সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শান্তিরক্ষী ছাত্রলীগ!

গৌরবের সত্তুর বছর ঘটা করে উদযাপনের মাত্র তিন সপ্তাহ পার না হতেই ছাত্রলীগের শান্তিরক্ষীর ভূমিকা নিয়ে অনাকাঙ্খিত বিতর্ক এখন তুঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক ভূমিকাই এই বিতর্কের কারণ। কি করেছে ছাত্রলীগ? সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ঘেরাওয়ে অবরুদ্ধ থাকা উপাচার্যকে রক্ষা করতে গেছে এবং অবরোধকারীদের  মারধোর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চলছে তোলপাড় এবং মূলধারার গণমাধ্যমেও ঘটনাটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে। এসব সংবাদের শিরোনাম এবং ভাষ্য ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরতে পেরেছে কিনা সেটা অবশ্য প্রশ্নসাপেক্ষ। কেউ কেউ লিখেছেন অবরুদ্ধ উপাচার্যকে মুক্ত করলে ছাত্রলীগ, কেউ বলেছেন উদ্ধার করেছে, আবার কারো কারো ভাষায় উপাচার্যের ত্রাতার ভূমিকায় ছাত্রলীগ।

যাদেরকে নিয়ে এতো কথা তাদের ভাষ্যটি কি? ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেছেন অছাত্রদের হামলা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে উদ্ধার করতে ও উপাচার্যের সম্মান রক্ষায় ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে সেখানে গিয়েছিল। তিনি আরো বলেছেন ছাত্রলীগ সেখানে মারামারি করতে যায়নি। ছাত্রদল, জামায়াত-শিবির এবং কিছু বাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ ও তাঁর ওপর হামলা করেছে শুনে সেখানে গিয়েছিল।  এছাড়াও, অবরোধকারী ছাত্র-ছাত্রীদের বাম-সন্ত্রাসী অভিহিত করে তাদের বহিষ্কার ও বিচার দাবি করে ছাত্রলীগ যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে ঘটনার বিবরণে তারা উপাচার্যকে উদ্ধার এর কথা বলেছে। ছাত্রলীগের অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন ছাত্রলীগ উপাচার্যকে রক্ষা করতে এগিয়ে না গেলে তাঁর প্রাণনাশের আশংকা ছিল।

বাংলাদেশের ইতিহাস, ছাত্রলীগের ইতিহাসএরকম একটি ভাষ্য বহুদিন ধরেই চালু আছে। বিশেষ করে যাঁরা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ছাত্রলীগ করেছেন এবং পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি, প্রশাসন, বুদ্ধিবৃত্তিক বিভিন্ন পেশা এবং ব্যাবসা-বাণিজ্যে সাফল্য লাভ করেছেন তাঁরা গর্বের সঙ্গেই এই কথাগুলো বলে থাকেন। বাষট্টি, ছেষট্টি কিম্বা উনসত্তুরের ছাত্র-গণআন্দোলনে যাঁরা অংশ নিয়েছেন তাঁদের কাছে ঘেরাওয়ের মত কর্মসূচি নতুন কিছু নয়। অবশ্য, ইতিহাস তো অতীতের কথা। সময় যে বদলে গেছে সেকথাও তো আমাদের মানতে হবে। এখন উন্নয়নের রাজনীতির যুগ। তাই ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকের তালা ভাঙ্গবে কিম্বা কলাপসিবল গেট ভাঙ্গবে সেটা এখনকার ছাত্রলীগ এবং কিম্বা তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকরা মেনে নেবেন এমন ধারণা উন্নয়নের গণতন্ত্রেঅচল। 

উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তচিন্তা এবং বিতর্কের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এমনটি যাঁরা ভাবছেন তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন যে ছাত্রলীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দী সংগঠনটি বহুদিন ধরেই ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক শক্তি যেহেতু ক্ষমতাসীনদের জন্য তেমন কোনো মাথ্যাব্যাথার বিষয় নয় সেহেতু তারা কিছুটা সীমিত অধিকার ভোগ করে থাকে। কিন্তু, তারাও যখন মাথাব্যাথার কারণ হয়েছে তখন তাদেরকে কি পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়েছে সেকথা নিশ্চয়ই কাউকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ছাত্র সংসদ, ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে তাদের আন্দোলন দমনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্রলীগ উভয়ের মারমুখি আচরণের ঘটনা বেশি দিনের পুরোনো নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রক্টরকে তখন তাঁর দায়িত্ব পালনে শারীরিক শক্তিপ্রয়োগেও সক্রিয় দেখা গেছে। এগুলো সবই হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে উন্নয়নের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই উপলব্ধি থেকেই তো সংসদের বিরোধীদল মন্ত্রীসভারও অংশীদার!

উপাচার্য তাই তাঁর প্রিয় শান্তিরক্ষীদের দ্বারা ছাত্রীনিগ্রহে বিব্রত না হয়ে বরং আরও উচ্চকন্ঠে ঘোষণা করেন যে কোনধরণের অশুভ তৎপরতা বরদাশত করা হবে না। তাঁর শান্তিরক্ষীদের পক্ষে সাফাই দিয়ে তিনি বরং বলেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের সামাজিক শক্তি দিয়ে তিনি অশুভ শক্তি প্রতিহত করবেন ( শুক্রবার ২৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযানের বক্তৃতা)। উপাচার্য অবশ্য সামাজিক শক্তির কথা বলতেই পারেন, কেননা তিনি তো ছাত্রলীগের পেশিশক্তি ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির দলীয় পক্ষপাতদুষ্ট বিবৃতিতে বলীয়ান।   
২.
বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় নিয়োজিত যাঁরা উন্নয়ন দেখেন না তাঁদের কেউ কেউ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে গাধার গল্প শোনার পরও প্রশ্ন করছেন উপাচার্যকে রক্ষার দায়িত্ব ছাত্রলীগকে নিতে হবে কেন? দেশে আইনশৃংখলা রক্ষার কাজটি তো পুলিশের করার কথা? এঁরা আসলে উন্নয়নের রাজনীতি দেখেও দেখেন না! সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করার পর পরীক্ষার ফলপ্রকাশের দাবিতে আন্দোলন মোকাবেলায় পুলিশ আমার পর তা নিয়ে কর্তৃপক্ষকে কি কম সমালোচনা শুনতে হয়েছে? সিদ্দিকুর নামের তিতুমির কলেজের সেই ছাত্রটির চোখ হারানোর ঘটনাতেও  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই গালমন্দ শুনতে হয়েছে। সুতরাং, পুলিশের বদলে শৃংখলা ফেরানোর কাজটি ছাত্রলীগ নিজেদের কাঁধে তুলে নেবে তাতে অবাক হওয়ার কি আছে?  

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন ছাত্রলীগ ভিসির আমন্ত্রণে এসেছে (প্রথম আলো, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৮)প্রশ্ন উঠছে উপাচার্য কেন ছাত্রলীগকে লাঠিয়াল হিসাবে ব্যবহার করলেন? একযুগেরও বেশি আগে ২০০৫ সালে তৎকালীন উপাচার্য এস এম ফায়েজকে উদ্ধারের জন্য ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও একই কান্ড ঘটিয়েছিল। সেসময়ে অবশ্য উপাচার্যকে ঘেরাওয়ের পিছনে ছাত্রলীগের সমর্থন ছিল, এখন যেমন ছাত্রদলের ভূমিকার কথা উঠেছে। যাঁরা এভাবে ছাত্রলীগ আর ছাত্রদলের তুলনা করেন তাঁরা সম্ভবত ভুলে যাচ্ছেন উন্নয়নের রাজনীতির সঙ্গে বিএনপির শাসনামলের তুলনা চলে না। উন্নয়নের রাজনীতিতে উপাচার্যের ওপর হামলার অধিকার ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কারো থাকার কথা নয়। যেকারণে গত ২০১৬ সালের ১ জুলাই সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের গাড়ির ওপর হামলা এবং তাঁর বাসভবনে তালা দিয়ে তাঁকে ছাত্রলীগ কর্মীরা অবরুদ্ধ করে রাখলেও তখন উপাচার্যের জীবনরক্ষার প্রশ্ন ওঠেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মরণিকায় জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করে ভুল তথ্য ছাপা হওয়ায় ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ কর্মীরা তখন উপাচার্যের বিরুদ্ধে কোমরবেঁধে নেমে পড়েছিলেন।

উপাচার্যের ঘরবাড়ি তছনছ করার অধিকার ছাত্রলীগ যে শুধু ঢাকাতেই চর্চা করেছে এমন নয়। গতবছরের ৮ নভেম্বরের সংবাদপত্রগুলো খুললে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ নভেম্বর রাতে তাঁরা কিধরণের তান্ডব চালিয়েছিলেন তার একটা চিত্র পাওয়া যাবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই বা বাদ যায় কি করে? সেখানেও তো বিক্ষোভ ভাংচুরের একচেটিয়া অধিকার ছাত্রলীগের। । এছাড়া, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রাণহানিগুলোর দিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের তাকানোর ফুরসৎ কই? চ্ট্টগ্রামে ছাত্রলীগ নেতার হত্যাকারীর বিচারের দাবিতে এই সরকারের আমলেই একজন মা আমরণ অনশনে বসতে বাধ্য হয়েছিলেন। সিলেটে অভ্যন্তরীণ খুনোখুনির হিসাবটিও তাঁরা আর কতদিন উপেক্ষা করে চলবেন?

আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের দ্বিতীয় দফার হামলাটি প্রথমটির চেয়ে ছিল আরও বেশি মারমুখি। ফলে, মেয়েদেরকে শিক্ষা দিতে গিয়ে শালীনতার সীমাও রক্ষিত হয়নি। এক যুগ আগে ছাত্রদলের অভিযানে হামলাকারীদের মধ্যে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ দেখা না গেলেও ছাত্রলীগের অভিযানে তাদের অংশগ্রহণ এবং নিষ্ঠুরতাটা একটু বেশিই চোখে পড়েছে। সমালোচকদের অনেকে অবশ্য এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তাঁদের মতে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের যে নির্দেশ এসেছে তার কারণে ভবিষ্যতে নেতৃত্বের প্রতিযোগীতায় এগিয়ে যাওয়ার তাড়না থেকে কেউ কেউ একটু অতিউৎসাহী হয়ে উঠেছিলেন।

ছাত্রলীগ ভিসির আমন্ত্রণে তাঁর দেহরক্ষীর কাজটি করার পর সংগঠনটির রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক হিসাবে মূল দল আওয়ামী লীগের যে অবস্থান সেটিকে দায়িত্বশীল বলা চলে? ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির মত অপরাধের জবাবে স্পষ্টতই অপরাধীদের প্রশ্রয়দানের আভাষ মেলে। দল এবং সরকার বিব্রত হয় এরকম অপরাধ, তাও দলের বাইরে কারো লাঠিয়ালের ভূমিকা গ্রহণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারাটা নেতৃত্বের র্দূবলতার বহিপ্রকাশ কিনা সেই আত্মজ্ঝিাসার অবসর আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে কিনা সন্দেহ। অন্তত: ২৫ জানুয়ারি দলীয় বৈঠকের পর সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শান্তি বজায় রাখার জন্য ছাত্রলীগকে নতুন করে দেওয়া নির্দেশনায় সেই ইঙ্গিত মেলে না।   
৩.
আপাতদৃশ্যে মনে হয় অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার কিম্বা মুক্ত করার এই ভাষ্যটিই সংবাদমাধ্যম গ্রহণ করেছে। ব্যাতিক্রমী দুএকটি কাগজ ছাড়া কেউ উদ্ধার বা মুক্ত কথাগুলো উদ্ধৃতিচিহ্নের মধ্যে রাখে নি। উদ্ধার বা মুক্ত করার প্রশ্ন তখনই আসে যখন কোনো বেআইনী উপায়ে কাউকে আটকে রাখা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে কি কেউ বেআইনীভাবে আটকে রেখেছিল? বিক্ষোভ, ঘেরাও এবং অবরোধের মত কর্মসূচি বাংলাদেশের রাজনীতিতে তো কোন নতুন সংযোজন নয়। উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ছিল পূর্বঘোষিত। সুতরাং, তা বেআইনী হলে কতৃপক্ষ তা আগেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারতেন। সেরকম কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। ছাত্রলীগের নিগ্রহের বিচার দাবিতে ঘেরাওয়ের কর্মসূচির দিনে উপাচার্যের কার্যালয়ের ফটকগুলোতে তালা লাগিয়ে আর ছাত্রলীগের মিছিলের দিনে সেগুলো খুলে রেখে উপাচার্য নিশ্চয়ই তাঁর নৈতিক অবস্থানটি পরিষ্কার করেছেন।

স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাশিত ছিল - উপাচার্য বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার একটি গ্রহণযোগ্য এবং শান্তির্পূণ সমাধান করবেন। দেশের সর্ব্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটিতে সেভাবেই আন্দোলন-সংগ্রামের নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। কিন্তু তার উল্টোটা কেন ঘটলো? ছাত্রলীগ দাবি করেছে তাঁদের দশজন কর্মী আহত হয়েছেন। ছাত্রলীগ তাদের অন্যায় দাপট দেখানোকে বৈধতা দিতে নিপীড়ণবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানার ব্যবহারের পর শনিবার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নামটিকেও কাজে লাগানোর এক অদ্ভূত নজির তৈরি করেছে। ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরীকদের (জাসদ, ওয়ার্কাস পার্টি, ন্যাপ ইত্যাদি) ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে তাঁরা ছাত্রলীগের ভাষ্যেরই পুনরুচ্চারণ করেছেন। তবে, লক্ষ্যণীয়ভাবে তাঁরা উপাচার্যকে ঘেরাওকারীদের আর বামসন্ত্রাসীবলেন নি। ধারণা করি নিজেদেরে বাম লেবাসটি ধরে রাখতে তাঁরা এখনও ব্যাকুল বলেই ছাত্রলীগের ওই শ্বদবন্ধনী তাঁরা গ্রহণ করেন নি।

কিছু ‍কিছু সংবাদপত্রে ছাত্রলীগের এই দাবি এমনভাবে ছাপা হয়েছে যাতে সেটি সত্য বলেই মনে হয়। কিন্তু, ভিডিও ফুটেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের ছবিগুলোতে তার উল্টোচিত্রই পাওয়া যাচ্ছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে সত্যাসত্য যাচাইয়ের কাজটি গণমাধ্যম যথার্থভাবে করতে পেরেছে কিনা। সোশাল মিডিয়ার ক্ষমতার কাছে মূলধারার পত্রিকাগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতার পরক্ষিাটি কিন্তু এখন আর কোনোভাবেই ছোট করে দেখার সময় নয়।
( নিবন্ধটি প্রথম আলোয় বিশ্বায়নের কাল কলামে ইষৎ সংক্ষেপিত আকারে ২৮ জানুয়ারি, ২০১৮ প্রকাশিত হয়েছে।)






মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

How to Describe the Awami League Accurately?

In an article titled ‘How Not to Describe the Awami League’ , published in this paper, British journalist David Bergman rightly underscores the importance of accuracy in labeling a political party—particularly when such labels carry potential legal consequences. Those familiar with Bergman’s work over the years know that he has consistently taken on politically sensitive and controversial subjects, often at significant personal and professional cost. His courage and commitment to journalistic integrity deserve recognition. Bergman is correct in asserting that “while serious criticisms of the Awami League are both valid and necessary, they must be proportionate and grounded in fact.” His analysis focuses primarily on the legal validity and appropriateness of labeling the Awami League as “fascist” or “Nazi.” He argues that comparing the party to the Nazi regime trivialises the scale of Nazi atrocities and misrepresents the complexities of Bangladeshi politics. Indeed, any historical comp...

ঘৃণা চাষের উর্বর ভূমি ও রাজনৈতিক সংকট

  দেশে একের পর এক অস্থিরতা সৃষ্টির বেশ কয়েকটি ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করলাম। এগুলোর কোনোটিই প্রত্যাশিত ছিল না। অনেকেই এগুলো নির্বাচন যাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুত সময়ে না হয়, তার জন্য পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা হিসাবে বর্ণনা করেছেন। পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা সৃষ্টির পিছনে প্রধানত: দুটি শক্তিকে দায়ী করা হচ্ছে – একটি হচ্ছে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পলাতক নেতৃত্বের সাংগঠনিক উদ্যোগ; অপরটি হচ্ছে, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) সুবাদে সমাজে প্রভাব বিস্তারে দক্ষতা অর্জনকারী কিছু প্রভাবক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী। এসব প্লাটফর্ম বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।  আপনি যদি কাউকে অপদস্থ বা হেয় করতে চান, তাহলে তার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান সম্ভবত:  সোশ্যাল মিডিয়ার কোনো একটি প্লাটফর্ম – বাংলাদেশে এটি ফেসবুক এবং ইউটিউব। বৈশ্বিক পরিসরে অবশ্য এক্স (সাবেক টুইটার) এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে গণহত্যার শিকার সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোয় এই সোশ্যাল মিডিয়া কী ভূমিকা রেখেছে, তা জাতিসংঘ তদন্...