সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

লবিং কখন দেশদ্রোহ, আর কখন নয়?

 ৩০ জানুয়ারি সমকাল-এ `সরকারের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করেছে বিএনপিঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রী` শিরোনামে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে বিএনপি লবিস্ট নিয়োগে ৪০ লাখ ডলারের বেশি খরচ করেছে। পত্রিকান্তরে অবশ্য খরচটা বিএনপি-জামাতের বলে তাঁকে উদধৃত করা হয়েছে। তাঁর কথায়, নিজের দেশের সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য বিরোধীদলের বিদেশে লবিস্ট নিয়োগের ঘটনা নজিরবিহীন। একই দিনে একই কাগজে `চট্টগ্রামে হাছান মাহমুদঃ দেশদ্রোহ করেছেন বিএনপি নেতারা` শিরোনামের আরেকটি খবরে বলা হয়েছে, তথ্যমন্ত্রী বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, দেশের রপ্তানি বাণিজ্য ধ্বংস করতে বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে চিঠি দেওয়া ও লবিস্ট নিয়োগ করা দেশদ্রোহী কাজ। 


এর আগে, ২৬ জানুয়ারি, সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, 'বিএনপি ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৪টি এবং ২০১৯ সালে ১টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপি ৩টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে।' জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ওয়েব সাইটে সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ৩০০ বিধিতে মন্ত্রীদের বিবৃতি দেওয়ার যে হালনাগাদ  বিধান আছে, তাতে `জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে মন্ত্রী বিবৃতি প্রদান করিতে পারেন` উল্লেখ করে বলা হয়েছে বিবৃতি প্রদানের সময়ে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা যাবে না। বিবৃতিতে পরিপূর্ণ তথ্য প্রদান বা বস্তুনিষ্ঠ, অর্থাৎ সত্য হতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। কিম্বা, অনিচ্ছাকৃত ভুল হলে প্রথম সুযোগেই তা সংশোধনের কথাও ওই বিধিতে নেই। ওয়েস্টমিন্সটারে অবশ্য পার্লামেন্টে সত্য বলার বাধ্যবাধকতা আছে এবং সংসদকে অসত্য তথ্য দেওয়া বা বিভ্রান্ত করার কারণে পদত্যাগের রীতি চালু আছে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের গদি যে টলমল করছে, তার কারণ কিন্তু তিনি যে শুধু নিজের করা আইন মানেননি, তা নয়, পার্লামেন্টে সঠিক তথ্য না দেওয়ার অভিযোগই গুরুতর হয়ে উঠেছে। 


আমরা বিশ্বাস করতে চাই, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে সঠিক তথ্যই দিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের লবিস্ট নিয়োগের বিবরণ না প্রকাশ করায় বলতেই হয় তিনি পূর্ণাংগ তথ্য দেননি, খন্ডিত তথ্য দিয়েছেন। বিএনপি এবং জামাতকে  একসঙ্গে জুড়ে দেওয়ার কারণেও কিছুটা ধূম্রজাল তৈরি হয়। দল হিসাবে জামাতে ইসলামীর যেহেতু একটা আলাদা সত্তা আছে, সেহেতু তাদের কৃতকর্মের দায় তো তাদেরই। সেগুলোর দায় কি বিএনপির ওপর বর্তায়? সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ২৯৭ ধারা বলছে, `মন্ত্রীরা কোনো চিঠি অথবা কোনো রাষ্ট্রীয় কাগজপত্র হইতে উদ্ধৃতি দিলে, তা যদি সংসদে পেশ না করা হইয়া থাকে, তাহলে তাঁহাকে ওই সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংসদ-টেবিলে উপস্থাপন করিতে হইবে`। এর মানে হচ্ছে, নথিগুলো সাংসদদের দেখার ব্যবস্থা করা, যাতে করে তাঁরা সেগুলো নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পান। প্রথম আলোর সংসদ প্রতিবেদক সাংসদদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন যে এক্ষেত্রে তা হয়নি। 


নথিগুলো কেন জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে? এমন প্রশ্ন নিশ্চয়ই কেউ করতে পারেন। উত্তরটা হচ্ছে, লবিস্টরা যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী সেখানকার বিচার দপ্তরে ( জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট) নিয়মিত যে হিসাব পেশ করেন এবং তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়, সেখানে প্রকাশিত হিসাবের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংসদে দেওয়া হিসাব মিলছে না। সংসদে তাঁর দেওয়া তথ্য হচ্ছে, 'বিএনপি ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৪টি এবং ২০১৯ সালে ১টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপি ৩টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে।' তিনি বলেছেন, '২০১৪ সালে জামায়াত ১টি ফার্ম নিয়োগ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য। এজন্য তারা দেড় লাখ ডলার দেয়। বিচার বন্ধে তারা আরেকটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। আর যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য পিস অ্যান্ড জাস্টিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৩২ হাজার ডলার দিয়ে নিয়োগ করে। বিএনপি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২৭ লাখ ডলার, প্রতি মাসে রিটেইনার ফি ১ লাখ ২০ হাজার ডলার ব্যয় করেছে।'


বিএনপির সঙ্গে যে ক`টি লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের যোগসূত্রের কথা যুক্তরাষ্ট্রের বিচার দপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো হচ্ছেঃ ব্লু স্টার স্ট্রাটেজিস এলএলসি, রাস্কি পার্টনার্স, একিন গাম্প স্ট্রস হাউয়ার এন্ড ফেল্ড এলএলপি, পিলসব্যারি উইথ্রপ শ পিটম্যান এলএলপি এবং করভিস কমিউনিকেশনস। এগুলোর মধ্যে একিন গাম্প স্ট্রস হাউয়ার এন্ড ফেল্ড এলএলপি বিএনপিকে তাদের পক্ষে কাজ করার প্রস্তাব দিলেও শেষপর্যন্ত কোনো চুক্তি হয়নি। করভিস কমিউনিকেশনস একবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বিতরণের কাজ করলেও কোনো আর্থিক লেনদেনের ঘোষণা দেয় নি, যা থেকে ধারণা হয়, তাদের সঙ্গেও দলটির কোনো চুক্তি হয় নি। পিলসব্যারি উইথ্রপ শ পিট্ম্যান এলএলপিই হচ্ছে দলটির প্রথম লবিস্ট, যারা কাজ করেছে ২০০৭ সালে এবং তার জন্য তারা পেয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ডলার। চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুন্রুজ্জীবন এবং নির্বাচন ত্বরান্বিত করা। বাকি দুটি - ব্লু স্টার স্ট্রাটেজিস এলএলসি ও রাস্কি পার্টনার্স বিএনপির জন্য কাজ করেছে ২০১৮-১৯ সালে এবং তার জন্য বিএনপির কাছ থেকে ব্লু স্টার ২ লাখ ৩৯ হাজার ২৪৯ ডলার দাবি করেছে, যার মধ্যে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯০ ডলার তারা পেয়েছে। একই সময়ে রাস্কি পার্টনার্স পেয়েছে ৮৬ হাজার ৬২৭ ডলার। তবে রাস্কি ছিল ব্লু স্টারের ঠিকাদার এবং তাদের কাছ থেকেই তারা তাদের ফি গ্রহণ করেছে বলে ঘোষণা দেওয়ায় বোঝা যায় না যে সেই অর্থ কি বিএনপি আলাদাভাবে পরিশোধ করেছে, নাকি তা ব্লু স্টারকে দেওয়া অর্থের অংশ। সবার জন্য উন্মুক্ত কাগজপত্রে অংকটি পাঁচ লাখও হয়না। সুতরাং, সরকারের উচিৎ হবে অবিলম্বে সব কাগজপত্র প্রকাশ করা। 


ওই একই ওয়েবসাইটে আওয়ামী লীগ নাম দিয়ে অনুসন্ধান করলে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির দুবছর আগেই তারা লবিস্ট নিয়োগ করেছে। অ্যালক্যাড অ্যান্ড ফে নামের লবিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রথম চুক্তিটি করা হয় ২০০৪ সালের ২৯ নভেম্বর, যা কার্যকর হয় ১ জানুয়ারি ২০০৫ থাকে। প্রকাশিত চুক্তির শর্তে দেখা যায়, তাদের মাসিক ফি ছিল ৩০ হাজার ডলার (২৪ লাখ টাকা) করে। ফি-এর বাইরে অন্যান্য খরচ, যেমন গণমাধ্যম বা গবেষকদের সফরের খরচ আলাদাভাবে পরিশোধের কথাও চুক্তিতে বলা আছে। কিন্তু তার হিসাব প্রকাশ করা হয়নি। ২০০৫, ২০০৬ ও ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগ লবিংয়ের জন্য খরচ করেছে অন্তত নয় লাখ ডলার। সেই অর্থের উৎস সম্পর্কেও নিশ্চয়ই আমাদের জানার অধিকার রয়েছে? নাকি দুই দলের জন্য আইন আলাদা?  

 

ওয়েব সাইটে প্রকাশিত নথি বলছে, আওয়ামী লীগকে প্রস্তাবটি দিয়েছিল অ্যালক্যাড অ্যান্ড ফে এবং সেই প্রস্তাবে ছিল বিএনপির সরকার কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠছে এবং বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদীদের উপস্থিতিকে সরকার উৎসাহিত করছে, যাদের আল-কায়েদার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও তাদের প্রতি তারা সহানুভূতিশীল। বাংলাদেশের এ পরিস্থিতি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিক ও নীতিনির্ধারকদের সচেতন করা এবং সম্ভাব্য বিপজ্জনক ঘটনাপ্রবাহ ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব খাটানোর জন্য কাজ করার কথা ছিল সেই প্রস্তাবে। নির্বাহী বিভাগে হোয়াইট হাউজ, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা দপ্তর, কংগ্রেস,গণমাধ্যম, থিংকট্যাংক, বণিকসভা ও বাংলাদেশ-আমেরিকান সামাজিক সংগঠনগুলোতে এসব লক্ষ্য অর্জনে কাজ করার অঙ্গীকার করে অ্যালক্যাড অ্যান্ড ফে। মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও নির্বাচন ত্বরান্বিত করার সামগ্রিক লক্ষ্যের কথাই বিচার দপ্তরের নির্ধারিত ফরমে বলা আছে। 

  

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদের বিবৃতিতে বলেছেন, `'দুঃখের বিষয় হচ্ছে লবিস্টরা এমন সব বক্তব্য তুলে ধরেছেন, যেগুলো দেশের মানুষ জানলে ধিক্কার দেবে। বিএনপি লবিস্টের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে আমেরিকাকে বাংলাদেশে সাহায্য সহায়তা বন্ধ করে দিতে বলেছিল। উন্নয়ন যেন ব্যাহত হয় সেজন্য তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বলেছে।'` যুক্তরাষ্ট্রের বিচার দপ্তরের সাইটে যেসব চিঠিপত্র প্রকাশিত হয়েছে, তাতে অনেক ফারাক দেখা যায়। তাই, আমরা চাই মন্ত্রীর বক্তব্যের সমর্থনে সরকারের কাছে কী নথি আছে, তা প্রকাশ করা হোক। 


আমরা দেখছি, দুই দলই একইধরণের লবিং করিয়েছে, কিন্তু রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এখন শুধু একটি দলের।  পয়সা খরচ করে লবিং করা ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং অন্য অনেক দল তাদের নীতি-আদর্শের পক্ষে বিদেশিদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা অনেকদিন ধরেই করে আসছে, কেউ প্রকাশ্যে, কেউ অপ্রকাশ্যে। বিদেশিরা সমর্থন দিলে সেটাকে বড় করে প্রচারও নতুন কিছু নয়। কিন্তু গোপনীয়তা ও সত্য অস্বীকার বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। কথাটি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। 


দলের বাইরে সরকারের লবিংয়ের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। লবিংয়ের জন্য সরকার করদাতাদের টাকা যথেচ্ছ খরচ করতে পারে না, যাকে মন্ত্রীরা পি আর ফার্ম বলে অভিহিত করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সাইটের তথ্য দেখে মনে হয়, দূতাবাসের কর্তাদের লেখা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আর নানাধরণের প্রচারপত্র বিতরণই ছিল বিজিআর এলএলসির প্রধান কাজ। এই কাজের জন্য তো সেখানে ওয়াশিংটনে প্রেস মিনিস্টার ও নিউইয়র্কে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আছেন, যাঁদের বেতন-ভাতার মোট পরিমাণ লবিস্ট প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া অর্থের সমান বা কাছাকাছি হবে। তাহলে একই কাজের জন্য দু`জায়গায় পয়সা ঢালা কেন? ওইসব সংবাদ বিজ্ঞপ্তির কয়টি সেখানকার গণমাধ্যম প্রকাশ করেছে? এগুলোর নিরীক্ষা এবং অপচয় বন্ধ ও তার জন্য জবাবদিহি প্রয়োজন।  


(২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২-এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...