সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই হবে কবে ?


বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়ে এত দিনের আলোচনা-বিতর্ক সবই যখন অর্থহীন হয়ে উঠছিলো তখন দূর্নীতি দমন কমিশনকে ধন্যবাদ যে তাঁরা বিষয়টিতে নতুন করে মনোযোগী হয়েছেন। কমিশনের আরও বেশি করে ধন্যবাদ প্রাপ্য যে তাঁরা বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়ে প্রচলিত ধারণার বাইরেও রাষ্ট্রের দূর্বলতার অন্য একটি দিক প্রকাশ করে দিয়েছেন। বিদেশে টাকা পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণে তাঁরা যদি রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে বেরুতে সক্ষম হন তাহলে নিশ্চয় তাঁরা আরও বেশি বাহবা পাবেন!
এত দিন আমরা জেনে এসেছি বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে দুই উপায়ে - আমদানী-রপ্তানির হিসাবে জালিয়াতি অর্থাৎ, আন্ডার ইনভয়েসিং কিম্বা ওভার ইনভয়েসিংয়ে, নয়তো হুন্ডির মাধ্যমে। কমিশন সম্প্রতি বিএনপির স্বেচচ্ছানির্বাসিত নেতা তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রীর ইংল্যান্ডের তিনটি ব্যাংক হিসাবের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ায় জানা গেল ব্যাংকিং লেনদেনের মাধ্যমে ব্যাক্তিগত হিসাবেও বিদেশে টাকা পাচার ঘটছে। কমিশন মামলাটি না করলে হয়তো জানাই যেতো না যে ব্যাংকিংখাতের গলদ আওয়ামী লীগ শাসনের ১০ বছরেও দূর হয় নি। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ব্যাংকিং মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাঠাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। এমনকি, বিদেশে চিকিৎসা বা ভ্রমণের প্রয়োজনে টাকা নেওয়ার জন্যও এই অনুমোদন প্রয়োজন হয়। ব্যাংকিংখাত নিয়ন্ত্রণকারীদের ওপর এখনও যে বিএনপির যথেষ্ট প্রভাব আছে দেশবাসীকে তা জানানো নিশ্চয়ই কমিশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে !
অবশ্য, বিএনপিনেতার যেসব ব্যাংক হিসাব জব্দের কথা বলা হচ্ছে তাতে টাকার পরিমাণ এতো কম দেখে প্রশ্ন উঠতে পারে যে ডিসেম্বরের নির্বাচনে কথিত মনোনয়ন বাণিজ্যের টাকা কি তাহলে দেশেই রয়ে গেছে? নাকি, মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগটার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিপ্রায়ও এক্ষেত্রে কাজ করেছে ?
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) গত ২৮ জানুয়ারি প্রকাশিত সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনে জানায় ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর আগে, ২০১৭ সালে তারা জানিয়েছিল যে ২০১৪ সালে পাচার হয়েছিল প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা।  সেবছরের ২ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের হিসাব দিয়ে তারা বলেছিল ওই এক দশকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি ডলার বা ৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা।

প্রশ্ন উঠতেই পারে দুর্নীতি দমন কমিশন এতোদিনেও এসব টাকার কোনো সন্ধান পেয়েছে কি ? না পেয়ে থাকলে কেন তা পাওয়া যায় নি ? আর, পাওয়া গেলে তার কতটা ফেরত আনা গেছে ? তবে, বিএনপি নেতার টাকার পরিমাণ যত অল্পই হোক না কেন, তা যদি পাচারকৃত হয়ে থাকে, তাহলে তা ফেরত আনার কৃতিত্বই বা কম কী ? বিএনপির রাজনৈতিক কারণে হয়রানির অভিযোগকে অসার প্রমাণের জন্য হলেও কমিশনের জন্য এই উদ্যোগে সফল হওয়া গুরুত্বর্পূণ। 

বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনায় কমিশনের রেকর্ড যে হতাশাজনক তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু, দেশের ভেতরেই বা তা কতটা সফল ? জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া সম্পদের বিবরণ নিয়ে গণমাধ্যমে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ হতে থাকায় যখন দেখা গেল সাংসদদের অনেকেরই অবিশ্বাস্য উন্নতি হয়েছে, তখন কমিশনের তরফে বলা হলো যে তাঁরা এগুলো যাচাই করে দেখবেন। এমনকি, অনেকটা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্তারাও আমাদের জানালেন যে প্রার্থীদের আয়করের নথিপত্র মিলিয়ে দেখা হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সরকারের অংশ হওয়ায় আগামী ৫ বছরে তাঁদের সেগুলো যাচাই করার কাজ শেষ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু, দূর্নীতি দমন কমিশন যেহেতু নিজেদের স্বাধীন হিসাবে দাবি করে থাকেন সেহেতু তাঁদের তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথচ, গত  সাড়ে ৩ মাসে তাঁরা বিএনপির দুএকজন নেতা এবং জাতীয় পার্টির একজন ছাড়া আর কারো কাছে আলাউদ্দিনের চেরাগ‘-এর উৎস জানতে চেয়েছেন বলে শোনা যায় নি।

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছেন বর্তমান সংসদে সরকারের প্রিয়মুখ সাবেক সেনাশাসক জেনারেল এরশাদ। তিনি তাঁর সব সম্পদ ট্রাস্ট করে দিয়েছেন বলে প্রকাশিত খবরের শিরোনাম পড়ে প্রথমে মনে হয়েছিল যে তিনি বোধহয় জনকল্যাণে সব সম্পদ দান করে পাপক্ষয়ের চেষ্টা করছেন। কিন্তু, বিবরণ পড়ে দেখা গেল ট্রাস্টের মূল উদ্দেশ্য তাঁর ছেলের ভবিষ্যতকে সুখকর করা। অন্যকিছু নয়। সেটা তিনি করতেই পারেন এবং পিতার সম্পদে ছেলের অধিকার কেউ অস্বীকার করতে পারেনা। কিন্তু, প্রশ্ন জাগে সম্পদের বিবরণ পড়ে। যেসব সম্পত্তি ট্রাস্টের নামে দান করা হয়েছে তার আনুমানিক মূল্য ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে - বারিধারায় প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসা, গুলশানের দুটি ফ্ল্যাট, বাংলামটরের দোকান, রংপুরের কোল্ড স্টোরেজ, পল্লী নিবাস, রংপুরে জাতীয় পার্টির কার্যালয়, ১০ কোটি টাকার ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিট  (ট্রাস্টে সব সম্পত্তি দান করলেন এরশাদ, ০৭ এপ্রিল ২০১৯ )। একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বলছে তিনি তাঁর স্ত্রীর কাছে রেখেছেন ২৬ কোটি ২০ লাখ ২৯ হাজার টাকা (২৬ কোটি টাকা রওশনের কাছে রেখেছেন এরশাদ, প্রথম আলো, ০১ ডিসেম্বর ২০১৮)। প্রশ্ন হচ্ছে তাঁর ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার আগের সম্পদ এবং পরে নির্বাচনগুলোর সময়ে দেওয়া হলফনামাগুলো কি কমিশন কখনো যাচাই করে দেখেছে ?

রাজনীতিকদের বাইরে অন্যান্যক্ষেত্রেও কমিশন তার কাজে কতটা স্বাধীন এবং কতটা আন্তরিক সেসব প্রশ্নে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় নজির হচ্ছে ব্যাংকিংখাতের বহুল আলোচিত কেলেংকারি ও দূর্নীতিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় ব্যর্থতা। সাবেক বেসিক ব্যাংকের আব্দুল হাই বাচ্চু কিম্বা ভূতর্পূব ফারমার্স ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের বিরুদ্ধে কমিশনের কার্যক্রম সহজে বিস্মৃত হওয়ার নয়।

দূর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য সাংবাদিকদের প্রতিবছর ঘটা করে পুরস্কার দেয়। তবে, গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে দূর্নীতির যেসব ঘটনা উঠে আসে সেগুলোর বিষয়ে যে খুব একটা কার্যকর পদক্ষেপ নেয় তা বোধহয় বলা চলে না। বাংলাদেশে সাংবাদিকতার দৈন্যদশার মধ্যেও মাঝে মাঝে ব্যাতিক্রমী এবং ভালো অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন হচ্ছে। এবছরের গোড়ার দিকে, পেশাগত প্রয়োজনে আমাকে প্রায় কুড়িটির মত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন মূল্যায়ন করতে হয়েছে। এগুলোর কয়েকটি ছিল টেলিভিশনের, আর কয়েকটি পত্রিকার। এসব প্রতিবেদন যে কতটা অস্বস্তিকর তা বোঝানো মুশকিল।
টিভি চ্যানেলগুলোর যেসব প্রতিবেদন আমি দেখেছি সেগুলোর মধ্যে মাছরাঙ্গার অনুসন্ধান শিরোনামের ৩টি পর্ব বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। এর দুটি হচ্ছে দুটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর এবং গৌরিসেন শিরোনামের তৃতীয়টি হচ্ছে কৃষি অধিদপ্তরের বরাদ্দের নয়-ছয় বিষয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় দুটির ওপর প্রতিবেদনে দেখা গেল বড়ধরণের এসব অনিয়মের কথা কর্তৃপক্ষ ভালোই জানেন। কিন্তু, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর ব্যাখ্যায় মনে হয় যে উপাচার্য হিসাবে রাষ্ট্রপতি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণ না করাই উপযুক্ত প্রতিকার। এগুলোর ক্ষেত্রে কমিশনের কোনো তদন্তের কথা জানা যায় না।
বড়ধরণের এসব দূর্নীতির বাইরেও মাঠপর্যায়ে ছোট আকারের দূর্নীতির চিত্র আরও ভয়াবহ। যশোরের গ্রামের কাগজ সরকারের দুস্থ: ও নিম্নআয়ের নারীদের মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানের যে কর্মসূচি নিয়েছে, তাকে ঘিরে কিধরণের দূর্নীতি হয় তার করুণ চিত্র তুলে ধরেছিল চারটি পর্বে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। পত্রিকাটির মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অসততার চূড়ান্ত অনৈতিক চেহারা। আপন ভাইকে স্বামী সাজিয়ে ভাতা গ্রহণ, স্বচ্ছ্বল পরিবারের নারীদের নামে ভাতা আত্মসাৎ, ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কর্মী, রাজনৈতিক আর্শীবাদপুষ্ট অস্তিত্বহীন এনজিওর মধ্যস্বত্ত্ব ভোগের এমন চিত্র সামগ্রিক নৈতিকতা লোপেরই স্বাক্ষ্য বহন করে।
প্রশ্ন হচ্ছে, দূর্নীতি দমন কমিশন হঠাৎ হঠাৎ তৈরি হওয়া নাটকীয়তার পিছনে ছুটে চমক দেখানোকেই কি বেশি গুরুত্বর্পূণ মনে করছেন, নাকি সমস্যাটির সামগ্রিক রুপ বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল নিয়ে এগুচ্ছেন? প্রশ্নটা উঠছে কারণ তাঁদের কার্য্যক্রমে মনে হয় তাঁরা জনপ্রিয়তার পিছনে ছুটছেন এবং রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষকে তুষ্ট করাকেই দায়িত্ব হিসাবে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
(২৪ এপ্রিল, ২০১৯‘র প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখকের কলাম।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...