সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইভিএম, স্মৃতিভ্রম রোগ ও ডাকাত প্রসঙ্গ

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর চমকপ্রদ এক স্বীকারোক্তি মিলেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়ালের মুখ থেকে। তিনি তাঁর সহযোগী কমিশনার আনিছুর রহমানের `কিছুটা স্মৃতিভ্রমের` কথা বলেছেন। ইভিএমের ভুলত্রুটি ধরতে পারলে এক কোটি (১০ মিলিয়ন) ডলার পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণাকে উদ্ভট অভিহিত করে তিনি দাবি করেন, এ ধরনের উদ্ভট কথা তিনি (সিইসি) বলতেই পারেন না। ক্ষমতাসীন জোটের বাইরে অধিকাংশ দলের বর্জনপীড়িত বাছাইপ্রক্রিয়ায় মনোনীত নতুন কমিশন কোনো নির্বাচন পরিচালনার আগেই ধরা পড়ল যে তাঁদের অন্ততঃ একজন `কিছুটা স্মৃতিভ্রম` রোগে ভুগছেন। স্মৃতিভ্রম রোগ সাধারণত ডিমেনশিয়া নামে পরিচিত এবং এমন গুরুতর রোগে আক্রান্ত কারো পক্ষে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন সম্ভব কি না, এ প্রশ্ন হালকাভাবে দেখার অবকাশ নেই।  


ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর যা বলেছিলেন, তাকে সিইসি আউয়াল ছাড়া আর কেউ স্মৃতিবিভ্রমজনিত বলেছেন বলে শুনিনি। ২১ মে মাদারীপুরে ভোটার হালনাগাদকরণ বিষয়ক এক সভায় তিনি যা বলেছিলেন, তা একটু দেখে নেওয়া যাক। নির্বাচন কমিশনার আনিছুর বলেন, ‘আমাদের ইভিএম মেশিনের মতো সেরা মেশিন পৃথিবীর কোথাও নেই। রাজনৈতিক প্রতিটি দলে আইটি বিশেষজ্ঞ আছে তাদেরও আমরা আমাদের মেশিন দেখাব। তাদের হাতে ছেড়ে দেব, দেখান কোথায় ভুল আছে? আর কোন মেশিন কোথায় যাচ্ছে, কেউ জানে না। ইভিএমের কোনো ভুলত্রুটি যদি কেউ ধরতে পার্‌ তার জন্যে আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা প্রদান করেছেন।’ 


কমিশনার আনিছুর তাঁর বক্তব্যের আর কোনো ব্যখ্যা দেননি। এমনকি, সিইসি তাঁকে পাশে বসিয়ে স্মৃতিভ্রমের কথা বললেও তিনি কোনো রা করেন নি।এর দুটো অর্থ হতে পারে - হয় তিনি সত্যিই স্মৃতিভ্রম রোগে আক্রান্ত এবং সেকারণেই সিইসি আউয়ালের বক্তব্যের মানে বোঝার ক্ষমতা তিনি হারিয়েছেন, নয়তো সিইসির সামনে আমলাতন্ত্রের শিক্ষা অনুযায়ী `বস ইজ অলওয়েজ রাইট` নীতি মান্য করেছেন। স্বাধীন ও স্বতন্ত্র কোনো অবস্থান গ্রহণের মতো মানসিক দৃঢ়তা তাঁর নেই বলে  আত্মসম্মান রক্ষায় তিনি প্রতিবাদ বা পদত্যাগ কোনোটিরই প্রয়োজনবোধ করেননি। সংবিধানের ১১৮(৫) অনুচ্ছেদ বলছে, নির্বাচন কমিশনারদের অপসারণের বিষয়টি হবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অনুরুপ। আর সংবিধানের ৯৬(৫) বলছে, শারীরিক বা মানসিকভাবে দায়িত্বপালনের অক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও অনুরুপ পদাধিকারীর নিয়োগ অবসানের কারণ হবে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তদন্তসাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি তাঁকে অপসারণ করবেন। 


কমিশনার আনিছুরের বক্তব্যের অংশবিশেষকে অবশ্য প্রতিষ্ঠা করার তোড়জোড় বেশ জোরেশেরেই শুরু হয়েছে। আগামী নির্বাচনে সবার ঘাড়ে ইভিএম চাপিয়ে দেওয়ার জন্য নানাধরণের আয়োজন চলছে। এ রকম এক আয়োজনের অংশ হিসাবে দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন বিজ্ঞানীকে ইভিএম দেখিয়ে তার নির্ভরযোগ্যতার সার্টিফিকেট নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যাঁদের ডাকা হয়েছিল, সরকারঘনিষ্ঠতার কথা বাদ দিলেও, তাঁদের প্রতি যে বিরোধীদলগুলোর আস্থা আছে, এমন দাবি কেউই করতে পারবেন না। গণমাধ্যমে তাঁদের যেসব মন্তব্য প্রকাশ পেয়েছে, তাতে তাঁরা কেউই বলতে পারেন নি যে এই ইভিএম শতভাগ নির্ভুল। তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কথার প্রতিধ্বনি করে তাঁরা বলেছেন ইভিএমে কারচুপির আশঙ্কা নেই। ইভিএম যে সোর্স কোড ব্যবহার করবে, তা যাচাইয়ের সুযোগ না পেয়েও তাঁরা তাঁদের বিশ্বাসের কথা বলেছেন। 


ইভিএম নিয়ে ক্ষমতাসীন জোটের বিশেষ আগ্রহ নতুন কিছু নয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও হঠাৎ করেই ইভিএম আবির্ভূত হয় সরকারের উদ্যোগ ও উৎসাহে। সেবছর অক্টোবরে সংসদ অধিবেশনে থাকলেও ইভিএম এর জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয় নি। কিন্তু সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার কয়েকদিন পর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ( আরপিও) সংশোধন করে ইভিএমে ভোটগ্রহণের সুযোগ তৈরি কর হয়। রাতারাতি এ জন্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার সংস্থানও করা হয়। তবে সময় ও প্রস্তুতির অভাবে ইভিএম খুব সীমিত আকারেই ব্যবহৃত হয়েছিল। তারপর বিভিন্ন উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও সময়ে সময়ে এর ব্যবহার হয়েছে, যার কোনোটিই সন্তোষজনক হয়নি। হাতের ছাপ না মেলায় ভোটারদের ভোগান্তি ও ভোট গণনায় রহস্যজনক বিলম্বের মত ঘটনা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও ভোটারদের ক্ষুব্ধ করলেও নির্বাচন কমিশন তা একটুও গায়ে মাখেনি। ইভিএম নিয়ে সবচেয়ে বড় আপত্তির বিষয় ছিল কাগজে ভোটের কোনো রেকর্ড না থাকা, যাতে ভোট পুনর্গণনার অবকাশ থাকে ( ভারতে সুপ্রিম কোর্ট যাকে অত্যাবশকীয় বলে রায় দিয়েছে)। 


নতুন কমিশনের অন্যতম কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো আহসান হাবিব খান অবশ্য এখন সবচেয়ে বড় সমস্যাটির কথাই বলেছেন, যাকে তিনি ডাকাতি বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর কথায়, “গোপন কক্ষে একজন করে ‘ডাকাত’ দাঁড়িয়ে থাকে, এটাই ইভিএমের চ্যালেঞ্জ”। তিনি যেদিন এ কথা বললেন, সেদিনই চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘বাটন টিপে দিতে কেন্দ্রে আমার লোক থাকবে” । ওই প্রার্থী আরও জানিয়েছেন, ইভিএম না থাকলে তিনি রাতেই সব ভোট নিয়ে ফেলতেন। ইভিএমের বোতাম চেপে দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রে লোক রাখার বিষয়টি যে এর আগে ঘটেনি, তা নয়। স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর যেসব নির্বাচন নুরুল হুদা কমিশনের আমলে হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে যেখানেই ইভিএম ব্যবহৃত হয়েছে, সেখানেই এধরণের অভিযোগ উঠেছে। আর ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের এধরনের ডাকাতিতে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে সহায়কের ভূমিকাই পালন করেছে। 


নির্বাচনের জন্য প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ছাড়া কোনো ব্যবস্থাই যে কার্যকর হবে না, তা গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। সেই সমঝোতা ছাড়া ইভিএম নিয়ে কমিশনের অতিউৎসাহ বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দেবে, সেটাই স্বাভাবিক। আগামী নির্বাচন ইভিএমে হবে বলে সরকারপ্রধানের ঘোষণার পর ইভিএম নিয়ে কমিশনের অতি সক্রিয়তা যে একধরণের সন্দেহের জন্ম দেবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। নুরুল হুদা কমিশন ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছা প্রতিপালনে যে নির্লজ্জ ভূমিকা রেখেছে, তা সহসা কেউই বিস্মৃত হবে না। অবশ্য আউয়াল কমিশন পূর্বসুরির চেয়েও বেশি আনুগত্য দেখিয়ে হুদা কমিশনকে ছাড়িয়ে গেলে অন্যদের আর কী করার আছে? রকিব কমিশনের রেকর্ডকে হুদা কমিশন কীভাবে ম্লান করে দিয়েছে, তা তো সবারই জানা। 


প্রযুক্তিগত উন্নতিতে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা ইউরোপীয় দেশগুলোর অধিকাংশই নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ইভিএম বাদ দিয়ে কাগজের ব্যালটে ফিরে গেছে। বৃহৎ গণতন্ত্র ভারতে ইভিএম এর ব্যবহারকে  অনেকেই নজির হিসাবে দেখাতে চান। কিন্তু ভারতেও ইভিএম নিয়ে বিতর্ক ও অসন্তোষের শেষ নেই। প্রায় দুই দশক ধরে দেশটি ইভিএম ব্যবহার করে আসলেও সেখানকার বিরোধীদল কংগ্রেস কাগজের ভোটে ফিরে যাওয়ার কথা বলতে শুরু করেছে। পাকস্তানকে আমরা গণতন্ত্র হিসাবে মানতে না চাইলেও মাত্র গত সপ্তাহে সেখানে আগামী নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নাকচ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 


আগের কমিশন ইভিএম নিয়ে যেধরনের একগুঁয়েমি করেছে, তাতে ইভিএমের প্রতি মানুষের সন্দেহ ও অবিশ্বাস উল্টো বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছরে ইভিএম প্রকল্পের জন্য নতুন করে আরও প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই বিপুল খরচের যৌক্তিকতা দেখানোর জন্য অধিকাংশ দলের আপত্তি উপেক্ষা করে ইভিএমে ভোট করার সরকারি সংকল্পের বাস্তবায়ন যদি কমিশনের লক্ষ্য হয়, তবে তা রাজনৈতিক জটিলতা বাড়াবে বৈ কমাবে না।    


(২ জুন, ২০২২-এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...