সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুক্ত সংবাদমাধ্যমের চাই পূর্ণ গণতন্ত্র

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আসলে মালিকের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকরা রুটি-রুজির প্রয়োজনে আত্মমর্যাদা জলাঞ্জলি দিয়ে সাংবাদিকতা পেশার সততা ও আস্থা হারিয়েছেন এমন সমালেচনায় গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উত্তপ্ত। শালীনতার বিচারে আসলে একে উত্তপ্ত বললেও কম বলা হয়। তিনটি দৈনিক পত্রিকা, দুটি টেলিভিশন চ্যানেল, একটি এফ এম রেডিও এবং একটি অনলাইন সংবাদের পোর্টালের স্বত্ত্বাধিকারী বসুন্ধরা গোষ্ঠী। এই শিল্পগোষ্ঠীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভিরের বিরুদ্ধে একজন তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক ও তাঁর আত্মহত্যায় প্ররোচণার মামলার খবর তাঁদের কোনো সংবাদমাধ্যমই প্রকাশ করেনি। ফলে, ওইসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সম্পাদক ও সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব ও নীতিবোধের প্রশ্ন সমালোচিত হচ্ছে। 

এই একটি খবরকে কেন্দ্র করে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতার প্রশ্নে আমরা যাঁরা এতোদিন সরকারের সমালোচনা করে আসছি, তাঁদের প্রতিও অনেকে কটাক্ষ করছেন। এটি দূর্ভাগ্যজনক, তবে সাংবাদিকতার নিত্যসঙ্গী একটি বিড়ম্বনা। অন্য কথায় একে বলে পেশার বিপদ (প্রফেশনাল হ্যার্জাড)। এরকম আরও অনেক পেশাগত বিড়ম্বনা সাংবাদিকতার অনুসঙ্গ। তবে, সাংবাদিকতায় সবচেয়ে বড় ঝুঁকিটি হচ্ছে সত্য প্রকাশ করায়। সত্য প্রকাশ হলে যাঁরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, নিদেনপক্ষে বিব্রতবোধ করেন অথবা মিথ্যাতেই যাঁদের মুনাফা, তাঁরা সবসময়েই এক্ষেত্রে বাধা তৈরির চেষ্টা করেন। না পারলে পরে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খোঁজেন। 

মাত্র মাস চারেক আগের একটি শিরোনাম আপনাদের সবারই মনে থাকার কথা। আর মাইরেন না, নিউজ করবো না‘ – বলে প্রলাপ বকছিলেন চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সারোয়ার। আজকের সূর্যোদয় নামের একটি পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরোর এই সাংবাদিক একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর ভাইয়ের অনিয়ম-অন্যায়ের খবর প্রকাশ করার কারণে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অপহরণকারীরা তিন দিন ধরে অকথ্য নির্যাতন চালানোর পর গতবছরের পয়লা নভেম্বর তাঁকে সীতাকুন্ডের বড় কুমিরার এক খালপাড়ে ফেলে রেখে গিয়েছিল। মার খেয়েও বলতে হবে,খবর ছাপাবো শিরোনামে তখন আমি যে কলাম লিখেছিলাম, এখন মনে হয় তার জন্য গোলাম সারোয়ারের কাছে আমার দু:খপ্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। গেল সপ্তাহে তাঁর কাছ থেকে জেনেছি, গত চার মাসে তাঁকে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছে চারবার। সতীর্থ সাংবাদিক, যাঁরা তখন তাঁর পাশে ছিলেন, একে একে অনেকেই সরে দাঁড়িয়েছেন। কেউ কেউ খবরটি প্রকাশের জন্য তাঁকে শাপান্ত করছেন। খবরটি যেন অনলাইন থেকে তুলে নেওয়া হয় সেজন্যেও শাসানো হচ্ছে। চাকরিটি ছেড়ে দিয়ে তাঁকে শহর থেকে গ্রামে গিয়ে ঘরে বসেই দিন কাটাতে হচ্ছে। পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন। কিন্তু, প্রতিপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধেই দুটো মামলা করেছে এবং পুলিশ সেগুলো নিয়েই বেশি আগ্রহী।

প্রায় একইসময়ে খুন হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন। তিনি কোনো মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে লেখেন নি, স্থানীয় প্রভাবশালীদের বেআইনী গ্যাস সংযোগের ব্যবসার তথ্য প্রকাশ করেছিলেন। সেই হত্যার তদন্ত এবং বিচারেও  কোনো অগ্রগতির কথা জানা যায় না।

গেল সপ্তাহে দেশের দুই প্রান্তে দুটি মহানগরীর দুজন ক্ষমতাধর মেয়র দুজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। খুলনার মেয়রের মামলায় এনটিভির খুলনা ব্যুরো চিফ আবু তৈয়বকে আদালত জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আবু তৈয়ব সাংবাদিকতা করেন কয়েক দশক। সুতরাং, আইন-কানুন না মেনে, বা সাংবাদিকতার নীতি অনুসরণ না করে, তিনি কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে মেয়রের মানহানি করতে চাইবেন - এমনটি বিশ্বাস করা কঠিন। আর, সংক্ষুব্ধ হিসাবে তাঁর যাওয়া উচিত প্রেস কাউন্সিলে। এমনকি, মানহানির যে দেওয়ানি আইন আছে, সেই আইনেরও আশ্রয় নেওয়া যেত। বোঝাই যায়, একজন সাংবাদিককে শিক্ষা দেওয়ার সহজ মাধ্যম হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। কেননা, এই আইনে জামিন পাওয়া একটু কঠিন। যদিও আদালত চাইলেই তা দিতে পারেন। 

রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমানও সময় টিভির প্রতিবেদক রতন সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। তাঁর অভিযোগ ফেসবুকে সাংবাদিক রতন সরকার মানহানিকর পোস্ট দিয়েছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের শিকার হয়েছেন এমন সাংবাদিকদের তালিকায় সম্পাদক থেকে রিপোর্টার কেউই বাদ নেই। সম্পাদকদের মধ্যে মানবজমিনের মতিউর রহমান চৌধুরীর কথা মনে পড়ছে, যাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ সাইফুজ্জামান শিখর। ওই একই মামলায় আলোকচিত্র সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের ভোগান্তি প্রায় বছর খানেক ধরে দেশে-বিদেশের সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছে। তাঁর জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে একবার-দুবার নয়, ১৭ বার।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ কীভাবে প্রয়োগ হচ্ছে শিরোনামে এক নীতি গবেষণায় অধ্যাপক আলী রীয়াজ সেন্টার ফর গর্ভনেন্স স্টাডিজ ( সিজিএস) এর পুলিশের কাছ থেকে সংগৃহীত পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে দেখিয়েছেন এই আইনে আনুপাতিকভাবে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকেরা। গতবছরের জানুয়ারি থেকে এবছরের ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময়ে মামলা হয়েছে মোট ৪২৬টি, যাতে অভিযুক্ত হয়েছেন ৯১৩জন। তাঁরা পেশা জানতে পেরেছেন ৭৩৩ জনের, যাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে এবং তারপরই আছেন সাংবাদিকরা। বোঝা যায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অনেক মামলাই ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয় হওয়ায় রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে মামলা বেশি, তবে তাঁদের গ্রেপ্তার কম। গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে অনেক বেশি এগিয়ে আছেন সাংবাদিকেরা। মামলা এবং গ্রেপ্তারের বেলায় মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকই বেশি।  

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খড়গের পর রয়েছে ব্যাক্তিগত নিরাপত্তার ঝুঁকি। ক্ষমতাসীন দলের অত্যন্ত প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই পৌর মেয়র মির্জা আব্দুল কাদেরের  পারিবারিক-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব গত মাস দুয়েক ধরে খবরের অংশ হয়ে রয়েছে। গুরুতর সব অভিযোগের প্রশ্নে সরকারের অবিশ্বাস্য নীরবতা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন করার মতো বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি এখন আর দেশে নেই। এই ভ্রাতৃঘাতি ক্ষমতার লড়াইয়ে র্দূভাগ্যজনকভাবে প্রাণ দিয়েছেন স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক বুরহানউদ্দিন মুজাক্কির। বাংলাদেশে হত্যার বিচারহীনতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে র্দূভাগা হলেন সাংবাদিকেরা। ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউটের হিসাবে গতবছরের মে থেকে এবছরের এপ্রিল পর্যন্ত এক বছরে বিশ্বে ৪৯ জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন। বাংলাদেশে এই সংখ্যা আমাদের হিসাবে দুজন। সাংবাদিকদের মারধোর করায় এগিয়ে আছেন প্রধানত ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা।  অবশ্য আহতের প্রকৃত সংখ্যার কোনো নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সংকলিত পরিসংখ্যান বলছে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে অন্তত ২১৯ জন সংবাদকর্মী হামলার শিকার হয়েছিলেন।    

সাংবাদিক নিগ্রহের পালা আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে লালমনিরহাটে আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। সীমান্তে মাদকসহ চোরাকারবারির বিষয়ে খবর প্রকাশের জন্য ক্ষুব্ধ এই বাহিনীর সদস্যরা গত ১৫ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনকে মারধোর করে উল্টো তাঁর বিরুদ্ধেই মাদকের মামলা দিয়েছে। সাংবাদিকতা পেশার প্রতি কতটা ব্যঙ্গ করতে পারলে মাত্র এক বোতল ফেনসিডিল ধরিয়ে দিয়ে এমন মামলা করা যায়, তার একটা নিষ্ঠুর নজির হয়ে রইল এই মামলা। এসব হত্যা, নির্যাতন, মামলা, গ্রেপ্তারের সামগ্রিক চিত্রে যে ভয়াবহতা প্রকাশ পায়, তারপর মুক্ত সংবাদমাধ্যমের বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের ক্রমাগত অবনমন নিয়ে আর আলোচনার অবকাশ থাকে না।   

ফিরে যাই যে প্রসঙ্গ দিয়ে শুরু করেছিলাম - সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা মানে মালিকের স্বাধীনতা, কথাটা অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সংবাদমাধ্যম কার স্বার্থে ? জনস্বার্থে, নাকি ব্যাক্তি, গোষ্ঠী বা দলের স্বার্থে? সংবাদমাধ্যমের মালিকদের ওপর সরকারের যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণ সে কথাটি ভুলে গেলে চলবে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বক্তব্য প্রচারের জন্য টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রের মালিকানা কীভাবে রাতারাতি বদল হয়েছে, সেই ইতিহাসটা আমাদের সবার জানা। টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রের অনুমতি সরকার সমর্থকদের বাইরে কাউকে দেওয়া হয় কি? সরকার ও সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর যোগসাজশ ও বোঝাপোড়ায় যে কোনো ঘাটতি নেই, তার প্রমাণ নানাধরণের সরকারি অনুমতি, বিজ্ঞাপন ও সুবিধা বন্টনে স্পষ্ট। এসব প্রতিকূলতায় মুক্ত সংবাদমাধ্যমের টিকে থাকার লড়াইয়েও প্রয়োজন কার্যকর গণতন্ত্র। পূর্ণ গণতন্ত্র ছাড়া কি মুক্ত সংবাদমাধ্যম সম্ভব?  

(৩ মে, ২০২১ প্রথম আলো পত্রিকায় কিছুটা সংক্ষেপিত আকারে প্রকাশিত নিবন্ধের পূর্ণ রুপ।)

 


 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

How to Describe the Awami League Accurately?

In an article titled ‘How Not to Describe the Awami League’ , published in this paper, British journalist David Bergman rightly underscores the importance of accuracy in labeling a political party—particularly when such labels carry potential legal consequences. Those familiar with Bergman’s work over the years know that he has consistently taken on politically sensitive and controversial subjects, often at significant personal and professional cost. His courage and commitment to journalistic integrity deserve recognition. Bergman is correct in asserting that “while serious criticisms of the Awami League are both valid and necessary, they must be proportionate and grounded in fact.” His analysis focuses primarily on the legal validity and appropriateness of labeling the Awami League as “fascist” or “Nazi.” He argues that comparing the party to the Nazi regime trivialises the scale of Nazi atrocities and misrepresents the complexities of Bangladeshi politics. Indeed, any historical comp...

স্বৈরতন্ত্রের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার নিকৃষ্ট পরিণতি

ছাত্র–জনতার অভ্যূত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কথিত মন্তব্যে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। গত ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশ্য দেওয়া ভাষণ এবং সম্প্রতি মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপচারিতায় পরস্পরবিরোধী মন্তব্য – এই দুইয়ের একটি যে অসত্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিতর্ক শুরু হওয়ার পর তাঁর দপ্তর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা–ও অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ। তিনি সর্বশেষ বিবৃতিতেও মতিউর রহমান চৌধুরীকে অসত্য কথা বলার বিষয়টি স্বীকার যেমন করেন নি, তেমনি এমন দাবিও করেননি যে তাঁকে ভূলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।  ৫ আগস্ট যদি তিনি পদত্যাগপত্র গ্রহণের প্রশ্নে অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তা খুবই গুরুতর হিসাবে বিবেচিত হতে বাধ্য। কেননা তা ছিল জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের তথ্য। আবার যদি তিনি মানবজমিন সম্পাদকের কাছে আলাপচারিতায় অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তাঁর কাছে যে দেশবাসী প্রশ্নের জবাব চাইতে পারে, তা হলো অর্ন্তবর্তী সরকার যখন সবকিছু গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছে, দেশে স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টা চলছে, তখন তিনি কেন এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন? তাঁর উদ্দ...