প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান গত ৮ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের আয়োজনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘বিচারকের রায়ের সমালোচনা করার অধিকার বাক্স্বাধীনতার অংশ।’ তিনি তাঁর একই বক্তৃতায় সতর্ক করে দিয়ে এ কথাও বলেছিলেন, ‘যদি কেউ স্বাধীনতার অপব্যবহার করে, তা সংবাদমাধ্যমই হোক বা আইনজীবী হোক, তাকে শায়েস্তা করতে আদালতের হাত যথেষ্ট লম্বা।’ তাঁর পূর্বসূরিদেরও কেউ কেউ একইভাবে রায়ের সমালোচনাকে বাক্স্বাধীনতার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। সেই সুবাদে এবং আদালতের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে একটি সাংবিধানিক প্রশ্নের আলোচনা জরুরি হয়ে পড়েছে। যে প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা, সে বিষয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক আছে। তবে এ আলোচনা নিতান্তই আইনকেন্দ্রিক ও তত্ত্বগত।
একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দ্বাদশ সংসদের সদস্যদের শপথ গ্রহণে সংবিধানের কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে কি না, এ প্রশ্ন আদালতে গড়ালে আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় নতুন সংসদের সদস্যদের শপথ দেওয়ার আইনগত বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি হয়েছিল ২০১৯ সালে।
মো. তাহেরুল ইসলাম (তৌহিদ) বনাম স্পিকার, জাতীয় সংসদ ও অন্যান্য হিসেবে পরিচিত ওই রিট মামলার আবেদনে যুক্তি উত্থাপন করা হয়, দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ থাকা অবস্থায় একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেছেন। ফলে সে সময় জাতীয় সংসদের সদস্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৬০০, যা সংবিধান সমর্থন করে না। একই সময়ে দুটি সংসদ থাকতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ আবেদনের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক শুনে তা খারিজ করে দেন।
প্রায় চার বছরের ব্যবধানে ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়, যার ওপর গত বছরের জুলাইয়ের শেষে আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতিসহ আট সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৩ সালের ১ আগস্ট আপিল বিভাগও ওই মামলা খারিজ করে দেন। আপিল বিভাগের রায় বা আদেশের কপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পাওয়া গেল না বলে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না রায়টি সর্বসম্মত ছিল কি না বা কোনো বিচারপতির কোনো ভিন্ন পর্যবেক্ষণ ছিল কি না।
কর্মরত বিচারপতিরা সাধারণত আদালতের বাইরে কোনো রায়ের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও মতপ্রকাশ থেকে বিরত থাকার রীতি অনুসরণ করে থাকেন। তবে সেই প্রথার বাইরে এসে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম দৈনিক ইত্তেফাক ও সমকাল-এ রায়টির বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন। এরপরও বিতর্কের ইতি ঘটেনি এবং বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ’নীতিনির্ধারকেরা সংবিধানের এ–সংক্রান্ত বিষয় স্পষ্টীকরণের প্রয়োজন মনে করলে বিষয়টি দেখা হবে।’
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম তাঁর লেখায় লিখেছেন, আপিল বিভাগ রায় দেওয়ার সময় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৩ (৩), ১৪৮ (১) (২ ক) (৩), ৭২ (৩) এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ পর্যালোচনা করেন। তিনি লিখেছেন, সংবিধান অনুযায়ী [অনুচ্ছেদ ১২৩ (৩)] দুটি কারণে সংসদ নির্বাচন হতে পারে—প্রথমত, সংসদের মেয়াদ অবসানের কারণে; দ্বিতীয়ত, মেয়াদ অবসান ছাড়াও অন্য কোনো কারণে যদি সংসদ ভেঙে যায়। মেয়াদ অবসানের ক্ষেত্রে সংসদ ভেঙে যাওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে এবং অন্য কারণে সংসদ ভেঙে গেলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৮ (১)-এ অনুযায়ী সংবিধানের ‘তৃতীয় তপশিলে’ উল্লিখিত যেকোনো পদে নির্বাচিত (যার মধ্যে সংসদ সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত) বা নিযুক্ত ব্যক্তির কার্যভার গ্রহণের আগে ওই তপশিল অনুযায়ী অবশ্যই শপথ গ্রহণ ও শপথপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে।
বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের নিবন্ধ থেকে জানা যাচ্ছে, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৮ (৩)-এর বিধান অর্থাৎ সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যভারপ্রাপ্ত হন কি না, সেই আইনি বিষয় নিষ্পত্তি করেছেন। এই আইনি বিষয় নিষ্পত্তি করতে গিয়ে আদালত অনুচ্ছেদ ১৪৮ (৩)-এ উল্লিখিত ‘...শপথ গ্রহণের অব্যবহিত পর তিনি কার্যভার গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে’ অর্থাৎ ‘ডিমিং ক্লজ’ (গণ্য বা মনে করা) বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন এবং বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আদালত ‘কানুনি/বৈধ কল্পনা (লিগ্যাল ফিকশন)’ শব্দটিও ব্যাখ্যা করেছেন।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম লিখেছেন, ‘এ বিষয়ে দুটি শব্দের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আপিল বিভাগ নিজের ও উপমহাদেশের অন্যান্য সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন নজির এবং বাংলাদেশের সংবিধানবিশেষজ্ঞ ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলামের কনস্টিটিউশনাল ল অব বাংলাদেশ বইয়ের ওপর নির্ভর করেছেন। ডিমড (গণ্য বা মনে করা) শব্দটির আইনি অর্থ হলো (আইন শব্দকোষ; আইন কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত) ১. কোনো কিছুকে এ-ই বলে গণ্য করতে হবে যে উহা প্রকৃতপক্ষে অন্য কিছু অর্থাৎ উহার যেন সেই গুণ আছে যাহা উহার নাই; ২. বিধিবদ্ধ কোনো দলিলে কোনো সন্দেহ নিরসন কিংবা সংক্ষেপে মুসাবিদা করার নিমিত্তে কোনো কোনো শব্দ বা বাক্যাংশকে প্রদত্ত এমন একটি ব্যাখ্যা, যা সাধারণত ওইভাবে দেওয়া হতো না। আর ‘লিগ্যাল ফিকশন’-এর (কানুনি/বৈধ কল্পনা) আইনি অর্থ হলো কোনো বিষয় প্রকৃতপক্ষে সত্য হোক বা না হোক, (তা) আইনি সত্য বলে ধরে নেওয়া হয়।’
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভাষায়, সংসদ সদস্যরা শপথবাক্য পাঠ করেন ‘...আমি যে কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে যাইতেছি,...’ অর্থাৎ একজন সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই কার্যভার গ্রহণ করছেন না বরং করতে যাচ্ছেন, যা ভবিষ্যতের একটি বিষয়। সংবিধানের তৃতীয় তপশিলে বর্ণিত পদ, যথা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, বিচারপতিসহ অন্যান্য পদের শপথনামায় ‘কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে যাইতেছি’ বাক্যটি অনুপস্থিত।
বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের বর্ণনায় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৮ (৩) অনুযায়ী ওই সব পদে শপথ গ্রহণ ও শপথনামায় স্বাক্ষর করার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট পদের ব্যক্তিরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে যান। কিন্তু সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে যেহেতু সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৩ (৩)-এর শর্ত দ্বারা নির্বাচিত ব্যক্তিদের সংসদের মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করা থেকে বারিত করা হয়েছে, সেহেতু নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করলেও তাঁদের কার্যভার গ্রহণ করার সুযোগ নেই।
তিনি আরও লিখেছেন, এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৮ (২ ক) অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত হওয়ার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে নির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেহেতু গেজেট প্রকাশের পর তিন দিনের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ বাধ্যতামূলক, সেহেতু তিন দিনের অতিরিক্ত সময় বা আগের সংসদের মেয়াদপূর্তি পর্যন্ত অপেক্ষার সাংবিধানিকভাবে কোনো সুযোগ নেই।
বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের ভাষায়, আপিল বিভাগের মতে, নতুন সরকার গঠনের জন্য এই শপথ। কেননা, সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়ে থাকেন এবং সেভাবেই সরকার গঠিত হয়ে থাকে। সরকারের ধারাবাহিকতা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে; সরকারের ধারাবাহিকতায় কোনো ছেদ বা শূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে না। সে কারণেই নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ অত্যাবশ্যক।
তাঁর কথায় বিদ্যমান সংসদের মেয়াদপূর্তির আগেই নবনির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত অভিমত এটাই যে সংসদের মেয়াদপূর্তির আগে নবনির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণের কারণে তাঁরা সংসদ সদস্য হিসেবে বিবেচিত বা গণ্য হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। তাঁদের কার্যকাল শুরু হবে সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিন থেকে। ‘লিগ্যাল ফিকশন’ (কানুনি/বৈধ কল্পনা) এটাই যে প্রকৃত সত্য যা-ই হোক না কেন, নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করলেও আইনি সত্য হলো, তাঁরা এখনো কার্যভার গ্রহণ করেননি।
সংবিধান অনুযায়ী আইনের চূড়ান্ত ব্যাখ্যা দেওয়ার অধিকার একমাত্র সুপ্রিম কোর্টের এবং সেই ব্যাখ্যা বা আদেশ শিরোধার্য বিধায় তা আমাদের মানতে হবে। আইনি কল্পনার ভিত্তিতে আদালত যাকে আইনি সত্য বলছেন, তা যে প্রকৃত সত্য নয়, সে কথা আদালতের অভিমতেই স্পষ্ট। কিন্তু প্রকৃত সত্যকে অস্বীকার করার কারণে যেসব যৌক্তিক প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, সেগুলোর সমাধান কী?
আপিল বিভাগের রায়েই বলা হচ্ছে, নতুন সরকার গঠনের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি সরকার গঠনের আহ্বান জানান বিধায় সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নবনির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণ অত্যাবশ্যক। অর্থাৎ সংসদনেতা নির্বাচনের যে দায়িত্ব সংসদ সদস্যদের, সেটি তাঁদের পালন করা এবং এর জন্য তাঁদের শপথ গ্রহণ অত্যাবশ্যক ছিল। নতুন সরকারকে আমরা যখন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ফল হিসেবে স্বীকার করছি, তখন শপথ নেওয়ার পরও সংসদ সদস্যরা কার্যভার গ্রহণ করেননি বলা হলে কি সরকারের বৈধতা প্রশ্নের মুখে পড়ে না?
সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সবাই একসঙ্গে শপথ নিলেন, কিন্তু তারপর যাঁরা মন্ত্রী হলেন, শুধু কি তাঁদের বেলায় দ্বাদশ সংসদের সদস্যপদ কার্যকর হলো? নতুন মন্ত্রিসভার যে সব সদস্য পুনর্নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হলেন, তাঁদের একাদশ সংসদের সদস্যপদের অবসান হলো কীভাবে? তাঁরা কি একাদশ সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন? না হলে তো একই সঙ্গে দুটি সংসদের প্রতিনিধিত্ব করা হয়? সেটা কীভাবে সম্ভব? পদত্যাগ না করলে অথবা সংবিধানের ৭০ ধারা লঙ্ঘন না করলে তো কোনো সংসদ সদস্যের পদ খারিজ হওয়ার কোনো সুযোগ আইনে নেই।
সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে ধারা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সূচিত হয়েছে, তাতে শুধু মন্ত্রীরা নন, সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রেও এক নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সংবিধানে যেহেতু নির্বাচনের ফলাফল (গেজেট আকারে) ঘোষণার তিন দিনের মধ্যে শপথ নেওয়ার বিধান আছে, সেহেতু এমন কোনো কোনো সংসদ সদস্য আছেন, যাঁরা তিন সপ্তাহের জন্য একই সঙ্গে দুটি নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করছেন।
একাদশ সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের একাদশ সংসদে লালমনিরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য। কিন্তু দ্বাদশ সংসদে তিনি রংপুর-২ আসনের সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এখন তিনি লালমনিরহাটের সংসদীয় এলাকার সদস্যদের স্বার্থ রক্ষায় তাঁর মনোযোগ অব্যাহত রাখবেন, নাকি রংপুর-২ আসনের ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত থাকবেন? ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে কি দুই আসনের ভোটারদের এই টানাটানি চলবে? একই কথা বলা যায় ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেননের বেলায়ও।
আইনি কল্পনা নিয়ে বিশ্বে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে এবং অতীতে তার প্রচুর নজির থাকলেও বর্তমানে এর প্রয়োগ লক্ষণীয়ভাবে কমেছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তর গবেষণাভিত্তিক প্রকাশনাও আছে। এর মধ্যে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির সাংবিধানিক আইনের অধ্যাপক পিটার জি স্মিথের ২০০৭ সালে প্রকাশিত ‘নিউ লিগ্যাল ফিকশন’ শিরোনামের নিবন্ধটির কথা উল্লেখ করা যায়। ’লিগ্যাল ফিকশন ইন প্রাইভেট ল’ বইয়ের লেখক কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির উলফসন কলেজের ফেলো লিরন স্মিলোভিটস আইনি কল্পনা ব্যবহারের সমস্যা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলছেন, এতে নীতি ও তত্ত্বগত সমাধানের বদলে অ্যাডহক সমাধান দেওয়া হয়। এটি আইনকে সাধারণ মানুষের কাছে দূর্বোধ্য করে তোলে ও তার নির্ভরযোগ্যতা দূর্বল করে দেয়। তাঁর মতে, কল্পকাহিনী মৌলিক সমস্যার সমাধান করে না কিন্তু শুধুমাত্র উপসর্গের চিকিৎসা করে। আইনমন্ত্রী আইন স্পষ্টীকরণের সম্ভাবনার যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা সম্ভবত বাস্তবতারই স্বীকৃতি।
কোনো সংসদীয় গণতন্ত্রে এমন নজির নেই, যাতে নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরও পুরোনো পার্লামেন্ট বহাল থাকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী অতীতে বহুবার ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতির সরকারের কথা বলেছেন। ক্ষমতাসীন দলের অনেকেও একই নজির টানেন। বিশেষ করে নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি নাকচ করার জন্য তাঁরা ব্রিটেনের নজির দেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ব্রিটেনে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত না করে কোনো নির্বাচন হয় না।
আগাম নির্বাচন হলেও যেমন পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়, তেমনি পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্তিতেও তা ভেঙে দেওয়া হয়। নির্বাচন হয় পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ২৫ দিনের মধ্যে। যেদিন ভোট হয়, তার ফল ঘোষিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমরা নতুন সরকার দেখতে পাই।
(২৭ জানুয়ারি, ২০২৪–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন