সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

`অধিকার`-এর অধিকার হরণে অবিশ্বাস্য যুক্তি

বাংলাদেশ সরকার দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি মানবাধিকার সংগঠন `অধিকার`-এর নিবন্ধন নবায়নে অস্বীকৃতি জানানোর পর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের কাছে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি ব্যাখ্যা পাঠিয়েছে। ইনফরমেশন নোট নামে ৮ জুন পাঠানো এ ব্যাখ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অধিকারের আবেদনের কথিত কিছু ত্রুটি ও অতীত কার্যক্রমের `বিভিন্ন অনিয়ম` এর তালিকা তুলে ধরেছে, যাকে সংগঠনটির বিরুদ্ধে সরকারের অভিযোগের ফিরিস্তিও বলা যায়। প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদন নবায়নের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয় ৫ জুন এবং মাত্র তিনদিনের মধ্যে আন্তর্জাতিক পরিসরে যে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়, ধারণা করা অন্যায় হবে না যে তার মাত্রা উপলব্ধি করে সরকার এ ব্যাখ্যা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বলে রাখা দরকার, এ ধরনের পদক্ষেপ মোটেও স্বাভাবিক কিছু নয়। 


১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ও তার পরের বছরে সরকারের রেজিস্ট্রেশন পাওয়া বেসরকারি সংগঠন অধিকারের কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি নবায়নের আবেদনটি ২০১৪ সালের। কিন্তু তার অনুমতি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আট বছর পর। সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে অধিকার তার আবেদন নিষ্পত্তির জন্য আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার তিন বছর পর, যখন দীর্ঘ নীরবতার পর মাত্র গত ফেব্রুয়ারিতে সরকার হাইকোর্টে তার জবাব দাখিল করে এবং মামলাটির শুনানি শুরু হয়। এনজিও বিষয়ক ব্যুরো প্রধানকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আবেদনটি নিষ্পত্তি হলে আদালতে মামলা অব্যাহত রাখার আর কোনো কারণ থাকবে না বলে সরকার মনে করে। বোঝাই যাচ্ছে, বিচারাধীন বিষয় হওয়া সত্ত্বেও আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে কৌশলগত কারণে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।  


কৌশল নির্ধারণের সময়ে অবশ্য আমলাদের মনেই হয় নি যে অধিকারের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে  কিছুদিন ধরে যেসব বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তাতে দেশে-বিদেশে পর্যবেক্ষকরা সন্দেহ করতে শুরু করেছেন যে সংগঠনটি সরকারের রোষের মুখে রয়েছে। তাঁদের এই সন্দেহকে আসলে আশঙ্কা বলাই যুক্তিযুক্ত। কেননা গত ২১ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের দুটি কর্মপরিষদ বা ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং অর্ধডজন স্পেশাল র‍্যাপোর্টিয়ার যৌথভাবে এক জরুরি আবেদন প্রকাশ করেন, যাতে স্পষ্ট করে অধিকারের বিরুদ্ধে সরকারের প্রতিশোধের অভিযোগ সম্পর্কে তাঁরা তাঁদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। যাঁরা যৌথ জরুরি আবেদন জানিয়েছিলেন, তাঁরা হলেন গুম বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ, স্বেচ্ছাচারী আটকের উপর ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং বিচারবহির্ভূত, সংক্ষিপ্ত বা নির্বিচারে হত্যাবিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার, মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রসার ও সুরক্ষাবিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সমিতির অধিকার সংক্রান্ত স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার, মানবাধিকার রক্ষাকারীবিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার, নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তিবিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার এবং সত্য, ন্যায়বিচার, ক্ষতিপূরণ এবং পুনরাবৃত্তিবিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার। 


গুমের শিকার ৭৬ জনের তালিকা দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে গুম বিষয়ক কমিটি তথ্য চাওয়ার পর ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানির অভিযোগের পটভূমিতে মানবাধিকারবিষয়ক এসব কমিটি ও বিশেষজ্ঞ ওই যৌথ আবেদন জানায়। যৌথ আবেদনে গুমের অভিযোগ, র‌্যাবের ভূমিকা, ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজন, মানবাধিকার সংগঠক ও নাগরিক সংগঠনগুলোকে কোনোধরণের হয়রানি না করারও আহ্বান জানানো হয়।


প্রায় তিনমাস পর, গত ১২ মে সরকার ওই যৌথ আবেদনের একটি জবাব জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের দপ্তরে পাঠায়। সরকারের জবাবে অতীতের যুক্তিগুলোর পুনরাবৃত্তি করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব অভিযোগ ঢালাওভাবে অস্বীকার করা হয়। অপরাধ দমনে র‌্যাবের সাফল্যের ফিরিস্তি দিয়ে তাদের কর্মকাণ্ডের ন্যায্যতা প্রমাণের চেষ্টা করা হয় এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়। বেশিরভাগ অধিকার গোষ্ঠী এবং বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বহুদিন ধরেই এসব অভ্যন্তরীন তদন্তকে স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার অভাবের কারণে প্রত্যাখ্যান করে এসেছেন। ওই জবাবে আরও বলা হয়, "অধিকার ব্যাপকভাবে বাংলাদেশ, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে - তার `মাত্রাতিরিক্ত পক্ষপাতিত্ব` এবং আগাম ধারণাপ্রসূত বক্তব্যের জন্য পরিচিত, যা এর বিভিন্ন প্রতিবেদনে স্পষ্ট।" সরকারি জবাবে বলা হয়, `এছাড়া, অধিকারের শীর্ষ সদস্যদের একজনকে এর আগে বিএনপি-জামায়াত সরকার ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে নিয়োগ করেছিল, যে কারণে ওই সংগঠন জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বা অন্যান্য প্রক্রিয়ায় তথ্যের সূত্র হিসাবে একটি নিরপেক্ষ সংস্থার অযোগ্য গণ্য করা উচিত ...।`


এ ধরনের জবাবের পর অধিকারের লাইসেন্স নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত কি প্রমাণ করে না যে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা অমূলক ছিল না?  জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর ওএইচসিএইচআরের বিবৃতিতে তাই বলা হয়েছে, `অধিকারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থার রেকর্ড রয়েছে ২০১৩ সাল থেকে এবং "রাষ্ট্র-বিরোধী" ও "সরকার বিরোধী" কার্যকলাপের তকমা জুড়ে দেওয়ায়  প্রতীয়মান হয় তা আরও তীব্র হয়েছে।` আরও উদ্বেগজনক কথা তিনি যা বলেছেন, তা হলো, `জাতিসংঘের মানবাধিকার ব্যবস্থায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য জানানোর ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত নাগরিক সংগঠনগুলোর মধ্যে ভীতিকর প্রভাব ফেলবে।`


অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (ICAED) সহ সুপরিচিত বৈশ্বিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও একই রকম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে । এগারোটি সংগঠনের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত ' প্রমাণ করে মানবাধিকারের কাজকে স্তব্ধ করার জন্য সরকারের দৃঢ় সংকল্প`। তাদের মতে, "মানবাধিকার লঙ্ঘনের  জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করে, সেগুলোর তথ্য প্রকাশের জন্য অধিকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে  বাংলাদেশের সুনাম কলংকিত করা হচ্ছে।" নিবন্ধন বাতিলের প্রক্রিয়াটিকে এসব সংগঠন 'মানবাধিকার রক্ষক এবং সমালোচকদের রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিপীড়ন' হিসাবেও বর্ণনা করেছে। দেশের ভেতরেও সক্রিয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর জোট মানবাধিকার সুরক্ষা কমিটি এবং নেতৃস্থানীয় নাগরিকেরাও সরকারের ভাষ্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁরা সবাই সিদ্ধান্তটিকে সংবিধানে স্বীকৃত সংগঠন করার অধিকারের লংঘন অভিহিত করে তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। 


অধিকার প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় এবং অরাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো  নথিভুক্ত করে আসছে। তবে অধিকার প্রথমবারের মতো বিতর্কের মুখে পড়ে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ ভেঙ্গে দিতে পুলিশী অভিযানে হতাহত হওয়ার বিতর্কিত পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। সরকারি ভাষ্যের সঙ্গে অধিকারের পরিসংখ্যানে অমিলকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়, তার পরিণতিতে সংগঠনটির সম্পাদক আদিলুর রহমান খান এবং পরিচালক নাসিরুদ্দিন এলানের কারাগারে ঠাঁই হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনে দায়ের হওয়া মামলা দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকার পর সম্প্রতি তার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরিহাসের বিষয় হলো, সরকার ও ক্ষমতাসীন দল হেফাজতের সঙ্গে অনেক আগেই আপসরফায় পৌঁছালেও অধিকার এবং এর নির্বাহীদের ভোগান্তি এখনও চলছে।      


আরও বিস্ময়ের কথা হলো, অধিকার এর অনুমতি নবায়নের আবেদনটি ২০১৪ সালের হলেও তা প্রত্যাখ্যানের যেসব কারণ দেখানো হয়েছে, সেগুলো ২০১৬ সালের আইনে। অথচ ২০১৬ সালের আইন পাশ হওয়ার আগে (ভূতাপেক্ষ)  কার্যকর হওয়ার কোনো বিধান আইনটিতে নেই। ২০১৩ সালের মামলায় অধিকারের দপ্তর থেকে পুলিশ যেসব কম্পিউটার ও নথিপত্র জব্দ করেছে, সেগুলো এখনো তারা ফেরত পায় নি। অথচ, দাবি করা হচ্ছে, তাদের কাছে হিসাব ও নথিপ্ত্র চেয়েও পাওয়া যায়নি। বিষয়টি হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে দেওয়ার পর তারা কেন সাঁতরে পাড়ে উঠছে না, সে রকম প্রশ্ন করার মতো। একই কথা বলা চলে তাদের বিদেশি তহবিলের হিসাবের বিষয়ে। কেননা ২০১৪ সালের পর থেকে তাদের বিদেশি অনুদান গ্রহণও সরকারি অনুমতির অভাবে বন্ধ রয়েছে। এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সংগঠনটি সক্রিয় আছে  এবং গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও সীমান্ত হত্যাসহ সব ধরনের অধিকার লঙ্ঘনের মাসিক এবং বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসেছে। সন্দেহ নেই, এসব কাজ তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। 


বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় এক দশকজুড়ে যখন দেশের ভেতরে-বাইরে উদ্বেগ বাড়ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র দেশের সবচেয়ে চৌকস বাহিনী র‍্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তখন  মানবাধিকারের বিষয়ে প্রয়োজন অতিরিক্ত সতর্কতা। অথচ উল্টো মানবাধিকার পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত একটি স্বেচ্ছামূলক সংগঠনের বিরুদ্ধে `রাষ্ট্রবিরোধী` ও `সরকারবিরোধী` প্রচারের অভিযোগ তুলে তার সংগঠন করার অধিকার হরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠকরা যে একে রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসাবে অভিহিত করছেন, তাতে কি অবাক হওয়া চলে?  


(১৫ জুন, ২০২২-এর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...