সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মানবাধিকার পরিষদে বাংলাদেশের হতাশা

জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ গত মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর এব বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হয়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর রাষ্ট্রীয় সহিংসতার কঠোর নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে, পরিষদ রোহিঙ্গা মুসলমান জনগোষ্ঠী ছাড়াও অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর সবার সুরক্ষা ও মৌলিক মানবাধিকারসমূহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। পরিষদের সপ্তবিংশতি বিশেষ অধিবেশনে এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করে সউদি আরব এবং বাংলাদেশ। মানবাধিকার পরিষদের এই বিশেষ অধিবেশনটিও ডাকা হয় বাংলাদেশের উদ্যোগে। ৪৭ সদস্যের এই পরিষদে এধরণের বিশেষ অধিবেশন ডাকতে হলে অন্তত ষোলোটি দেশের সমর্থন প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের উদ্যোগে সমর্থন দেয় তেত্রিশটি সদস্য রাষ্ট্র এবং চল্লিশটি পর্যবেক্ষক দেশ। আপাতদৃশ্যে এটি বাংলাদেশের কূটনীতির একটি ভালো সাফল্য।

কিন্তু, প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাশ না হওয়ায় বাংলাদেশ হতাশা প্রকাশ করেছে। প্রস্তাবটি ভোটে দেওয়া হয় চীনের আপত্তিতে। চীন প্রকাশ্য এবং রেকর্ডকৃত ভোট দাবি করে। ভোটের হিসাবে দেখা যায় বিপক্ষে ভোট পড়েছে চীন, বুরুন্ডি এবং ফিলিপাইনের। ভারত, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভেনিজুয়েলা, কেনিয়া, মঙ্গোলিয়া, ইথিওপিয়া, ইকুয়েডর এবং কঙ্গো ভোটদানে বিরত থাকে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সদস্য শামীম আহসান একটি গুরুতর মানবিক এবং মানবাধিকার সংকট বিষয়ক প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিতে হতাশা প্রকাশ করেন।  তিনি বলেন যে মানবাধিকার পরিষদের সদস্যদের উচিত ছিল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখে বিষয়টিকে বস্তুনিষ্ঠভাবে দেখা। ব্যাপকভিত্তিতে আলোচনা এবং সবার মতামতকে বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবের খসড়া প্রণয়নের পরও তার পক্ষে সবার সমর্থন না আশায় তিনি এই হতাশা প্রকাশ করেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান যেইদ রাদ আল হুসেইন যখন চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন যে মিয়ানমারে যা ঘটেছে তাতে গণহত্যার উপাদান আছে এই সত্য কে অস্বীকার করতে পারবে তখন সর্বসম্মত প্রস্তাব পাশ না হওয়ায় হতাশ বোধ হতেই পারে। কিন্তু, কূটনীতিকরা সাধারণত: অনেক রাখ-ঢাক করে কথা বলেন, বিশেষত: আনুষ্ঠানিক ফোরামে। অথচ, জেনেভায় মানবাধিকার ফোরামে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেল। প্রশ্ন হচ্ছে এই হতাশার কারণ কি? অধিবেশনের শুরুর দিকে যেখানে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের পটভূমি ব্যাখ্যা করে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের প্রশংসা করলেন। এর মানে কি চীন এবং ভারতের অবস্থান যে বদলায়নি সে কথাটি আমরা অধিবেশনের আগে বুঝতে পারিনি?

মানবাধিকার পরিষদে প্রায় ছয় ঘন্টা ধরে চলা বিতর্কে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার অস্বীকার এবং সংগঠিত ও পরিকল্পিতভাবে তাদের মানবাধিকার লংঘন ও নিপীড়ণ-নির্যাতনের নিন্দা এবং মানবিক সংকটে উদ্বেগ প্রকাশে প্রায় সবাই ছিলেন সরব। তবে, চীন, ভারত এবং জাপানের প্রতিনিধিদের বক্তব্যে স্পষ্টতই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার বিষয়টিকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চীন প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছে মানবাধিকার পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাব দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা বাস্তবায়নে জটিলতা সৃষ্টি করবে। প্রতিনিধিদলের সদস্য জিয়াং দুয়ান বলেছেন দ্বিপক্ষীয় আলোচনাই সংকটের একমাত্র সমাধানের পথ। দুই পক্ষ যে চুক্তি করেছে সেই সমঝোতা বাস্তবায়নে সহায়তা করাই এখন গুরুত্বর্পূণ। জেনেভায় জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রাজিব কুমার চন্দরও একই বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করেন। তিনি বলেন যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উচিত হবে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে পরিচয় যাচাইয়ের একটি পদ্ধতিগত ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা। তাঁর মতে মানবাধিকার পরিষদের উচিত রাখাইন রাজ্যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে উভয় দেশকে একযোগে কাজ করতে উৎসাহিত করা উচিত।

২৩ নভেম্বর নেপিডোতে একটি দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থাপত্র বা বন্দোবস্ত সই করে আসার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী  অকপটে স্বীকার করেছিলেন যে মিয়ানমার চেয়েছিল বলে তিনি ওই বন্দোবস্তে রাজি হয়েছেন। আমি ওই সমঝোতাকে প্রতিবেশীর ইচ্ছেপূরণ অভিহিত করায় কেউ কেউ অনুযোগ করে বলেছিলেন যে বাংলাদেশে প্রতিবেশী বলতে সাধারণত ভারতকে সবাই বুঝে থাকে। সুতরাং, মিয়ানমারের ইচ্ছেপূরণকে কি প্রতিবেশীর ইচ্ছেপূরণ বলা ঠিক হচ্ছে? মানবাধিকার পরিষদে ভারতীয় প্রতিনিধির বক্তব্যের পর মানতেই হচ্ছে যে আমার বলা উচিত ছিল প্রতিবেশীদের( মিয়ানমার, ভারত এবং চীন) ইচ্ছাপূরন। আমাদের নিকট প্রতিবেশী না হলেও উন্নয়ন কার্যক্রমে বড় অংশীদার জাপানের প্রতিনিধি মিস মিতসুকো শিনোও ভোটদানে বিরত থাকার নিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যেকার দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ওপর জোর দিয়েছেন।

মানবাধিকার পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে সাধারণ আলোচনায় চীনের বক্তব্য আরও তাৎপর্য্যর্পূণ। ওই বক্তব্যে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি মা ঝাওজু বলেন চীন মিয়ানমারের শান্তি ও নিরাপত্তারক্ষার বিষয়টিকে সমর্থন করেছে। চীন বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারকে জরুরি সাহায্য দিয়েছে এবং রাখাইন রাজ্যের বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ ও ন্যায্য অবস্থান নিয়েছে। আলোচনাই একমাত্র সমাধানের পথ বলে চীন বিশ্বাস করে। তিনি জানান যে চীন তিন পর্যায়ে সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রথমত: সহিংসতা বন্ধ এবং স্থিতিশীলতা ও শৃংখলা পুনপ্রতিষ্ঠা। দ্বিতীয়ত: বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার শরণার্থী প্রতাবাসনে যাতে একসঙ্গে কাজ করে সেজন্য আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের উৎসাহ প্রদান এবং তৃতীয়ত: সংঘাতের মূল কারণ রাখাইন রাজ্যের দারিদ্র সমস্যার সমাধান। মিয়ানমারের ওপর চীনের ব্যাপক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় যাঁরা ভরসা করেছিলেন তাঁদের জন্য নিসন্দেহে এটি দু:সংবাদ। স্পষ্টতই সৎ ও ন্যায়পরায়ণ মধ্যস্থতা তার কাছ থেকে আশা করা যায় না। পাশাপাশি, মিয়ানমারে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকা ভারতের কাছ থেকেও ভিন্ন অবস্থান আশা করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। ভারতের বর্তমান শাসকদলের মুসলিমবিদ্বেষী  রাজনীতিও এক্ষেত্রে বিচেনায় রাখা প্রয়োজন। 

মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বন্দোবস্ত কতোটা সুবিবেচনাপ্রসূত ছিল এই প্রশ্নের জবাব বোঝা খুব একটা কঠিন নয়। মানবাধিকার পরিষদে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন বাংলাদেশ কয়েক যুগ ধরে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে সমস্যাটির সমাধান করতে চেয়ে, কিন্তু ২০০৫ সালের পর থেকে কোনোধরণের সাড়া মেলেনি। তাঁর কথায় সাম্প্রতিক দ্বিপক্ষীয় বন্দোবস্ত একটি সমন্বিত র্দীঘমেয়াদি সমাধানের একটি উপাদানমাত্র। তিনি প্রায় একই সঙ্গে বলেছেন যে মিয়ানমারের ওপর আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত চাপ ছাড়া তার বিভিন্ন অঙ্গীকার পুরণ হওয়ার নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাঁর সাম্প্রতিক ক্যাম্বোডিয়া সফরের সময়ে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এই সমস্যার সমাধানে সহায়তা চেয়েছেন।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আমরা যখন আর্ন্তজাতিক সহায়তা চাইছি তখন মিয়ানমারের চাওয়া পূরণ করে যে দ্বিপক্ষীয় বন্দোবস্তে আমরা সম্মত হয়েছি তাকে আত্মঘাতি অভিহিত করা যাবে তা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু সেটি যে জোরোলো আর্ন্তজাতিক উদ্যোগকে নিরুৎসাহিত করছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।  মানবাধিকারের বিভিন্ন বিষয়ে জাতিসংঘ নিযুক্ত যেসব স্বাধীন বিশেষজ্ঞ (স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার) কাজ করেন তাঁদের সমন্বয় কমিটির চেয়ারপারসন হলেন ক্যাটালিনা আগুইলার ডেভানডাস। মিস ক্যাটালিনা ডেভানডাস মানবাধিকার পরিষদে ওই দ্বিপক্ষীয় বন্দোবস্তে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন সমঝোতায় রোহিঙ্গা শব্দটি  যেমন এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে তেমনই শরণার্থী পরিভাষাও ব্যবহৃত হয় নি। শরণার্থী পরিভাষা ব্যবহৃত না হওয়ায় মিয়ানমার থেকে যাঁরা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা যে নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন সেকথা  উভয় সরকারই কার্য্যত অস্বীকার করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। নাগরিকত্ব যাচাইয়ের যেসব বিধান দ্বিপক্ষীয় বন্দোবস্তে যুক্ত হয়েছে তাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা দুরুহ হয়ে পড়বে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন ওই শর্তগুলো কোফি আনান কমিশনের সুপারিশের পরিপন্থী। মিস ক্যাটালিনার ব্যাখ্যাকে নাকচ করা কঠিন। একইসঙ্গে ওই ব্যাখ্যা যদি সত্য হয় তাহলে বাস্তবে কোনো রোহিঙ্গার স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে না। উপরন্তু, জবরদস্তিমূলক প্রত্যাবাসনের চেষ্টা হলে দু:সময়ে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে প্রশংসা কুড়িয়েছে রাতারাতি তা নিন্দার জোয়ারে ভেসে যাবে।

কূটনীতি সাধারণত কোনো একক সরলরেখায় পরিচালিত হয় না। নানাবিধ কৌশল এবং উদ্যোগ পাশাপাশি চালু রাখার বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু, একেবারে বিপরীতধর্মী কৌশল অনুসরণের দৃষ্টান্ত বিরল। কেননা, এতে করে প্রতিপক্ষ, মিত্র এবং নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকা সবাই বিভ্রান্ত হয়। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় কূটনীতির অঙ্গণে বাংলাদেশের অবস্থান অনেকটাই সংশয়র্পূণ এবং অসংলগ্ন। শুরুতে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়ে প্রতিবশী দেশে গণহত্যা বা জাতিগত নিধন অভিযানের বিরুদ্ধে যে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছিল সেখান থেকে প্রায় ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে দ্বিপক্ষীয় বন্দোবস্তই আমরা শ্রেয় মনে করেছি। এখন আবার মিয়ানমারের ওপর আর্ন্তজাতিক চাপ বজায় রাখার কথা বলা হচ্ছে । কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী যে দেশটি সফর করে বিশ্বসম্প্রদায়ের সহযোগিতা চাইলেন তারা কতোটা কার্য্যকর প্রভাব রাখতে সক্ষম সেটিও প্রশ্নসাপেক্ষ। 


গণহত্যার জন্য দায়ী খেমাররুজ নামে কুখ্যাতি পাওয়া বাহিনীর সাবেক একজন অধিনায়ক হুনসেন বিশ্বের র্দীঘতম সময় ধরে দেশ শাসনের অধিকারী। কর্তৃত্বপরায়ণতা, প্রতিপক্ষের প্রতি নিষ্ঠুরতা এবং মানবাধিকার লংঘনের জন্য ব্যপকভাবে সমালোচিত হুনসেন এর পৃষ্ঠপোষক এবং ঘনিষ্ঠ মিত্র হচ্ছে চীন। এছাড়া, র্পূব এশিয়ার যেসব দেশে মানবাধিকারের প্রশ্নটি খুব একটা গুরুত্ব পায় না সেসব দেশের সঙ্গে তাঁর সুসর্ম্পক থাকলেও বাকি বিশ্বের থেকে তিনি অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। ক্যাম্বোডিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। সুতরাং, আরেকটি বৌদ্ধপ্রধান দেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তার সমর্থন পাওয়া কতটা বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা তা স্পষ্ট নয়। আমাদের র্পূবমুখী কূটনীতি যে খুব একটা কাজে আসছে না তার প্রমাণ মানবাধিকার পরিষদে ফিলিপাইন এবং লাও প্রজাতন্ত্রের বক্তব্য। রোহিঙ্গা সংকটে কার্য্যকর এবং ব্যাপকতর বৈশ্বিক সমর্থন আদায়ই যদি আমাদের লক্ষ হয় তাহলে কৌশলটাও আরেকটু বাস্তবসম্মত হওয়া প্রয়োজন। 

(প্রথম আলোয় বিশ্বায়নের কাল কলামে গত ৮ ডিসেম্বর, শুক্রবার প্রকাশিত।) 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...