সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ব্যাশেলেতের সফরে মানবাধিকারের কিছু হবে কি

মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের সর্ব্বোচ্চ কর্মকর্তা হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত বাংলাদেশে চার দিনের যে সফর করে গেলেন, তাতে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না, পড়লে কতটুকু, তা আগামী দিনগুলোতে বোঝা যাবে। তবে সফরটি ঘিরে যেহেতু সরকার ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বৈশ্বিক সংগঠনগুলো তাদের প্রত্যাশার কথা আগেই জানিয়েছে, তাই এর প্রাথমিক একটা মূল্যায়ন হওয়া দরকার। বিশেষতঃ সফর শেষে তিনি যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে সরেজমিন সফরে কূটনৈতিক ও একান্ত আলোচনাগুলোয় তিনি আমাদের মানবাধিকার সম্পর্কে কেমন ধারণা নিয়ে গেলেন, তার প্রতিফলন মেলে। 


মিশেল ব্যাশেলেতের সফর-সমাপনী সংবাদ-সম্মেলনের বিবৃতিটি কেন গুরুত্বপূর্ণ, তা আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি থেকেই বোঝা যায়। নাম প্রকাশ না করা ওই জ্যেষ্ঠ্য কর্মকর্তার মতে মিস ব্যাশেলেত তাঁর মেয়াদ শেষ করার আগে আগামী মাসে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সভায় যে বক্তৃতা দেবেন, তাতে বাংলাদেশের কথা থাকবে এবং সেই বক্তব্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম আলো ওই প্রতিবেদনে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনকে উদ্ধৃত করে জানায়, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সদস্যপদের নির্বাচনে বাংলাদেশ অন্যতম প্রার্থী। তাই পরিষদের নানা পর্যায়ে আলোচনা ও যোগাযোগের প্রয়োজন রয়েছে। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো সমসাময়িক বিষয়গুলোতে অনেকের ভুল ধারণা ও অভিযোগ আছে। গণমাধ্যমে এসব নিয়ে যে অভিযোগ তার সবটাই ঠিক, এমনটা কিন্তু নয়। ফলে আইনমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে হাইকমিশনার পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা। কারণ, এ বিষয়গুলোতে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে আমরা কী কী ব্যবস্থা নিয়েছি, সেগুলো তার কাছে তুলে ধরা হবে। এদিক থেকে দেখলে এই সফরকে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যার জন্য আমরা সুযোগ হিসেবে দেখি।` ((মানবাধিকার বিষয়ে অবস্থান তুলে ধরবে বাংলাদেশ, ১৪ আগষ্ট, ২০২২)


হাইকমিশনার ব্যাশেলেতের সফরে সরকারের প্রত্যাশা যেমন স্পষ্ট, তেমনি খোলামেলাভাবে বৈশ্বিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোও তাদের দাবিগুলো আগেই জানিয়েছিল। বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও গুমসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অবিলম্বে বন্ধে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেতের বাংলাদেশ সফরে প্রকাশ্যে আহ্বান জানানো উচিত বলে ৯টি মানবাধিকার সংগঠন এক যৌথ বিবৃতি দেয় গত ১০ আগষ্ট। হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ (এইচআরডব্লিউ) ওইসব সংগঠনের  বিবৃতিতে বলা হয়, সফরের সময়ে মিশেল ব্যাশেলত যদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর স্পষ্ট নিন্দা না জানান এবং এ অবস্থার পরিবর্তন না চান, তবে আওয়ামী লীগ তাঁর নীরবতাকে ওই সব ঘটনার বৈধতাদানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করবে। সেই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলটি অধিকারকর্মীদেরও উপেক্ষা করবে। 

 

সন্দেহ নেই, মিস ব্যাশেলেতের ৯ পাতার দীর্ঘ বিবৃতিটি কূটনৈতিক ভব্যতা ও আচার রীতি অনুসরণে কোমল ভাষায় তৈরি। তবে তা মোটেও সরকারের প্রত্যাশা পূরণের মতো নয়। সরকারের তিন থেকে চারজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী তাঁর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে তাঁদের ভাষায় `গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো সমসাময়িক বিষয়গুলোতে অনেকের ভুল ধারণা ও অভিযোগ` সম্পর্কে সরকারের অবস্থান ব্যখ্যা করেছেন। হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন তাঁর `বেহেশতে` ২৮০০ সংবাদমাধ্যম আছে।  আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আরও এক ধাপ এগিয়ে প্রশ্ন করেছেন, `আমরা কি রাতের বেলা গিয়ে খবরের কাগজকে গলা চিপে ধরেছি?` মানবাধিকারকর্মীরা হাইকমিশনার ব্যাশেলেতের সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন অভিযোগ করায় ক্ষুব্ধ মন্ত্রী বলেন, `বাংলাদেশ পুলিশি রাষ্ট্র নয় বলেই তাঁরা বৈঠক করতে পেরেছেন।` স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গুমের অভিযোগ ভিত্তিহীন বোঝানোর জন্য সেই পুরোনো বক্তব্যেরই পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন, পাওনাদার এড়াতে, সংসারে ঝগড়া করে অথবা মামলায় ফেরারি হিসাবে পলাতকদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গুমের শিকার হিসাবে প্রচার করা হয়। 


সফর শেষের বিবৃতিতে মিশেল ব্যাশেলেত সারকথা যা বলেছেন, মোটাদাগে সেগুলো হচ্ছে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতনসহ মানবাধকারের গুরুতর লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোর বিষয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি এসব অভিযোগের নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বচ্ছ্ব তদন্তের আহবান জানিয়েছেন এবং এরকম একটি তদন্ত স্বাধীনভাবে পরিচালনার জন্য তাঁর দপ্তর, অর্থাৎ জাতিসংঘ সহায়তা করতে তৈরি আছে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণেও তাঁরা সমর্থন দিতে পারেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব গুরুতর অভিযোগে তিনিও র‍্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন, র‍্যাবের যুক্ততার কথা বলেছেন। একই অভিযোগে র‍্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পটভূমিতে তাঁর এই উদ্বেগ উপেক্ষা করা সহজ নয়। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষায় সর্ব্বোচ্চ সংখ্যায় অংশগ্রহণের কারণে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের মানবাধিকার সুরক্ষার আলাদা গুরুত্বের কথাও তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিবৃতির পরও কি মন্ত্রীরা স্বীকার করবেন না যে তাঁদের অবিশ্বাস্য বয়ানগুলো শুধুই উপহাসের বিষয় হয়ে উঠছে? 


মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যে বাধা সৃষ্টি করছে এবং ভুয়া তথ্য ও উত্তেজনা ছড়ানোয় ডিজিটাল মাধ্যমের অপব্যবহার রোধে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থা কী হতে পারে, সে বিষয়ে তাঁর দপ্তর সরকারের কাছে সুপারিশমালা পেশ করেছে। তাঁর আশা, সরকার সে সব সুপারিশ গ্রহণ করবে।  উপাত্ত সুরক্ষা আইন ও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মের আধেয়-সম্পর্কিত ওটিটি আইন প্রণয়নে মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে  বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘের সহযোগিতা নেওয়ার আহ্বানও তাঁর বিবৃতিতে রয়েছে। বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠীর কার্যক্রম ও অবাধে মতপ্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হওয়ার কথাও তিনি বলেছেন এবং এসব নাগরিক সংগঠনের অংশগ্রহণ যে দেশের অগ্রযাত্রার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ , সে কথাও তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতি বৈরী আচরণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই বক্তব্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। 


নির্বাচন, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রসঙ্গও হাইকমিশনারের বিবৃতি থেকে বাদ যায়নি। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারের বিষয়গুলোতে বিরোধীদল, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের মতপ্রকাশ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠন করার অধিকার সর্ব্বোচ্চ মাত্রায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ। আইন প্রয়োগকারী বাহিনীগুলোর বিক্ষোভ মোকাবিলায় অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগ থেকে নিবৃত্ত করার জন্য প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার ওপরও বিবৃতিতে জোর দেওয়া হয়েছে। সমাজে যাতে বিক্ষোভ পূঞ্জীভূত হয়ে বিস্ফোরণ না ঘটে, সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের সুযোগ বাড়ানো দরকার বলেও মিস ব্যাশেলেত মন্তব্য করেছেন।


মানবাধিকারের বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্রায় ডজনখনেক স্পেশাল র‍্যাপোর্টিয়ার বাংলাদেশে সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখতে আসার অনুমতি চেয়ে বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকলেও সরকার তাদের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। কিন্তু মিশেল ব্যাশেলেতকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনা হয়েছে। ধারণা করা অন্যায় হবে না যে সরকার অন্তত ধারণা করেছিল, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তাঁর কাছ থেকে কিছু আশার কথা শুনবেন। কিন্তু তিনি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তাঁদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশের জন্য অপেক্ষার কথা বলেই ক্ষান্ত হন নি, নির্বাচন সামনে রেখে এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে যেন রোহিঙ্গাবিদ্বেষ না ছড়ায় তার জন্য আগেই তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর বিবৃতিতে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।     

  

মিস ব্যাশেলেতের সফরকে সরকার তার কূটনীতির সাফল্য হিসাবে দাবি করতে না পারলেও এটুকু সান্ত্বনা অবশ্য পেতে পারে যে তিনি অন্তত বৈশ্বিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর দাবি অনুযায়ী `স্পষ্ট নিন্দা` জানানোর পর্যায়ে যাননি। বিরোধীদল বিএনপি, গুমের শিকার পরিবারগুলো ও দেশীয় মানবাধিকার সংগঠকগদের দাবি অনুযায়ী জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের নিজস্ব তদন্ত প্রক্রিয়ার কথাও বলেননি, যেমন তদন্ত শ্রীলংকা কিম্বা মিয়ানমারের ক্ষেত্রে হয়েছে। তাঁর সফরের আগে সুইডেনভিত্তিক সাংবাদ পোর্টাল নেত্র নিউজ-এর গুম বিষয়ক অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র `আয়নাঘরের বন্দী` প্রকাশের সূত্র ধরে বিএনপি জাতিসংঘের ওই তদন্ত দাবি করেছিল। মিস ব্যাশেলেতের সফর ঘিরে বিভিন্নপক্ষের প্রত্যাশা পূরণ হলো কিনা, সেই কথা আলোচনার চেয়ে অবশ্য বড় প্রশ্ন হলো সাধারণ নাগরিকদের অধিকার ভোগ ও সুরক্ষায় আদৌ কিছু পরিবর্তন হবে কি? এর আগে চীনে ব্যর্থ সফরের জন্য তিনি যে ধরণের সমালোচনার মুখে পড়েছেন, তার আলোকেই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ।   


(১৯ আগষ্ট, ২০২২-এর প্রথম আলো প্ত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...