সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত অংশীদারত্বে প্রতিবেশীরা কোথায়?

প্রায় দুই দশক ধরে সন্ত্রাসবাদকে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রতি প্রধান হুমকি গণ্য করে বিশ্বরাজনীতি আবর্তিত হলেও এখন তাতে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস বলেছেন, তাঁর দেশের জাতীয় নিরাপত্তার প্রাথমিক নজর এখন সন্ত্রাসবাদে নয়, বৃহৎ শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। শুক্রবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল বিষয়ে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের ক্ষতি করে নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য চীন ও রাশিয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শনকে আমরা প্রতিহত করব।’ নির্বাচনে জেতার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি পুতিন কিংবা রাশিয়ার যত সমর্থনই থেকে থাকুক না কেন, কিংবা ট্রাম্প-সি সম্পর্কে যতই উষ্ণতার প্রকাশ ঘটে থাকুক না কেন, তাতে বৈশ্বিক পরিসরে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা একটুও কমছে না। বরং নতুন মেরুকরণ এবং নতুন সমীকরণে ছোট রাষ্ট্রগুলোর জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন চ্যালেঞ্জ। রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জটিও এ রকমই একটি দৃষ্টান্ত।
জেমস ম্যাটিসের বক্তব্য আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার জন্য কতটা তাৎপর্যপূর্ণ, তা বোঝার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষার দিকে আগে নজর দিতে হবে। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠতা বেশি দিনের নয়, বরং গত শতাব্দীতে এবং এই শতাব্দীর প্রথম দশকেও যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব যেমন বেড়েছে, তেমনই ভারতের সঙ্গে নৈকট্য তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান আফগান জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়ে চলেছে, এমন অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের সঙ্গে গলা মিলিয়েছে ভারত। এই টানাপোড়েন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা বন্ধের কথা বলেছে ওয়াশিংটন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত সপ্তাহেই কাজাখ প্রেসিডেন্টের সফরের সময়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, তাঁর প্রশাসন দক্ষিণ এশিয়ায় যে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে, তাতে দ্রুত সুফল মিলছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন কৌশলটি কী? এর একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যায় দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত কেনেথ আই জাস্টারের বক্তব্যে। ১১ জানুয়ারি দিল্লিতে তাঁর প্রথম বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে ভারতকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল এবং এর বাইরেও ভারতকে একটি ‘নেতৃস্থানীয় শক্তি’র স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, এই অঞ্চল ঘিরে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ও দ্রুততম প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী অর্থনীতিগুলো এবং সবচেয়ে জনবহুল জাতিসমূহ। এই অঞ্চলের জলপথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আছে, যেগুলো বৈশ্বিক বাণিজ্যপ্রবাহে বাধা হতে পারে। এর ভৌগোলিক গঠন প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এবং এই অঞ্চল দ্রুত বিশ্বব্যবস্থার ভর কেন্দ্রে রূপান্তরিত হচ্ছে।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এবং অন্যদের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত জাস্টার যৌথভাবে তাঁরা যা চান, তা তুলে ধরেন। প্রায় চার হাজার শব্দের এই বিশদ বক্তৃতায় দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারত্বের কথা বলা হয় এবং তার অংশ হিসেবে প্রতিরক্ষা ও সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, বাণিজ্য, জ্বালানি ও পরিবেশ এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের দৃশ্যকল্পগুলো (ভিশন) তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আলাদা করে আছে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতার কথা, যেটি বাংলাদেশসহ অন্য প্রতিবেশীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে যে ভূমিকায় দেখতে চায়, তা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তার যে নেতৃত্বের কথা আগেই উল্লিখিত হয়েছে, সেটিরই অংশবিশেষ। রাষ্ট্রদূত জাস্টারের ভাষায় ভারতের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্বের লক্ষ্য হচ্ছে উভয় দেশকে শক্তিশালী করা। অবশ্য বিষয়টি শুধু যে ট্রাম্প প্রশাসনের একক উদ্ভাবন বা একেবারে নিজস্ব কৌশল, তা নয়। ওবামা প্রশাসনের সময়ই মূলত ভারতের ভূমিকা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অবস্থান স্পষ্ট হতে শুরু করে এবং প্রথম প্রতিরক্ষা সহযোগিতার চুক্তি সই হয়। ২০১৬-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে উইলসন সেন্টারের এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান নির্বাচনোত্তর সরকারের পররাষ্ট্রনীতিতে দক্ষিণ এশিয়া নীতির চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। কুগেলম্যানও তখন ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক প্রশ্নে মতপার্থক্যগুলো দূর করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন (ইউএস পলিসি ইন সাউথ এশিয়া: ইমপারেটিভস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস, ৫ অক্টোবর, ২০১৬)।
জাস্টার বলেন, ‘গত ১৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত একত্রে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। এই সময়ের কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের মধ্যে আছে আমাদের সামরিক সহযোগিতা এবং যৌথ সামরিক মহড়ার সম্প্রসারণ, উচ্চ প্রযুক্তি সহযোগিতা গোষ্ঠী এবং কৌশলগত অংশীদারত্বের পরবর্তী ধাপের কাজ, ঐতিহাসিক বেসামরিক পরমাণু চুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য ছয় গুণ বৃদ্ধি, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও বাণিজ্য উদ্যোগ এবং ভারতকে একটি প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদার ঘোষণা। বাণিজ্য, জ্বালানি, পরিবেশ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে আরও অনেক উদ্যোগও এখানে উল্লেখ করা যায়। এ ক্ষেত্রে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, উভয় দেশে সরকারে একাধিকবার পরিবর্তনের মধ্যেও প্রধান প্রধান দলগুলোর এই অংশীদারত্বের প্রতি দৃঢ়, ধারাবাহিক এবং টেকসই সমর্থন রয়েছে। তিনি বলেন, ‘একুশ শতক এবং তারও পরে একটি ইতিবাচক ও তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব রাখতে সক্ষম, এমন একটি কৌশলগত অংশীদারত্বের জন্য একটি সুদৃঢ় ভিত্তি আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। এখন এই ভিত্তিমূলের ওপর ভবিষ্যৎ নির্মাণের সময়। এখন সময় হচ্ছে, এই কৌশলগত অংশীদারত্বকে যাতে একটি টেকসই অংশীদারত্ব হয়, তা নিশ্চিত করা।’
রাষ্ট্রদূত জাস্টারের কথায়, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্কের একটি মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদার করায় প্রতিরক্ষা এবং সন্ত্রাস প্রতিরোধে সহযোগিতা। এর লক্ষ্য হচ্ছে আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসেবে, বিশেষভাবে ভারত মহাসাগর ও তার আশপাশে শান্তির প্রতি হুমকির ক্ষেত্রে সফলভাবে সাড়া দেওয়ায় সক্ষম ভারতকে আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখা।’ তিনি যেসব লক্ষ্যের কথা বলেছেন, তার মধ্যে একটি মুক্ত ও অবাধ অঞ্চল নিশ্চিত করা; সমুদ্রযান চলাচলের স্বাধীনতা, আকাশপথে বিমান চলাচল এবং বাণিজ্য ও সমুদ্রের অন্যান্য আইনসম্মত ব্যবহারের নিশ্চয়তা বিধান; আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা রক্ষা, গণবিধ্বংসী অস্ত্রের প্রসার রোধ এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের কথাও রয়েছে।
চীনের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তার সাম্প্রতিক তৎপরতার কথা আমরা সবাই জানি। সুতরাং এটি মোটামুটি স্পষ্ট যে চীনের ওই রাজনৈতিক-সামরিক আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের গুরুত্ব এখন অপরিসীম। ভারতের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো তাই ওই দুই দেশের সহযোগিতার অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র। মাত্র এক যুগের মধ্যে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাণিজ্য কার্যত শূন্য থেকে দেড় হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে আছে সবচেয়ে উন্নতমানের কিছু সামরিক সরঞ্জাম। গত জুনে ট্রাম্প প্রশাসন অত্যাধুনিক সি গার্ডিয়ান আনম্যানড অ্যারিয়াল সিস্টেম ভারতের কাছে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ন্যাটো জোটের বাইরে ভারতই প্রথম এই উন্নত প্ল্যাটফর্মের অধিকারী হলো। যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যেই ভারতে জটিল প্রতিরক্ষা সামগ্রীর বিভিন্ন উপাদান তৈরি করছে। সামরিক সরঞ্জামের যৌথ উন্নয়ন এবং যৌথ উৎপাদনের সম্ভাবনাসহ প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই ভারতকে মেজর ডিফেন্স পার্টনার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রতিরক্ষা খাতে আগামী প্রজন্মের প্রযুক্তিপদ্ধতি বা সিস্টেমস যৌথভাবে উদ্ভাবনের মতো বিষয়ে আগামী বছরে বড় ধরনের চুক্তিরও ইঙ্গিত দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত জাস্টার।
আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যৌথ উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত মাসে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী সংলাপ। তথ্যবিনিময়, সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত বা তালিকাকরণ, আর্থিক অপরাধ এবং তার নেটওয়ার্ক দমন করা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিসরে সন্ত্রাসীদের শিবির ও কার্যক্রম ধ্বংস ও বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছে দুটি দেশ। ভবিষ্যতে সন্দেহজনক সন্ত্রাসীদের নির্মূল ও তাদের আস্তানা ধ্বংস করতে সীমান্তের বাইরে ভারতের অভিযান পরিচালনার ঘটনা বাড়বে, এমন ধারণা অমূলক হবে না।
কৌশলগত অংশীদারত্বের আরেকটি বড় বিষয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০০১ সালে যেখানে ছিল ২ হাজার কোটি ডলার, ২০১৬ সালে তা পৌঁছেছে ১১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে। দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বেশ জোরের সঙ্গেই ঘোষণা করেছেন যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ তত্ত্বের একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো দ্বন্দ্ব নেই; বরং তাঁর ব্যাখ্যায়, একে অন্যের বাজারে বিনিয়োগ করলে তা পরস্পরের জন্য লাভজনক হবে, এতে অর্থনৈতিক লেনদেন ও বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়বে। এমনকি তিনি চূড়ান্ত পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত অবাধ বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনার কথা বলেছেন।
কৌশলগত অংশীদারত্বের অংশ হিসেবে ভারতকে একটি সর্বাঙ্গীণ জ্বালানি সহযোগিতা দেওয়ার কথাও বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। সব ধরনের জ্বালানি-কয়লা, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পরমাণু বিদ্যুৎ সব ক্ষেত্রেই ভারতকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরেই যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো বড় আকারে ভারতে অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করেছে। চলতি বছরের প্রথম দিকেই যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কৌশলগত জ্বালানি অংশীদারত্বের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা আছে।
রাষ্ট্রদূত জাস্টার আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রশ্নে দক্ষিণ এশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে কম সংহত অঞ্চল বলে অভিহিত করে আঞ্চলিক সংযোগ (কানেকটিভিটি) প্রসারে উদ্যোগ বাড়ানোর কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই এই অঞ্চলটিতে তার সহায়তা কর্মসূচিকে জাতীয় অবকাঠামো প্রকল্পের অর্থায়নের কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। আঞ্চলিক অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর অর্থায়নে বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলো এবং ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ের কথাও তিনি বলেছেন।
সড়ক, রেল কিংবা নৌপথে অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রকল্পে এই আঞ্চলিক সংযোগ বা কানেকটিভিটি যে এখন একটি বড় অগ্রাধিকার, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু যশোর রোডের গাছ কেটে সংযোগ সম্প্রসারণে বাণিজ্য বাড়লে বাংলাদেশের আনুপাতিক প্রাপ্তি যথেষ্ট হবে কি না, সেই প্রশ্ন তোলা ও এর হিসাব-নিকাশটি আমাদের জন্য জরুরি। বৈশ্বিক পরিসরে ভারতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের পটভূমিতে ক্ষুদ্র প্রতিবেশীর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তার ছায়া যে আরও বিস্তৃত হবে, সেটা কি অস্বীকার করা চলে?
(২২ জানুয়ারি, ২০১৮ প্রথম আলোয় বিশ্বায়নের কাল কলামে প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime in N

একটি জরিপ, নৈরাশ্য ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্ন

উন্নত গণতন্ত্রে সরকার , সরকারপ্রধান, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল এবং বিভিন্ন বিতর্কিত ইস্যুতে প্রায়ই জনমত জরিপ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কখনো বিশ্ববিদ্যালয়, কখনো সংবাদমাধ্যম, আবার কখনো বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব জরিপ করায়। বেশ কিছু পেশাদার জরিপকারী প্রতিষ্ঠানও আছে, যারা শুধু জরিপের কাজ করে। এসব জরিপ আমাদের গণমাধ্যমগুলোর অনলাইন ভোটের মতো নয়, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুধু সেই ওয়েবসাইটের নিয়মিত ব্যবহারকারীদের মতামত ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের দেশে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের প্রায় দুই দশক বার্ষিক জরিপে রাজনীতির গতিপ্রকৃতির চমৎকার প্রতিফলন দেখা যেত। কিন্তু গণতন্ত্রের ক্ষয়সাধনের সঙ্গে সঙ্গে সেই চর্চা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়িক প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে জরিপ করতে গেলে সরকারের সায় আছে কিনা সেটা দেখা হয়, নইলে পেশাদার বিশেষজ্ঞরা বা তাঁদের প্রতিষ্ঠানগুলো ওই দায়িত্ব নিতে চান না। কথা বলার ভয়ের মতো মতামত জানতে চাওয়াতেও এক ধরনের ভয়ের আসর পড়েছে। গণতন্ত্র প্রসারে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট, আইআরআই এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তারা এখনো মাঝে মধ্যে স্পর্শকাতর রাজন

ভিসা নিষেধাজ্ঞা গুরুতর, সাংবাদিক নির্যাতন কী

একই দিনের দুটি সংবাদ শিরোনাম, ’৯ মাসে ২১৭ সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার: আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ এবং ’পিটার হাসের বক্তব্য স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর চাপ, সমাবেশে সাংবাদিকনেতারা’। দুটো খবরই সাংবাদিকতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে। তবে একটি খবর, যাতে আছে সেই সব সাংবাদিকদের কথা, যাঁরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শারীরিক ক্ষতি অথবা গ্রেপ্তার ও মামলার কারণে হয়রানির শিকার হয়েছেন; আর অন্যটিতে ভবিষ্যতে কোনো গণমাধ্যমকর্মী যুক্তরাষ্ট্র যেতে চাইলে ভিসা না পাওয়ার কারণে তিনি বা তাঁর যে সম্ভাব্য ক্ষতি হতে পারে, তা নিয়ে আশঙ্কা। সাংবাদিকদের নিপীড়ন–নির্যাতন ও হয়রানির বিষয়ে গবেষণার কাজ ও তা প্রকাশের দায়িত্ব পালন করেছে একটি মানবাধিকার সংগঠন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার দুশ্চিন্তায় প্রতিবাদী হয়েছেন সাংবাদিকদের অপেক্ষাকৃত নতুন একটি প্লাটফর্ম জাস্টিস ফর জার্নালিস্ট।  বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নিয়মিত কাজের একটি হচ্ছে বিভিন্ন নিপীড়ন–নির্যাতন ও হয়রানির মত অধিকার লংঘনের তথ্য সংগ্রহ করা এবং তারই অংশ হিসাবে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ পেশা সাংবাদিকতার ওপর তাদের আলাদা মনোযোগ। তাদের প্রকাশিত হিসাব