সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিচারহীনতায় দৃষ্টান্তমূলক সাজার প্রশ্ন

 মূলধারার সংবাদমাধ্যমে ছাপা না হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহুল প্রচারিত কয়েকটি ছবির কথা না বললেই নয়। যে ছবিগুলোর কথা এখানে উল্লেখ করতে চাই, সেগুলোতে উঠে আসা কথাগুলোর গুরুত্ব আলাদা। ছবি দুটোই শাহবাগ থানার সামনে। একটিতে কয়েকজন মেয়ে বিভিন্ন বক্তব্য লেখা পোস্টার ধরে দাঁড়িয়ে আছে। একটিতে একজন পুলিশ একজন প্রতিবাদকারীর খুব কাছে গিয়ে পোস্টার পড়ছে। পোস্টারগুলোয় লেখা ছিল ‘এখানে ধর্ষণের বিচার পাওয়া যায় না’, ‘বাহ পুলিশ চমৎকার, ধর্ষকদের পাহারাদার’।

প্রতিবাদকারীদের পোস্টারের বক্তব্যগুলো পুলিশকে ক্ষুব্ধ করেছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু এগুলো যে নিষ্ঠুর সত্য, সে কথা তো অস্বীকার করা যাবে না। আইন আছে, আইনের শাসন নেই; আইন প্রয়োগের প্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু দলীয়করণ আর দুর্নীতির কারণে তা অকার্যকর; সরকার আছে, যার কোনো জবাবদিহি নেই। বছর দুয়েক আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে শিক্ষার্থীরা আলোড়িত করেছিল, তারাও কিন্তু রাষ্ট্রকে অসুস্থ বলে রাষ্ট্র মেরামতের কথা বলেছিল।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের কথা কজনার মনে আছে, জানি না। পছন্দমতো ভোট দেওয়ার কারণে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাতে চার সন্তানের এক জননীকে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন স্বামী-সন্তানের উপস্থিতিতে যে গণধর্ষণ করেছিল, তার কিন্তু বিচার হয়নি। অপরাধীর গ্রেপ্তারের দাবি পূরণ হলেও তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে প্রধান আসামি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরের একজনের কাছ থেকে যে ব্যাখ্যা পাওয়া গেল, তাতে মনে হয় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের অসতর্কতাই এর অন্যতম কারণ।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের নিয়োগলাভের প্রধান যোগ্যতা দলীয় আনুগত্য, পেশাগত দক্ষতা নয়। অবশ্য দলীয় আনুগত্যের বিষয়টি শুধু অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে নিয়োগ পাওয়ার পূর্বশর্ত, তা নয়, নিম্ন আদালতগুলোর আইন কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও তা সমভাবে প্রযোজ্য। বছর দুয়েক আগে প্রথম আলোর গবেষণাতেও দেখা গেছে, ঢাকায় নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার মামলায় নিষ্পত্তির হার মাত্র ৩ শতাংশ। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির অধ্যাপক হেলাল মহিউদ্দিন লিখেছেন, বাংলাদেশে গত এক দশকে ধর্ষণ মামলার সুরাহার হার মাত্র ৩ দশমিক ৪৫ ভাগ। শাস্তির হার মাত্র শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ। অবশ্য এই প্রবণতা যে শুধু নারী-শিশুর ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ তা নয়। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিটিতে সরকারের পেশ করা তথ্য বলছে দেশে অপরাধের বিচারে সাজার হারও মাত্র ৩ শতাংশ।

এরপরও কি কেউ দাবি করবেন ‘এখানে ধর্ষণের বিচার পাওয়া যায় না’ বক্তব্যটি সত্য নয়? ধর্ষণ সব দেশেই হয় বলে যখন কোনো মন্ত্রী আমাদের দেশে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা খোঁজেন, তখন বোঝাই যায় যে বিচারের ব্যবস্থা করার সামর্থ্য বা সদিচ্ছা কোনোটাই সরকারের নেই। জনমতের চাপ অবশ্য কখনো কখনো ব্যতিক্রম তৈরি করে। রাজনৈতিক ক্ষতি সামাল দিতে তখন সংক্ষিপ্ত (শর্টকাট) পথ খোঁজা হয়। তখন দ্রুত বিচার, কিংবা আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন, এমনকি বিচারবহির্ভূত হত্যা বা ক্রসফায়ারের কথা ওঠে। এগুলোর কোনোটিতেই যে সমাধান নেই, তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা নিষ্পত্তি ও সাজার হার বিশ্লেষণে তার প্রমাণ মেলে। একইভাবে ক্রসফায়ার যে কোনো সমাধান নয়, তার প্রমাণ হলো মাদকবিরোধী অভিযানে দুই শর বেশি সন্দেহভাজনকে হত্যার পরও মাদক কারবারে কোনো ভাটা পড়েনি। সমস্যাটি এই নয় যে আইন নেই, আইন প্রয়োগের সামর্থ্য নেই (আদালত, পুলিশ এবং অন্যান্য সহায়ক প্রতিষ্ঠান)। সুতরাং সমস্যাটা যেখানে সমাধানও সেখানেই খুঁজতে হবে।

আবারও ফিরে তাকাই সুবর্ণচরের ধর্ষিতা জননীর দিকে। ওই নারীর ন্যায়বিচার পাওয়া নিশ্চিত করার দাবিতে ফেসবুকে ঝড় উঠেছিল ঠিকই, কিন্তু কোথাও কোনো আন্দোলন হয়নি। কেননা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শক্তির জোরে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়ায় দেশে এখন আছে শুধু সহমতের চর্চা। বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত নাগরিক ক্ষোভকে ধারণ করার মতো প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন এখন প্রায় অস্তিত্ত্বহীন। আইনের শাসনের কথা বলা প্রতিষ্ঠান কিংবা নাগরিক গোষ্ঠীগুলোও এখন কার্যত অকার্যকর। তখন যৎসামান্য যে আলোড়ন তৈরি হলো তার পটভূমিতে মানবাধিকার কমিশন তদন্তে নামল। কিন্তু রাজনৈতিক আনুগত্যই যেখানে প্রধান নিয়ামক, সেখানে স্বাধীন তদন্ত কীভাবে সম্ভব? ফলে তাঁরা তখন বললেন ধর্ষণের অভিযোগের ‘প্রাথমিক সত্যতা’ পাওয়া গেলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে ধর্ষণের শিকার হওয়ার কোনো প্রমাণ মেলেনি। ধর্ষিতা নারী যেখানে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, সেখানে তাঁর ভাষ্যকে নাকচ করে দেওয়া হলো। এটা হলো ভুক্তভোগীকে দায়ী করা বা ভিকটিম ব্লেমিংয়ের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক রূপেরই একটি।


বেগমগঞ্জ ও সুবর্ণচরের ঘটনাগুলো এতটাই ভীতিকর যে এঁরা নিজের বাড়িতে হামলার শিকার হয়েছেন। তাঁদের পরিবারের সামনেই তাঁদের খাবলে ধরা হয়েছে। রাষ্ট্র যেমন এখানে বেডরুমে নিরাপত্তা দিতে পারেনি, তেমনই এমসি কলেজে বেড়াতে যাওয়া দম্পতিকে সরকারি স্থাপনাতেও নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে ধর্ষকদের কাছে কলেজের অধ্যক্ষ যেমন আত্মসমর্পণ করেছিলেন, ঠিক তেমনই নোয়াখালীর পুলিশ নিষ্ক্রিয় থেকেছে। বেগমগঞ্জে পুলিশের মাসাধিককালের নিষ্ক্রিয়তার অন্য কোনো ব্যাখ্যাই গ্রহণযোগ্য নয়। পুলিশের সাবেক এআইজি এবং ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান সৈয়দ বজলুল করিম ডয়েচে ভেলেকে বলেছেন, ‘এর জন্য ওই থানার ওসি দায়ী। হয় তিনি জেনেও ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য গোপন করেছেন অথবা তিনি থানায় কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে কাটান। তাঁর দায়িত্ববোধ বলে কিছু নেই (এ ঘটনার জন্য থানার ওসিও দায়ী)।’ তাঁর ব্যাখ্যা হচ্ছে পুলিশের তথ্য সংগ্রহের নিজস্ব চেইন থাকে৷ গ্রামের চৌকিদারও তাঁদের তথ্য দিতে বাধ্য। আর এখন থানা পর্যায় পর্যন্ত গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে। সুতরাং অভিযোগ পাওয়ার অপেক্ষা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর ঘটনা জানতে পারার দাবি অযৌক্তিক।

বেগমগঞ্জের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত দেলোয়ার গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ভোটকেন্দ্র দখলের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আগেই তাঁর নামে ছিল হত্যা মামলা। কিন্তু পুলিশ তাঁকে ধরেনি। নির্বাচনের জয় ছিনিয়ে নিতে যত ধরনের শক্তির প্রয়োজন হয়, তার সমাবেশ ঘটাতে পারে কেবল ক্ষমতাসীন দল। কেননা প্রশাসন ও পুলিশ আইন বা সংবিধান মেনে চলার বদলে ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেতাদের কথাকেই বেশি মূল্য দেয়। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের মধ্যেও উপদলীয় দ্বন্দ্বে যে নেতার ওপরের যোগাযোগ ভালো এঁরা তাঁর পক্ষেই থাকেন।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা অবশ্য বেশ ঘটা করা বলেন যে তাঁদের দলে দুর্বৃত্তদের কোনো স্থান নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দল বলতে এখন তাঁদের দল ছাড়া দেশে আর কোনো কার্যকর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, যেখানে দুর্বৃত্তরা আশ্রয় নিতে পারে বা প্রশ্রয় পায়। অন্য কথায়, জবাবদিহির রাজনৈতিক ব্যবস্থাটির ধ্বংস সাধনের পর যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাকে কার্যত একদলীয় নৈরাজ্য ছাড়া আর কী বলা চলে? অর্ন্তদলীয় কোন্দল ও সহিংসতার পরিসংখ্যানে এখন অন্তত সে রকমই দেখা যায়। বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে যত না সংঘাত হয়, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি হয় নিজেদের মধ্যে। প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এবং দলীয় পরিচয়ধারী পান্ডারা মিলেমিশে রাতের ভোটে সরকারের ও উন্নয়নের যে ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করেছে, তাতে যে রাজনৈতিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।


যাঁরা বিচারবহির্ভূত পন্থায় ধর্ষণ সমস্যার সমাধান চাইছেন, তাঁরা সজ্ঞানে অথবা অসচেতনভাবে ক্ষমতার বেআইনি ও একচেটিয়া প্রয়োগকে উৎসাহিত করছেন। যাঁরা দ্রুত বিচার কিংবা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান, তাঁদের মূলভাবনা ঠিক হলেও কিছুটা আবেগতাড়িত বিভ্রান্তি তাতে রয়েই গেছে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বলে কিছু নেই। শাস্তির বিধান আইনেই আছে। সেখানে সর্বোচ্চ শাস্তিটাই দাবি করা যায়। আর বিচার কতটা দ্রুত হলো তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যথাযথ বিচার। তদন্তকারীরা দলীয় প্রভাব বা দুর্নীতির কারণে বিচারের নামে প্রহসন ঘটালে তা দ্রুত হলেও অবিচার হবে। সবচেয়ে বড় কথা আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য রাজনীতিতেও ভারসাম্য ফেরানো প্রয়োজন হবে।

(৯ অক্টোবর, ২০২০ প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...