সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ডিজিটাল আইনে ব্যঙ্গচিত্রের রঙ্গ

গত মঙ্গলবার ম্যানহাটানের আদালতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। অভিযোগ, তিনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর বিধান লঙ্ঘন করে শপথ ভঙ্গ করেছেন। মামলা করেছে লেখক-সাহিত্যিকদের বৈশ্বিক সংগঠন ‘পেন’–এর যুক্তরাষ্ট্র শাখা। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান সিএনএন ও টেলিকম কোম্পানি এটিঅ্যান্ডটির একীভূতকরণ বন্ধের চেষ্টা এবং ওয়াশিংটন পোস্ট–এর মালিক জেফ বেজোসের কোম্পানি অামাজনের জন্য ডাকমাশুল দ্বিগুণ করতে ডাক বিভাগের প্রধানকে চাপ প্রয়োগের ঘটনাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর উদ্দেশ্য সিএনএন ও ওয়াশিংটন পোস্ট–এর ওপর চাপ সৃষ্টি করা, যাতে তারা স্বাধীনভাবে সরকারের সমালোচনা করতে না পারে। পেনের সদস্যদের মধ্যে যাঁরা সাংবাদিক, তাঁরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ ও হুমকির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রেসিডেন্টের সমালোচনার জন্য এখন তাঁদের মূল্য দিতে হতে পারে।
মামলার পরিণতি কী হবে অথবা মামলার গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা আমার উদ্দেশ্য নয়। মামলাটির প্রসঙ্গ টানার কারণ মামলার একটি বক্তব্য, যেখানে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমকে তীব্রভাবে সমালোচনা করার অধিকার সংবিধানের প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের রয়েছে। কিন্তু অন্যদের মতপ্রকাশের অধিকারে বাধা দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব প্রয়োগের কোনো অধিকার নেই।
আমেরিকায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় যখন লেখক-সাংবাদিকেরা আদালতের আশ্রয় নিচ্ছেন, বাংলাদেশে তখন কার্যকর হয়েছে নতুন এক বিধান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যার আওতায় সমালোচনাকে অপপ্রচার অভিহিত করে সরকারই উল্টো নাগরিকদের আটক করছে, মামলা দিচ্ছে। সরকারি ভাষ্যমতে, এই আইনের উদ্দেশ্য নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপপ্রচার, তথ্য বিকৃতি, গুজব বন্ধ করা ইত্যাদি। এই আইনে সাইবার–মাধ্যমে ভুয়া প্রশ্নপত্র দেওয়ার নামে প্রতারণার জন্য কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের খবরটিও বেশ ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে, যাতে আইনটির কথিত মাহাত্ম্য ও প্রয়োজনীয়তা বোঝানো যায়। এক দিন পরই এই আইনে ফেসবুকে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার ছবি বিকৃতির জন্য একজন মানবাধিকারকর্মীকে গ্রেপ্তারের খবরও প্রকাশিত হয়েছে। তবে খবরটি চোখে পড়ার মতো করে প্রকাশিত হয়েছে বলা যাবে না। গ্রেপ্তার হওয়া রৌশনারা খাতুন বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশন শেরপুরের ঝিনাইগাতী শাখার মহিলাবিষয়ক সম্পাদক। যে মানীর মানহানি হয়েছে, তিনি জানেন কি না জানি না, কিন্তু মামলা করেছেন তাঁর একজন ভক্ত-অনুসারী ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. মজিবর রহমান। একজন সমালোচকের কাছে যা ক্যারিকেচার বা ব্যঙ্গচিত্র, ভক্তের কাছে তা ছবি বিকৃতি মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। অথচ বিষয়টি এখন সমালোচক দমনের হাতিয়ার হয়ে উঠছে।
প্রায় একই সময়ে ফেসবুকে আরেকজন রাজনৈতিক নেতার ব্যঙ্গচিত্র ভাইরাল হয়। তিনি নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেন। ব্যঙ্গচিত্রটিতে বিএনপি নামক ডিম থেকে কামাল হোসেন জন্ম নিচ্ছেন, এ রকম একটা ধারণা তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটি অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টাও ফেসবুকে তাঁর ভেরিফায়েড পেজে শেয়ার করেছেন। নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পটভূমিতে আওয়ামী লীগের সমালোচকেরা বিষয়টিতে খুশি হতে পারেননি। নানা ধরনের সমালোচনা ও প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের নেতাদের শালীনভাবে কটাক্ষ, ব্যঙ্গ করা দোষের কিছু নয়। আমার বিশ্বাস, বিশ্বের নানা দেশের গণতান্ত্রিক শাসনরীতির অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ড. কামাল হোসেন নিজেও মানবেন যে রাজনীতিক হিসেবে তাঁকে নিয়ে যে কেউ ব্যঙ্গ করতেই পারে। আমি নিশ্চিত, পুলিশের বড়কর্তা থেকে ছোটকর্তা, কেউই ব্যঙ্গচিত্রটিকে ছবি বিকৃতি বলবেন না।
রাজনীতি ও জনজীবনে যাঁরা নেতৃত্বের অবস্থানে থাকেন, সাময়িকভাবে অস্বস্তিকর হলেও কিংবা মনে মনে ক্ষুব্ধ হলেও সেটা মেনে নেওয়াই তাঁদের কাছে প্রত্যাশিত। রাজনৈতিক ব্যঙ্গ, কার্টুন ও রম্যরচনা একসময় আমাদের সংবাদপত্রেরও নিয়মিত উপাদান ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে যাঁরা রাজনীতি করেন এবং জনব্যক্তিত্ব, তাঁদের মধ্যে সহনশীলতা কমতে কমতে এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এগুলো এখন একেবারে লোপ পেতে চলেছে। কার্টুনিস্টরা এখন রাজনীতিকদের, বিশেষত ক্ষমতাসীনদের নিয়ে কার্টুন আঁকেন না। কেউ কেউ অবশ্য দলীয় আনুগত্যের কারণেও ওই পথে পা বাড়ান না।
পত্রিকার পাতায় এখন যেসব কার্টুন ছাপা হয়, তার অধিকাংশই হয় বিষয়ভিত্তিক অথবা অজ্ঞাতপরিচয় চরিত্র ঘিরে। অথচ পত্রিকায় রাজনৈতিক কার্টুন, ব্যঙ্গরচনা ও রেডিও-টিভিতে কমেডির অনুপস্থিতি জাতীয়ভাবে সৃজনশীলতার দৈন্যই প্রকাশ পায়। আমরা চাই, রাজনীতিকদের নিয়ে আরও বেশি ব্যঙ্গচিত্র হোক, কার্টুন হোক, রম্যরচনা হোক এবং তা সব মাধ্যমেই। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, আমাদের রাজনীতিকদের মানসম্মান এত ঠুনকো নয় যে ব্যঙ্গচিত্র বা কথিত ছবি বিকৃতিতে তাঁদের হানি ঘটবে।
নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করতে পারে, এই আশঙ্কা সরকারের কেউই সরাসরি নাকচ করতে পারেননি বা করেননি। গেল সপ্তাহে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যাঁরা সত্যানুসন্ধানী কিংবা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে চান, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে প্রতিবেদন করতে চান, তাঁদের কোনো সমস্যা নেই। শুধু দেশ কিংবা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অসৎ উদ্দেশ্যে সংবাদ প্রকাশ করলে, তাঁদের কড়াভাবে দেখা হবে। তিনি আরও বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তো পাস হয়ে গেছে। এ নিয়ে এখন মানববন্ধন করে কী লাভ হবে? পরেরবার ক্ষমতায় গেলে তখন পর্যালোচনা করে দেখা যাবে। (সমকাল, ১৬ অক্টোবর ২০১৮)
মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকেই গণমাধ্যম বিষয়ে আরও দুটি আইনের খসড়া অনুমোদিত হয়েছে। একটি সম্প্রচার কমিশন গঠনবিষয়ক, যাতে টিভি-রেডিও ছাড়াও অনলাইনগুলোর ওপর আসবে নতুন সব নিয়ন্ত্রণবিধি। অপরটি হচ্ছে গণমাধ্যমে নিয়োগ, চাকরি ও সুযোগ-সুবিধাসংক্রান্ত, এই আইনের ফলে সাংবাদিকেরা আর ‘শ্রমিক’ থাকবেন না, ‘গণমাধ্যমকর্মী’ হিসেবে গণ্য হবেন। তাঁদের জন্য ভবিষ্য–তহবিল, ছুটি বাড়ানো, সাপ্তাহিক কাজের সময় কমানোসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিধান রাখা হয়েছে। অবশ্য সাংবাদিকেরা আর শ্রমিক না থাকলেও তাঁদের চাকরিসংক্রান্ত বিরোধগুলো শ্রম আইনেই নিষ্পত্তির বিধান থাকছে।
নির্বাচনের জন্য যাঁদের সাহায্য-সহানুভূতি প্রয়োজন হয়, সেই আমলা, পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের জন্য উদারহস্তে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বিলিয়ে দেওয়ার পর সাংবাদিকদের আর বাদ রাখা কেন? সুতরাং কল্যাণ তহবিলে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দের পর চাকরির আইনেও পরিবর্তন আনার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। সাংবাদিকদের চাকরির নিরাপত্তা ও যৌক্তিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি সমর্থন না করার কোনো কারণ নেই। পেশাগত জীবনের সাড়ে তিন দশকের অনেকটা সময়ই আমার নানা ধরনের দুঃখকষ্টে কেটেছে। সুতরাং এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি না করার কোনো কারণ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, গত দশ বছরে এসব বিষয়ে নজর দেওয়ার ফুরসত হলো না কেন? ধারণা করা যায়, এখন নির্বাচনের মৌসুম বলে সংসদের আগামী অধিবেশনেই এগুলো পাস করা হবে।
সম্প্রচার কমিশনের আইনেও যেসব বিধান যুক্ত হয়েছে, তা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ এবং সরকারের যৌক্তিক সমালোচনার পথ বন্ধ করে দেবে। ডিজিটাল আইন ও সম্প্রচার কমিশনের আইন, উভয় ক্ষেত্রেই যেসব বিধান যুক্ত হয়েছে, তাতে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা, সেটা ঠিক করে দেওয়ার ক্ষমতা অর্পিত হচ্ছে সরকার ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর (যেমন গুজব শনাক্তকরণ কেন্দ্র কিংবা সম্প্রচার কমিশন) ওপর। শত শত কোটি টাকা খরচ করে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে নজিরবিহীন সাইবার নজরদারি। এই বাস্তবতায় কথিত মিথ্যা অথবা গুজব রটনার অপরাধ এবং মুক্তিযুদ্ধের সরকারি ভাষ্যের বাইরে কোনো কিছু প্রচারকে অপরাধ গণ্য করা এবং সেটির জন্য শাস্তির বিধান কোনোভাবেই 
সমর্থনযোগ্য নয়।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণকারী আইনের বিরুদ্ধে সম্পাদকেরা যখন রাস্তায় নামেন, ঠিক সেদিনই আরও দুটি নিবর্তনমূলক আইনের খসড়া অনুমোদনের পদক্ষেপের অর্থ বুঝতে কারও কষ্ট হওয়ার কথা নয়। এ হচ্ছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনে জেতার জন্য এসব নিয়ন্ত্রণ ও নিবর্তনমূলক আইন করলেও দীর্ঘ মেয়াদে এসব অগণতান্ত্রিক বিধিবিধানের নিগড় থেকে মুক্তি মিলবে কীভাবে?
(২১ অক্টোবর, ২০১৮‘র প্রথম আলোয় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...