সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুক্ত গণমাধ্যম দিবস: গাজা অভিযানে ইসরায়েল জলবায়ু সংকটও বাড়াচ্ছে

 


গাজায় ইসরায়েলের নারকীয় গণহত্যা ও সামরিক অভিযানের ২০০ দিন ইতিমধ্যেই পার হয়ে গেছে, যাতে নিহত হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি। যুদ্ধবিগ্রহের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের বর্ণনায় গাজার সামরিক অভিযান বিভিন্ন কারণে চলতি শতাব্দীর সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ও নিষ্ঠুরতম যুদ্ধ। গাযায় যত বেসামরিক নাগরিক তথা শিশু ও নারী নিহত হয়েছে, তা অন্য কোনো যুদ্ধে ঘটেনি। একইভাবে ইসরায়েলি অভিযানে যতসংখ্যক ত্রাণকর্মী, চিকিৎসক ও নার্স নিহত হয়েছে, তা আর কোথাও ঘটেনি। গত জানুয়ারিতেই রিপোটার্স স্য ফ্রঁতিয়ে বলেছিল যে এককভাবে এই অভিযানে যত সাংবাদিকের প্রাণহানি ঘটেছে, তা চলতি শতকের সবকটি যুদ্ধে নিহত সাংবাদিকের মোট সংখ্যার চেয়ে বেশি। তারপরও নিহতের তালিকা দীর্ঘায়িত হয়েছে। গত ৪ এপ্রিল কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস ( সিপিজে) পরিচয় যাচাই করা নিহত সংবাদকর্মীর সংখ্যা ৯৭ এবং অযাচাইকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে জানিয়েছে। আনাদুলু সংবাদ সংস্থার হিসাবে সংখ্যাটি ১৪২। 


ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাযায় এমনিতেই বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল এবং যুদ্ধ শুরুর পর তাদের কাউকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যার অর্থ হচ্ছে, নিহত সাংবাদিকদের সবাই ফিলিস্তিনি। রণাঙ্গণের সাংবাদিকতায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের এই দুর্বিনীত সাহস ও আত্মত্যাগের কোনো তুলনা হয় না। গাজার গণহত্যাকে আড়াল করার কোনো চেষ্টাই ইসরায়েল বাদ রাখেনি, কিন্তু এসব নির্ভীক ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের কারণেই বিশ্ববাসী তা জানতে পেরেছে। 


আজ ৩ মে আর্ন্তজাতিক মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। সাংবাদিকতা পেশার জন্য যাঁরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করলেন, তাঁদের স্মরণ না করে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা না জানিয়ে এমন দিবস পালন করা যায় না বলেই মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের প্রাক্কালে ফিলিস্তিনি সংবাদকর্মীদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা বললাম। তাদের ত্যাগের কথা আরও একটি কারণ হচ্ছে, এবারের আর্ন্তজাতিক মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উৎসর্গ করা হয়েছে বৈশ্বিক পরিবেশ সংকটের প্রতি সবার সচেতনতা তৈরির জন্য। অবশ্য দিবসটি পালনের উদ্যোক্তা জাতিসংঘসহ তার শরিক আর্ন্তজাতিক সংগঠনগুলোর কেউই পরিবেশের সবচেয়ে বড় ঘাতক যুদ্ধ ও সামরিকীকরণের কথা বলছে না। অথচ, রুঢ় সত্য হচ্ছে, পরিবেশের সংকটের জন্য মানবসৃষ্ট যত ঘটনা বা অঘটনের কথাই বলা হোক না কেন, যুদ্ধই এর সবচেয়ে বেশি ধ্বংস সাধনের জন্য দায়ী। 


গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে চলমান পরিবেশ বিপর্যয়কে ঠিক কতটা ত্বরান্বিত করছে, তা এখনই বলা সম্ভব না হলেও প্রথম দুই মাসের একটি অর্ন্তবর্তী মূল্যায়নে এর ভয়াবহতার চিত্র কিছুটা উঠে এসেছে। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের কুইন মেরি কলেজের এক গবেষণায় গত জানুয়ারিতে বলা হয় যে গাজা যুদ্ধের প্রথম দুই মাসে ধরিত্রীর উষ্ণায়নের জন্য দায়ী ক্ষতিকর কার্বন গ্যাসের যতটা উদগীরন ঘটেছে, তা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা কুড়িটি দেশের বার্ষিক কার্বন নি:সরণের সমান। আমরা জানি, বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম। যার মানে হচ্ছে, বাংলাদেশ এক বছরে যতটা ক্ষতিকর গ্যাস উদগীরণ করে তা গাজায় ইসরায়লি সেনা অভিযানের কার্বন নি:সরণের একটি ভগ্নাংশ মাত্র, যদিও গাজার আয়তন ঢাকা শহরের ছয় ভাগের এক ভাগ। 


গবেষণা প্রতিবেদনে হিসাব করে দেখানো হয়েছে যে গাজায় বোমাবর্ষণের জন্য ওই ৬০ দিনে শুধু  বিমান থেকেই কার্বন নি:সরণ হয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৫০ টন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সরবরাহ পরিবহনে  ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৫০ এবং ইসরায়েলের বিমান অভিযানে ১ লাখ ২২ হাজার টন গ্যাস নির্গমন ঘটেছে। এর সঙ্গে আছে স্থলবাহিনীর ৫ হাজার ৬৬৩ টন কার্বন উদগীরণ। একইসময়ে হামাসের রকেট হামলা থেকে কার্বন নি:সরিত হয়েছে ৭১৩ টন। 


গবেষণাপত্রটির ওপর গার্ডিয়ান পত্রিকা যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয় যে অতীত গবেষণা থেকে আভাস মেলে যে ওই দুই মাসে পুরো যুদ্ধের সব রসদের সরবরাহ বিবেচনায় নিলে ক্ষতিকর কার্বন নি:সরণের পরিমাণ প্রকাশিত হিসাবের পাঁচ থেকে আট গুণ পর্যন্ত হতে পারে ( এমিশন্স ফ্রম ইসরায়েল’স ওয়ার ইন গাজা হ্যাভ ’ইমেন্স’ এফেক্ট অন ক্লাইমেট ক্যাটাসট্রফি, ৯ জানুয়ারি, ২০২৪।)    

 

ইসরায়েলি সামরিকবাহিনীর যথেচ্ছ ধ্বংসযজ্ঞের এক–তুতীয়াংশ সময়ের খন্ডচিত্র যদি এই হয়, তাহলে পুরো সাড়ে ছয় মাসে তা আরও কতগুণ বৈশ্বিক ক্ষতির কারণ হয়েছে, তা অনুধাবন করা কঠিন নয়। এসব হিসাব হলো ধ্বংসলীলা পরিচালনায়। কিন্তু যেদিন যে অবস্থায় এ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে, তখন সেখানে নতুন করে বসতি ও অবকাঠামো নির্মাণ প্রয়োজন হবে। সেই নির্মাণ কাজেও ক্ষতিকর গ্যাস উদগীরণ অবশ্যম্ভবী, যদিও তা অত্যাবশ্যক। সব মিলিয়ে গাজা যুদ্ধের পরিবেশগত মূল্য অত্যন্ত চড়া এবং এই ক্ষতির শিকার শুধু ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠী নয়, পুরো বিশ্ব এবং মানবজাতি ও জৈবব্যবস্থা। 


কোনো যুদ্ধবিগ্রহ ছাড়াই বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা এমনিতেও বেশ উদ্বেগের বিষয়। কোন দেশ কী পরিমাণে কার্বন গ্যাস তৈরি করে, তার হিসাব নিয়মিতভাবেই জাতিসংঘের সংস্থা ইউএন ফ্রেমওয়ার্ক ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ, ইউএনএফসিসির কাছে পেশ করতে হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের চাপে সামরিক বাহিনী কতটা কার্বন নিঃসরণ করে তা জানানোর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এর তথ্য প্রকাশ একেবারেই স্বেচ্ছামূলক। 


তারপরও সায়েন্টিস্টস ফর গ্লোবাল রেসপন্সিবিলিটি এবং কনফ্লিক্ট অ্যান্ড গ্লোবাল অবজারভটরির কপ ২৬ এর সময়ে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলেছে, বিশ্বে যতটা ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন ঘটে তার সাড়ে পাঁচ শতাংশ আসে সামরিকবাহিনীর কাছ থেকে। সামরিকবাহিনীর এই গ্যাস উদগীরণের পরিমাণ বিশ্বে আকাশ ও সমুদ্রপথের পরিবহনব্যবস্থায় যতটা গ্যাস উদগীরণ হয় (যথাক্রমে ১.৯ ও ১.৭ শতাংশ)  তার যোগফলের চেয়েও বেশি। 


জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণ যেসব পরিবেশবিনাশী কাজ সেগুলোর বিষয়ে তথ্য জানা ও জনগণকে জানানোর দায়িত্ব সংবাদমাধ্যমের। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন। বৈশ্বিক সংঘাতের বাইরে জাতীয় পরিসরে সাংবাদিকেরা পরিবেশ বিষয়ে অবাধে তাদের দায়িত্ব পালন ও মতপ্রকাশের অধিকার কতটুকু পাচ্ছেন? 


গণতন্ত্রের যে গুরুতর ক্ষয়সাধন ঘটেছে, তাতে সাংবাদিকতা কতটা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রথমে তথ্য প্রযুক্তি আইন, তারপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং বর্তমানের সাইবার নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের মুখ ও কলম বন্ধ করায় কী ধরণের প্রভাব ফেলেছে, তা মামলাগুলোর পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। দেশের ভেতরে প্রতিবাদ এবং আর্ন্তজাতিক পরিসরে সমালোচনার মুখে একই নিবর্তনমূলক আইনের দু’বার পরিবর্তনেই তার ব্যপক অপপ্রয়োগের স্বীকৃতি মেলে। 


আয়ুব মিয়াঁজির কথা কি আপনাদের মনে আছে? গত বছরের এপ্রিলের কথা। চট্টগ্রামের স্থানীয় দৈনিক সাঙ্গুর চনদনাইশ সংবাদদাতা আয়ুব মিয়াঁজি পাহাড় কাটার খবর প্রকাশ করায় ক্ষুব্ধ অপরাধীচক্র তাঁকে ধরে নিয়ে মারধর করার পর দোতলা ভবন থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। তিনি প্রাণে রক্ষা পেলেও তাঁর পাঁজরের তিনটি হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিল। এরকম দুর্বৃত্তপনা অহরহই ঘটছে এবং তা ঘটছে হয় ক্ষমতাসীন দলের প্রশ্রয়ে, নয়তো দূর্নীতিবাজ প্রশাসনের যোগসাজশে। নদীর যথেচ্ছ বালু উত্তোলন, বনভূমি দখল ও বিনাশ, প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা, বায়ুদূষণকারী ইট পোড়ানোর কারখানা কিম্বা মেয়াদোর্ত্তীণ ও অনুপযুক্ত যানবাহনের বাণিজ্যিক ব্যবহারের মতো অপরাধ দেশের নানাপ্রান্তেই ঘটছে।

আর্ন্তজাতিক মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে তাই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের জন্য সোচ্চার হওয়া যেমন জরুরি, তেমনই প্রয়োজন হচ্ছে গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত গণহত্যা ও সামরিক অভিযান বন্ধের কথা বলা। বিশ্ববিবেক হিসাবে যারা নিজেদের দাবি করে তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো দরকার যে গাজার যুদ্ধকে সমর্থনের অর্থ হচ্ছে শুধু ফিলিস্তিনি গণহত্যায় সহযোগিতা নয়, বৈশ্বিক পরিবেশ বিনাশের দায়ও কাঁধে নেওয়া।  

(৩ মে. ২০২৪–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...