সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নিরাপত্তা দিতে না পারার দায় এড়াবেন কীভাবে

ধর্মের নামে বাঙ্গালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পন্ড করে দিয়ে তাদের মন্দির, ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যেভাবে সহিংস হামলা চালিয়ে অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছে, মানতেই হবে, তা নজিরবিহীন।  গত দুই দশক ধরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে ঘটনাগুলো নিন্দিত হয়ে আসছিল, ২০০১ সালের সেই হামলার থেকে এবারের আক্রমণ অনেকগুলো কারণে আলাদা। আগের হামলার ঘটনাগুলো ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা - ভোটের হিসাব-নিকাশে একটি দলের প্রতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আস্থাশীল বিবেচিত হওয়ায় তখন তারা প্রতিশোধের শিকার হয়েছিল। ভোটের বাক্সে তার জবাবও পেয়েছে বিএনপি-জামাত জোট। কিন্তু এবারের হামলা একেবারেই আলাদা। এবারে দেখা গেল, ধর্মীয় আবেগের নজিরবিহীন অপব্যবহার এবং হিন্দু সম্প্রদায় তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসবই পালন করতে পারল না। ধর্ম পালনের সাংবিধানিক অধিকারটুকুও এবার চরমভাবে লংঘিত হলো। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি স্থায়ী কলংকচিহ্ন হয়ে রইল। তা-ও ঘটল এমন সময়ে, যখন ক্ষমতায় আছে সেই দল, যার প্রতি আস্থা রাখার জন্য ২০ বছর আগে তাঁরা নিগৃহীত হয়েছিল।

আরও একটি পার্থক্য বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া  মোটেও আর আগের মতো নেই। বিএনপি-জামাত জোটের হামলার বিরুদ্ধে তখনকার বিরোধীদল আওয়ামী লীগ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল, রাজপথের প্রতিবাদ ছিল তাৎক্ষণিক। এখন বিরোধীদল বিএনপি এতোটাই কোনঠাসা, যে রাজপথে নামার শক্তি বা সাহস কোনোটাই সম্ভবত তাদের নেই। আবার দেশের সব অঘটন ও সমস্যার জন্য তাদের যেভাবে `কেষ্ট ব্যটাই চোর` বানানো হয়, তাতে তাদের মিথ্যা মামলায় আসামী হওয়ার ভয় থাকাটাও স্বাভাবিক। অন্যান্য দল, এমনকি অসাম্প্রদায়িক দাবি করা বামপন্থী দলগুলোর প্রতিক্রিয়াও ধীরগতির এবং দায়সারা গোছের। 

 

নাগরিক সমাজের কথিত অগ্রসর অংশ সংস্কৃতিকর্মী, লেখক, আইনজীবি, বুদ্ধিজীবিদের প্রতিক্রিয়াতেও অদ্ভুত রকমের মিল। কুমিল্লার হামলার পর চারদিন পার হলেও সংস্কৃতিকর্মীরা কেউ রাস্তায় নেমেছেন এমন কোনো খবর চোখে পড়েনি। অন্যান্য পেশাজীবীর সমিতিগুলোও নীরব। লেখকদের কয়েকজনের একটি বিবৃতি ছাপা হয়েছে, তবে তাতেও পরিচিত মুখগুলো অনুপস্থিত। এর সম্ভাব্য ব্যখ্যা কী? একটা ব্যাখ্যা হতে পারে দেশে যে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তাতে সরকার রুষ্ট হয় এমন কিছু বলে কেউ নিজের বিপদ ডেকে আনতে চান না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা আর গ্রেপ্তারের পরিসংখ্যান তো তাঁদের জানাই আছে। আরেকটি ব্যখ্যা হচ্ছে, আমাদের সুশীল সমাজের স্বাভাবিক পক্ষপাত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি হওয়ায় তাঁরা নিজেদের দলকে বিব্রত করতে চান না, দলের ক্ষতি করতে চান না। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে তাই নাগরিক অধিকার রক্ষায় তাঁরা যতটা সোচ্চার হন, আওয়ামী লীগের সময় ঠিক ততটাই নীরবতা অনুসরণ করেন।  

জননিরাপত্তায় প্রিভেনটিভ বা নিবৃত্তিমূলক আগাম ব্যবস্থাগ্রহণ একটি বহুল স্বীকৃত ও ব্যবহৃত কৌশল। গত এক দশকে দেখা গেছে, রাজনৈতিক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ মোকাবিলায় পুলিশ প্রায়ই নিবৃত্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রস্তুতির খবর পুলিশ ঠিকই আগাম পেয়ে গেছে এবং গণহারে ধরপাকড় চালিয়ে এবং তিন-চার স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে সেগুলো ভন্ডুল করে দিয়েছে। এই কৌশল যে শুধু ঢাকার বেলায় অনুসৃত হয়েছে, তা নয়, মফস্বলের জেলাগুলোতেও হয়েছে। এমনকি যানবাহন অঘোষিতভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শহরে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছে, বিজিবিও মোতায়েন করা হয়েছে। 

পূজোর সময়ে হাঙ্গামার আশংকা তৈরি হওয়ার পরও এবার সেরকম কিছু হয়নি। তাহলে এবারে কি গোয়েন্দারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন? পুলিশের তরফ থেকে কেন এবারে কোনো নিবৃত্তিমূলক পদক্ষেপ দেখা গেল না?  তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া হয় যে কুমিল্লার ঘটনার জন্য প্রস্তুত থাকা সম্ভব ছিল না, কিন্তু অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রে কেন তেমনটা হয় নি?২০টির বেশি জেলায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার কারণে প্রশ্নটি বিশেষভাবে গুরত্বপূর্ণ। ওইসব জেলায় কামিল্লার হাঙ্গামার পরপরই বিজিবি মোতায়েন কিম্বা ১৪৪ ধারা জারির মত পদক্ষেপ নেওয়াই কি প্রত্যাশিত ছিল না? হাজিগঞ্জ, চৌমুহনী, চট্টগ্রাম, রংপুর সব জায়গা থেকেই পুলিশের বিলম্ব,, নয়তো অপর্যাপ্ত ব্যবস্থার অভিযোগ করা হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনারও যে বিবরণ প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যসূত্রে উঠে এসেছে, তাতে যে মন্ডপে ঘটনার সূত্রপাত, সেখানে যে নির্দেশনা সত্ত্বেও সিসি ক্যামেরা ও পাহারাদার ছিল না, তা মোটামুটি নিশ্চিত।  পুলিশ ও স্থানীয়  প্রশাসন কেন এগুলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারেনি? এমনতো নয় যে, আমাদের পুলিশের লোকবল নেই, বা সম্পদের অভাবে তারা জননিরাপত্তা দিতে পারছে না। জনশৃংখলা ও নিরাপত্তা খাতে চলতিবছরের বাজেটে বরাদ্দ আছে ২৮ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। এখন তারা নিজস্ব হেলিকপ্টার কেনার কথাও ভাবতে পারে। 

এগুলোকে অনেকেই ষড়যন্ত্রের আলামত গণ্য করছেন। স্বরাস্ট্রমন্ত্রীও একে পরিকল্পিত আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন, তবে তাঁর সন্দেহের কারণ স্পষ্ট নয়। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে কারা, কোন উদ্দেশ্যে এধরণের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করতে পারে? উদ্দেশ্যটা রাজনৈতিক না অর্থনৈতিক স্বার্থের, তা কোনদিনই হয়তো জানা যাবে না। কোনো বর্হিশক্তির হাত আছে কিনা, তা নিয়েও প্রচুর জল্পনা-কল্পনা চলতে পারে। কিন্তু এসব সহিংসতা ও হাঙ্গামায় রাজনীতির যোগসাজশ কিম্বা ষড়যন্ত্রের কথা যাঁরা বলছেন, তাঁদের আগে খুঁজতে হবে উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর। পুলিশ ও প্রশাসন বিরোধীদলের ইঙ্গিতে নিষ্ক্রিয় ছিল - এমন কথা আমাদের বিশ্বাস করতে বললে, বুঝতে হবে, সেটাও রাজনীতিরই অংশ। সাধারণ মানুষ কেন হামলা প্রতিরোধে এগিয়ে আসেনি, কেউ কেউ এমন সমালোচনাও করেছেন। তবে রাজনীতিকরা যেখানে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ, সমাজের অগ্রসর অংশ যেখানে নীরবতাপালনকে শ্রেয় জ্ঞান করছেন, সেখানে কোন ভরসায় সাধারণ মানুষ পথে নামবে?   

অনেকে এই সহিংসতার পিছনে সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র ও তার জন্য নির্বাচনী রাজনীতির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। কিন্তু নির্বাচন তো এখনো কমপক্ষে বছর দুয়েক দূরে। নির্বাচনী প্রস্তুতির কথা তো ক্ষমতাসীন দল ছাড়া এখনও অন্য কোনো দলের মুখে শোনা যায়নি। সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রবক্তাদের কেউ কেউ অবশ্য প্রতিবেশী দেশের বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচন ও উপ-নির্বাচনের কথাও বলেছেন। কেন্দ্রে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি বিভিন্ন কারণে জনপ্রিয়তা হারানোর প্টভূমিতে তাঁদের দাবি, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার কারণে বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির ভোট দ্বিগুণ হবে। 


অন্যদিকে, সামাজিক মাধ্যম - বিশেষত টুইটারে - ভারতের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সতর্কবার্তাও কিছুটা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতকেও সচেতন হতে হবে উল্লেখ করে তাঁর মন্তব্য “সেখানেও (ভারতে) এমন কিছু যেন না করা হয় যার প্রভাব আমাদের দেশে এসে পড়ে, আর আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত আসে।'' নিঃসন্দেহে এটি ব্যতিক্রম। ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো যখন বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে নানাধরণের বিশ্লেষণ ও জল্পনা তুলে ধরছে, তখনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ভারতের সংখ্যালঘুদের নিগ্রহ ও দূর্ভোগ জায়গা করে নিয়েছে। ১৮ অক্টোবর নিউইয়র্ক টাইমস আসামের বাংলাভাষী মুসলমানদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের এক সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে (এমিড ফ্লেমস এন্ড গানফায়ার, দে ওয়্যার ইভিক্টেড ফ্রম হয়্যার দে কলড হোম)। 


গত কয়েকদিনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা যে দেশের সাধারণ মানুষকে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে, সন্দেহ নেই। একইভাবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে আন্তর্জাতিক পরিসরে যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা-ও বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারতের বিজেপির রাজ্য পর্যায়ের কিছু নেতা এবং হিন্দু সংগঠন, ইসকন বাংলাদেশে তদন্ত দল পাঠানোর জন্য জাতিসংঘের কাছে চিঠি দিয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এগুলো উদ্বেগের বিষয় ঠিকই, তবে তার চেয়েও বড় উদ্বেগের কথা হচ্ছে, ক্ষমতাসীনদের দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতা। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না কিম্বা দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে - এগুলো হচ্ছে অতিব্যবহৃত প্রতিশ্রুতি, যা সাধারণত পূরণ হয় না। দায়িত্বশীলরা তাঁদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করলেই আমরা ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতে পারি। আর তাহলেই এধরণের নাশকতা ও সহিংস অঘটনের পুনরাবৃত্তি এড়ানো সম্ভব হবে।     


(২০ অক্টোবর, ২০২১-`র প্রথম আলো প্ত্রিকায় প্রকাশিত।) 

 

 

   

 

 

 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...