সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে দোষারোপের রাজনীতি

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর হত্যাকান্ড শরণার্থী প্রত্যাবাসনের অনিশ্চয়তার বিষয়টিকে আবারও আলোচনায় ফিরিয়ে এনেছে। তবে স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে হত্যার সুষ্ঠু ও দ্রুত তদন্ত ও বিচারের বিষয়টি। তারপর আলোচিত হচ্ছে শিবিরগুলোর নিরাপত্তার প্রশ্ন। চার বছরেও প্রত্যাবাসনের যে আলোচনা শুরুই করা যায়নি, সে বিষয়ে শিগগিরই কিছু আশা করারও কোনো কারণ নেই। আবার মুহিবুল্লাহ হত্যার প্রতিক্রিয়ায় দেশের ভেতরে-বাইরে যেসব আলোচনা হচ্ছে, তা-ও যে প্রত্যাবাসনের সহায়ক হবে, এমন নয়; বরং তার উল্টোও হতে পারে।  

  

মুহিবুল্লাহ হত্যার তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই নানাধরণের কাল্পনিক চিত্র তুলে ধরে এমন একটি ধারণা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে,.যেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে, নয়তো তাদের এক বা একাধিক সংগঠিত গোষ্ঠী সশস্ত্র লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দ্বিতীয় ভাষ্যটি বস্তুত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের অপপ্রচারের সঙ্গে তুলনীয়। আর সংঘবদ্ধ অপরাধে যে বা যাদের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ, তারা যে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া তা করতে পারেন না, সে কথা আমরা ভুলে যাচ্ছি। অভিযোগুলো যে সবসময় সত্য হয় না বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে, তার একটি বড় উদাহরণ প্রয়াত মুহিবুল্লাহ। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস পালনের জন্য একদল বুদ্ধিজীবি ও রাজনীতিক তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য-বিবৃতিতে রোহিঙ্গাবিদ্বেষেরও মিশ্রণ ঘটেছিল। তিনি কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন, তা নিয়েও বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। সেই তাঁরাই এখন বলছেন প্রত্যাবাসনের পক্ষে কথা বলায় প্রত্যাবাসনবিরোধীরা তাঁকে হত্যা করেছে। এই সম্ভাবনা যেমন নাকচ করা যায় না, তেমনই তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই এ তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করা হলে আসল অপরাধীদের আড়ালে থেকে যাওয়ার আশঙ্কাই বৃদ্ধি পায়।  


গ্ণহত্যা দিবসের ওই আয়োজনে লক্ষাধিক শরণার্থীর জমায়েত ঘটায় দ্রুততার সঙ্গে শিবিরের চারপাশে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। কাঁটাতারের বেষ্টনি বসানো হয়, যা মানবাধিকার গোষ্ঠী ও পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনার কারণ হয়েছে। মুহিবুল্লাহর সংগঠন `আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফ্র পিস এন্ড হিউম্যান রাইটস`-এর কার্যক্রমেও নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। গত দুই বছর রোহিঙ্গাদের আর ওই গ্ণহত্যা দিবসের কোনো অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি। গত কয়েকবছরে বেশ কয়েকটি দেশি-বিদেশি এনজিওকে রোহিঙ্গা শিবিরে নিষিদ্ধও করা হয়েছে। কিন্তু এতসব কড়াকড়ি ও নিরাপত্তার মধ্যেও রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে পরিচিত মুখটিকে রক্ষা করা যায়নি। 


দুদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, `রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য রয়েছে। পরিস্থিতিও বেশ ভালো`। কিন্তু, তারপরই বলেছেন, `এ স্থিতিশীল পরিস্থিতিকে অস্থির করতে মিয়ানমার থেকে অস্ত্র আসছে`। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সীমান্তে মাদক ও অস্ত্র পাচার বন্ধে প্রয়োজনে গুলি চালানো হবে। মন্ত্রীদের এসব বক্তব্যে ইঙ্গিত মেলে যে শিবিরগুলোতে আরও নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।       


উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার প্রয়োজনীয়তা কেউই অস্বীকার করবে না। কিন্তু, শুধু নিরাপত্তা বাড়ালেই শিবিরগুলোর সবাই স্বস্তি ও শান্তিতে থাকবে - এমন ধারণা বিভ্রান্তিকর। শিবিরের কিশোর-তরুণদের লেখাপড়া এবং কোনো না কোনোধরণের কাজে ব্যস্ত রাখতে না পারলে তারা যে অস্থিরতায় ভুগবে, সেটাই স্বাভাবিক। ফলে অপরাধ্মূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়তেই থাকবে। আর এদের অপরাধে হাতিয়ার হিসাবে কারা ব্যবহার করেন বা করতে পারেন তারও অনেক নজির সবারই জানা। কক্সবাজারে মাদকের কারবারের শীর্ষে কোন রাজনীতিকরা, তা সরকারের মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাতেই পাওয়া যাবে। একইভাবে তাঁরা কীভাবে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সহযোগিতা পেয়ে থাকেন তার বিবরণ ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো থেকেও পাওয়া যায়।  


রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে কথিত অস্ত্র আসার যেসব কথা বলা হচ্ছে ,সেগুলোর যথার্থতা একমাত্র আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীই বলতে পারে। তবে, সমস্যা হলো এখন প্রশ্ন উঠবে, যে কেন এসব অস্ত্র সেখানে যাচ্ছে? রোহিঙ্গারা কি তাহলে কোনো সশস্ত্র লড়াইয়ের পথে এগুনোর প্রস্তুতির কথা ভাবছে? এধরণের প্রচারে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। কেননা, তারা নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলেই রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচার হামলা চালিয়ে তাদের দেশ্ছাড়া করেছে। সম্ভাব্য প্রত্যাবাসনের যে কোনো চাপের মুখে তারা ওই একই অজুহাত ব্যবহার করবে। এতে বরং হিতে বিপরীত হবে।   


২.

প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ভবিষ্যত কী? মিয়ানমারে সামরিকবাহিনীর সরাসরি ক্ষমতাগ্রহণের কারণে সংকট যে আরও জটিল হয়েছে এবং প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলতে সাধারণত পশ্চিমা দেশগুলোকে বোঝানো হলেও তা আসলে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। ওই পাঁচ সদস্যের মতৈক্যের অভাবেই বিশ্বের প্রধান প্রধান সংঘাতগুলো দীর্ঘায়িত হয়ে চলেছে। রোহিঙ্গা সংকট তা থেকে মোটেও আলাদা নয়। বরং রোহিঙ্গা সংকটে এককভাবে যে দেশটি কিছুটা প্রভাবকের ভূমিকা নিতে পারে, সেই চীনের কারণেই নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টিতে কোনো মতৈক্য সম্ভব হয়নি। 


মিয়ানমারে সামরিকবাহিনী ক্ষমতাদখলের পর সেই সরকারকে পাশ্চাত্যের দেশগুলো বয়কট করলেও চীনের  সমর্থনে কোনো হেরফের হয়নি। মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়ে চীন মধ্যস্থতার ভূমিকাও নিয়েছিল। কিন্তু গত জানুয়ারিতে একদফা ভার্চুয়াল বৈঠকের পর গত মে মাসে মুখোমখি আলোচনার যে কথা ছিল, তা আর হয়নি। উদ্যোগটির ভবিষ্যত নিয়েই এখন সন্দেহ।


মিয়ানমারের ওপর বিশেষভাবে প্রভাব ফেলতে পারে আর যে কয়টি দেশ, তার মধ্যে আছে আমাদের ঘনিষ্ঠতম প্রতিবেশী ভারত। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে চলতি বছরের শুরু থেকে দেশটি দুই বছরের জন্য অস্থায়ী সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে। তাদেরও আশ্বাস ছিল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা করা। আমরা এখন আছি প্রথম বছরের দশম মাসে। এখনও পর্যন্ত কোনো প্রকাশ্য উদ্যোগের কথা কেউ শোনে নি। আমাদের নিকটতম ও নির্ভরযোগ্য মিত্রদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত সহায়তা না পাওয়ার পর শরণার্থীদের অবস্থান দীর্ঘায়িত হওয়ায় কথিত লাভবান কারা হচ্ছে, সেই প্রশ্নের জবাব প্রয়োজন।    ,   

শরণার্থীদের নিয়ে রাজনীতি একেবারে নতুন কিছু নয় এবং বিশ্বের অনেক দেশেই তা দেখা যায়। ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন টোরি পার্টির অভিবাসনবিরোধী নীতির কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু, রাজনৈতিক আশ্রয়পার্থীদের কাছে ব্রিটেন একটি আদর্শ গন্তব্য। রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীরা তাই বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে ঝুঁকি নিয়ে ফ্রান্সে ঢুকে বিপজ্জনক সমুদ্রপথ ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ব্রিটেনে ঢোকার দুঃসাহসী অভিযানে নামে। রাবারের নৌকায় চ্যানেল পাড়ি দেওয়া ঠেকাতে ব্রিটেন ফ্রান্সকে কোটি কোটি পাউন্ড দেয়। কিন্তু, তারপরও  চলতিবছরে এপর্যন্ত ১৭ হাজার আশয়প্রার্থী ওইপথে ব্রিটেনে ঢুকেছে। টোরি পার্টির সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল গত ৫ অক্টোবর বলেন, ফ্রান্সে কোনো সংঘাত নেই এবং দেশটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ার পরও সেখান থেকে ব্রিটেনে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া অযৌক্তিক। 


যুক্তরাষ্ট্রেও মেক্সিকোর সীমান্তে হাজার হাজার আশ্রয়প্রার্থীর ভিড় আমরা দেখেছি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময়ে তাঁদের প্রতি নিষ্ঠুরতা জোরালো রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। ওইসব আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে অর্থনৈতিক অভিবাসী যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী।মাঝপথে অনেকগুলো দেশ পেরিয়ে তাঁরা মেক্সিকোর সীমান্তে জড়ো হয়েছিলেন। 


এসব নজির থেকে প্রশ্ন উঠতে পারে রোহিঙ্গারা যদি তাদের পছন্দমত আশ্রয় খুঁজে নিতে চায়, তাহলে বাংলাদেশ তাদের সেই সুযোগ দিতে পারে কিনা? এরা যদি স্থলপথে দক্ষিণ এশিয়া বা সমুদ্রপথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য কোনো দেশে ভাগ্য অন্বেষণে যেতে চায়, বাংলাদেশ তাদের সেই সুযোগ কি দিতে পারে? অন্য দেশগুলো যখন আমাদের মত একইরকম চাপ অনুভব করবে, তখন হয়তো মিয়ানমারের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গী বদলাবে।


(৭ অক্টোবর, ২০২১-এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)      , 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...