কোনো দায় নেই। তিনি দাবি করেছেন, সহিংসতার মত ঘটনা ফৌজদারি অপরাধ এবং ফৌজদারি অপরাধ দমন, নিয়ন্ত্রণ ও তদন্ত এগুলো সব পুলিশের কাজ। এগুলো বন্ধের কাজ কমিশনের নয়। ফৌজদারি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ যে পুলিশের কাজ, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি যে কথাটুকু বলেননি, তা হচ্ছে পুলিশের যে সদস্য বা কর্তাব্যক্তি বা ব্যক্তিরা দায়িত্বপালনে অবহেলা করছেন, তাঁদের সরিয়ে দিয়ে সে জায়গায় আইনশৃংখলা বাহিনীর অন্যদের নিয়োগ করা এবং অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে নানাধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা কমিশনের রয়েছে। নির্বাচনের প্রয়োজনে প্রজাতন্ত্রের যে কোনো প্রতিষ্ঠানের যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কাজে লাগানো এবং তাঁরা দায়িত্বপালনে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাঁরা পর্যাপ্তভাবে ক্ষমতায়িত।  কিন্তু তারপরও তাঁরা দলীয় পক্ষপাতের কারণে চোখ বন্ধ রেখেছিলেন। আর সেই দায় অস্বীকারের কৌশল হচ্ছে কথিত আইনগত সীমাবদ্ধতার দাবি।     


এখন নতুন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি যে সংলাপের আয়োজন করেছেন, সেই সংলাপ নিয়ে ইতিমধ্যেই নানাধরণের প্রশ্ন উঠেছে, এর সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। সূচনাতেই সরকারের সাবেক অংশীদার জাতীয় পার্টি দলের মহাসচিবের স্ত্রীকে সাবেক আমলার কোটায় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে এসেছে। তথ্যটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সেটি হয়তো আর হবে না। তবে ক্ষমতাসীন দলের আরেক সহযোগী, ন্যাপের নেতারা সংলাপ থেকে বেরিয়ে বলেছেন যে কথিত অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। অন্য কয়টি সহযোগী দলের নেতারা কমিশন গঠনের জন্য আইন তৈরির দাবি জানিয়ে এসেছেন। ক্ষমতার ভাগীদার হওয়ায় গত ১৩ বছরে তাঁদের অবশ্য আইন করার কথা মনেই পড়েনি। মনে থাকলে অনেক আগেই তাঁরা অন্তত একটা বেসরকারি বিল উত্থাপন করতে পারতেন। 


ওয়ার্কার্স  পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন এক দিনে সম্ভব হয়েছিল উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন যে নির্বাচন কমিশন গঠনের আইনও এক দিনেই করা সম্ভব। তিনি ভুল কিছু বলেননি। কমিটিতে পাঠানোর আনুষ্ঠানিকতা হিসাব না করলে সংসদে অনেক আইনই একইভাবে পাস হয়েছে। কিন্তু বৃহত্তর পরিসরে রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সরকারের মনোনীত বিরোধীদলের সম্মতি বা আপত্তিতে ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছার তেমন কোন হেরফের হবে না। সুতরাং, বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক গোষ্ঠীগুলোর উচিত হবে আগামী নির্বাচন কীভাবে গ্রহণযোগ্য উপায়ে আয়োজন করা সম্ভব, তা নিয়ে বৃহত্তর সংলাপ ও সমঝোতার ব্যবস্থা করতে রাষ্ট্রপতি ও সরকারকে রাজি করানো। না হলে আমরা বর্তমান কমিশনের চেয়ে উন্নত কিছু পাব - এমন ভ্রান্তিবিলাসে মগ্ন না হওয়াই ভালো।  


(৩০ ডিসেম্বর, ২০২১-`র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...