সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাংলাদেশ -ভারত: উচ্ছ্বাস ও আশ্বাসের আরও একটি শীর্ষ বৈঠক

গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ এবং ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে একধরণের উচ্ছ্বাস দেখা যায়। সেই সম্পর্ককেই আরও এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার শোনা গেল গত ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দুই প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল শীর্ষবৈঠকে। এবারও শীর্ষ সম্মেলনের আলোচনার সারবস্তুর বিবরণ দিল্লির বিদেশমন্ত্রকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেই জানানো হয়েছে। দিল্লি থেকে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতির ৩৯টি অনুচ্ছেদে যা আছে তার খুঁটিনাটি নিয়ে বিশদ আলোচনা অবশ্য চোখে পড়েনি। যথারীতি কূটনীতিক এবং বিশ্লেষকরা মহামারিকালের নতুন স্বাভাবিক ব্যবস্থা ভিডিওসংযোগের শীর্ষ বৈঠকেই উচ্ছ্বসিত। প্রতিবেশির সঙ্গে সুসম্পর্ক সবারই প্রত্যাশিত। আমরা যেহেতু ভালোটা শুনতে ভালোবাসি, তাই সরকারিভাবে ভালোটুকুই শোনানো হয়।

যৌথবিবৃতির শুরুতেও এই বন্ধুত্বের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা ও অন্যান্য অভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অংশীদারিত্বের কথাই স্থান পেয়েছে। এরপর যেসব ক্রমানুসারে উল্লেখ করা হয়েছে: স্বাস্থ্যখাতে সৃষ্ট বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, ঐতিহাসিক সম্পর্কের যৌথ উদযাপনের সাংস্কৃতিক সহযোগিতা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, প্রবৃদ্ধির জন্য বাণিজ্যির অংশীদারিত্ব, সমৃদ্ধির জন্য সংযোগ, পানি, বিদ্যূৎ ও জ্বালানিক্ষেত্রে সহযোগিতা, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূতদের অবস্থা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিসরে অংশীদারিত্ব এবং দ্বিপক্ষীয় নথিসমূহ স্বাক্ষর ও প্রকল্প উদ্বোধন।

স্বাক্ষরিত সাতটি স্মারক হচ্ছে হাইড্রোকার্বন খাতে সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক, আন্তসীমান্ত হাতিসংরক্ষণ চুক্তি, স্থানীয় সরকার এবং সরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানে ভারতীয় অনুদানের উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্ষিয়ক সমঝোতা স্মারক, বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং তার সরঞ্জাম সরবরাহের স্মারক, ভারত-বাংলাদেশ প্রধান নির্বাহীদের ফোরামের শর্তাবলী, ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সঙ্গে দিল্লির জাতীয় জাদুঘরের সমঝোতা স্মারক এবং কৃষিখাতে সহযোগিতার সমঝোতা স্মারক। দ্বিপক্ষীয় প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে দুটি : রাজশাহী নগরের সৌন্দর্য বর্ধিতকরণ প্রকল্প এবং খুলনায় খালিশপুর কলেজিয়েট বালিকা বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ।

যৌথবিবৃতির শেষে জানানো হয়েছে, ২০২১ সালের মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও দুইদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রী মোদি গ্রহণ করেছেন। স্মরণ করা যেতে পারে যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মুজিববর্ষের সূচনায় তাঁর এবছরেই ঢাকা আসার কথা ছিল, যা মহামারির কারণে শেষপর্যন্ত সম্ভব হয়নি।ওই সফরের বিরোধিতাও ছিল।  

যৌথবিবৃতিটি নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের উদযাপনই বেশি অগ্রাধিকার ও গুরুত্ব পেয়েছে। উৎসব-আয়োজনে শীর্ষপর্যায়ের অংশগ্রহণের প্রতীকি মূল্য নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু, সাংস্কৃতিক স্পর্শকাতরতা বা রাজনৈতিক বাধা না থাকলে এসব বিষয়ে সমঝোতা সচিব কিম্বা মন্ত্রীরাই করতে পারেন। সীমান্ত ব্যবস্থাপনার প্রশ্নে এই বিবৃতিতে অবশ্য নতুন উপাদান আছে। ইছামতি, কালিন্দি, রায়মঙ্গল, হাড়িভাঙ্গা নদীর সীমানা চূড়ান্ত করতে সীমান্ত সম্মেলন করে নতুন মানচিত্র তৈরির বিষয়ে তাঁরা সম্মত হয়েছেন। তবে, রাজশাহী জেলায় পদ্মা নদীতে ১.৩ কিলোমিটার দূরত্বে নৌযান চলাচলের নিরাপদ পথ (ইনোসেন্ট প্যাসেজ) দিতে বাংলাদেশ আবারও যে অনুরোধ জানিয়েছে তা শুধু বিবেচনার আশ্বাস মিলেছে।

ত্রিপুরা সীমান্তে বেড়া নির্মাণ আবারও শুরু করার বিষয়ে উভয় নেতাই একমত হয়েছেন। সীমান্তে বেসামরিক নাগরিক হত্যার বিষয়টি যে উদ্বেগজনক সেবিষয়ে উভয়নেতা একমত পোষণ করে তা শূণ্যে নামিয়ে আনতে সীমান্তরক্ষা বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে, ওই একইদিনে সীমান্তহত্যার বিষয়ে  বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের পক্ষে যে সাফাই দিয়েছেন তাতে আশাবাদী হওয়ার আর কোনো অবকাশ থাকে না। শীর্ষবৈঠকের আগের ২৪ ঘন্টায় জয়পুরহাট সীমান্তে বাংলাদেশি একজন নাগরিক বিএসএফ এর গুলিতে নিহত হন।

বাণিজ্যবিষয়ক অংশীদারিত্বে নতুনত্ব হচ্ছে কোভিড ১৯ মহামারির সময়েও রেলপথে দুইদেশের পণ্য পরিবহন চালু থাকার মাধ্যমে সহযোগিতার কার্যকরতা প্রমাণ হওয়া। বিবৃতিতে তাই উভয়দেশের বাণিজ্য ও বেলবিভাগের কর্মকর্তাদের প্রাপ্য স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যা আছে, তা মূলত বাংলাদেশের কাঙ্খিত সুবিধাগুলোর অনুরোধের পুনরুল্লেখ। সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সংযোগে হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেলযোগাযোগ আবারও চালু করার মাধ্যমে প্রাক-১৯৬৫র রেল সংযোগ পুরোপুরি পুনরুজ্জীবনের অগ্রগতিতে উভয় নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নৌপথে কোলকাতা-আগরতলার মধ্যে পণ্য চলাচল এবং সোনামুড়া-দাউদকান্দি রুট পর্যালোচনাসহ তাঁরা চট্টগ্রাম এবং মোংলার বন্দর দুটির মাধ্যমে ভারতীয় পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করতেও তাঁরা একমত হয়েছেন।

সংযোগের ক্ষেত্রে নতুন যুক্ত হয়েছে ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ডের ত্রিপক্ষীয় মহাসড়ক প্রকল্পে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের আগ্রহ এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের হিলির সঙ্গে মেঘালয়ের মাহেন্দ্রগঞ্জের সরাসরি সংযোগস্থাপনের ভারতীয় প্রস্তাব। ভারতের প্রতিবেশি রাজ্যগুলোর মধ্যে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের অন্তত একটি স্থলবন্দরের নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়েছে দিল্লি যা তারা আগরতলা-আখাউড়া পয়েন্টেই শুরুর অনুরোধ জানিয়েছে। ঢাকাও ফেণী সেতু সম্পন্ন হলে চ্ট্টগ্রাম থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের ট্রাক ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে।

পানি, বিদ্যূৎ ও জ্বালানি প্রসঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে তিস্তা কিম্বা ছয়টি অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগির প্রসঙ্গগুলো আলোচিত হলেও কোনো আশাপ্রদ অগ্রগতির কথা নেই। যত দ্রুত সম্ভব যৌথ নদী কমিশনের সভা অনুষ্ঠানের বিষয়ের আশাবাদ প্রকাশেই তা সীমিত। জ্বালানিখাতে জোরালো সহযোগিতায় তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং হাইড্রোকার্বন বিষয়ক ফ্রেমওর্য়াক চুক্তি সম্পাদনকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হচ্ছে জ্বালানিখাতে বিনিয়োগ, প্রযুক্তি স্থানান্তর, যৌথ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ এবং সংযুক্তি বাড়ানো ও নিয়মনীতির মধ্যে নিয়ে আসা। জ্বালানিখাতে বিনিয়োগের সুরক্ষার ব্যবস্থায় সুবিধা পাবে মূলত ভারত।   

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়েও ভারতের অবস্থানে কোনো পরিবর্তনের প্রতিফলন যৌথবিবৃতিতে নেই। প্রধানমন্ত্রী মোদি যথারীতি রোহিঙ্গা পরিচয় ব্যবহার থেকে বিরত থেকেছেন, আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ভারতের সহায়তা চেয়েছেন। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য নির্বাচনে সমর্থনের জন্য ভারত বাংলাদেশতে ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং উভয় দেশ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জন এবং অভিবাসীদের অধিকার সুরক্ষায় সহযোগিতার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

বিবৃতির শুরুতে স্বাস্থ্যখাতের যে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে তার কেন্দ্রে রয়েছে কোভিড ১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণ, যার প্রধান ভরসা হচ্ছে টিকা। টিকাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশকে প্রতিবেশি প্রথমবিবেচনায় যে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছে, তা নি:সন্দেহে গুরুত্বর্পূণ। কিন্তু, দ্বিপক্ষীয় যে সমঝোতা হয়েছে তাতে মূল ভূমিকা বেসরকারি খাতের বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। বেলজিয়ামের একজন মন্ত্রীর টুইট সূত্রে আমরা জানি, ভারতে প্রস্তুত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনকার যে টিকার জন্য চুক্তি হয়েছে, তার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের ( প্রতি ডোজ দেড় ডলার) চেয়ে আমাদেরকে তিনগুণ বেশি (পাঁচ ডলার) দাম দিতে হবে।   

বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের বিশেষ মর্যাদার যে দাবি ভারত করে আসছে, প্রধানমন্ত্রী মোদির দল বিজেপির রাজনৈতিক বক্তব্য ও কার্যক্রমে কিন্তু তার প্রতিফলন মেলে না। নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন ও নাগরিকত্বের রেজিস্ট্রার নিয়ে আসামের প্রায় ১৯ লাখ বাংলাভাষী মুসলমানের যে দূর্ভোগ তৈরি হয়েছে তা কোনোভাবেই উপেক্ষণীয় নয়। বাংলাদেশের জন্যও ঝুঁকি তৈরি করেছে। এখন আগামী মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন ঘিরেও মুসলমান বাংলাভাষীদের মধ্যে ভীতি ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপিনেতা অমিত শাহ আসাম নির্বাচনের সময় কথিত বাংলাদেশি অভিবাসীদের উইপোকা অভিহিত করেই থেমে থাকেননি। গত ২০ ডিসেম্বর তিনি পশ্চিমবঙ্গের বোলপুরের জনসভায় বলেছেন ২০২১ এ রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদল হবে বাংলাদেশ থেকে যে অনুপ্রবেশকারীরা ভারতে আসে, তাদের আটকানোর পরিবর্তন(হিন্দুস্তান টাইমস / বাংলা অনলাইন)। নাগরিকত্ব আইন ও কথিত অনুপ্রবেশ বিতর্ক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য কতটা ঝুঁকি তৈরি করছে তা নিয়ে আমাদের সংবাদমাধ্যম নীরবতা পালন করলেও ভারতে তা আলোচনায় আছে। শীর্ষবৈঠকের পর প্রাভিন সোয়ামি তাঁর কলামে লিখেছেন বাংলাদেশ-ভারত রোমোন্সের আড়ালে কিছু কুৎসিত টানাপোড়েন তৈরি হচ্ছে ( বিলো দ্য সারফেস অব দ্য বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া রোমান্স, সাম আগলি স্ট্রেইন্স আর বিল্ডিং)।

বছর আড়াই আগে ২০১৮ সালের জুন মাসের গোড়ায় ভারত সফরের পর দেশে ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, সেটা ভারত সারা জীবন মনে রাখবে। অতীতের গুলি, বোমাবাজি  আমরা কিন্তু তাদের শান্তি ফিরিয়ে দিযেছি। --- আমরা কোনো প্রতিদান চাই না। তবে হ্যাঁ, স্বাধীনতাযুদ্ধে সহায়তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি যৌথবিবৃতি বিশ্লেষণে বলতেই হয় যে ভারতকে দেওয়ার পালা সহসা শেষ হওয়ার নয় এবং প্রতিদানের কথা আমাদের মুখে আসবে না।

(২৩ ডিসেম্বর, ২০২০‘র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

How to Describe the Awami League Accurately?

In an article titled ‘How Not to Describe the Awami League’ , published in this paper, British journalist David Bergman rightly underscores the importance of accuracy in labeling a political party—particularly when such labels carry potential legal consequences. Those familiar with Bergman’s work over the years know that he has consistently taken on politically sensitive and controversial subjects, often at significant personal and professional cost. His courage and commitment to journalistic integrity deserve recognition. Bergman is correct in asserting that “while serious criticisms of the Awami League are both valid and necessary, they must be proportionate and grounded in fact.” His analysis focuses primarily on the legal validity and appropriateness of labeling the Awami League as “fascist” or “Nazi.” He argues that comparing the party to the Nazi regime trivialises the scale of Nazi atrocities and misrepresents the complexities of Bangladeshi politics. Indeed, any historical comp...

ঘৃণা চাষের উর্বর ভূমি ও রাজনৈতিক সংকট

  দেশে একের পর এক অস্থিরতা সৃষ্টির বেশ কয়েকটি ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করলাম। এগুলোর কোনোটিই প্রত্যাশিত ছিল না। অনেকেই এগুলো নির্বাচন যাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুত সময়ে না হয়, তার জন্য পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা হিসাবে বর্ণনা করেছেন। পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা সৃষ্টির পিছনে প্রধানত: দুটি শক্তিকে দায়ী করা হচ্ছে – একটি হচ্ছে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পলাতক নেতৃত্বের সাংগঠনিক উদ্যোগ; অপরটি হচ্ছে, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) সুবাদে সমাজে প্রভাব বিস্তারে দক্ষতা অর্জনকারী কিছু প্রভাবক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী। এসব প্লাটফর্ম বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।  আপনি যদি কাউকে অপদস্থ বা হেয় করতে চান, তাহলে তার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান সম্ভবত:  সোশ্যাল মিডিয়ার কোনো একটি প্লাটফর্ম – বাংলাদেশে এটি ফেসবুক এবং ইউটিউব। বৈশ্বিক পরিসরে অবশ্য এক্স (সাবেক টুইটার) এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে গণহত্যার শিকার সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোয় এই সোশ্যাল মিডিয়া কী ভূমিকা রেখেছে, তা জাতিসংঘ তদন্...