সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মৃত্যুকূপ ফিলিস্তিনি হাসপাতাল ও তথ্যযুদ্ধ

অবরুদ্ধ গাজায় আল আহলি আরব হাসপাতালে অবিশ্বাস্য নৃশংস হামলায় প্রায় পাঁচ শ ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববাসী যখন হতবাক ও ক্ষুব্ধ, তখন ওই হামলার দায় নিয়ে শুরু হওয়া নতুন বিতর্ক তথ্যযুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। হাসপাতালে হামলার পর চলমান ফিলিস্তিন সংঘাতে নিহতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে এবং এর এক-তৃতীয়াংশই শিশু। ফিলিস্তিনিদের জীবন বাঁচানোর শেষ আশ্রয়কে মৃত্যুকূপে রূপান্তরের জন্য ইসরায়েলের বোমাবর্ষণকে ফিলিস্তিনিরা দায়ী করলেও সেই ভাষ্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। উল্টো তারা এ হামলার দায় চাপিয়েছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের ওপর।

ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা হামলার নিন্দা ও হতাহতদের জন্য শোক জানালেও তার জন্য কাউকে সরাসরি দায়ী না করে তদন্তের কথা বলেছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে হাসপাতালে হামলার মতো বর্বরতাও পাল্টাপাল্টি তথ্যযুদ্ধের বিষয়ে পরিণত হয়েছে এবং তাতে মানবিক সংকট সমাধানের চেষ্টা ও আলোচনা অনেকটাই আড়ালে পড়ে যাচ্ছে।


আল আহলি হাসপাতাল হচ্ছে গাজায় খ্রিষ্টান গির্জা পরিচালিত একমাত্র হাসপাতাল। হাসপাতালটি যে শুধু রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ছিল তা নয়; একই সঙ্গে তা অনেক ফিলিস্তিনি নারী-শিশুর অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছিল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাবাহিনীর মুখপাত্র দাবি করেছেন যে ইসলামিক জিহাদের পক্ষ থেকে ছোড়া রকেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে হাসপাতালটিতে বিস্ফোরিত হয়েছে। ইসরায়েল আরও দাবি করেছে, তারা ইসলামিক জিহাদের সদস্যদের মধ্যে টেলিফোন আলাপের রেকর্ড পেয়েছে, যাতে এ হামলার দায় ইসরায়েলের ওপর চাপানোর স্বীকারোক্তি পাওয়া যায়।


বিপরীতে ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা মুস্তাফা বারগুটি বিবিসিকে বলেছেন, বিস্ফোরণের আকার যতটা বড় ছিল, ততটা ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো রকেট ফিলিস্তিনি কোনো সশস্ত্র দলের কাছে নেই। তিনি বলেন, বোমাবর্ষণের কথা প্রথম জানিয়েছেন হাসপাতালের কর্মীরা, হামাস নয়। ইসরায়েল গাজার উত্তরাংশের ২২টি হাসপাতাল খালি করে দেওয়ার জন্য এর আগে একাধিকবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে ইতিমধ্যে অন্য ৫৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ২৩টি অ্যাম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ২০ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন।


আল আহলি হাসপাতাল মাত্র দুদিন আগেও গত শনিবার একবার হামলার শিকার হয়, যাতে চারজন স্বাস্থ্যকর্মী আহত হয়েছিলেন। বারগুটি বলেন, যে হাসপাতালে বোমাবর্ষণের পর প্রথমে ইসরায়েল বলেছে যে হাসপাতালে হামাসের যোদ্ধারা অবস্থান করছিলেন বলেই সেখানে হামলা করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক কোনো সংবাদমাধ্যম প্রচার করেনি। ইসরায়েল পরে তার ভাষ্য পরিবর্তন করে ইসলামি জিহাদের রকেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার কথা বলছে।


বিশ্লেষকদের অনেকে অতীতের বিভিন্ন ঘটনার নজির উল্লেখ করে বলেছেন যে ইসরায়েল অতীতেও বিভিন্ন হামলার পর বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রাথমিকভাবে নিজেদের দায় অস্বীকার করে তা ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর চাপিয়েছে। এর আগে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের সময় সেখানে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর মুখপাত্র ছিলেন ক্রিস গানেস। তিনি আল-জাজিরা টিভিকে বলেন যে, সে সময় গাজায় ইসরায়েল জাতিসংঘের বেশ কিছু স্কুল ভবন ও আশ্রয়কেন্দ্রে হামলা চালানোর পর প্রাথমিকভাবে সেগুলোর জন্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর রকেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার কথা বলে। কিন্তু পরে জাতিসংঘের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, সেসব হামলা ছিল ইসরায়েলি বাহিনীর। আল-জাজিরার সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক শিরিন আবু আকলেহের হত্যার পর ইসরায়েল প্রাথমিকভাবে তা অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে যে এমনটি ঘটলেও ঘটে থাকতে পারে।


ভুল তথ্য বা মিথ্যা ছড়ানো ও অপপ্রচার কখনো উদ্দেশ্যহীন হয় না। এগুলো হয় প্রধানত মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে জনসম্মতি আদায় ও প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করার লক্ষ্যে। চলমান সংকটেও যে সে রকমটি ঘটেছে, তাতে সন্দেহ নেই।


৭ অক্টোবর ইসরায়েলের কাবুৎজ, সেডরটসসহ কয়েকটি এলাকায় হামাস যে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে, তার দুদিন পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আইডিএফের একজন কর্মকর্তা হামলার নৃশংসতার বিবরণ দিতে গিয়ে নারী-শিশুর শিরশ্ছেদ করে তাদের পুড়িয়ে ফেলার কথা বলেন। শিশুর শিরশ্ছেদের অভিযোগ—এরপর দুদিন ধরে বৈশ্বিক গণমাধ্যমে বারবার উচ্চারিত হতে থাকে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনও শিশুর শিরশ্ছেদের বর্বরতার কথা বলেন। কিন্তু দুদিন পর সিএনএন স্বীকার করে যে শিশুর শিরশ্ছেদের দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। একই দিনে হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্রও প্রেসিডেন্ট বাইডেন শিশুর শিরশ্ছেদের কোনো ছবি দেখেননি বলে ব্যাখ্যা দেন।


বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতার জন্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত বিবিসিও বর্তমান চলমান সংঘাতের খবর প্রচারের সময় হামাসের হামলার শিকার ইসরায়েলিদের বেলায় ‘নিহত’ (কিল্ড) আর ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে প্রাণ হারানো ফিলিস্তিনিদের বেলায় ‘মৃত্যুবরণ’ (ডায়েড) ব্যবহার করে সমালোচিত হয়। পরে তারা শব্দচয়নে ভুল করার কথা স্বীকার করে।


বিভিন্ন সময় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের গৃহীত প্রস্তাবের আলোকে অতীতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি সেনা অভিযানের বর্ণনায় সংবাদমাধ্যমগুলো দখলদার বাহিনী বিশেষণটি ব্যবহার করত। কিন্তু এখন এই বিশেষণ হারিয়ে গেছে। বিপরীতে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের মতো সংগঠনগুলোর ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী বিশেষণ ব্যবহারের জন্য সংবাদমাধ্যমগুলো অব্যাহত রাজনৈতিক চাপের মুখোমুখি হয়।


চলমান সংঘাতের সময়ে যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ ও বিরোধী দল লেবার পার্টির পক্ষ থেকে সরকারিভাবে নিষিদ্ধঘোষিত হামাসকে সন্ত্রাসী বলার জন্য প্রকাশ্যেই চাপ প্রয়োগ করা হয়। তবে বিবিসি নিজে থেকে ওই বিশেষণ এখনো ব্যবহার করছে না; বরং তারা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, সংগঠনটি যুক্তরাজ্য ও অন্য অনেক দেশ কর্তৃক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ।


ফিলিস্তিনি সংঘাতকে কেন্দ্র করে এই যে তথ্যযুদ্ধ, তার প্রভাব বিশ্ব জনমত ও কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় নানাভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। সন্দেহ নেই, হামাসের হামলা বিশ্বের নানা প্রান্তে মানুষকে স্তম্ভিত করেছে এবং তারা নিন্দিত হয়েছে। কিন্তু গাজার অভিযানের নিষ্ঠুরতা ও ব্যাপকতা সাধারণ মানুষকে এখন আরও বেশি বিচলিত করছে, ক্ষুব্ধ করছে। একটি সশস্ত্র যোদ্ধা গোষ্ঠীকে নির্মূলের দুঃসাধ্য লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে গাজার পুরো ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে খাদ্য, পানীয়, জ্বালানি ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা এবং নির্বিচার বোমা ফেলে শায়েস্তা করার নীতি যে যুদ্ধাপরাধ ছাড়া কিছু নয়, সে কথা এখন শুধু মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন তা নয়; বরং বিবেকবান সাধারণ নাগরিকেরাও সোচ্চার হয়েছেন।


আল আহলি হাসপাতালে হামলার ঘটনায় আরব দেশগুলোর মানুষ এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত মিত্রদেশ জর্ডান ও মিসরের নেতারা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেন। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টসহ তিনজন আরব নেতার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করার মতো ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি।


প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ইসরায়েল ও জর্ডান সফরের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর ব্যবস্থা করা। প্রায় ১০ দিন ধরে অবরুদ্ধ থাকা প্রায় ২৪ লাখ ফিলিস্তিনির বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ; খাবার নেই, ওষুধ নেই, নেই নিত্যব্যবহার্যসামগ্রী। হাসপাতালে রোগীদের জরুরি অস্ত্রোপচার হচ্ছে চেতনানাশক ছাড়াই।


জাতিসংঘ মহাসচিবের ভাষায়, ‘মহা মানবিক বিপর্যয়’-এর মুখোমুখি জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় এখনই যুদ্ধবিরতির জন্য যখন বিশ্ব জনমত গড়ে উঠেছে, তখন ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক অভিযানের প্রতি পাশ্চাত্যের দেশগুলোর নিঃশর্ত সমর্থন এই সংকটকে আরও জটিল ও দীর্ঘায়িত করার আশঙ্কা তৈরি করছে।


গাজায় ‘হাসপাতালে হামলা অন্য দল করেছে’ বলে তেল আবিবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মন্তব্যে ইসরায়েলিরা যে অনেকটাই ভারমুক্ত মনে করছেন, তার প্রতিফলন তাঁদের সংবাদমাধ্যমগুলোতে দেখা গেছে। ইরাক যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট বুশ যা বলেছিলেন, সেখান থেকে ধার করে বর্তমান সংঘাতকে নেতানিয়াহু ‘সভ্যতার সঙ্গে বর্বরতার লড়াই’ বলে অভিহিত করায় বোঝা যায়, ইসরায়েল শিগগিরই তার অভিযানের রাশ টানতে রাজি নয়।


(১৯ অক্টোবর, ২০২৩–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...