সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শুধু আইন কেন, কমিশনও এক দলের জন্য কাম্য নয়

 ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নিশি ভোটের নির্বাচনী কালিমা নিয়ে বেশি কথা বলার প্রয়োজন পড়ে না কেননা, ওই নির্বাচনের অনন্য কীর্তির অধিকারী কমিশনের সবাইপ্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা থেকে শুরু করে অন্য চার কমিশনারই পরবর্তীকালে বিভিন্ন উপলক্ষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবেরাতের ভোটেরকথা বলেছেন সংসদীয় উপনির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন, পৌর নির্বাচন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলোর সময় সব ধরনের অনিয়ম-বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে প্রশাসনকে সতর্ক করতে গিয়ে তাঁরা বলেছেন, রাতের বেলায় আর ব্যালট বাক্স ভরা যাবে না ২০১৯ সালের মার্চে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের আগে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে নূরুল হুদা বলেছিলেন, ‘ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হলে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তির সুযোগ থাকবে না

কথাগুলো স্মরণ করছি কারণে যে জাতিসংঘ মহাসচিবের এক প্রতিবেদনে দেখছি, ওই ভোটের জন্যও সরকার জাতিসংঘের সাহায্য নিয়েছিল জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকার জাতিসংঘের সাহায্য নেওয়ার পরও ভোটাররা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি কেননা, রাতের আঁধারে প্রশাসনের সহযোগিতায় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ব্যালট বাক্স ভরে ফেলেছে ২০১৯ সালের আগস্ট প্রকাশিতইউনাইটেড নেশনস ইলেকটোরাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিপোর্ট অব দ্য সেক্রেটারি জেনারেল’- দেখা যায়, মহাসচিব বলেছেন, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত জাতিসংঘ বিশ্বের ৫০টি দেশে নির্বাচনে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়েছে দেশগুলোর যে তালিকা প্রতিবেদনে সংযোজিত হয়েছে, তাতে বাংলাদেশও রয়েছে তবে বাংলাদেশে কী ধরনের সহায়তা জাতিসংঘ দিয়েছে, তার কোনো বিবরণ প্রতিবেদনে নেই জাতিসংঘ সদস্যদেশগুলোয় নির্বাচনে সহায়তা দেয় দুই কারণে. কোনো দেশ সাহায্য চাইলে, অথবা . কোনো দেশে নির্বাচন পরিচালনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদ বা সাধারণ পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়ে দায়িত্ব অর্পণ করলে

বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধেই জাতিসংঘ ২০১৮ সালের নির্বাচনে সহায়তা দিয়েছে এই সহায়তা কমিশনের সামর্থ্য সক্ষমতা তৈরির জন্য কৌশলগত সহায়তা বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে, নির্বাচন আয়োজনের জন্য সহায়তা নিলেও সরকার জাতিসংঘকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ অনুমতি দেয়নি এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনেও জাতিসংঘ বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়েছিল এবং ইউএনডিপির তত্ত্বাবধানেই তৈরি হয়েছিল নতুন ভোটার তালিকা ভোটারদের ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র সেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণেও তাদের ভূমিকা ছিল

 
জাতিসংঘের প্রসঙ্গটি একেবারে উপেক্ষণীয় নয় ইতিমধ্যেই নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ আগামী নির্বাচন জাতিসংঘের অধীন করার দাবি জানিয়েছে একদা আওয়ামী লীগ, পরে গণফোরাম করা রেজা কিবরিয়া এবং সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের নতুন দল গণ অধিকার পরিষদ এই দাবি জানিয়ে বলেছে, যেসব দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে, সেসব দেশে জাতিসংঘ অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন করে দিচ্ছে দল হিসেবে তারা হয়তো এখনো তেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেনি, কিন্তু তাদের বক্তব্য কি একেবারে অযৌক্তিক? বিশেষ করে জাতিসংঘের সহায়তা নিয়ে নির্বাচন আয়োজন করে তাদের আড়াল করে যখন দেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে, তখন বিশ্বাসযোগ্য ভোট আয়োজনে তাদের বাড়তি সহায়তায় আপত্তি কিসের?

আগামী নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিতর্কের যে খুব একটা অবকাশ নেই, তা রাষ্ট্রপতির আধা বর্জনের সংলাপেও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিএনপি, সিপিবি, বাসদ ইসলামী আন্দোলনের মতো যে দলগুলো সংলাপে অংশ নিচ্ছে না, তারা বলেছে, ২০১৬ সালের সংলাপে তারা যেসব দাবি সুপারিশ জানিয়ে এসেছে, সেগুলো পূরণ না হওয়ায় তাদের নতুন কিছু বলার নেই এদের মধ্যে বিএনপি নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকেই প্রাধান্য দিচ্ছে বেশি সরকারবিরোধী এই দলগুলোর অবস্থানে কোনো চমক নেই

সরকারের সমর্থক, অর্থাৎ কথিত মহাজোটের অংশীদারদের কথায় অবশ্য চমক আছে যেমন সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দল বলেছে, ‘আইন ছাড়া গঠিত নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন জানিয়েছেন, তিনি রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন, ‘আমরা একটা কার্যক্ষম নির্বাচন কমিশন চাইতাঁরাও বারবার সংলাপে এসে একই কথা বলতে হয়েছে বলে তাদের অস্বস্তি বা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বোঝাই যায়, সরকারের শরিকেরাও বিশ্বাস করেন নির্বাচন কমিশন শুধু ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করছে

তাঁদের কথায় অন্য যে সত্যটি বেরিয়ে এসেছে, তা হলো কথিত সংলাপের মাধ্যমে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করে যে দুটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল, তারা সরকারের প্রতি পক্ষপাত করেছে নিরপেক্ষ স্বাধীন কমিশনের কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেনি অথচ ১৯৯০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কোনো ধরনের সার্চ কমিটি ছাড়াই যে চারটি কমিশন (আজিজ কমিশন ছাড়া) গঠিত হয়েছিল, তারা সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি সত্ত্বেও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পেরেছিলেন কেননা, ওই নির্বাচনগুলো দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কাজ করেছে এমনকি, আবু হেনা এম সাঈদের কমিশন যথাক্রমে খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার সরকার-মনোনীত হলেও দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমর্থনের কারণে তাঁরা স্বাধীনভাবে পক্ষপাতমুক্ত নির্বাচন করতে পেরেছেন  

 
সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই কমিশন গঠনের জন্য আইন তৈরির পক্ষে কথা বলেছেন সাংবিধানিক পদে আসীন ব্যক্তিদের নিয়ে অনুসন্ধান বা বাছাইপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিধান ওই আইনে যুক্ত করার প্রস্তাব  এসেছে যেসব সাংবিধানিক পদের কথা বলা হয়েছে, তার কোনোটিই যে দলীয়করণ থেকে রেহাই পেয়েছে, এমনটি দাবি করা যাবে না এমনকি ওই কমিটিতে বিরোধী দলের নেতার অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবও এখন বিতর্কের জন্ম দিতে বাধ্য কেননা, বর্তমান সংসদীয় বিরোধী দল গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে এবং প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তেই তারা সরকারের অংশ না হয়ে বিরোধী দলের আসনে আসীন সরকার যদি তড়িঘড়ি করে এমন কোনো আইন করে, যাতে সরকারের আসল প্রতিপক্ষ বিএনপির মতপ্রকাশের কোনো সুযোগই থাকবে না, তাহলে সেই বাছাই বা নিয়োগ গ্রহণযোগ্য হবে কীভাবে?

 
কমিশন গঠনের জন্য আইন করার জন্য পর্যাপ্ত সময় এখন নেই বলে মন্তব্য করার সময় গত রোববার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘এই আইনটা এমন একটা আইন হওয়া উচিত, যেটা গ্রহণযোগ্য হবে সবার কাছে শুধু এক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে তো এটা সর্বজনীন আইন হলো না’ (সংলাপ শেষে রাষ্ট্রপতির পদক্ষেপ দেখার জন্য অপেক্ষা করতে বললেন আইনমন্ত্রী, জানুয়ারি, প্রথম আলো অনলাইন) আমরাও চাই এক দলের জন্য যেন আইন না হয়, এক দলের জন্য যেন নির্বাচন কমিশন না হয়, নির্বাচনও যেন এক দলের জন্য না হয় উপলব্ধিটা অবশ্য কয়েক বছর আগে হলে ভালো হতো

 
নির্বাচন কমিশন গঠনে আইনের প্রয়োজন যতটা, তার চেয়ে সব পক্ষের আস্থা কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয় নির্বাচন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের গঠন নিয়োগ বিষয়ে কমনওয়েলথ ইলেকটোরাল নেটওয়ার্ক ওয়ার্কিং গ্রুপের পরামর্শ এখানে উদ্ধৃত করা যায় তাদের কথায়: নির্বাচন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান শুধু তাদের নিয়েই গঠিত হওয়া উচিত, যাদের প্রতি পুরো সমাজের আস্থা আছে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে তার জন্য তাদের রাজনৈতিক দল থেকে আসা আবশ্যক নয়, স্বার্থান্ধ দলীয় স্বার্থ থেকে প্রক্রিয়াটিকে যথাসম্ভব মুক্ত রাখা প্রয়োজন দলীয় স্বার্থ থেকে মুক্ত প্রক্রিয়ার জন্যই প্রয়োজন বৃহত্তর রাজনৈতিক সমঝোতা, যা অর্জনের কোনো আলামত এখনো দেখা যাচ্ছে না

(৬ জানুয়ারি, ২০২২-এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...