বিএনপির অর্ধডজন সাংসদের
পাঁচজন শপথ নিয়ে একাদশ সংসদে যোগ দেওয়ায় যে অবিশ্বাস ও বিস্ময়সূচক প্রতিক্রিয়া
দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে এটা প্রত্যাশিত ছিল না। কেন তা প্রত্যাশিত ছিল না , সেটা
অবশ্য স্পষ্ট নয়। যাঁরা ধারণা করেছিলেন যে বিএনপি শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকবে,
বিএনপির প্রতি তাঁদের এই বিশ্বাস বা আস্থা বিস্ময়কর।
শপথ না নেওয়ার বিষয়টি
বিএনপির অঙ্গীকার ছিল, নাকি হুমকি ছিল – প্রথমত সেটি বিচার করা দরকার। বিষয়টিকে দলের নেতাদের অনেকেই একটি অঙ্গীকারের মত
করে প্রচার করেছেন। কিন্তু, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ছাড়া ওই ছয়জনের অন্য কেউ শপথ নেবেন
না এমন কোনো ঘোষণা দিয়েছেন বলে কোনো খবর চোখে পড়ে নি। বিপরীতে, একটা জোরালো ধারণা তৈরি
হয়েছিল যে সরকারের সঙ্গে দরকষাকষির হাতিয়ার হিসাবে হুমকি দিতেই একথাটি বলা হচ্ছে। পাঁচজন
সাংসদ এবং দলীয় মহাসচিবের ব্যাখ্যায় এখন প্রমাণ হচ্ছে দ্বিতীয় ধারণাটিই ঠিক ছিল। তবে,
দরকষাকষিতে তাঁরা কিছু পেয়েছেন কিনা, দেশবাসীর কি লাভ হলো সেসব প্রশ্ন আলাদা। মির্জা ফখরুলের শপথ না নিয়ে আসন হারানোতে অবশ্য তাঁর দলের
অভ্যন্তরীণ সংকটের তীব্রতারই ইঙ্গিত মেলে ।
যাঁরা বিএনপির ‘হুমকি‘কে অঙ্গীকার ভেবে দলটির ওপর আস্থা রেখেছিলেন, তাঁরা নিশ্চয়ই ভুলে গিয়েছিলেন
যে নির্বাচনের আগে দলটি তাতে অংশ নেওয়ার শর্ত হিসাবে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেছিল।
কিন্তু, সে বিষয়ে কোনো আশ্বাস না পেলেও দলীয় নেত্রীকে মুক্ত করার সংগ্রামের অংশ হিসাবে
সংলাপে অংশ নেয়। সংলাপে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কয়েক দফা দাবি পেশ করে দলটি
বলেছিল যে শর্তগুলো পূরণ না হলে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন না। কিন্তু, শর্তগুলো পূরণের
বিষয়ে কোনোধরণের আশ্বাস ছাড়াই তাঁরা ‘চমক‘ দেখিয়ে দলীয় প্রধানকে
মুক্ত করার আন্দোলনের অংশ হিসাবে শেষমুহুর্তে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে নানাধরণের
অনিয়মের দীর্ঘ তালিকা তৈরি করে ক্রমাগত অভিযোগ করার পরও তাঁরা নির্বাচন থেকে
আর সরে যান নি। রাতেরবেলার ভোটের ফলকে প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়ার
কথা বললেও একাদশ সংসদের ৯০ দিনেও তাঁরা সরকারের জন্য কোনোধরণের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ
তৈরি করতে পারেন নি। এমনকি, তাঁদের প্রতি জনসমর্থনের মাত্রাটাও প্রদর্শিত হয়নি। নিকট
অতীতের এসব ঘটনাপ্রবাহের পরও বিএনপির প্রতি অগাধ আস্থা রেখে যাঁরা আজ হতাশ হয়েছেন তাঁদের
শুধু সমবেদনাই প্রাপ্য!
আর, শপথ না নেওয়ার হুমকিটা
যদি দরকষাকষির কৌশলের বিষয় হয়ে থাকে, তাহলে তার পরিণতি কি তা আমরা জানি না। দলীয় প্রধানের
মুক্তি, নেতাকর্মীদের হয়রানি- দুর্ভোগের অবসান, ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার অর্জন ইত্যাদি
যদি লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে আমাদের অপেক্ষায় থাকার বিকল্প আর কি আছে? তবে, অতীত অভিজ্ঞতাকে
মূল্য দিলে দলটির দরকষাকষির যোগ্যতার বিষয়ে যাঁরা আশাবাদী হবেন তাঁদেরও উচিত হবে প্রত্যাশার
লাগাম টানা।
বিএনপির অভিযোগ ছিল
যে সাংসদদের ওপর শপথগ্রহণের জন্য অসহনীয় মাত্রায় চাপ ছিল। যদিও, প্রধানমন্ত্রী এবং
ক্ষমতাসীন দলের অন্যরা সেরকম চাপের কথা নাকচ করে দিয়েছেন। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয়
রাজনীতিতে অদৃশ্য শক্তির হস্তক্ষেপের বিষয়টি সবারই জানা। এসব সাংসদকে সংসদে নেওয়ার
চেষ্টায় সফল হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন দল এবং যেসব কথিত ‘অদৃশ্য শক্তি‘ তৎপর ছিলেন তাঁরা বাহবা নেবেন সন্দেহ
নেই।
(৩০ এপ্রিল, ২০১৯‘ প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত বিশ্লেষণ। )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন