সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

টিকা জাতীয়তাবাদ, টিকা কূটনীতি ও টিকার বাণিজ্যযুদ্ধ

টিকা জাতীয়তাবাদের উত্থানে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন বিপন্ন হবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, দূর্ভাগ্যজনকভাবে তা সত্য হতে চলেছে। অনেক দেশকেই সীমিত পরিমাণে টিকার নাগাল পেতেও মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকতে হবে। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোও আগাম মূল্য পরিশোধের পরও এখন প্রতিশ্রুত টিকা পাচ্ছে না। যে পরিস্থিতির কথা কেউ ভাবেনি, ইউরোপে এখন তেমনটাই ঘটতে চলেছে।


টিকা নিয়ে শুরু হয়েছে বাকযুদ্ধ এবং তা  বাণিজ্যযুদ্ধেরও সূচনা করতে   পারে। কূটনীতিতে এর যে প্রভাব দেখা যাচ্ছে, তা মোটেও সুখকর নয়। টিকা পাওয়ার প্রতিযোগিতায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সম্পর্কে কিছুটা তিক্ততার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আগাম অর্থ নিয়েও টিকা উৎপাদক কোম্পানিগুলো অঙ্গীকার পুরোপুরি পূরণে অক্ষমতার কথা ঘোষণা করায় এই সংকটের জন্ম দিয়েছে।


এর জেরে গত শুক্রবার রাতে ইউরোপীয় কমিশন টিকা রপ্তানির ওপর বিশেষ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। গতকাল শনিবার, ৩০ জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর হয়েছে এবং মার্চের শেষ পর্যন্ত তা বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে। কমিশন অবশ্য বলেছে, তারা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে না। তবে কোম্পানিগুলোকে রপ্তানির বিষয়ে স্বচ্ছ্বতা অনুসরণ করতে হবে এবং কোথাও অবশ্য-প্রয়োজনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পাঠানো যাবে না। এই নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার আওতা থেকে ১২০টি দেশকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে যুক্তরাজ্য তুরস্ক ছাড়াও ইউরোপীয় প্রতিবেশীরা এবং কোভ্যাক্সের তালিকায় থাকা নিম্ন মধ্যম আয়ের ৯২টি দেশ আছে। সোজাসুজি বলা যায়, এই নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার লক্ষ্য হচ্ছে যুক্তরাজ্য।


এই বিরোধের সূত্রপাত মূলত অক্সফোর্ডের উদ্ভাবিত টিকাকে কেন্দ্র করে। এই টিকা উৎপাদন করছে যুক্তরাজ্য সুইডেনের যৌথ মালিকানাধীন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রোজেনিকা। গত ডিসেম্বর থেকে শুরু করে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কোম্পানিটির যে পরিমাণে টিকা সরবরাহ করার কথা রয়েছে, তারা তার মাত্র একতৃতীয়াংশ দিতে পারবে বলে জানানোর পরই বিপত্তি দেখা দেয়। অ্যাস্ট্রোজেনেকা জানিয়েছে, বেলজিয়ামে তাদের একটি কারখানায় সমস্যা দেখা দেওয়ায় উৎপাদন ঘাটতি হবে এবং সে কারণেই সরবরাহ কমাতে হচ্ছে। অ্যাস্ট্রেজেনেকার কারখানা যুক্তরাজ্যেও আছে এবং সেখানে প্রতিশ্রুত সরবরাহে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। অ্যাস্ট্রোজেনেকা দাবি করেছে, যুক্তরাজ্য আগে চুক্তি করেছে বলে তাদেরকে প্রতিশ্রুত পরিমাণে টিকা সরবরাহের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু, ইইউ চুক্তি করতে তিন মাস দেরি করায় সব প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া, যুক্তরাজ্য টিকাটি অনুমোদন করে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। কিন্তু, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তা অনুমোদন দিয়েছে গত শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারি।


ইউরোপীয় কমিশন অ্যাস্ট্রেজেনেকার এই বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে বলেছে, তারা আগাম মূল্য পরিশোধ করেছে এবং চুক্তিতে যখন যে পরিমাণে সরবরাহ করার অঙ্গীকার আছে, তা প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা আছে। কমিশনের একজন কর্মকর্তা এমনকি কথাও বলেন, টিকা মাংসের দোকানের পণ্য নয় যে আগে আসলে আগে পাবেন নীতিতে তা সরবরাহ করা হবে। এটি প্রয়োজনমতো এবং চুক্তি অনুযায়ী হতে হবে। জন্যে সব জায়গার কারখানার উৎপাদনক্ষমতা ব্যবহার করতে হবে। যার মানে হচ্ছে, যুক্তরাজ্য থেকে ইউরোপে টিকা পাঠানো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বিচ্ছেদ বা ব্রেক্সিটের পটভূমিতে যুক্তরাজ্য থেকে টিকার চালান ইউরোপে ঘুরিয়ে দেওয়ার রাজনৈতিক বাধা বেশ জটিল। ফলে, অ্যাস্ট্রাজেনকা সে পথে পা মাড়ায়নি। বিরোধের জেরে ইউরোপীয় কমিশন চুক্তির খসড়া প্রকাশ করলেও যুক্তরাজ্য নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে তা করতে রাজি হয়নি।  


ইউরোপীয় কমিশনের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাজ্য এখন আশঙ্কা করছে, বেলজিয়ামে অবস্থিত কারখানা থেকে ফাইজারের টিকা আসা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে ব্রিটিশ সরকার এই বিরোধে প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই নিয়ন্ত্রণ আরোপের আগে বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে যুক্তরাজ্য প্রতিশ্রুত সব টিকা যথাসময়েই পাবে। নিয়ন্ত্রণ আরোপের পর অবশ্য ইউরোপীয় কমিশনের কাছে ওই সিদ্ধান্তের বিষয়ে যুক্তরাজ্য ব্যাখ্যা চেয়েছে।


ইউরোপীয় ইউনিয়ন একই সঙ্গে নাটকীয়ভাবে ব্রেক্সিট চুক্তির একটি ধারা অনুযায়ী একতরফাভাবে একটি সিদ্ধান্ত কার্যকরের কথাও ঘোষণা করেছে। ওই ধারা অনুযায়ী, উত্তর আয়ারল্যান্ড থেকে যুক্তরাজ্যের অন্যান্য অংশে টিকা প্রবেশের ক্ষেত্রে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে যে ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল, তা বাস্তবে একটি সীমান্ত প্রতিষ্ঠার সমতুল্য। আয়ারল্যান্ড থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে অবাধে পণ্য চলাচলের যে সুবিধা ব্রেক্সিট চুক্তিতে বহাল আছে, তার আওতায় ইউরোপের টিকা উত্তর আয়ারল্যান্ডে যাবে। কিন্তু, সেই টিকা যুক্তরাজ্যের অন্যান্য অংশে যাতে না যেতে পারে, সে জন্য শুল্ক বিভাগের তা পরিদর্শন যাচাইয়ের ব্যবস্থা করতে হতো। এই সিদ্ধান্তে আয়ারল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাজ্য সরকার এবং যুক্তরাজ্যের সরকারগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বলা চলে, ব্রেক্সিট-পরবর্তী একটি বড় রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু, কয়েক ঘন্টার মধ্যে ইউরোপীয় কমিশন উত্তর আয়ারল্যান্ডবিষয়ক নির্দেশনাটুকু প্রত্যাহার করে নেয়। টিকা জাতীয়তাবাদ থেকে ইউরোপ যে একটি বড় সংকটে পড়তে যাচ্ছিল, আপাতত তার অবসান ঘটলেও এই নজির মহাদেশটিতে একটি অস্বস্তির কারণ হয়ে থাকবে।


এদিকে ইউরোপজুড়ে টিকা সরবরাহে ইতিমধ্যেই সংকট দেখা দিয়েছে এবং অনেক জায়গায়ই চলমান টিকাদান কার্যক্রম আপাত সীমিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইউরোপের টিকা পাওয়ার সমস্যা শুধু যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার কারণে হচ্ছে, তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডানাও জানিয়েছে, তারা ইটালিতে ফেব্রুয়ারিতে যে পরিমাণে টিকার জোগান দেবে বলেছিল, তারা দিতে পারবে তার থেকে ২০ শতাংশ কম। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রতিষ্ঠান ফাইজারও উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে এবং করোনাভাইরাসের যে নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে, তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের লক্ষ্যে টিকা উৎপাদনের গতি কমিয়েছে।


ধনী দেশগুলোর মধ্যে কানাডাও প্রতিশ্রুত টিকা না পাওয়ায় কিছুটা ক্ষু্ব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দেশটির সংবাদপত্র গ্লোব অ্যান্ড মেইল জানিয়েছে, কানাডার ফেডারেল সরকার বলছে যে ফাইজারের সরবরাহের গতি শ্লথ হওয়ায় আগামী মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত তারা টিকা পাবে ৫৬ শতাংশ কম। আবার যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডানা কানাডায় যে টিকা সরবরাহ করছে, তা যাচ্ছে সুইজারল্যান্ডের কারখানা থেকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে নয়। সুইস কারখানাতেও মডার্নার উৎপাদন কম হওয়ায় ফ্রান্স এবং খোদ সুইজারল্যান্ডেই তাদের সরবরাহ কমেছে।


ইউরোপীয় কমিশনের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনার টিকা উদ্ভাবন উন্নয়নে তারা বিভিন্ন কোম্পানিকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, যার পরিমাণ ২৭০ কোটি ইউরো। কিন্তু, কোম্পানিগুলো সরবরাহের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ্বতা বজায় না রাখায় তারা উদ্বিগ্ন।


এদিকে, মার্কিন সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমসে পুলিৎজারজয়ী সাংবাদিক ম্যাট আপুৎজো এবং সেলাম গেব্রেকিডান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো করোনার টিকা গবেষণা, উদ্ভাবন উৎপাদনের জন্য উন্নত দেশগুলোর করদাতাদের টাকা অনুদান হিসাবে পেয়েছে এবং স্বল্পসুদ বিনা সুদে ঋণ নিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার নোভাভ্যাক্সকে ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্য এবং ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। মর্ডানাকে দেশটির সরকার দিয়েছে ১০০ কোটি ডলার এবং টিকা কেনার জন্য আগাম হিসাবে দিয়েছে ১৫০ কোটি ডলার। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার অক্সফোর্ড গ্রুপের গবেষণার জন্য শুরুতেই দিয়েছে কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড।


নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, এসব দেশের সরকার করদাতাদের টাকা খরচ করেছে টিকা পাওয়া ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনে। কেননা, টিকায় বিনিয়োগ ব্যয়বহুল এবং অলাভজনক হিসেবে গণ্য করে ওষুধ শিল্প এই কাজে উৎসাহিত হয় না। তবে পত্রিকাটি বলছে, করদাতাদের টাকায় উদ্ভাবিত টিকার মেধাস্বত্ত্ব বা পেটেন্ট অবশ্য কোম্পানিগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। মেধাস্বত্ত্বের প্রশ্নে ছাড় দিয়ে এগুলোর ফরমূলা উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকাসহ কয়েকটি দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুরোধ জানালেও ইউরোপ, যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র তাতে সম্মত হয়নি। ফলে, দরিদ্র দেশগুলোর জন্য দ্রুত টিকা উৎপাদন বিতরণের পথ বন্ধই থেকে গেছে।

 
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, কোম্পানিগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন শর্ত দিয়েছে যে সরকারগুলো তাদের সম্মতি ছাড়া তৃতীয় কারও কাছে টিকা বিক্রি বা রপ্তানি করতে পারবে না। ফলে, পাশ্চাত্যের দেশগুলো প্রয়োজনের তুলনায় বহুগুণ বেশি টিকা কিনলেও তাঁরা সহসাই তা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় সহজে দান করতে পারবে না। কোম্পানিগুলো টিকার দামের ব্যাপারেও গোপনীয়তার শর্তে সরকারগুলোকে রাজি করিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন কর্মকর্তা ভুল করে কয়েকটি কোম্পানির দামের তালিকা টুইট না করলে তা সম্ভবত কারও পক্ষেই জানা সম্ভব হতো না। ওই প্রতিবেদন জানাচ্ছে, অ্যাস্ট্রোজেনকার টিকা ইইউ কিনেছে ডোজ প্রতি দশমিক ১৯ ডলারে।


পত্রিকাটির অন্য একটি তথ্যও বিশেষভাবে গুরুত্বর্পূণ। টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো সরকারগুলোর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে একটি বিশেষ সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। তা হলো, টিকা প্রয়োগের কারণে কোনো অঘটন ঘটলে তা থেকে দায়মুক্তি। যেহেতু আর ১০টা টিকার মতো করোনার টিকা দীর্ঘসময় নিয়ে মানবদেহে পরীক্ষ-নিরীক্ষার সুযোগ পাওয়া যায়নি, কাজেই এতে কিছুটা ঝুঁকি থাকা অস্বাভাবিক নয়। আর সেই ঝুঁকির দায়মুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য জরুরি ছিল। কোনো দেশের পক্ষে ধরণের দায়মুক্তি কেবলমাত্র সরকারের পক্ষেই দেওয়া সম্ভব। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তা দিতে পারে না। টিকা প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো তাই সরকারের সঙ্গেই চুক্তি করেছে।


ইউরোপে টিকা কূটনীতি নিয়ে টিকার বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হলেও আমাদের উপমহাদেশের চিত্র অনেকটাই আলাদা। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি টিকা উৎপাদনক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় ভারত ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পেয়েছে। ভারতের নিজস্ব উদ্ভাবনের পরীক্ষার পালা এখনও শেষ না হলেও অক্সফোর্ডর উদ্ভাবনকে তারা টিকা কূটনীতিতে কাজে লাগিয়েছে। শুরুতে কয়েকদিনের জন্য রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রতিবেশী দেশগুলোয় আগে শুভেচ্ছা-স্মারক হিসেবে পাঠিয়েছেমৈত্রী টিকা এরপর অবশ্য রপ্তানি খুলে দেওয়া হয়েছে এবং তা উপমহাদেশের বাইরে আমেরিকা মহাদেশেও পাঠানো হয়েছে। ব্যতিক্রম দেখা গেছে টিকা বিক্রির ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের তৃতীয়পক্ষের অংশগ্রহণেও, যা অন্য কোথাও ঘটেনি। ইউরোপ-আমেরিকায় ক্রেতা সরাসরি সরকারগুলো।

 (৩১ জানুয়ারি, ২০২১-র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...