সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সব লকডাউন মাটি হলো কেন

গত এপ্রিলের শুরু থেকে দেশে বিভিন্ন নামে যে লকডাউন চলছিল, সরকার তার ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কল-কারখানা, সরকারি-বেসরকারি অফিস, দোকানপাট – এগুলোর সবই খুলে দেওয়া হচ্ছে । প্রথমে ছিল সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় লকডাউন, তারপর জাতীয় পরিসরে সর্বাত্মক লকডাউন, অত:পর কঠোর লকডাউন এবং আরও কঠোর লকডাউন - এসবের অবসান ঘটছে। লকডাউনগুলোর বর্ণনায় সরকারের কর্তাব্যাক্তিরা যেসব বিশেষণ ব্যবহার করেছেন, তাতে যৌক্তিকভাবে ধারণা তৈরি হতে পারে যে আমরা করোনাকে পরাজিত করেছি। আর যদি পুরোপুরি পরাস্ত নাও হয়ে থাকে, তা অন্তত নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তৃতীয় আরেকটি সম্ভাবনাও থাকে। সেটি হচ্ছে বাস্তবে লকডাউন আর ধরে রাখা যাচ্ছে না বলেই তা আর কাগজে-কলমে রেখে দেওয়াটা  অর্থহীন মেনে নিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে বিধিনিষেধের ইতি টানা হচ্ছে।  

সরকারের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি এমন কোনো উপসংহারে পৌঁছেছেন কি না, তা অবশ্য জানানো হয়নি। তবে রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঘোষণায় বলা হয়েছে বুধবার থেকে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌপথে আসনসংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন বা যানবাহনও চলাচল করতে পারবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আরও জানিয়েছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গত ৩ আগস্ট আন্ত-মন্ত্রণালয় সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।  তবে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে কোনো ঘোষণা নেই। সম্ভবত: সরকারের ধারণা, শিশু-কিশোর-তরুণদের ঝুঁকি বেশি, যদিও বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় এদের ঝুঁকি কম বলেই টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের রাখা হয়েছে সবার শেষে।

 

করোনা সংক্রমণের যে ঢেউ এখন চলছে, তা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় মার্চের শেষ দিকে। প্রতিবেশী ভারতে রুপান্তরের মাধ্যমে নতুন রুপে আর্বিভূত ডেল্টা ধরণের দ্রুত বিস্তৃতিই এর প্রধান কারণ । তখন দেখা গেল, দৈনিক গড়ে ৫০ জনের মৃত্যু হচ্ছে এবং সংক্রমণ শনাক্তের দৈনিক গড় ছয় থেকে সাত হাজার। ৫ এপ্রিল যখন সাত দিনের বিধিনিষেধ শুরু হয় সে দিনের সংবাদপত্রের শিরোনাম ছিল ‘এক দিনে শনাক্ত ছাড়াল ৭০০০:  এক মাসে রোগী বেড়েছে ৯১ শতাংশ‘ (প্রথম আলো)।  এরপর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ সামান্য ওঠানামা করলেও পুরোটা সময় জুড়ে দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু কয়েক গুণ বেড়েছে। গত জুলাই মাসে দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ১৮২ জনের অর্থাৎ গড়ে দৈনিক ২০০ জন। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা এই মহামারিতে এর আগে কোনো মাসে এত মৃত্যু দেখেনি বাংলাদেশ।

 

লকডাউন অবসানের ঘোষণা যেদিন দেওয়া হলো সেদিনের সরকারি হিসাব বলছে তার আগের ২৪ ঘন্টায় আরও ২৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে ১০ হাজার ২৯৯ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যুর হার এবং রোগী শনাক্তের হার - দুটোর কোনোটিই লকডাউন শুরুর সময় থেকে কম নয়, বরং বেশি। মনে রাখা দরকার সরকারি পরিসংখ্যান নিয়ে বির্তকের অন্ত নেই। প্রথমত, শনাক্তকরণের পরিধি বাড়ানো হলে সংক্রমণের সংখ্যা যে বাড়তো, তা মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায়। উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর যেসব পরিসংখ্যান দেখা গেছে, তা থেকেও এর আলামত মেলে। দ্বিতীয়ত: মৃত্যুর হিসাব প্রধানত: সরকারি ব্যবস্থায় চিকিৎসারত অবস্থায় যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের সংখ্যা, বেসরকারি হাসপাতালের সব মৃত্যু যে গণনায় আসছে না, সে কথা মহামারির শুরু থেকেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে একাধিকবার তুলে ধরা হয়েছে।

 

‘দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা‘র কথায় বোঝা যায় রপ্তানিমুখী শিল্প, প্রধানত: পোশাকশিল্প খুলে দেওয়ার পর অর্থনীতির অন্যান্য খাতগুলোর হতাশা এবং চাপ সরকার টের পেতে শুরু করেছে। জনগোষ্ঠীর ঝুঁকিতে থাকা অংশকে টিকা দেওয়ার পর অর্থনীতিকে সচল করার কৌশল অনুসরণের যে আভাস দেওয়া হচ্ছিল, সেটাও শেষপর্যন্ত বাদ গেছে। ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা সামলে বিকল্প উৎস সন্ধান এবং অন্তত ১২ থেকে ১৩ কোটি মানুষের টিকা সংগ্রহ যে সময়সাপেক্ষ, সেটা মানতেই হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণে টিকার ব্যবস্থা হয় কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

জীবন না জীবিকা – কোনটি অগ্রাধিকার পাবে এই টানাপোড়েনে গত দেড়বছরের মধ্যে এখনকার চেয়ে সংকটজনক অবস্থা আর কখনোই হয় নি। কিন্তু সেই বিপন্ন সময়েই মনে হচ্ছে, জীবিকা বাঁচানোর তাগিদই বড় হয়ে উঠেছে। ইউরোপ করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ থেকে সবেমাত্র মাথা তুলতে শুরু করেছে। কিন্তু সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের সময় থেকেই প্রমাণিত হয়েছে যে সব দেশ লকডাউনের প্রশ্নে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেছে, সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেছে, তাদের চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। লকডাউন দিতে যত দেরি হয়েছে, তার স্থায়িত্ব তত বেশি দীর্ঘ হয়েছে। ব্রিটেন এর সবচেয়ে বড় নজির। বিশ্বে আর কোনো দেশেই এত বেশি দিন ধরে তৃতীয় দফায় এতটা কড়া লকডাউন দিতে হয়নি। কিন্তু তারপরও মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে এবং অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। প্রতিবেশি ভারতের নজিরও হতাশাজনক। যথাসময়ে প্রয়োজনমত ব্যবস্থা নিতে না পারার চরম মূল্য দিয়েছে দেশটি।

আশা ছিল, বাংলাদেশে ডেল্টার ধাক্কা যেহেতু একটু দেরিতে লেগেছে, সেহেতু আমরা অন্যদের থেকে শিক্ষা নিয়ে ঠিক সময়ে ঠিক মাত্রায় ব্যবস্থা নিতে পারব। ক্ষতির মাত্রা কমানো যাবে এবং দ্রুততম সময়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। কিন্তু সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের প্রায় সর্বসম্মত অভিমত, এবারও লকডাউন দিতে দেরি হয়ে গেছে এবং যেভাবে তা কার্যকরের কথা বলা হয়েছে, তা যথেষ্ট ছিল না। একাধিকবার অযৌক্তিক এবং সামঞ্জস্যহীন নির্দেশনা জারি করে তারপর সেগুলো বদলানো হয়েছে। আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ রেখে রাজধানী এবং জেলা শহরগুলোতে তা যেমন চলতে দেওয়া হয়েছে, তেমনই দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য সাময়িক বন্ধ ও সীমিত আকারে খোলার পালা বিক্ষিপ্ত ও সামঞ্জস্যহীনভাবে চলেছে।

স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও ব্যর্থতা বিস্ময়কর। দাতাদের সহায়তায় কেনা ৩০০ ভেন্টিলেটর, ১২০০ অক্সিজেন কনসেট্রেটর ১০ মাস যাবৎ বিমানবন্দরে পড়ে থাকার রেকর্ড, আধুনিক আইসিইউ শয্যা সংযোজন, শনাক্তকরণের আরটি-সিপিআর যন্ত্র কেনা – এগুলোর সবক্ষেত্রেই চিত্রটা হতাশাজনক। বিদেশি অর্থায়ন এবং দেশীয় বাজেটের বরাদ্দ থাকার পরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তা খরচ করতে পারেনি। অথচ মন্ত্রীদের কথায় মনে হয় প্রায় চার মাসের খাপছাড়া লকডাউন ব্যর্থ হওয়ার দায় দেশবাসীর, সরকারের নয়। বলা হয় মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানে না, ঘরে থাকে না বলেই সংক্রমণ বাড়ছে। মানুষের ঘরে খাবার না থাকলে তারা তো তা জোগাড়ের জন্য রাস্তায় বেরোবেই। অথচ ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগালে পরিস্থিতি এমন হওয়ার কথা নয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময়ে ত্রাণ কাজে সশস্ত্রবাহিনীর যে অভিজ্ঞতা রয়েছে, তা কাজে না লাগিয়ে তাদের নিয়োগ করা হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করার কাজে।

গরু এবং আম পরিবহনের জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হলো, কিন্তু পোশাকশ্রমিকদের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করার কথা নীতিনির্ধারকদের মাথায় এল না। এখন সব অফিস এবং ব্যবসা খুলে দিয়ে বলা হচ্ছে, যানবাহন অর্ধেকসংখ্যায় চলবে। তাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিসগামীরা অফিস করতে পারবেন - এই চিন্তা শুধু তাঁরাই করতে পারেন, যাঁরা করের টাকায় বিলাসবহুল গাড়িতে চলাচলে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। রোগ শনাক্তকরনের মতো টিকার রেজিষ্ট্রেশন ও টিকাকেন্দ্রের অবস্থাও যে কতটা শোচনীয়, তার ছবি গত দুদিনের পত্রিকার পাতায় ভালোভাবেই উঠে এসেছে। এধরণের জনসমাগমে কার্যকর স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন কীভাবে হতে পারে? টিকাকেন্দ্রই যদি সংক্রমণ ছড়ানোর উৎস হয়ে যায় তাহলে সেই টিকা কতটা কাজে আসবে? বিশ্বের অনেক দেশেই হাসপাতালের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে – অন্য রোগের চিকিৎসায় এসে সংক্রমণের শিকার হয়েছেন অনেকে।

অস্বীকার করার উপায় নেই যে খাপছাড়া নীতি, সমন্বয়হীনতা ও নীতি বাস্তবায়নে ব্যর্থতাই কারণেই বিভিন্ন নামে লকডাউন দীর্ঘায়িত হয়েছে। আর এই দীর্ঘায়িত হওয়ার পরিণতি হচ্ছে লকডাউনজনিত ক্লান্তি ও ধৈর্যচ্যূতি, যার কারণে তা এখন কার্যত ভেঙ্গে পড়তে চলেছে। সংক্রমণ এখন লাগামহীন রুপ নিলে, তার দায় কার?

(১০ আগস্ট, ২০২১-‘র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...