সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নতুন বছরে রাজনীতি কি চাঙা হবে

যে বছর পিছনে ফেলে যাচ্ছি, তার চেয়ে আগামী বছর কতটা ভালো হবে জানি না। কেননা, জ্যোতিষশাস্ত্রের কোনো কিছুই আমার  জানা নেই। তবে অনুমান থেকে বলতে পারি, বছরটি হবে উত্তেজনাপূর্ণ, চাঙা হবে রাজনীতি। কেন এবং কীভাবে, তা ব্যখ্যা করার জন্য আগে একটু পেছনে তাকানোও জরুরি।   


২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। সেই নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে বিপুল বিতর্ক সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিকভাবে প্রায় নির্বিঘ্নেই তাঁর টানা তৃতীয় মেয়াদের তৃতীয় বছর পার করেছেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তখনকার সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদের হাঙ্গেরি ও মালয়েশিয়ায় খুনের দায়ে দন্ডিত পলাতক ভাইদের সঙ্গে দেখা করা ও তাঁদের ব্যবসায় সাহায্য করার বিষয়ে আল-জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারকে কেন্দ্র করে যে তোলপাড় হয়েছিল, তার কথা খুব সহজে কেউ বিস্মৃত হবেন বলে মনে হয় না। 


বিতর্কের মধ্যেই প্রথম আলোতেই প্রকাশ পায় যে জেনারেল আজিজের ভ্রাতৃদ্বয় গোপনে অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা পেয়েছেন এবং তাঁদের সাজা মওকুফ করা হয়েছে। খুনের অপরাধীদের সরকারি অনুকম্পার কথা বছরশেষে আবার আলোচনায় এসেছে। কেননা, জীবনহানির শঙ্কায় থাকা গুরুতর অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিসার সুযোগের দাবি সরকার নাকচ করে দিয়ে বলেছে, আইনে সেই সুযোগ নেই। 


২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন, যা রাতের ভোট হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে, তার কথাও গেল বছরে প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে শোনা গেছে। কেননা, বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতার যে সর্বনাশ সাধন করেছে, সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি কেউই দেখতে চায় না। তাছাড়া গেল বছরে কমিশন যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করেছে, তা দেশের ইতিহাসে সম্ভবত দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ রক্তক্ষয়ী ও প্রাণঘাতী নির্বাচন। তবে প্রাণঘাতী হলেও বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত ঘোষণার রেকর্ড গড়ায় খান মোহাম্মদ নুরুল হুদার কমিশন অনন্য। 


এই কমিশনের বিদায় আসন্ন। তাই বছরের শেষার্ধে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে নতুন কমিশন গঠনের বিষয়টি এবং তার জন্য নাগরিক গোষ্ঠীর একটি অংশ আইন তৈরির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। তবে, আইন যে হচ্ছে না, তা মোটামুটি নিশ্চিত। রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছেন কথিত অনুসন্ধান কমিটি গঠনের জন্য, যাদের বাছাই করা তালিকা থেকে নতুন কমিশন গঠিত হবে। সরকার তেমনটিই চায়। সরকারের মনোনীত ও একান্ত অনুগত বিরোধীদল জাতীয় পার্টি দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর স্ত্রী সাবেক সচিব রোকসানা কাদেরকে কমিশনার পদের জন্য প্রস্তাব করে ইতোমধ্যেই যে রগড় দেখিয়েছে, তাতে সংলাপে কোনো জাতীয় মতৈক্যের সম্ভাবনা যে শূণ্যের কোটায়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 


নতুন কমিশন আগের চেয়ে ভালো হবে, না-কি খারাপ, তা জানতে অবশ্য বেশি দিন অপেক্ষার দরকার হবে না। তবে ভালো কমিশন হলেও তাকে আস্থা ফেরাতে তাদেরকে যে গলদ্ঘর্ম হতে হবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। ২০২৩-এর নির্বাচন, আগে অথবা নির্ধারিত সময়ে, যখনই হোক, নির্বাচন কমিশনকে প্রতিদ্বন্দ্বী সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য করানো সহজ হবে না। 


গেল বছরে পুরো বিশ্বের মতোই বাংলাদেশের জন্যও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কোভিড-১৯-এর মহামারিতে মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষা। কাজটা মোটেও সহজ কিছু নয়। বিশ্বের খুব অল্পসংখ্যক দেশই এটি নিয়ন্ত্রণে সাফল্য পেয়েছে। সুশাসনজনিত ঘাটতির কারণে গোড়ার দিকে স্বাস্থ্যখাতে বিশৃংখল একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ক্ষমতাসীন দলের পৃষ্ঠপাষকতার সুবাদে ভুয়া শনাক্তক্রণ পরীক্ষার কেলেংকারি বড় ধরনের আলোড়ন তৈরি করে। এখনও দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ টিকা পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। এর মধ্যে অতি দ্রুত সংক্রামক অমিক্রন নতুন করে বিপদের ডঙ্কা বাজাচ্ছে। বিশ্বের নানা প্রান্তের তথ্য-উপাত্ত বলছে টিকাহীন মানুষের ওপর এর আক্রমণ সবচেয়ে ক্ষতিকর। ইউরোপ-আমেরিকা থেকে কয়েক মাস পিছিয়ে থাকায় বাংলাদেশে আগামী বছরের প্রথম কয়েকটি মাস তাই জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। 


এই মহামারি ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নানাধরণের দূর্নীতি আর অনিয়মের খবর প্রকাশের জন্য ক্ষুব্ধ আমলাদের একটি গোষ্ঠী প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে লাঞ্ছিত করে এবং শতবছরের পুরোনো নিবর্তনমূলক আইন অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট–এর বিধি প্রয়োগ করে মামলা দায়ের করে। এই হামলা ও মামলা ব্যপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়, কেননা, বহুল নিন্দিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নির্বিচার অপপ্রয়োগের মাধ্যমে মতপ্রকাশ ও সংবাদপ্ত্রের স্বাধীনতা হরণের জন্য ২০১৮ সাল থেকেই সরকার দেশে-বিদেশে সমালচিত হয়ে আসছিল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু হলে তিনি হন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে প্রথম আত্মদানকারী। তাঁর সহঅভিযুক্ত আহমেদ কিশোর হলেন দেশের প্রথম কোনো শিল্পী, যিনি কার্টুন আঁকার জন্য জেল খাটলেন।এই পটভূমিতে কার্যকর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ছাড়া মতপ্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আগামী দিনগুলোতে ঘটবে বলে আশাবাদী হওয়ার খুব একটা অবকাশ আছে বলে মনে হয় না।    


বছরের শেষপ্রান্তে সরকারের জন্য সবচেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির জন্ম দেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নাতনি জায়মা রহমানকে নিয়ে প্রকাশ-অযোগ্য ভাষায় কুতসা রটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার মধ্যেই ফাঁস হয় দুবছরের পরোনো এক টেলিসংলাপ। ওই টেলিসংলাপে একজন অভিনেত্রীকে আইন-শৃংখলাবাহিনী দিয়ে ধরে নিয়ে এসে ধর্ষণের হুমকি দিতে শোনা যায়, যা তিনি অস্বীকার করেন নি। এরপর লোকচক্ষুর আড়ালে পালিয়ে থেকে তিনি পদত্যাগ করে বিদেশে চলে যান। কানাডা ও দুবাইতে ঢুকতে না পেরে মাত্র ৪৮ ঘন্টায় তাঁর বিশ্বভ্রমণ শেষ হয় এবং তিনি দেশে ফিরে আবারও জনদৃষ্টির আড়ালে চলে যান। ফৌজদারি আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ সত্ত্বেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন তাঁর কাজে রাষ্ট্র সংক্ষুব্ধ নয়। সন্দেহ নেই, দেশে স্বাভাবিক রাজনীতি থাকলে এমন ঘটনার রেশ রাজনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলত। তবে বিদেশে কোথাও তাঁর আশ্রয় না পাওয়াটা অনেকের জন্যই সম্ভবত শিক্ষণীয় হয়েছে। 


২০২১ ছিল আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বছর। একইসঙ্গে সরকার বঙ্গবন্ধুর  জন্মশতবার্ষিকীর সমাপনী অনুষ্ঠানমালাও আয়োজন করে। ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমন্ত্রিত হন বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু তাঁর উগ্র হিন্দুত্ববাদি রাজনীতি ও তাঁর সমর্থকদের মুসলিমবিদ্বেষী নীতিতে ক্ষুব্ধ অনেকেই তাঁর উপস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান, যা শেষ পর্যন্ত সহিংসতায় রুপ নেয়। ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ সরকার কঠোর হাতে দমন করে। কিন্তু সরকারের ঘনিষ্ঠ হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ সহিংস রুপ নেয়। পরিণতিতে সরকার হেফাজতের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নেয়। ইতিমধ্যে হেফাজতের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে এবং প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা শফী ও তাঁর উত্তরাধিকারী দুই নেতাও অল্পদিনের ব্যবধানে মারা গেছেন। যে কারণে হেফাজত এখন নেতৃত্বের সংকটে রয়েছে এবং সহসা তাদের এথেকে মুক্তি ঘটবে‘কি না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।


সুবর্ণ জয়ন্তীর শেষ পর্বে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের সফর নিয়ে কোনোধরণের বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় নি। স্পষ্টতই প্রধানমন্ত্রী মোদির রাজনীতি এবং রাজনৈতিক ইতিহাস এই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। রামনাথ কোবিন্দ একই দলের হলেও তাঁর রাজনৈতিক অতীত নিয়ে তেমন কোনো বিতর্ক নেই। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ওঠানামা আগামীতেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যে প্রভাব রাখবে, তা বলাই বাহুল্য। তবে মাত্রার হেরফের নিয়ে কথা শেষ হওয়ার নয়।


বছরশেষের চমক হচ্ছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশের আমন্ত্রণ না পাওয়া এবং আইন-শৃংখলা রক্ষায় বহুল ব্যবহৃত চৌকস বাহিনী র‍্যাব ও র‍্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ মানবাধিকারের গুরুতর লংঘনের অভিযোগে এই নিষেধাজ্ঞা। 


সরকার ও ক্ষমতাসীন দল একে অনাকাংখিত ও অযৌক্তিক অভিহিত করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এর অবসান ঘটানোর আশা প্রকাশ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞার জন্য তাঁরা তাঁদের ভাষায় কথিত দেশবিরোধীদের প্রচার ও লবিংকে দায়ী করেছেন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে চলেছেন। আগামী বছর এই সংকট ঘিরে বিতর্ক কতটা স্থায়ী হবে, তা বলা মুশকিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর  সহসা তা প্রত্যাহার করেছে, এমন কোনো নজির নেই। শ্রমিক অধিকার ও কাজের পরিবেশ নিয়ে আপত্তির কারণে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি দ্রব্যে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করার পর গত আট বছরেও আলোচনায় কোনো সমাধান মেলেনি। র‍্যাবের নিষেধাজ্ঞা তাই রাজনীতিতেও বিতর্ক জিইয়ে রাখতে পারে।   


কার্যকর গণতন্ত্রে ওপরে উল্লেখ করা ঘটনাগুলোর যে কোন একটিই সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য যথেষ্ট। অনেকে বলেন, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলে এধরণের ঘটনায় কোনো সরকারই রেহাই পেত না। তাঁদের অনেকেরই বিশ্লেষণ বলছে, দেশে বিরাজনৈতিকীকরণের কারণেই এই রুপান্তর। ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ঘটেছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাতন্ত্র্য বিলোপ পেয়েছে। গত আট বছরের মধ্যে এ বছরে শেষ প্রান্তে এসে আওয়ামী লীগের প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি এই প্রথম মাঠে রাজনীতি করার কিছুটা সুযোগ পাচ্ছে। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার সুযোগের দাবিতে দলটি দেশের অনেক জেলায় বিনা বাধায় সভা-সমাবেশ করতে পেরেছে। 

     

রাজনীতিতে এখন আকস্মিক উত্তেজনা তৈরির মত বিষয় হচ্ছে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা। তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। আইন এক্ষেত্রে যে কোন বাধা নয়, তার নজির সরকারের চোখে না পড়লেও ইতিহাসে তার অভাব নেই। সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর জাসদ নেতা আসম রব, আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম মোহাম্মদ নাসিম, আব্দুল জলিল বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছেন। উপমহাদেশেও বিস্তর নজির আছে। পাকিস্তানের নেওয়াজ শরীফ এখনো লন্ডনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সরকারের আসল উদ্বেগ বিদেশে সুস্থ হয়ে সেখান থেকে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করলে সরকারের সেক্ষেত্রে কিছুই করার থাকবে না। 


বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না পেয়ে তাঁর মৃত্যু হলে তাঁর সমর্থকদের বিক্ষোভ সামাল দেওয়া কঠিন হতে পারে। তবে সরকারি সূত্র বলছে, তাঁর বিদেশে মৃত্যু হলেও দেশে একই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সুতরাং সরকারের বরং সম্ভাব্য বিস্ফোরক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণই শ্রেয়। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিষেধাজ্ঞা ও গণতন্ত্র সম্মেলন থেকে বাদ পড়ার কারণে বিরোধীদের দমনে অতীতের কৌশলগুলো প্রয়োগ করা এখন কঠিন হয়ে পড়বে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা যেভাবে চিকিৎসকদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, তাতে হঠাৎ করে অস্থিরতা তৈরির আশংকা নাকচ করে দেওয়া যায় না। মোদ্দা কথায়, ২০২২ এ রাজনীতি কিছুটা উত্তাপ ছড়াবে বলেই ইঙ্গিত মিলছে। 


(১ জানুয়ারি, ২০২২-এর প্রথম আলো পত্রিকার বিশেষ সাময়িকীতে  প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...