সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভারতের নৌ বিদ্রোহের ৭৫ বছর ও এক বিদ্রোহীর কথা

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অথচ কম আলোচিত বা স্বীকৃত একটি ঘটনা হচ্ছে ১৯৪৬ এর নৌ বিদ্রোহ, যার ৭৫ বছর পূর্ণ হয়েছে গত ফেব্রুয়ারিতে। ওই বছরের ১৮ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি ৭৪টি যুদ্ধজাহাজ ও ২০টি স্থাপনার কুড়ি হাজারের বেশি সাধারণ নাবিক ও নিম্নপদস্থ অফিসার ধর্মঘটে অংশ নেন, যা মিউটিনি বা বিদ্রোহ হিসাবে পরিচিতি পায় । ঐতিহাসিকদের অনেকেই এর মূল্যায়নে বলে থাকেন ব্রিটিশ ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর বিস্মৃত বিদ্রোহগুলো ভারতের স্বাধীনতার জন্য যতটা ভূমিকা রেখেছে ততটা স্বীকৃতি পায়নি। ১৭৫৭ সালে পলাশির আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতা হরণের পর ভারতে ব্রিটিশ রাজ মূলত দুটি সশস্ত্র বিদ্রোহের মুখোমুখি হয় - প্রথমটি ঠিক একশো বছর পর ১৮৫৭ সালের সেনা বিদ্রোহ এবং দ্বিতীয়টি তার ঠিক ৮৯ বছর পর নৌবিদ্রোহ। আগে ব্রিটিশদের অস্ত্র ও কৌশলের কাছে স্বাধীনতাকামীরা পরাস্ত হলেও নৌ বিদ্রোহ ব্যর্থ হয় রাজনীতিকদের কারণে। 

নৌ বিদ্রোহের ৭৫ বছর পূর্তিতে তাই উপমহাদেশে তেমন কোনো আয়োজন ছিল না। তবে বিষয়টি নিয়ে নতুন কিছু গবেষণা হচ্ছে, বই বেরুচ্ছে। ইতিহাসের ছাত্র হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে এবিষয়ে আমার তেমন একটা জানার সুযোগ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আগেই ঘরছাড়া হওয়ার কারণে এই বিদ্রোহের কথা একজন বিদ্রোহীর জবানিতে যখন প্রথম শুনেছি, তখন জীবিকার ব্যস্ততাও অনেক বেড়ে গেছে। আমি যে নৌ বিদ্রোহীর কথা বলছি, তিনি আমার পিতা। বিদ্রোহে অংশ নেওয়া নৌ জাহাজগুলোর বিদ্রোহীরা ২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ছটায় একে একে সবাই আত্মসর্মপণ করলেও  এইচএমআইএস আকবরে যে সাড়ে তিন হাজার নাবিক ও তিনশো সেপাই আত্মসর্মপণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন, তাঁদেরই একজন মোহাম্মদ দেওয়ান আলী নাজির (রয়াল ইন্ডিয়ান নেভির, আরআইএন, ইনডেক্স নম্বর ৩৪৪৯৯)। 


এইচএমআইএস আকবরের বিদ্রোহীরা সবাই অবশ্য কয়েকঘন্টার অচলাবস্থার পর বেয়নেটের মুখে শেষ পর্যন্ত হার মানতে বাধ্য হন। আত্মসর্মপণের পর তাঁদের আটক রাখা হয় এবং ওই বছরের আগস্ট মাসে তিনি মুক্তি পান। রাজনীতিকদের মধ্যস্থতা ও যে আশ্বাসে তাঁরা বিদ্রোহের ইতি টানেন, সেটিকে তাঁরা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারেননি। ভারতের সাধারণ মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নৌবিদ্রোহের সমর্থনে ২২ ফেব্রুয়ারি ভারতের বিভিন্ন শহরে বনধ পালন করে। বিক্ষোভ দমনে পুলিশ নানা জায়গায় গুলি ছোঁড়ে। বোম্বাইতে  ২২৮ জন বেসামরিক ব্যাক্তি ও তিনজন পুলিশ নিহত হয়, আহত হন হাজারখানেকের বেশি। কিন্তু কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ বিদ্রোহে সমর্থন দেয়নি। কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের নেতারা বিপ্লব চাননি, চেয়েছেন শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর। কংগ্রেসের নেতাদের মধ্যে অরুণা আসফ  আলি দলের শীর্ষনেতাদের মত বদলানোর চেষ্টা করেও বল্লভ ভাই প্যাটেলের বিরোধিতার মুখে ব্যর্থ হন। ২২ ফেব্রুয়ারি্তেই বল্লভভাই প্যাটেল বিদ্রোহীদের আত্মসর্মপণের জন্য বার্তা পাঠান। একমাত্র কমিউনিস্ট পার্টি.বিদ্রোহের সমর্থনে এগিয়ে আসে ও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার বেদনা ও হতাশাই সম্ভবত আমার পিতার রাজনীতির প্রতি অনাগ্রহী হওয়ার কারণ। এই বিষয়ে তিনি কারো সঙ্গে খুব একটা আলোচনাও করতেন না।


বাবার মুখে শোনা এসব টুকরো স্মৃতির অন্তর্নিহিত কোনো অর্থ তখন খুঁজিনি। কিন্তু  নৌবিদ্রোহীদের দুজনের আত্মজীবনী এবং কিছু গবেষণা নিবন্ধে ইঙ্গিত মেলে সেদিনের বিদ্রোহ সফল হলে অন্যরকম এক ভারত হতে পারতো। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির যে উত্থান রাষ্ট্র ও সমাজে যে বিভাজন ও অস্থিরতা ছড়াচ্ছে, তা হয়তো দেখতে হতোনা। বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল এইচএমআইএস তালওয়ার নামের যে জাহাজে, তার একজন সিগনালম্যান বলাই চন্দ্র দত্ত ছিলেন সংগঠকদের একজন। ১৮ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহ শুরুর সপ্তাহ তিনেক আগেই ১ ফেব্রুয়ারি নৌপ্রধানের সফরের দিনে জাহাজে নতুন করে শ্লোগান লেখার দায়ে তাঁকে  গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করা হয়। তাঁর লেখা বই দ্য মিউটিনি অফ দ্য ইনোসেন্টস এবং বিশ্বনাথ বোসের আরআইএন মিউটিনি ১৯৪৬ ওই বিদ্রোহের বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। সাধারণভাবে অনেকে বলে থাকেন যে ওই বিদ্রোহ ছিল বেতন, খাবার ও আবাসনের মান শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কম  ও নিম্নমানের হওয়ায় এবং বর্ণবাদি বৈষম্যের কারণে ভারতীয়দের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয় , তা থেকেই বিদ্রোহের সূচনা। তবে বি সি দত্তের জবানিতে তথ্য মেলে যে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটাতে যে ভারত ছাড় আন্দোলন চলছিল, সেই রাজনৈতিক ঢেউ ভারতীয় নৌসেনাদের ওপর আছড়ে পড়েছিল। 


১৮৫৭র সেনাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশরাজ সব বাহিনীতে রাজনৈতিক প্রচারপত্রের প্রবেশ ও আলোচনা বন্ধ করলেও বি সি দত্ত নৌজাহাজ তালওয়ারে গোপনে রাজনৈতিক দলিলপত্র নিয়ে আলোচনা করতেন। বিদ্রোহের দুমাস আগে ১ ডিসেম্বর নৌবাহিনী দিবসে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত প্রদর্শনীর দিনে নৌজাহাজ তালওয়ারের গায়ে ও ডেকে তাঁরা `ভারত ছাড়`, `জয় হিন্দ`সহ নানাধরণের শ্লোগান লিখে রাখেন। বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার কারণ বলতে গিয়ে বিসি দত্ত লিখেছেন, ইউরোপীয় ও ভারতীয়রা সবাই যখন ঘটনাপ্রবাহে হতচকিত হয়ে  `এ তো বিদ্রোহ` বলে বিস্ময় প্রকাশ করছিলেন, দুুর্ভাগ্যজনকভাবে তখন রাজনৈতিক দলগুলোরও কিছু বলার ছিল না। ব্রিটিশ ইউনিয়ন জ্যাক নামিয়ে যখন ভারতীয় পতাকা ওড়ানোর সময় হলো তখন তারা অপ্রস্তুত বোধ করলো।  


বিদ্রোহের বিষয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ক্লিমন্ট অ্য়াটলি যে বিবৃতি দেন তাতে তিনি বলেন, নাবিকরা রাজনৈতিক শ্লোগান দিয়েছে এবং দাবি করেছে একজন রাজনৈতিক নেতাকে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে ( সূত্রঃ হানসার্ড)। ওই বিবৃতিতেও তিনি জানান যে কংগ্রেস বিদ্রোহের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছে। কমিউনিস্ট ও বামপন্থীরা সহানুভূতিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারে বলেও তিনি এমপিদের জানান। বিদ্রোহীদের দাবিগুলোও তিনি উল্লেখ করেন।  


ব্রিটিশ গবেষক উইলিয়াম রিচার্ডসন দ্য সোসাইটি ফর নটিক্যাল রিসার্চের প্রকাশনায় লিখেছেন ,ভারতের স্বাধীনতার রাজনৈতিক আন্দোলনই ছিল এই বিদ্রোহের মূল ( দ্য মিউটিনি অফ দ্য রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি অ্যাট বোম্বে ইন ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬, মে ১৯৯৩)।  `১৯৪৬ঃ দ্য আননোন মিউটিনি` বইয়ের লেখক প্রমোদ কাপুরের ব্যাখ্যায়ঃ নৌসেনারা দুই দল শাসকের নিজ নিজ আকাঙ্ক্ষার মাঝখানে পড়ে গিয়েছিল। একটিপক্ষ চাইছিল তাদের আসন্ন বিদায় যেন বিদ্রোহের কলংকে কলংকিত না হয়। আর অন্যপক্ষ ক্ষমতালাভ যখন আসন্ন তখন তারা উদগ্রীব ছিল এটা দেখাতে যে সশস্ত্রবাহিনীতে বিশৃংখলার কোনো আলামত থাকুক। কেননা ভবিষতে এসব বাহিনী তো তাঁদেরই পরিচালনা করতে হবে।  


রক্তপাত এড়িয়ে বিদ্রোহীদের আত্মসর্মপণে রাজি করাতে রাজনীতিকদের তরফ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল কাউকে সাজা দেওয়া হবে না, কোনো খেসারত দিতে হবে না এবং দাবিগুলো পূরণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাস্তবে উল্টোটাই ঘটেছে। বিদ্রোহী নেতাদের আটক করা হয়েছে, বিচার ও সাজা হয়েছে। সাধারণ বিদ্রোহীদের বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেনের তৃতীয় শ্রেণীর টিকিট ধরিয়ে দিয়ে বলা হয়েছে আর কখনো বোম্বাইমুখো হবে না। নানা অজুহাত - এমনকি ইউনিফর্মে সামান্য ক্ষতির জন্যও বকেয়া বেতন থেকে টাকা কেটে রাখা হয়েছে। 

  

সরকারের এই আচরণ এবং রাজনীতিকদের প্রতিশ্রুতিভঙ্গে এসব বিদ্রোহী কতটা আশাহত ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন তা কিছুটা আঁচ পাওয়া যায় বিশ্বনাথ বোসের বইয়ে। তিনি লিখেছেনঃ দেশপ্রেম যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমরা নিশ্চয়ই অপরাধী। তিনি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নেহেরুকে এক চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন নেতা হিসাবে আমার নাম রয়েছে এবং আমার বিচার ও সাজা হয়েছে। আমাকে মুক্তি দেওয়ার পর নৌবাহিনীতে পুননিয়োগের জন্য আপনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্যকোনো বাহিনী থেকে  চাকরিচ্যূতির কারণে সেই বাহিনীতে আর ফেরত না নেওয়ার কোনো আইন যদি থেকে থাকে তাহলে আপনার কাছে আমি জানতে চাই কংগ্রেসের একজন নেতা হিসাবে আপনি কিভাবে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন! 


নৌ ধর্মঘটের শুরুতে বোম্বাইয়ে অবস্থানরত জাহাজগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয় একটি কেন্দ্রীয় ধর্মঘট কমিটি ( নেভাল সেন্ট্রাল স্ট্রাইক কমিটি) এনসিএসসি। কমিটি রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি, আর আই এন, এর নাম বদলে দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল  নেভি নামকরণ করেন।কমিটির প্রেসিডেন্ট হন সিগন্যালম্যান এম এস খান ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট মদন সিং।  তাঁদের সহযোগীদের স্মৃতিচারণে এঁরা সাম্প্রদায়িকতার ভাইরাসমুক্ত ছিলেন বলে লিখেছেন কোলকাতার শিক্ষক অনির্বাণ মিত্র ( ফ্রিডম অন দ্য  ওয়েভস, দ্য ইন্ডিয়ান নেভাল মিউটিনি , সেভেনটি ইয়ার্স লেটার,দ্য ওয়্যার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬)। তাঁর লেখা থেকে জানা যায় নাবিকরা বোম্বাইয়ের রাস্তায় `হিন্দু-মুসলিম এক হও` এবং `ইনকিলাব জিন্দাবাদ` শ্লোগান দেয়। বি সি দত্তের বইয়েও এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলা আছে। তিনি লিখেছেন আমরা নানা অঞ্চল থেকে এসেছি। হিন্দু, মুসলিম, খৃষ্টান, বৌদ্ধ সব পরিবার থেকে। নৌবাহিনীতে বছরের পর বছর কাটিয়ে আমরা নাবিকরা ভারতীয় হয়েছি। 


নৌবিদ্রোহের তাৎক্ষণিক সাফল্য না থাকলেও তা যে ভারতের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছে সেকথার স্বীকারোক্তি মেলে ক্লেমন্ট অ্যাটলির কথায়। ১৯৫৬ সালে তাঁর ভারত সফরের সময় কোলকাতা হাইকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি পি ভি চক্রবর্তীর সঙ্গে পরিচয় হয়। বিচারপতি চক্রবর্তী ১৯৭৬ সালের মার্চে লেখা এক চিঠিতে জানান যে মি অ্যাটলির সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ হয়েছে এবং তিনি তার বিবরণ প্রকাশ করেন। বিচারপতি চক্রবর্তী তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন ৪৭ এর অনেক আগেই মহাত্মা গান্ধীর ভারত ছাড় আন্দোলন যখন প্রায় থেমে গেছে তখন ব্রিটিশ সরকার তাড়াহুড়ো করে ভারত ছাড়লো কেন? মি অ্যাটলি অনেকগুলো কারণ বলেনঃ একটি হছে নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজ বা ভারতীয় ন্যাশনাল আর্মি গঠন যা ভারতে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে দূর্বল করেছে এবং অন্যটি হচ্ছে রাজকীয় নৌবাহিনীর বিদ্রোহ ( দ্য ফরগটেন নাভাল মিউটিনি অফ ১৯৪৬ অ্যান্ড ইন্ডিয়াস ইন্ডিপেন্ডেন্স, রত্নাকর সদাসিউলা, ১৯ ফেব্রসয়ারি, ২০১৬, স্বরাজ্য ম্যাগাজিন) ।  দুর্ভাগ্যজনক সত্য হচ্ছে,  যে রাজনীতির কারণে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সেই নৌবিদ্রোহ সফল হয়নি, উপমহাদেশ জুড়ে সেই সাম্প্রদায়িক বিভাজন-বিদ্বেষের রাজনীতিই এখন জোরদার হচ্ছে। 

 

আমার পিতা অবশ্য নৌবাহিনী্র ইন্সট্রাক্টরের পদ থেকে চাকরিচ্যূতির পর দেশভাগের আগেই ইন্ডিয়ান সিভিল সাপ্লাইয়ে চাকরি পান এবং অল্প কিছুদিন কোলকাতায় কাটানোর পর এপার বাংলায় বদলি হয়ে আসেন। পরে চাকরি বদলে বর্তমান ইউএনওদের পূরব্রুপ সার্কেল অফিসার হন। অবসরের সময় ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁকে যাঁরা চেনেন তাঁরা এই শেষ দুই পরিচয়েই চেনেন। কুড়ি বছর আগে ২৯ আগস্ট তাঁর জীবনাবসান ঘটে।


(২৯ আগস্ট, ২০২১ প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

How to Describe the Awami League Accurately?

In an article titled ‘How Not to Describe the Awami League’ , published in this paper, British journalist David Bergman rightly underscores the importance of accuracy in labeling a political party—particularly when such labels carry potential legal consequences. Those familiar with Bergman’s work over the years know that he has consistently taken on politically sensitive and controversial subjects, often at significant personal and professional cost. His courage and commitment to journalistic integrity deserve recognition. Bergman is correct in asserting that “while serious criticisms of the Awami League are both valid and necessary, they must be proportionate and grounded in fact.” His analysis focuses primarily on the legal validity and appropriateness of labeling the Awami League as “fascist” or “Nazi.” He argues that comparing the party to the Nazi regime trivialises the scale of Nazi atrocities and misrepresents the complexities of Bangladeshi politics. Indeed, any historical comp...

স্বৈরতন্ত্রের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার নিকৃষ্ট পরিণতি

ছাত্র–জনতার অভ্যূত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কথিত মন্তব্যে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। গত ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশ্য দেওয়া ভাষণ এবং সম্প্রতি মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপচারিতায় পরস্পরবিরোধী মন্তব্য – এই দুইয়ের একটি যে অসত্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিতর্ক শুরু হওয়ার পর তাঁর দপ্তর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা–ও অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ। তিনি সর্বশেষ বিবৃতিতেও মতিউর রহমান চৌধুরীকে অসত্য কথা বলার বিষয়টি স্বীকার যেমন করেন নি, তেমনি এমন দাবিও করেননি যে তাঁকে ভূলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।  ৫ আগস্ট যদি তিনি পদত্যাগপত্র গ্রহণের প্রশ্নে অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তা খুবই গুরুতর হিসাবে বিবেচিত হতে বাধ্য। কেননা তা ছিল জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের তথ্য। আবার যদি তিনি মানবজমিন সম্পাদকের কাছে আলাপচারিতায় অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তাঁর কাছে যে দেশবাসী প্রশ্নের জবাব চাইতে পারে, তা হলো অর্ন্তবর্তী সরকার যখন সবকিছু গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছে, দেশে স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টা চলছে, তখন তিনি কেন এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন? তাঁর উদ্দ...