যেমনটি আশঙ্কা করা হয়েছিল, ঠিক তাই হয়েছে। অবশ্য গত কয়েকদিন ধরেই জেনেভা, লন্ডন এবং কলম্বোয় এরকম জল্পনাই চলছিল। শ্রীলংকায় তামিল বিদ্রোহ দমনে বেসামরিক নাগরিকদের যেসব গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটেছে, তার তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ভবিষ্যতে বিচারের জন্য সম্ভাব্য কৌশল নির্ধারণে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরকে ম্যান্ডেট প্রদানের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ভোটে প্রস্তাবটি অবশ্য গৃহীত হয়েছে।
জল্পনার কারণ হচ্ছে এই প্রস্তাবের মূল উদ্যোক্তা কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশ। প্রস্তাবটি নিয়ে কলম্বোয় কানাডার হাইকমিশনার ডেভিড ম্যাককিনন বাংলাদেশের হাই কমিশনার তারেক আরিফুল ইসলামের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন, যার খবর ৬ মার্চ শ্রীলংকার দ্য আইল্যান্ড পত্রিকায় ফাঁস হয়ে যায়। এরপর ক্ষুব্ধ কানাডীয় হাইকমিশনার ম্যাককিনন ওই দিন টুইট করে জানতে চান যে তিনি নজরদারিতে রয়েছেন কিনা।
স্বতন্ত্র
তামিল
রাষ্ট্রের
দাবিতে
পরিচালিত
গৃহযুদ্ধ
প্রায়
আড়াই
যুগ
স্থায়ী
হয়
এবং
তাতে
প্রায়
৮০
হাজার
থেকে
১
লাখ
লোকের
মৃত্যু
হয়
বলে
জাতিসংঘের
অনুমান। ২০০৯ সালে
তামিল
বিদ্রোহের
অবসান
ঘটার
পর
জাতিসংঘ
উভয়পক্ষের
বিরুদ্ধেই
যুদ্ধাপরাধের
অভিযোগ
আনে। তবে, শ্রীলংকার
সরকার
তখন
দাবি
করেছিল
যে
তামিল
যোদ্ধারা
বেসামরিক
জনগোষ্ঠীকে
মানবঢাল
হিসাবে
ব্যবহার
করেছে। শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর
বিরুদ্ধে
তখন
চরম
নিষ্ঠুরতার
অভিযোগ
ওঠে। সদ্য ঢাকা
সফর
করে
যাওয়া
প্রধানমন্ত্রী
মাহিন্দা
রাজাপক্ষে
তখন
শ্রীলংকার
প্রেসিডেন্ট
ছিলেন
এবং
তাঁর
ভাই
গোতাবায়া
রাজাপক্ষে
ছিলেন
প্রতিরক্ষামন্ত্রী। গোতাবায়া ২০১৯
সালের
নির্বাচনে
বিজয়ী
হয়ে
দেশটির
প্রেসিডেন্ট
পদে
আসীন
রয়েছেন। তাঁর পূর্বসুরি
প্রেসিডেন্ট
সিরিসেনা
গৃহযুদ্ধকালীন
মানবাধিকার
লংঘনের
ঘটনাগুলো
তদন্ত
ও
জবাবদিহিতার
বিষয়ে
রাষ্ট্রীয়ভাবে
পদক্ষেপ
নেওযার
যে
অঙ্গীকার
করেছিলেন,
গোতাবায়া
সরকার
সেগুলো
বাস্তবায়ন
থেকে
পিছিয়ে
যাওয়ায়
এই
আর্ন্তজাতিক
উদ্যোগ।
তামিল
বিদ্রোহ
দমনের
ওই
অভিযানে
গোতাবায়া
সরাসরি
নেতৃত্ব
দেন। তিনি এর
আগে
শ্রীলংকার
সেনাবাহিনীতে
ছিলেন
এবং
লেফটেন্যান্ট
কর্ণেল
হিসেবে
অবসর
নিয়ে
রাজনীতিতে
যোগ
দেন। গোতাবায়া সত্তরের
দশকে
পাকিস্তানে
সামরিক
প্রশিক্ষণ
গ্রহণ
করেন
এবং
তাঁর
সঙ্গে
পাকিস্তানের
সামরিক
কর্মকর্তাদের
বেশ
ঘনিষ্ঠতা
রয়েছে। তামিল বিদ্রোহ
দমনে
তিনি
পাকিস্তানী
সামরিকবাহিনীর
বিশেষ
সহায়তা
পান
(পাকিস্তান
মিলিটারি
অফারস
অ্যাসিস্ট্যান্স
টু
শ্রীলংকান
এয়ার
ফোর্স,
দ্য
ইকোনমিক
টাইমস,
১১
ফেব্রুয়ারি
২০২০)। মানবাধিকার
আইনজীবি
ইয়াসমিন
সুকা
গোতাবায়া
রাজাপক্ষের
বিরুদ্ধে
শ্রীলংকায়
একটি
মামলাও
শুরু
করেছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট
নির্বাচিত
হওয়ায়
তাঁর
বিরুদ্ধে
সেই
মামলা
শেষপর্যন্ত
প্রত্যাহার
করতে
হয়েছে।
জাতিসংঘ
মানবাধিকার
পরিষদে
গৃহীত
প্রস্তাবে
শ্রীলংকার
গৃহযুদ্ধের
সাক্ষ্যপ্রমাণ
সংগ্রহ
ও
সংরক্ষণের
জন্য
২৮
লাখ
ডলারের
বাজেটও
অনুমোদিত
হয়েছে। ৪৭ সদস্যের
মানবাধিকার
পরিষদে
২২
টি
দেশ
প্রস্তাবের
পক্ষে
ভোট
দিয়েছে। ১১টি দেশ
দিয়েছে
বিপক্ষে
এবং
১৪টি
দেশ
ভোটদানে
বিরত
থেকেছে। যে ১১টি
দেশ
প্রস্তাবের
বিরুদ্ধে
ভোট
দিয়েছে,
তারা
হলো
বাংলাদেশ,
পাকিস্তান,
চীন,
রাশিয়া,
কিউবা,
বলিভিয়া,
ইরিত্রিয়া,
ফিলিপাইন,
সোমালিয়া,
উজবেকিস্তান
এবং
ভেনিজুয়েলা। পরিষদে দক্ষিণ
এশিয়ার
অপর
দুই
সদস্য
ভারত
ও
নেপাল
ভোটদানে
বিরত
থেকেছে।
স্মরণ
করা
দরকার
বাংলাদেশের
স্বাধীনতা
যুদ্ধের
সময়
শ্রীলংকা
পাকিস্তানের
সামরিকবাহিনীকে
সমর্থন
না
দিলে
বাংলাদেশে
পাকিস্তানী
হানাদার
বাহিনীর
এভাবে
হানা
দেওয়া
সম্ভব
হতো
না
এবং
বাঙ্গালীদের
বিরুদ্ধে
হত্যাযজ্ঞ
এতোটা
ব্যাপকতা
পেতো
না। ভারতের ওপর
দিয়ে
বিমান
পরিচালনার
অনুমতি
না
থাকায়
তখন
পাকিস্তান
কলম্বোয়
জ্বালানি
নেওয়ার
বিরতি
নিয়ে
ভারত
সাগরের
ওপরের
করিডোর
দিয়ে
ঢাকায়
সৈন্য
ও
অস্ত্রশস্ত্র
পাঠায়। ইকোনমকি টাইমস
বলছে,
কোটানায়াকা
আর্ন্তজাতিক
বিমানবন্দরে
পাকিস্তানের
সামরিক-বেসামরিক
বিমানগুলো
মোট
১৭৪
বার
যাত্রাবিরতি
করেছিল। সে সময়ে
শ্রীলংকার
বিমানবাহিনীতে
ছিলেন
এমন
একজন
কর্মকর্তাও
সম্প্রতি
টুইটারে
তাঁর
অভিজ্ঞতা
তুলে
ধরেছেন। তামিলদের বিরুদ্ধে
গণহত্যার
জন্য
রাজাপক্ষে
সরকার
যখন
বিপুলভাবে
সমালোচিত
তখন
২০১১
সালে
মাহিন্দা
রাজপক্ষকে
ঢাকায়
লালগালিচা
সম্বর্ধনা
দেওয়া
হলে
তার
সমালোচনা
করে
প্রথম
আলোতে
আমি
নিবন্ধ
লিখেছিলাম। প্রয়াত সাংবাদিক
এবিএম
মুসাও
তখন
লন্ডনে
আমাকে
ফোন
করে
১৯৭১
সালে
শ্রীলংকার
ভূমিকার
কথা
মনে
করিয়ে
দিয়েছিলেন।
দূর্ভাগ্যজনক
বাস্তবতা
হচ্ছে
২৫
মার্চের
কালরাত্রির
৫০
বছর
পূর্ণ
হওয়ার
ঠিক
একদিন
আগে
সেই
শ্রীলংকাকে
যুদ্ধাপরাধের
বিচার
থেকে
বাঁচানোর
চেষ্টায়
বাংলাদেশ
পাকিস্তানের
সঙ্গে
এক
কাতারে
দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের
সঙ্গে
শ্রীলংকার
ঘনিষ্ঠতা
এখনও
বজায়
আছে। মহামারির মধ্যেই
গত
২৩
ফেব্রুয়ারি
পাকিস্তানের
প্রধানমন্ত্রী
ইমরান
খান
কলম্বো
সফর
করেছেন
এবং
নিজেদের
আর্থিক
সংকটের
মধ্যেও
শ্রীলংকাকে
প্রতিরক্ষাখাতে
৫
কোটি
ডলার
ঋণ
দিয়েছেন।
এই
অতীত
ইতিহাস
ছাড়াও
শ্রীলংকার
সাম্প্রতিক
কিছু
কর্মকান্ডের
জাতিসংঘ
ও
বিভিন্ন
মানবাধিকার
সংগঠনগুলো
ধারাবাহিকভাবে
নিন্দা
জানিয়ে
আসছে। তার মধ্যে
একটি
হচ্ছে
কোভিড
১৯
এ
আক্রান্ত
হয়ে
মারা
যাওয়া
মুসলমানদের
মরদেহ
পোড়ানোর
বাধ্যবাধকতা
আরোপ। মালদ্বীপের
প্রেসিডেন্ট
সলিহ
মানবিক
কারণে
শ্রীলংকার
মুসলমানদের
তাঁর
দ্বীপরাষ্ট্রে
সমাহিত
করার
প্রস্তাবও
দিয়েছিলেন। পরে, জাতিসংঘ
মানবাধিকার
পরিষদের
সমালোচনার
মুখে
কয়েক
মাস
আগে
তাদের
কবর
দেওয়ার
সুযোগ
দিতে
রাজি
হলেও
রাজাপক্ষে
সরকার
তার
জন্য
একটি
প্রত্যন্ত
দ্বীপ
নির্ধারণ
করে
দিয়েছে। তাছাড়া, সাংবাদিক
এবং
মানবাধিকার
কর্মীদের
ওপর
হয়রানি
বৃদ্ধির
অভিযোগ
উঠছে।
প্রশ্ন
উঠতে
পারে
চীন,
রাশিয়া,
ফিলিপাইনের
মতো
দেশগুলো
যখন
শ্রীলংকার
পক্ষ
নিয়েছে,
তখন
বাংলাদেশ
তার
নিজের
স্বার্থে
এরকম
সিদ্ধান্ত
কি
নিতে
পারে
না?
এই
প্রশ্নের
জবাব
আমাদের
পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ই
ভালো
দিতে
পারবে। তবে, আমাদের
প্রশ্ন
হচ্ছে
বাংলাদেশ
শ্রীলংকার
কাছ
থেকে
কী
এমন
সুবিধা
পাবে
বা
পেয়েছে,
যার
কারণে
এরকম
অনৈতিক
একটি
সিদ্ধান্ত
নিতে
পারলো?
শ্রীলংকা একাত্তরে পাকিস্তানের সহযোগী হওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে দুঃখপ্রকাশও তো করেন নি? পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আব্দুল
মোমেন
খুব
ঘটা
করে
সংবাদ
সম্মেলনে
বলেছিলেন
যে
প্রধানমন্ত্রী
মাহিন্দা
রাজাপক্ষে
জাতিসংঘ
মানবাধিকার
পরিষদে
আগামী
মেয়াদে
সদস্যপদের
জন্য
শ্রীলংকা
বাংলাদেশকে
সমর্থন
দেবে
বলে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ
মানবাধিকার
পরিষদের
সদস্য
হলে
শ্রীলংকার
কী
লাভ
মঙ্গলবারের
ভোটে
তার
কিছুটা
ইঙ্গিত
মেলে। কিন্তু, গণহত্যার
শিকার
হয়ে
স্বাধীনতা
পাওয়া
জাতি
হিসাবে
আমরা
কেন
গণহত্যার
প্রশ্নে
নৈতিক
অবস্থান
নিতে
পারি
না?
(২৫ মার্চ
২০২১-‘র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন