সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রতিদান নয়, পাওনাটা তো চাইতে হবে


আমাদের সবচেয়ে বড় ও ঘনিষ্ঠতম প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে অনেকদিন ধরেই যে প্রশ্নটি অনেকের মধ্যে ঘুরেফিরে আলোচিত হয়ে আসছে তার একটা উত্তর মিলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সাম্প্রতিকতম সংবাদ সম্মেলনে এর উত্তর দিয়েছেন। একটি অকপট জবাব দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। তিনি বলেছেন আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, সেটা ভারত সারা জীবন মনে রাখবে। অতীতের গুলি, বোমাবাজি আমরা কিন্তু তাদের শান্তি ফিরিয়ে দিযেছি। এটা তাদের মনে রাখতে হবে। আমরা কোনো প্রতিদান চাই না। তবে হ্যাঁ, স্বাধীনতাযুদ্ধে সহায়তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। ভারতের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিদান চেয়েছেন বলে পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে তিনি কী আশ্বাস পেয়েছেন বা কোনো প্রতিদান চেয়েছেন কিনা। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমি কোনো প্রতিদান চাই না। প্রতিদানের কী আছে এখানে? কারও কাছে চাওয়ার অভ্যাস আমার একটু কম, দেওয়ার অভ্যাস বেশি। বাংলাদেশ যে প্রতিবেশির প্রতি বেশি উদার সেটি তাঁর কথায় স্পষ্ট।
ঠিক বছরখানেক আগে প্রধানমন্ত্রী ভারতে সরকারী সফরে গিয়েছিলেন এবং তখন দিল্লিতে দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আর্ন্তজাতিক পরিসরে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার অনেকগুলো চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছিল। অভিন্ন সংস্কৃতির অধিকারী পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রীর অনড় অবস্থানের কারণে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আপাত: বিষফোঁড়া তিস্তার পানি ভাগাভাগির বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই সেসময়ে আলোচনায় ছিল। প্রশ্ন উঠেছিল প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রাপ্তি কি? সফর শেষ হওয়ার আগে দিল্লিতে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন , দিদিকি সাথ বাত হুয়ি। পানি মাঙ্গা লেকিন ইলেকট্রিসিটি তো মিলা। কুছ তো মিল গ্যায়া। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন যে ৬২ দফার যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছিল তাতে চুক্তি ও সম্মত স্মারকের সংখ্যা ছিল ২২টি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের আমলা সম্ভবত স্বভাবজনিত কারণে মুখ খোলেন নি এবং যৌথ ‍বিবৃতিটিও একইসঙ্গে প্রকাশের কোনো উদ্যোগই নেন নি। যেকোনো সহযোগিতায় যেহেতু উভয়পক্ষের কিছু না কিছু প্রত্যাশা থাকে তাই বাংলাদেশের প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তি মেলাতে গিয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছিল আমরা কি তুলনামূলকভাবে ভারতকে অনেক বেশি সুবিধা দিচ্ছি ?
প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরটি কোনো আনুষ্ঠানিক সরকারী সফর ছিল না। বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন এবং কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সম্মাননা ডিলিট উপাধি গ্রহণ। বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ তার নিজস্ব সম্পদ দিয়ে যে ভবন তৈরি করে দিয়েছে সেটির উদ্বোধনের হিসাবে যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির সমাবর্তনের দিন ঠিক করা হয়েছিল সেহেতু তার আচার্য্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং বৈঠকও অনিবার্য্য হয়ে পড়ে। সেই বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে কোনো খবর না বেরুলেও পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকা আনন্দবাজারে যে ভাষ্য প্রকাশিত হয় তা আমাদের কাছে মোটেও প্রত্যাশিত ছিল না। সুতরাং, আমরা অপেক্ষায় ছিলাম প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেন কিনা ।
পত্রিকাটি লিখেছে ‘‘শুক্রবার বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের পরে সেখানেই মোদীর সঙ্গে বৈঠকে হাসিনা জানিয়েছেন তাঁর সরকার উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের দেশছাড়া করেছে, ট্রানজিট দিয়েছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বরাবর দিল্লির পাশে থেকেছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের বছরে এ বার তাই ভারতের সহযোগিতা চাই।‘‘ পত্রিকাটি আরও লিখেছে ‘‘তাঁর দফতরের এক সূত্র জানান, হাসিনার বার্তা মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে সরাতে, বাংলাদেশকে ফের পাকিস্তান বানানোর চক্রান্ত চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে পশ্চিমে আর পূবে দুদিকেই পাকিস্তান নিয়ে ঘর করতে হবে ভারতকে। তাই ভারতের উচিত বাংলাদেশের বর্তমান সরকারই যাতে ক্ষমতায় ফেরে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা।‘‘  পত্রিকাটি যে বৈঠকে আগামী নির্বাচনে ভারতের সহায়তা চাওয়ার কথা লিখেছে সেই বৈঠকের আগেই প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশ ভবন এর অনুষ্ঠানে স্পষ্ট করে বলেছেন যে ২০৪১ সালের মধ্যে নিজেদেরকে উন্নত দেশে উত্তরণ ঘটাতে শেখ হাসিনার স্বপ্ন বা দৃশ্যকল্প (ভিশন) বাস্তবায়নে ভারত তাঁকে র্পূণ সমর্থন দেবে।  ভিন্নসূত্রের খবর যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে সেই বিবেচনায় নিজেদের কথাগুলো একটু আগে থেকেই খোলাসা করার অভ্যাস আমাদের আমলাদের কবে হবে জানি না।
প্রধানমন্ত্রীর সদ্যসমাপ্ত ভারত সফর ঘিরে দুই দেশের সংবাদ মাধ্যমের মধ্যে ফারাকটা খুবই স্পষ্ট। এরকম একটি গুরুত্বর্পূণ দৃষ্টান্ত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা সম্পর্কিত। টাইমস অব ইন্ডিয়া ২৭ মে জানায় যে আসানসোলের কাজী নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরে বিমানের নিরাপদ অবতরণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সদ্য চালু করা ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম ( আইএলএস)এর কার্যকারিতার পরীক্ষা সফল হয় নি। বিমানবন্দরে অবতরণের পথ নির্দেশ করার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু, আইএলএস এর যর্থাথতা প্রমাণিত না হলেও প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ সেখানে অবতরণ করে। প্রশ্ন উঠতে পারে প্রধানমন্ত্রীর জন্য সেখানে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা  (যেমন হেলিকপ্টার) সম্ভব ছিল কিনা।
ওই একই পত্রিকা অন্য আরেকটি প্রতিবেদনে জানায় যে শেষমুহুর্তে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানসূচিতে পরিবর্তন আনা হয় এবং মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা বাতিল করেছেন। তারা দুটি আমন্ত্রণপত্রের ছবিও ছাপায়। কোলকাতার একটি টিভি চ্যানেল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে একজন বিদেশী সরকারপ্রধান হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতি সত্ত্বেও তাঁর কোনো বক্তৃতা না করার বিষয়টিকে অস্বাভাবিক হিসাবে চিহ্নিত করে। সরকারপ্রধানের বেসরকারী সফরের এসব অসঙ্গতির কথা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে জায়গা পেলেও বাংলাদেশে তা খবর হয় নি কেন? খবরগুলো ভুল হলে বাংলাদেশের তরফ থেকে তা সংশোধনের কোনো উদ্যোগ কেন চোখে পড়ছে না ? সরকারের যেসব কর্তাব্যাক্তিরা এসব  দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন তাদের জবাবদিহিতার প্রশ্ন আড়ালে থাকলে অনেকেই হয়তো রেহাই পান, কিন্তু তা দেশের অবস্থানকে কোনোভাবেই উজ্জল করে না।
ফিরে আসি দ্বিপক্ষীয় লেনদেনের কথায়। ২০১৭র এপ্রিলের সফরের সময়ে উভয়দেশের মধ্যে বাইশটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হলেও দুটি বিষয় সমঝোতা সম্ভব হয় নি বলে আমরা সবাই জানি। একটি ছিল তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগির প্রশ্ন; আর, অপরটি দ্বিপক্ষীয় সামরিক সহযোগিতা। সামরিকখাতে সহযোগিতার অংশ হিসাবে ভারত পঞ্চাশ কোটি ডলারের ঋণ দিতে চেয়েছিল যার আওতায় বাংলাদেশ ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করবে এবং উভয় দেশের সামরিকবাহিনীর মধ্যে প্রশিক্ষণ ও সফর বিনিময় বাড়ানো হবে। সামরিক সহযোগিতার চুক্তিটি এক বছরের মাথায় ঠিকই সই হয়েছে। বাংলাদেশ চাহিদাপত্র দিলে ভারত কী কী সরবরাহ করতে পারে তা ঠিক হবে এবং সেগুলো কেনার জন্যই এই ঋণের দুই-তৃতীয়াংশ খরচ হবে। বাকি এক তৃতীয়াংশ অন্য দেশ থেকে সামরিক ক্রয়ে ব্যয় করার সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশকে সেজন্য ভারতের সম্মতি নিতে হবে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হওয়ার এটি হচ্ছে সাম্প্রতিকতম আরেক নজির।
মনে রাখার মত সাহায্য ও সুযোগ-সুবিধা প্রতিবেশিকে দিতে পারার নিশ্চয়ই একটা আলাদা অনুভূতি আছে। কিন্তু, প্রতিবেশি যদি তার মর্যাদা না বোঝে তাহলে করণীয় কি? আমরা আমাদের দরোজা খুলে দিয়েছি, কিন্তু পাল্টা উঠেছে কাঁটাতারের বেড়া। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে বাংলাভাষীদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার ফন্দি-ফিকির খোঁজাই হচ্ছে এখন সেসব রাজ্যের রাজনীতির মূল বিষয়। গঙ্গায় চুক্তি করেও ন্যায্য পাওনাটা মেলেনি। তিস্তার আশ্বাস ঝুলে আছে বছরের পর বছর। আঞ্চলিক ও আর্ন্তজাতিক রাজনীতিতে তাঁদের প্রতি আমাদের সমর্থন অকুন্ঠ হলেও, সমসাময়িককালের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্য্যয় রোহিঙ্গা সংকটে সহানুভূতির প্রত্যাশাও মেটেনি। বাণিজ্যের সমস্যা, এক দেশের নাগরিকের অন্যদেশে চাকরির ক্ষেত্রে বিপরীতধর্মী চিত্র, মাদকপাচারের মত বিষয়গুলোর কথা না হয় আলোচনায় নাই তুললাম।
ভারতীয় পত্রিকায় যে প্রতিদানের কথা বলা হয়েছে তাতে আছে বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর ইঙ্গিত। সেই প্রতিদান বাংলাদেশের কারোরই কাম্য নয়। কিন্তু, প্রতিবেশির ন্যায্য পাওনার বিষয়ে তো কোনো অনুকম্পা অথবা মান-অভিমানের কিছু নেই। এসব পাওনা তো চাইতেই হবে এবং তা জোরালো গলায়। লেনদেনে একটা ভারসাম্য আমরা কেন চাইবো না?
(৩ জুন, ২০১৮র প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখকের কলাম।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...