সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না

 সুশীল সমাজের তরফ থেকে দাবি করা নির্বাচন কমিশন আইন তৈরির সিদ্ধান্ত জানিয়ে সরকার মন্ত্রীসভায় একটি খসড়া অনুমোদন করেছে। কিন্তু খসড়া আইনের যেটুকু বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে তার প্রতিক্রিয়াকে কি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের কবিতার কথা দিয়ে বর্ণনা করা উচিত?  এসব প্রতিক্রিয়ায় মনে হয় এখন তাঁরা বুঝতে পারছেন, `যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না`। নির্বাচনের সব পক্ষের মধ্যে নির্বাচনের সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে একটি জাতীয় সমঝোতা ছাড়া শুধু আইন করে সেই আইন অনুযায়ী কমিশন গঠন যে মরীচিকাতুল্য সেই সতর্কবাণী তাঁরা গ্রাহ্য করেননি। 

শুধু একটি আইনই যে আমাদের রাজনীতির গভীর সংকটের কোনো সমাধান দিতে সক্ষম নয়, সে কথা এখন মানতেই হচ্ছে। জোর দেওয়া হচ্ছে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার ওপর। কমিশন গঠনের দাবিতে সবচেয়ে বেশি সরব ছিল এবং নিজেরা একটি খসড়া তৈরি করে আইনমন্ত্রীর কাছে পেশ করেছিল যে বেসরকারি সংগঠন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), তার সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার লিখেছেন, `সরকার যে আইনের খসড়া অনুমোদন করল, তা পুরোনো রীতিকেই বহাল রেখেছে। অর্থাৎ সার্চ কমিটির মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। সে ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা, তার প্রতিফলন হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ`। আর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও নাগরিক সমাজের মতামত ছাড়া আইনটি পাস করা হলে তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।

 

আইন তৈরির ওপর যেসব রাজনৈতিক দল জোর দিয়েছিল, তারা প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোট শরিক অথবা তার কাছ থেকে রাজনৈতিক সুবিধাভোগী ( যেমন, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি)। তাদের তরফেও রাষ্ট্রপতিকে বলা হয়েছে সরকার চাইলে একদিনেই আইন করা সম্ভব। এসব কথার পিঠে তাড়াহুড়া না করার যুক্তি হিসাবে অবশ্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বছরের শুরুতেই বলেছেন, ‘এই আইনটা এমন একটা আইন হওয়া উচিত, যেটা গ্রহণযোগ্য হবে সবার কাছে। শুধু এক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে তো এটা সর্বজনীন আইন হলো না।’  কথাটা তিনি অনুসরণ করার জন্য বলেছেন কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। হঠাৎ যেভাবে খসড়া মন্ত্রীসভায় উত্থাপন ও অনুমোদন হয়ে গেল, তাতে সর্বজনীন করার চেয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই প্রধান বলে মনে হচ্ছে। রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য এখন সরকার খুব বড় করে প্রচার করতে পারবে যে নাগরিক সমাজের দাবি মেনে নিয়ে ৫০ বছরের মধ্যে তাঁরাই প্রথম একটি আইনের ঘাটতি পূরণ করছেন। 


বাস্তবে আইনের খসড়া সম্পর্কে যতটুকু জানা যাচ্ছে, তাতে গত দুটি কমিশন যে প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়েছে, সেই একই প্রক্রিয়াকেই একটি আইনি আবরণ দেওয়া ছাড়া এতে আর কোনো বস্তুগত পরিবর্তন ঘটছে না। আইনের খসড়াতেও থাকছে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি, তবে পরিধিটা একটু বাড়ছে। ছয় সদস্যের এ অনুসন্ধান কমিটির প্রধান হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে থাকবেন হাইকোর্টের একজন বিচারপতি, মহাহিসাবনিরীক্ষক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। রাষ্ট্রকাঠামোর সব শাখা-উপশাখায় দলীয়করণের যে বিস্তৃতি ঘটেছে, তাকে নজিরবিহীন বললেও কম বলা হবে। দলীয় পরিচয়ের সুবাদে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ পেয়ে আপিল বিভাগেও উন্নীত হয়েছিলেন - এমন একজন বিচারপতি অবসরের পর রাজনীতিতে কতটা সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন, এর নমুনা আমরা প্রতিদিনই প্রত্যক্ষ করছি। প্রস্তাবিত আইনে গঠিত বাছাই কমিটিটি যেহেতু দলীয় প্রভাবমুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, সেহেতু  তাঁরা কমিশনার পদে নিরপেক্ষ নাম প্রস্তাব করতে সক্ষম হবেন, এমনটি বিশ্বাস করা কঠিন।    

 

সংসদের বর্তমান যে গঠনপ্রকৃতি এবং সাংসদদের ওপরে খড়গের মতো ঝুলে থাকা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ - এই দুইয়ের সমন্বয়ের কারণে নতুন কোনো আইন তৈরি সরকারের জন্য যে খুবই সহজ, তা নিয়ে কোনো সংশয়ের অবকাশ নেই। এমনকি সবার মতপ্রকাশের জন্য সুযোগ দিলেও সরকারের চাওয়া অপূর্ণ থাকবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নজির স্মরণ করে দেখুন। প্রচুর আলাপ-আলোচনা হয়েছে, মন্ত্রীরা সম্পাদক পরিষদকেও আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁদের আপত্তিগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে। কিন্তু কোনো আপত্তি, পরামর্শ ও দাবি আমলে নেওয়া হয় নি। 

 

যাঁরা ভাবছেন প্রস্তাবিত খসড়া নাগরিক সমাজের মতামতের জন্য উন্মুক্ত করা হলেই গ্রহণযোগ্য আইন পাওয়া যাবে, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন মিলবে, তাঁদের ইতিহাসের দিকে তাকানো প্রয়োজন। প্রতিবেশি দেশগুলোর অভিজ্ঞতা থেকেও আমাদের শিক্ষা নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আমাদের ৫০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো ও দেশ-বিদেশে স্বীকৃত নির্বাচনগুলো হয়েছে রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে। অবশ্য সমঝোতার কেন্দ্রে যেহেতু প্রাধান্য পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠনপ্রকৃতি, সেহেতু কমিশন নিয়ে তেমন কোনো ঝামেলা হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে যখন বিরোধ হয়েছে, কমিশন নিয়েও ঝামেলার শুরু তখনই।  

 

প্রতিবেশি দেশ ভারতে নির্বাচন কমিশন গঠনে গত ৭৫ বছরেও কোনো আইন হয় নি। কিন্তু সেখানে কমিশন গঠনে দলীয় পক্ষপাতের অভিযোগ নেই। রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের ওপর তাঁকে নির্ভর করতে হয় না। আমরা পাকিস্তানের দীর্ঘ সামরিক শাসন ও অগণতান্ত্রিক নানা কর্মকান্ডের জন্য যত সমালোচনাই করি না কেন, তারা এমন একটি আইন করেছে, যা সত্যিকার অর্থেই অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং যার জন্য জাতীয় সমঝোতার বিকল্প নেই। সেখানে প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতা আলোচনা ও সম্মতির ভিত্তিতে প্রতিটি পদের জন্য তিনজনের নাম প্রস্তাব করেন এবং প্রস্তাবকৃত ব্যাক্তিদের পার্লামেন্টের একটি কমিটির শুনানিতে হাজির হতে হয়। ওই কমিটি তাঁদের মধ্যে একজনের মনোনয়ন অনুমোদন করে এবং প্রেসিডেন্ট তাঁকেই নিয়োগ দেন। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা এসব পদের মনোনয়ন প্রশ্নে একমত হতে না পারলে তাঁরা দুজনেই আলাদা আলাদাভাবে তিনজনের নাম প্রস্তাব করে পার্লামেন্টারি কমিটির কাছে তা পাঠান এবং কমিটি তাঁদের মধ্য থেকেই একজনকে বেছে নেয়। স্পিকার ওই পার্লামেন্টারি কমিটি গঠন করেন ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলের সমসংখ্যক সদস্য নিয়ে। 

 

শ্রীলংকায় কমিশনের প্রধান ও সদস্যদের বাছাই করে দশ সদস্যের সাংবিধানিক পরিষদ , যে পরিষদের সদস্য হলেন প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, প্রেসিডেন্ট মনোনীত একজন, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার যৌথ প্রস্তাবে মনোনীত ও প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত পাঁচজন এবং এমপিদের সংখাগরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত এমন একজন, যিনি প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার দলের সদস্য নন। 

 

আমাদের প্রতিবেশিদের এসব নজিরে যে বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষণীয়, তা হচ্ছেঃ ১. কমিশন গঠন প্রক্রিয়াকে সরকারের প্রভাবমুক্ত রাখার ব্যবস্থা, ২. প্রধান প্রতিপক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতা, এবং ৩. তা অন্তর্ভুক্তিমূলক। কমনওয়েলথের সদস্য দেশগুলোর নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় যে চর্চাগুলো সেরা তার একটি সংকলন `ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট: এ কম্পেনডিয়াম অব কমনওয়েলথ গুড প্র্যাকটিসেস`- এর এসব বৈশিষ্ট্যের ওপরই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।  এতে ক্ষমতাসীন সরকারের অন্যায় সুযোগ গ্রহণের চাপকেই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এই সংকলন তৈরির কাজটি করেছে কমনওয়েলথ ইলেক্টোরাল নেটওয়ার্ক ওয়ার্কিং গ্রুপ। তাদের মত হচ্ছে, নির্বাচন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান শুধু তাদের নিয়েই গঠিত হওয়া উচিত, যাদের প্রতি পুরো সমাজের আস্থা আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে তার জন্য তাদের রাজনৈতিক দল থেকে আসা আবশ্যক নয়। 

 

প্রস্তাবিত খসড়ায় এসব উপাদান একেবারেই অনুপস্থিত। শুধুমাত্র আইনের মোড়ক পরানোর ফল হবে রকিব কমিশন কিম্বা হুদা কমিশনের অনুরূপ আরও একটি অথর্ব ও অনুগত কমিশন সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়া। এমনকি, এদের চেয়েও খারাপ কিছুর আশংকাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নির্বাচনব্যবস্থার সামগ্রিক দিকগুলো নিয়ে একটি জাতীয় সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই এবং তার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে নব্বুইয়ের তিনজোটের মত একটি অভিন্ন রুপরেখা প্রণয়ন। 


(২০ জানুয়ারি, ২০২২-এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত। )


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...