সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কম্বোডিয়ার রাজনীতি ও আমাদের নির্বাচন

বেশ কিছুদিন ধরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা খুব জোর দিয়ে বলতে শুরু করেছেন বিরোধীদল বিএনপি নির্বাচনে ভয় পায়। এ জন্য তথাকথিত আন্দোলনের নামে তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভন্ডুল করার পাঁয়তারা করছে। গত ২৬ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এক বিবৃতিতে জানান, বিগত দিনে নির্বাচন ও এর প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই ছিল বিএনপির একমাত্র রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা। এ জন্য তারা তাদের সন্ত্রাসী ও ক্যাডার বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ বিনষ্ট করার অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।

তাঁর ওই বিবৃতির সপ্তাহ দুয়েক পর ১০ আগস্ট বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে যুবলীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। বিএনপির নিবন্ধন বাতিল ও দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়েও একই ধরনের স্মারকলিপি তারা দিয়েছে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। তাদের দাবির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। সহিংসতা করে বিদেশিদের বার্তা দিতে চায়, বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্র। 


আপাত:দৃশ্যে বিরোধী দল বিএনপি বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলে মনে হয় না। সংবাদমাধ্যমও বিষয়টিকে হয়তো নিছক রাজনৈতিক বক্তব্য বিবেচনা করছে বলে তা নিয়ে খুব একটা বিতর্ক হচ্ছে না। 


তবে এগুলোর পাশাপাশি ঘটতে থাকা আরও কিছু ঘটনা ও দায়িত্বশীলদের বক্তব্য মিলিয়ে দেখলে অবশ্য এসব ঘটনাকে অশনি সংকেত বা লক্ষণ বলেই মানতে হয়। প্রথমেই যেটি নজরে আসে তা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে বলে সরকারের একটি অনমনীয় অবস্থান ঘোষণা এবং সেই লক্ষ্যে একতরফাভাবে নির্বাচনী প্রচারকাজের গতি বাড়িয়ে দেওয়া। সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী, দলীয় নেতা–কর্মী, বণিক সভাসহ সরকারের ধধারাবাহিকতায় যাদের স্বার্থ আছে, তাদের সবাইকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে যে কো নির্বাচনে এল বা এল না কিম্বা বিদেশিরা কী বলল, তাতে কান দেওয়ার দরকার নেই, নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়ে সংবিধানের আলোকে হবে এবং ক্ষমতায় পালাবদল ঘটবে না।  


মনে হচ্ছে, সরকারের লক্ষ্য নির্বাচনকে আপাতদৃশ্যে অংশগ্রহণমূলক করা। উকিল আব্দুস সাত্তারের মতো বিএনপির রাজনীতি করে পরিচিতি পাওয়া কিছু লোক নির্বাচনে অংশ নিলে সেই উদ্দেশ্য কিছুটা সফলও হতে পারে, এমন ভাবনা অনেকের মধ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনও বেশ সহায়কের ভূমিকা পালন করে চলেছে। হঠাৎ করে গজিয়ে ওঠা দুটি নতুন দল – বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) – কমিশনের নিবন্ধন পেয়ে গেল। তারা যে নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করেনি, সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে তার প্রমাণ মিললেও কমিশন তা গ্রাহ্য করেনি। বিএনএম এখন বিএনপির উকিল সাত্তারদের দলে ভেড়াতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বলে পত্রিকান্তরে খবর বেরিয়েছে। 


শুধু দলের নিবন্ধনের বেলায় যে নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে তা নয়, পর্যবক্ষকদের বেলাতেও একইরকম ভূমিকা তাঁদের। প্রথমে তাঁরা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি গোষ্ঠীর আমন্ত্রণে হাজির হওয়া কয়েকজন কথিত বিদেশি পর্যবেক্ষকের সঙ্গে ঘটা করে বৈঠক করেছে। তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষে আগাম সাফাই দিয়েও গেছেন। এরপর কমিশন দেশি পর্যবেক্ষকদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতেও সেই রাজনৈতিক দূষণের প্রমাণ হাজির করেছে সংবাদমাধ্যম। 


আওয়ামী লীগ এবং তার জোট শরিকদের কেউ কেউ খোলামেলা বলতে শুরু করেছেন যে বিএনপি–জামায়াতকে বাংলাদেশে আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। প্রথম আলো এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে ওয়ার্কাস পার্টির প্রধান রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ”আমি বলেছি, বিএনপির হাতে ক্ষমতা গেলে দেশটা কোথায় যাবে, সেটা বিবেচনা করতে হবে। – – –তাদের অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মানুষের ধারণা রয়েছে। সেদিক থেকে জনগণই বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না।” দুইভাবে এটি সম্ভব হতে পারে। প্রথমত, চাপ দিয়ে অথবা কিছু ছাড় দিয়ে ২০১৮ সালের মতো বির্তকিত ভোট করা। দ্বিতীয়ত, এমন পরিস্থিতি তৈরি করা যাতে বিএনপি নির্বাচনে না আসে বা অযোগ্য ঘোষিত হয় এবং অন্যদের নিয়ে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখানো যায়। যদিও বাস্তবতা হচ্ছে বিএনপি ছাড়া আওয়ামী লীগের আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।


সংবিধানের দোহাই দিয়ে যেনতেন প্রকারে একটি নির্বাচন করলে তার গ্রহণযোগ্যতার কী হবে, সেই প্রশ্নেরও একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন মেনন। তিনি বলেছেন, বিএনপি না এলেও সরকার নির্বাচন করবে। তাতে হয়তো প্রথম কিছুদিন সমালোচনা হবে। এ ছাড়া কিছু নিষেধাজ্ঞার বিষয়ও আসতে পারে। তবে বাংলাদেশের যেমন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজন, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রেরও বাংলাদেশকে প্রয়োজন। ফলে নির্বাচনের পর কিছুদিন সমালোচনা বা আলোচনা চললেও সেটা সরকারকে কোনো সমস্যা করবে না। আর বৈধতার প্রশ্ন তোলারও কোনো সুযোগ থাকবে না। কারণ, নিয়ম অনুযায়ীই নির্বাচন হবে।


এসব ঘটনা ও বক্তব্যের সঙ্গে দেশের নিবর্তনমূলক আইন, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার, ভিন্নমত দমনের বিভিন্ন পদক্ষেপ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন সংগঠনের কাজের সুযোগ সংকোচন, প্রশাসন, আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ও বিচারবিভাগের ওপর দলীয় প্রভাব এগুলো মেলালে স্পষ্টত:ই কম্বোডিয়ার দৃষ্টান্ত সামনে চলে আসে। মাত্র কিছুদিন আগে কম্বোডিয়ায় বিরোধী দলহীন নির্বাচন হয়ে গেল, যে নির্বাচনের আগের ঘটনাক্রম সম্পর্কে সবাই খুব বেশি কিছু জানি না। নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র দেশটির ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিক, নির্বাচন কমিশন, বিচারক ও আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কিছু লোকজনের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার খবরটি অবশ্য বেশ ফলাও করে আমাদের সংবাদ মাধ্যম প্রচার করেছে।  


কম্বোডিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচন হয় ঠিক আমাদের নির্বাচনের আগে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে হুনসেনের কম্বোডিয়া পিপলস পার্টির (সিপিপি) ৬৮ আসনের বিপরীতে ৫৫টি আসন পেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে আর্বিভূত হয় বিরোধী দল কম্বোডিয়া ন্যাশনাল রেস্কিউ পার্টি( সিএনআরপি)। এর আগের ইতিহাসও খুব সুখকর নয়। তার আগের দুই দশকেও হুনসেন ক্ষমতা সংহত করায় মনোযোগী ছিলেন এবং তাঁর বিরোধীরা খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারে নি। ২০১৩ সালের সাফল্য তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। সিপিপি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে উচ্চশিক্ষিত পেশাজীবীদের নিয়োগ দেয় যাতে দৃশ্যমান জনমুখী কিছু প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। সব সরকারি কর্মচারিদের বেতন বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে লাভজনক খনিজ আহরণ ও অন্যান্য ব্যবসায় অনুগত নিকটজনদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দূর্নীতির সূচকে দেশটির অবস্থান দাঁড়ায় ১৭৬টি দেশর মধ্য ১৫৬ তম। 


পাশাপাশি বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে শুরু হয় নানা রকম হয়রানি। ২০১৫ সালে দলটির নেতা স্যাম রেইনজিকে এক মানহানির মামলায় দুই বছরের কারাদন্ড দেওয়া হলে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। তারপর দলকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে – এমন আশঙ্কা থেকে ২০১৭ সালে তিনি দলীয় প্রধানের পদ ছেড়ে দেন। কিন্তু, তাতেও রক্ষা হয়নি। হুনসেন আইন করেন দলীয় নেতৃত্ব কোনো অপরাধে দন্ডিত হলে সেই দল নিষিদ্ধ হবে। ফলে ২০১৮ সালে নির্বাচন হয় বিরোধী দল ছাড়া। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে সরে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রে তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি ছিল, যতটা সম্ভব অর্ন্তমূখী থাকা এবং বিদেশে গণতন্ত্রের জন্য সমর্থনে নিরাগ্রহ। তাছাড়া কম্বোডিয়ার সঙ্গে  বিশেষ সম্পর্কের সূত্রে চীনের সমর্থনের কারণে তখন তাঁকে বড় ধরনের প্রতিকূলতার মুখে পড়তে হয়নি। লক্ষ্যণিয় হচ্ছে দক্ষিণ–ফুর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ানের সদস্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে চীনের সীমানা বিরোধ আলোচনায় কম্বোডিয়া সব সময়ই বাধা হয়ে আছে।


এবারও একই কৌশল নেন হুনসেন। সিএনআরপি অনেকটা নতুনরুপে সংগঠিত হয় ক্যান্ডেললাইট পার্টি নামে। হয়ে ওঠে  হুনসেনের সিএনপির প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু কাগজপত্রের মূল কপির বদলে ফটোকপি জমা দেওয়ার কারণ দেখিয়ে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। দলটি সাংবিধানিক আদালতে গেলে সেই আদালতও কমিশনের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। সিএনআরপির সহপ্রতিষ্ঠাতা কিম সখাকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ২৭ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। আরেক সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা সু সচুয়া দেশান্তরি হতে বাধ্য হন।  কম্বোডিয়ার সঙ্গে আমাদের নির্বাচনী রাজনীতির মিলগুলো উপেক্ষা করি কীভাবে? 


(১৭ আগস্ট, ২০২৩–এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...