সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাজপথে ইউরোপ, আফ্রিকা


১৫ বছরের এক কিশোরী ইউরোপ এবং ইউরোপের বাইরে আলোড়ন তুলেছে। স্কুলের ক্লাস বর্জন করে প্রথমে সে একাই রাস্তায় বসেছে প্রতিবাদ জানাতে। এরপর তার সহপাঠীরা এবং আস্তে আস্তে দেশ এবং দেশের বাইরেও ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে এসেছে। মাত্র কয়েকমাসের মধ্যে সে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। মন্ত্রী-সাংসদরা তাঁর কথা শুনছেন, সে জনসভায় বক্তৃতা করছে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টে তার ব্ক্তৃতার সময়ে সেই পার্লামেন্ট সদস্যরা মুর্হুমুর্হু করতালি দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান জানিয়েছে।

এই কিশোরীর নাম গ্রেটা থর্নবার্গ। ইতোমধ্যেই তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পৃথিবীর ধ্বংস হবে জেনেও রাজনীতিকরা কিছু করছেন না বলে তার অভিযোগ এবং সেকারণেই তার প্রতিবাদ। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বক্তৃতায় রাজনীতিকদের কাছে তার প্রশ্ন ছিল ব্রেক্সিটের মত বিষয়ে তোমরা যতটা সময় দিয়েছো, মাথা ঘামাচ্ছো, আমাদের ধরিত্রীকে অনিবার্য ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে তার কত ভাগ সময় ব্যয় করেছো? জ্বালানি তেল, কয়লা এবং ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগকারীরা ইতোমধ্যেই অস্থির হয়ে উঠেছেন। ডানপন্থী গণমাধ্যমগুলো, এমনকি, সে মানসিকভাবে অসুস্থ কিনা সেই প্রশ্নও তুলেছে।

গ্রেটা পরিবেশবাদী আন্দোলনকে নতুন জীবন ও গতি দিয়েছে। দুসপ্তাহ ধরে বিলুপ্তিবিরোধী বিদ্রোহ (এক্সিটিংকশন রেবিলিয়ন) লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে অভূতপূর্ব আয়োজনে অভিনব প্রতিবাদ দেখিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার, পক্ষকালের কর্মসূচির শেষদিনে তারা লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়েছিল। এর আগে, তারা ইঙ্গ-ওলন্দাজ জ্বালানি কোম্পানি শেল এর প্রধান কার্যালয়কেও একদিনের জন্য অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। লন্ডনের সবচেয়ে বড় বিপণী এলাকা অক্সফোর্ড সার্কাসের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে পুরো এক সপ্তাহ তারা সেখানে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়। তবে, তাদের সব কর্মসূচি ছিল শান্তির্পূণ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, জনজীবনে বিঘ্নসৃষ্টিকারী, কিন্তু অহিংস আন্দোলনের এতো বড় আয়োজন এর আগে ব্রিটেনে আর কখনোই হয় নি।

বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরাতে পুলিশ হিমশিম খেয়েছে এবং লন্ডনের বাইরে থেকে তাদেরকে আরও পুলিশ আনতে হয়েছে। একেকজন বিক্ষোভকারীকে হাত-পা ধরে চ্যাংদোলা করে সরিয়ে নিতে চারজন করে পুলিশের প্রয়োজন হয়েছে। গ্রেপ্তারের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে কিন্তু, অধিকাংশই কোনোধরণের মামলা ছাড়াই ছাড়া পেয়েছেন এবং আবার বিক্ষোভে ফিরে এসেছেন। পুলিশের কৌশল ব্যাখ্যা করে পুলিশ কর্মকর্তা সমিতির বলেছে শক্তিপ্রয়োগ করলে শান্তির্পূণ বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠবে বলেই তাঁরা কোনোধরণের বাড়াবাড়ির পথে যান নি। বিবিসি রেডিওর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথাও স্মরণ করিয়ে দেন যে লন্ডনের মেয়র এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেউই জলকামান ব্যবহারের প্রস্তাবে এর আগে সম্মতি দেন নি বলে সাবেক মেয়র বরিস জনসনের কেনা জলকামান লোহা-লক্কড় (স্ক্র্যাপ) হিসাবে বিক্রি করতে হয়েছে।

শান্তির্পূণ এই আন্দোলনের পরিণতিতে ইউরোপীয় রাজনীতিকরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিjকে আবারও অগ্রাধিকারের তালিকায় নিয়ে আসতে শুরু করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনকে চীনা ধাপ্পা অভিহিতকারী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কারণে বিষয়টিতে বৈশ্বিক সমঝোতা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়াতেই এখন ইউরোপীয়দের ওপর চাপটা বেশি। ইউরোপ জুড়ে উগ্র-ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর রাজনৈতিক উত্থানের আশংকা যখন বাড়তি উদ্বেগের কারণ হয়ে আছে, তখন রাজপথে কিশোর-তরুণদের অহিংস বিদ্রোহ আশার আলো দেখাচ্ছে।

২.
রাজপথের শক্তি আশা জাগাচ্ছে আফ্রিকাতেও। সুদান এবং আলজেরিয়ার গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের গণআন্দোলন বিশ্ব জুড়ে গণতন্ত্রপন্থীদের উজ্জীবিত করবে বলে আশাবাদ তৈরি হয়েছে। বছরের পর বছর দমন-নির্যাতনের শিকার এই দুই দেশেই আন্দোলনকারীরা ভয়ের-শৃংখল ভেঙ্গে অহিংস প্রতিবাদে ক্লান্তিহীনভাবে অংশ নিয়ে পরিবর্তনের পালা শুরু করেছে। 

মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আর্ন্তজাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যাঁর ক্ষমতার ভিত নাড়াতে পারেনি, রাজপথে তাঁর স্বদেশিদের অনড় প্রতিবাদ তাঁকে শুধু ক্ষমতাচ্যূতেই করেনি, তাঁর ঠাঁই হয়েছে কারাগারে। তিনদশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার ভিতকে সংহত করার সবচেষ্টার পরও সুদানের সামরিক স্বৈরশাসক ওমর আল বশিরকে তাঁর সামরিক কোটারি রক্ষা করতে পারে নি। সামরিকবাহিনী বেসামরিক শাসনে উত্তরণের জন্য একের পর এক পরিকল্পনা ঘোষণা করেও আন্দোলনকারীদের নড়াতে পারছে না। বিক্ষোভকারীরা প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে পালা করে রাজপথ দখলে রেখেছেন। তাও, অন্য কোথাও নয়, সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরের সামনে। সান্ধ্য আইন জারি করেও তাদেরকে রাজপথ থেকে হটানো যায় নি। সামরিক গোয়েন্দা প্রধান থেকে শুরু করে জান্তার জনাপাঁচেক কর্মকর্তার পদত্যাগেও বিক্ষোভকারীরা সন্তুষ্ট নন। গণতন্ত্রে উত্তরণে পুরোনো জান্তার কর্তৃত্ব খর্ব করতে তাঁরা যে পথ নিয়েছেন তার লক্ষ্য হচ্ছে শান্তির্পূণ উপায়ে রেজিম চেঞ্জ।

বাংলাদেশের স্বৈরশাসক এরশাদের সেনাশাসন অবসানের লক্ষ্যে ৯০র গণঅভ্যূত্থানের সঙ্গে সুদানের এই আন্দোলনের হয়তো কিছুটা মিল পাওয়া যাবে। কিন্তু, আপাতদৃশ্যে মনে হচ্ছে সুদানের গণঅভ্যূত্থানের নেতৃত্ব অনেক বেশি প্রাজ্ঞ এবং বুদ্ধিমান। তাঁরা শুধু কসমেটিক বা আলতো একটা পরিবর্তনে তুষ্ট নন। তাঁরা বুঝতে পারছেন যে পরাস্ত জান্তার সুবিধাভোগীরা টিকে থাকলে তাঁরা সুযোগের অপেক্ষায় থেকে ভবিষ্যতে প্রতিশোধ নিতে বা ক্ষতির কারণ হতে পারে। আর, সবচেয়ে বড় তফাৎ হচ্ছে সুদানের আন্দোলনটির সূচনা করেছে নাগরিক সমাজ। সুদানের এই আন্দোলনের আরেকটি লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিপুলসংখ্যায় নারীর অংশগ্রহণ। এসব নারীদের অধিবাংশেরই সন্তান অথবা স্বামী কিম্বা পিতা হয় রাজবন্দী হয়ে আছেন অথবা নিরাপত্তাবাহিনীর হত্যা বা গুমের শিকার হয়েছেন।

ওমর আল বশির ক্ষমতায় আসেন ১৯৮৯ সালে সামরিক অভ্যূত্থানের মাধ্যমে এবং তারপর গঠন করেন রাজনৈতিক দল সুদান ন্যাশনাল কংগ্রেস। ২০১০ সালে নতুন সংবিধান তৈরি পর থেকে দেশটিতে ৫ বছর পর পর প্রেসিডেন্ট এবং পার্লামেন্টারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিরোধীদের বয়কটের মধ্যে নির্বাচিত হয়ে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে অবসরের কথা বলেছিলেন। কিন্তু, গত ডিসেম্বরে তিনি আগামী নির্বাচনেও প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করেন। দারফুর অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতা ঠেকাতে সেখানে গণহত্যা এবং ধর্ষণের যেসব ঘটনা ঘটে তার নির্দেশদাতা হিসাবে আর্ন্তজাতিক অপরাধ আদালত তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে ২০০৯ সালে। জারি করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। কোনো রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এটিই আইসিসির প্রথম এরকম পদক্ষেপ। কিন্তু, তিনি আফ্রিকার অন্যান্য প্রভাবশালী নেতা এবং চীন ও রাশিয়ার সর্মথন ও প্রশ্রয়ের কারণে প্রায় ৯ বছর নির্বিঘ্নে ক্ষমতা ধরে রাখেন।

আফ্রিকার এই গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের নবযাত্রায় আলজেরিয়ার আন্দোলনেও সুদানের সঙ্গে দারুণ মিল পাওয়া যাচ্ছে। আন্দোলনকারীরা বুথেফ্লিকা আমলের কাউকেই আর বিশ্বাস করছেন না। পাঁচবার একটানা ক্ষমতায় থাকা বুথেফ্লিকা শারীরিকভাবে প্রায় অক্ষম হয়ে পড়া সত্ত্বেও আগামীবছরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হতে চাওয়া থেকেই আন্দোলনের সূত্রপাত। এখানেও আন্দোলনের মূল শক্তি ছাত্র-তরুণরা। তাঁরা দিনের পর দিন শান্তির্পূণভাবে রাস্তায় নেমে এসেছেন এবং বুথেফ্লিকার পদত্যাগের পর এখনও প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন।

আলজেরিয়ায় বহুদলীয় নির্বাচন শুরু হয় ১৯৯০ সালে। কিন্তু, ২০০৮ সালে দেশটির সংবিধান থেকে প্রেসিডেন্টের দুই মেয়াদের সীমা তুলে দেন মি বুথেফ্লিকা। ওই সংশোধনীর পর ২০০৯ সালের নির্বাচনটি হয় অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন। উইকিলিকসের ফাঁস করা যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক বার্তায় দেখা যায় দেশটির কূটনীতিকদের ধারণা ওই নির্বাচনে প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোট ছিল বানোয়াট। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হতে থাকায় দেশটির রাজনীতিতে বিরোধীদলগুলোর ভূমিকা ক্রমশই খর্ব হতে থাকে। কিন্তু, বিপুল জ্বালানিসম্পদ সত্ত্বেও দেশটির অর্থনীতিতে কাঙ্খিত গতি ও কর্মসংস্থান ঘটেনি। তরুণদের প্রায় এক চতূর্থাংশই বেকারত্বের শিকার। 

সুদান এবং আলজেরিয়া - এই দুই দেশেই চীনের অর্থনৈতিক স্বার্থ ক্রমশই জোরদার হচ্ছে। আফ্রিকায় সুদানই হচ্ছে চীনের সর্বাধিক আর্থিক সহায়তা লাভকারী দেশ। পাশাপাশি, সুদান ও আলজেরিয়া হচ্ছে এবং চীনে জ্বালানি রপ্তানিকারী দেশ। ২০০০ সালের পর থেকে ১৭ বছরে চীনে আলজেরিয়ার জ্বালানি রপ্তানি বেড়েছে ষাট গুণ। স্বাভাবিকভাবেই বশির এবং বুথেফ্লিকা এতোদিন চীনের সমর্থন পেয়ে এসেছেন।

৩.
একদিকে পৃথিবীর ধ্বংস ঠেকাতে ইউরোপের রাজপথ জেগে উঠেছে, অন্যদিকে গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনে জেগেছে আফ্রিকা। আর্ন্তজাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা সমর্থন এগুলোর চেয়েও যে জনগণের প্রতিবাদ বেশি শক্তিশালী ও কার্যকর তার প্রমাণ দিচ্ছে সুদান এবং আলজেরিয়াগত শতাব্দির শেষ দুই দশকে স্বৈরতন্ত্র বা একনায়কত্বের শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের সূচনা ঘটেছিল এশিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মত দেশগুলোতে। কিন্তু, চলতি শতাব্দিতে গণতন্ত্রের যে ক্ষয়সাধন শুরু হয়েছে তা থেকে ফেরানোর পালায় আফ্রিকাই অগ্রণী হয়ে রইল।  
(৩০ এপ্রিল, ২০১৯‘ প্রথম আলোয় প্রকাশিত নিবন্ধ।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...