সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঘনিষ্ঠতার প্রতীকী সফরে অনাকাঙ্খিত ফল

সুইডেনের উপসালা ইউনিভার্সিটির শান্তি ও সংঘাত গবেষণার ভারতীয় অধ্যাপক অশোক সোয়াইন টুইটারে বাংলাদেশে তিন দিনে সহিংসতায় কমপক্ষে ১২ জনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে প্রশ্ন করেছেন, কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী গত ৭৪ বছরের ইতিহাসে কোথাও সফরে গেলে এমনটি কি কখনও হয়েছে? আর, বাংলাদেশীদের মনেও প্রশ্ন, আমরা কি স্বাধীনতার এমন সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর কথা ভেবেছিলাম?

নি:সন্দেহে সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনগুলোতে জৌলুশ ছিল, চাকচিক্য ছিল। বিশ্বনেতাদের উপচে পড়া শুভকামনা ছিল। মহামারির মধ্যেও দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর নেতাদের উপস্থিতি নিশ্চয়ই এই আয়োজনের উজ্জলতা বাড়িয়েছে। কিন্তু, এসব জাকঁজমক আর বিদেশিদের প্রশংসার আকর্ষণে যে দেশের মানুষের স্বতর্স্ফূত অংশগ্রহণের পথ রুদ্ধ হয়েছে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। দেশে ব্যাক্তিস্বাধীনতা যেভাবে সংকুচিত হয়ে শুধু ক্ষমতাসীন দলের একচেটিয়া অধিকারের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন যেন তারই প্রতিফলন ঘটাল।

সহিংসতা ও অঘটন ঘটার আগে কথাগুলো কেউ না বললেও এখন এমন অভিযোগ উঠেছে। দেশের ২০ জন  নাগরিক এক যৌথবিবৃতিতে বলেছেন, সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সংকীর্ণভাবে ও দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে উদযাপন করেছে। তাঁরা একথাও বলেছেন যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে বিতর্ক থাকায় তাঁকে বাদ দিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ জানানো হলেই তা সংগত হতো। তাঁরা মনে করেন, বাংলাদেশবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যের অভিযোগ থাকায় প্রধানমন্ত্রী মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদ করার অধিকার বাংলাদেশের নাগরিকদের রয়েছে। এই প্রতিবাদ করতে গিয়ে গত কয়েক দিনে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ যেভাবে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাতে তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এই উদ্বেগ যে শুধু ২০ জন নাগরিকের, তা নয়; ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ এবং ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়ার পরও সামাজিক মাধ্যমে যেধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তা থেকে বিষয়টা স্পষ্ট হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে দিল্লিতে যে বিক্ষোভ হয়েছিল, সেই আন্দোলন দমনে ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপির দাঙ্গাবাজ ও ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এভিবিপি)র কর্মীরা যেভাবে হামলা চালিয়েছিল সেই ছবিগুলোর কথা অনেকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ঢাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের লাঠিসোটা নিয়ে মোদিবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হওয়ার ছবি পাশাপাশি দিয়ে অনেকেই তুলনা টেনেছেন।

হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামীর সমর্থকদের বিক্ষোভ এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা ১৬ ছাড়িয়েছে। সহিংসতা নিন্দনীয় এবং কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তবে, ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা নিতে এর কারণ অনুসন্ধানও জরুরি। হাটহাজারীর বিক্ষোভকারীরা বলেছিলেন ঢাকায় বায়তুল মোকাররমে মোদিবিরোধী বিক্ষোভে হামলার প্রতিবাদে তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন। হামলায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ভূমিকা নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।  যার মানে দাঁড়াচ্ছে, ঢাকায় বিক্ষোভে হামলা না হলে হাটহাজারীতে হয়তো বিক্ষোভ হতো না। অন্য কোথাও হয়তো তা ছড়াতো না। ঢাকার হাঙ্গামার মাত্রা কেমন ছিল তা বোঝা যায় পুলিশের মামলার বিবরণে। দেড়টা থেকে সাড়ে তিনটা দুই ঘন্টায় ১১৩৭ টি গুলি বা প্রতি মিনিটে অন্তত নয়টি গুলি এবং ৯৩ শেল কাঁদানে গ্যাস মানে প্রতি দেড় মিনিটে একটি করে শেল ছুঁড়েছে পুলিশ।  স্মরণ করা যেতে পারে, হেফাজতে ইসলামীর পক্ষ থেকে মোদির সফরের দিনে কোনো কর্মসূচি দেওয়া হবে না বলেই বলা হয়েছিল। তাহলে কি বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ করে হেফাজত তার কথা রাখেনি? না-কি ওই বিক্ষোভ ছিল অন্যান্য ইসলামপন্থী দল এবং ক্ষুব্ধ লোকজনের এবং পরে তার নিয়ন্ত্রণ ও সুযোগ গ্রহণ করে হেফাজত? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা অবশ্য এই নিবন্ধের লক্ষ্য নয়। আমরা মূলত দেখতে চাই, যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তা কতটা সফল হলো?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সফরের আগে বলেছিলেন ‘‘উনি (নরেন্দ্র মোদী) বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষ এবং আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন। এই কোভিড-১৯ এর পরে ভারতের বাইরে এটাই ওনার প্রথম সফর। সেজন্য উই আর ভেরি হ্যাপি।" দুই দেশের মধ্যে অনিষ্পন্ন কোনো বিষয় যে এই সফরকালে নিষ্পন্ন হওয়ার আশা করা হচ্ছে না, উভয় তরফে সেই ইঙ্গিতও ছিল। তবুও সফরের দ্বিতীয় দিনে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। তাঁদের উপস্থিতিতে পাঁচটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে। তবে, সেগুলোর একটিও অমীমাংসিত কোনো বিষয়ে নয়। পরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এক আব্দুল মোমেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ চেয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবিষয়ে কোনো উত্তর দেননি। তবে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি ভারতের অঙ্গীকার পুর্নব্যক্ত করেছেন। তিস্তা যে কতটা অস্বস্তির কারণ, দুই তরফের বক্তব্যের ফারাকেই তার ইঙ্গিত মেলে। তবুও ৫ বছর পর তাঁর দ্বিতীয় সফরে সরকার খুশি।

খুশি দিল্লির নীতিনির্ধারকেরাও বিশেষভাবে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী রাজনীতি এই সফরের অঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল বলে অনেকে মনে করেন। সখানকার নির্বাচনী রাজনীতির একটি ফ্যাক্টর মতুয়া সম্প্রদায়কে কাছে টানার উদ্যোগে বাংলাদেশ সরকারের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে পশ্চিমবঙ্গে অনেকেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বলে অভিহিত করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও মুখ খুলেছেন। তাঁর নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণের কারণে বাংলাদেশের অভিনেতা ফেরদৌসের ভিসা বাতিলের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদির ভিসা কেন বাতিল হবে না। সফরের আগেই আমরা জানতে চেয়েছিলাম যে সরকার কি ধরেই নিয়েছে বিজেপি সেখানে ক্ষমতায় আসবে। কেননা, এই সিদ্ধান্তের খেসারত আমাদের নানাভাবেই দিতে হতে পারে।

সরকার খুশি হলে দেশের সবাই যে সমভাবে আবেগাপ্লুত হবে, ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মূল্যবান ভূমিকার কারণে দেশটির সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের সুবর্ণজয়ন্তীতে অংশগ্রহণের অবশ্যই আলাদা তাৎপর্য আছে। কিন্তু, ব্যাক্তি নরেন্দ্র মোদি নানা কারণে সমালোচিত এবং সেই বাস্তবতা যে বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল, তা এখন স্পষ্ট। আর দেশে ভারতবিরোধিতার অস্তিত্ত্বও অস্বীকার করা যায় না। ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদ এবং কয়েকটি বামপন্থী সংগঠনের কর্মসূচিতেও স্বাক্ষ্য মেলে যে ভারতবিরোধীমাত্রই স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত বা রাজাকার এমন ধারণাও ‍ঠিক নয়। বাংলাদেশ সবধরণের দাবি পূরণের পরও ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য আচরণ ও হিস্যা দেওয়ায় অনীহা দেশটির শাসকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের একটি বড় কারণ।

উত্তর-র্পূবাঞ্চলীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে ঢাকা দিল্লির নিরাপত্তা উদ্বেগ নিরসনে যে ভূমিকা রেখেছে এবং কথিত সংযুক্তি বা কানেকিটিভিটি বৃদ্ধির মাধ্যমে তারা ব্যবসা-বাণিজ্যে যতটা  লাভবান হয়েছে, তার বিপরীতে বাংলাদেশের চাওয়া কতটুকু পূরণ হয়েছে? যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতিতে পণ্যচলাচল অবাধ হতে পারে, কিন্তু সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাংলাদেশিদের চলাচল নিরাপদ হয় না। গুলি করে  হত্যার নিয়মটির সাফাই দিয়ে বলা হয় অপরাধ হলে হত্যা বন্ধ হবে না। অথচ, অপরাধের দোষারোপ করা হলেও কোনো আইনেই বিনাবিচারে হত্যার বৈধতা নেই। প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রথম আলোয় নিবন্ধ লিখে ইউরোপ এবং আসিয়ানের সঙ্গে তুলনা করে লিখেছেন: এমন একটি দৃশ্য কল্পনা করুন যেখানে আমাদের লোকেরা উপমহাদেশ জুড়ে অধ্যয়ন করতে, কাজ করতে এবং অনায়াসে ব্যবসা করতে পারে। কিন্তু, তাঁর সরকার নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে ভারতের বাংলাভাষী মুসলমানদের বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী অভিহিত করে পুরো অঞ্চলেই যে অস্থিরতা তৈরি করছে সেকথা তো অস্বীকার করা যাবে না। যৌক্তি আশংকাতেই আমরা উদ্বিগ্ন। 

একথা সত্য যে সরকারি পর্যায়ে ভারত ও বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ক গত পাঁচ দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভালো। কিন্তু একইভাবে অনেকে মনে করেন, ভারতের ব্যাপারে সমালোচনা ও সুপ্ত ক্ষোভও এখন আগের চেয়ে বেশি। এর প্রধান কারণ, পরপর দুটো নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ ভোটের অধিকার হারানোর প্রশ্নে ভারতের সমর্থন। অন্য সব অপ্রাপ্তির ক্ষোভের তুলনায় এই হতাশা মোটেও কম কিছু নয়।

সুবর্ণজয়ন্তীর সময়ের এই সহিংসতার কারণে অনেকে বলছেন, ইসলামী উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই, তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন জোট ছাড়াও প্রগতিশীলদের একটি অংশ এই ব্যাখ্যাকেই সামনে আনছেন। এই বিশ্লেষণে যে বিপদকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, তা হলো সরকারবিরোধী এবং ভারতবিরোধী সবাইকে হেফাজতের শিবিরভুক্ত হিসাবে চিহ্নিত করা। এতে বাস্তবে হেফাজতই লাভবান হয়। বিরোধীদল বিএনপির দূর্বলতার বিকল্প হিসাবে তাঁরা আসলে হেফাজতকেই রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে গড়ে উঠতে সহায়তা করছেন। যাঁরা হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা দেখেন না, তাঁদের অসাম্প্রদায়িকতা ও প্রগতিশীলতার সীমাবদ্ধতায় নিশ্চিতভাবেই লাভবান হচ্ছে হেফাজতের মত ইসলামপন্থীরা। বিরোধী দলকে স্বাভাবিক রাজনীতি করতে না দেওয়া এবং ভোটের সময়ে হেফাজতের সঙ্গে  সখ্যের এই অনাকাঙ্খিত ফলও সরকারেরই সৃষ্টি।

স্বদেশে সাম্প্রদায়িক বিভাজন উসকে দেওয়ার রাজনীতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রী মোদির বাংলাদেশ সফরের লাভ-ক্ষতির হিসাব কষলে উদ্বেগ বাড়ে বৈ কমে না। সেটা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রেও যেমন সত্য, তেমনই সত্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নেও।

(৩১ মার্চ ২০২১-র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...