সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গুমের স্বীকারোক্তি

গুমের ব্যাপারে সরকারীভাবে অন্তত একটি স্বীকৃতি পাওয়া গেল। স্বীকারোক্তিটি এসেছে ঢাকা মহানগর ‍পুলিশের একজন উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার এর মুখ থেকে (সব সময় বলতে পারি না: জঙ্গি নিয়ে পুলিশ , বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)। বৃহস্পতিবার ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের এক সভায় তিনি বলেছেন তাঁরা কাউকে কাউকে নিয়ে গেলেও কৌশলগত কারণে তা বলতে পারেন না। জঙ্গিবাদবিরোধী ওই সভায় তিনি ওই হাসপাতালের একজন ইর্ন্টান চিকিৎসক শামীম খানকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন। শামীম খানকে ত্রিশ ঘন্টা পর অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। হঠাৎ করে নিখোঁজ হওয়া যাঁরা শেষপর্যন্ত ফিরে এসেছেন তাঁরাও যেমন তাঁদের অজ্ঞাতবাসের রহস্য নিয়ে মুখ খোলেননি , ডঃ শামীমও তাঁর ব্যাতিক্রম নন।

ঘটনার সাক্ষী সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া। ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে জানান যে, “চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটির মসজিদে বোমা হামলায় জড়িত দুজনকে ওই ছাত্র মেডিকেলের ছাত্রাবাসে আশ্রয় দিয়েছিল বলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত হয়েছিল। পরে ছাত্রাবাসে এসে ওই দুজনকে না পেয়ে আশ্রয়দাতা ওই ছাত্রকে ধরে নিয়ে যায়। পরে ইন্টার্নির বাকিটা শেষ করতে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠানো হয়।” স্পষ্টতই: এই রহস্য এতোদিন চেপে রাখতে আইন-শৃংখলাবাহিনীকে সহযোগিতা দিয়েছেন দেশের একটি মেডিকেল কলেজের পরিচালক।

পুলিশের উপ-কমিশনার স্পষ্ট করে বলেছেন, 'উত্তম দা (হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া) সাক্ষী, এক বছর আগে আপনারা মানববন্ধন করেছেন, রাস্তা অবরোধ করেছেন। আমরা নিয়ে গিয়েছি, আমরা তো বলতে পারি না সব সময়। কারণ তার কাছ থেকে তো অনেক কিছু বের করতে হবে। সব কথা বলা যায় না। সহজ কথা যায় না বলা সহজে।'

ডা. শামীমের ঘটনাটি গতবছরের পহেলা জানুয়ারির। দিনটি ছিল শুক্রবার। জুমার নামাজের পর তিনি হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ফিরে যাওয়ার পথে তাঁকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন দোসরা জানুয়ারি রাতের বেলায় তাঁকে মিন্টু রোডে গোয়েন্দা বিভাগের অফিসের কাছে ফুটপাতে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। বাংলা ট্রিবিউন নামের অনলাইন পোর্টালে ওই বছরের ১৪ই জানুয়ারি একটি প্রতিবেদনে বলা হয় যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্ত করে দেখেছে ডা. শামীমকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দল উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। ঢাকার সংশ্লিষ্ট থানাকে না জানিয়ে এধরণের অভিযান পরিচালনার জন্য  পুলিশের সদর দপ্তরে ডিএমপির পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগও করা হয়। দেশে আইন-শৃংখলা রক্ষায় একাধিক বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিশেষায়িত ইউনিট কাজ করে। এখন পুলিশের একটি ইউনিট যদি আরেকটি ইউনিটকে না জানিয়ে কাউকে উঠিয়ে নিয়ে যায়, তাহলে অন্যান্য নিরাপত্তাসংস্থাও যে একই অনুশীলনে অভ্যস্ত নয় সেকথা বিশ্বাস করা কঠিন। নারয়াণগঞ্জে সাতখুনের মামলার কথা আমরা সবাই জানি। একটি চৌকষ বাহিনীর একটি ইউনিট সেখানে অপরাধীচক্রের হয়ে কিভাবে সাতজনকে গুম করে দিয়েছিল তার বিবরণ আদালতই প্রকাশ করেছেন।

মাত্র সপ্তাহ তিনেক আগে আমি লিখেছিলাম ‘এখন ৫৪ ধারার বদলে যদি গুমকে কোনো সংস্থা হাতিয়ার করতে চায়, তাহলে তা হবে সত্যিই দুর্ভাগ্যের বিষয়। অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে নির্যাতন করে বা ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তিতে রাজি করিয়ে তবেই গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নও উঠছে ( নিখোঁজ, আত্মগোপন নাকি গুম? প্রথম আলো, ২২ নভেম্বর, ২০১৭)।‘ পুলিশ কর্তা বিপ্লব কুমার সরকারের কথায় এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়।

মানবাধিকার নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা এই উদ্বেগের কথা খোলামেলা বলতে পারছিলেন না। কিন্তু, ব্যাক্তিগত আলাপচারিতায় তাঁদের অনেকেই ওই আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেছেন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো একসময়ে ফৌজদারি আইনের ৫৪ ধারায় সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করে ১৬৭ ধারায় পুলিশি হেফাজতে বা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন কৌশল (কথিত মতে নির্যাতন) প্রয়োগ করে স্বীকারোক্তি আদায় এবং সাক্ষ্য–প্রমাণ জোগাড় করতে পারত। কিন্তু ২০১৬ সালের ২৪ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি সিদ্ধান্তের পর তারা আর ফৌজদারি আইনের ৫৪ ও ১৬৭ ধারার যথেচ্ছ প্রয়োগ করতে পারছে না। ১৯৯৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শামীম রেজা রুবেল পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনে মারা যাওয়ার পর গণ–আন্দোলনের মুখে সরকার যে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করে, সেই কমিশনই আসলে ওই দুই আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধে কিছু সংস্কারের সুপারিশ করে। কিন্তু পাঁচ বছরেও সরকার সেই সুপারিশ বাস্তবায়নের পথে না যাওয়ায় হাইকোর্টে জনস্বার্থমূলক একটি রিট আবেদন করে বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্ট। সেই মামলার পরিণতিতেই ৫৪ ও ১৬৭ ধারার যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ আসে এবং আপিল বিভাগও ওই আদেশ বহাল রাখে।

দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আইনের বিধান এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা বলছে পুলিশ বা নিরাপত্তাবাহিনী কাউকে আটক করলে তাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে। আটক হওয়া ব্যাক্তিকে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ কি তা জানাতে হবে এবং তাঁর পরিবার এবং আইনজীবির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী বিরোধীদলে থাকার সময়ে যে বেসরকারী সদস্য হিসাবে যে হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ বিল উত্থাপন করেছিলেন তা গত সংসদে আইন হিসাবে পাশ হয়েছে। আমরা জানি ২০১৭র জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনকে পাশ কাটানোর মত ব্যবস্থা হয় এমন সংশোধনী আনার দাবি জানিয়েছিল।

পুলিশ কর্তা বিপ্লব সরকারের কথায় একধরণের সরল স্বীকারোক্তি থাকায় আমরা তাঁকে বাহবা দিতে পারি, ধন্যবাদ জানাতে পারি। বিশেষ করে যেখানে মন্ত্রীরা অহরহই বলে থাকেন যে বাংলাদেশে কোনো গুম নেই। পাওনাদারকে এড়াতে কিম্বা প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলতে রাজনৈতিক কর্মীরা কেউ কেউ আত্মগোপন করছেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে নিখোঁজ বা হারিয়ে যাওয়া হাজার হাজার মানুষের পরিসংখ্যানের কথাও আমরা এখন শুনতে শুরু করেছি। কিন্তু, একজন মানুষের ইচ্ছাকৃতভাবে আত্মগোপন করা বা পালিয়ে যাওয়া, রাস্তাঘাট না চেনায় নতুন জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে কাউকে ভয় দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তুলে নিওেয়া যাওয়াকে কিভাবে এক কাতারে মেলানো সম্ভব তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। গুমের সংজ্ঞা জাতিসংঘ ঠিক করে দিয়েছে। ওই ব্যাখ্যা অনুযায়ী গুম বা মানুষ অপহরণে রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের একটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা থাকে, এর পিছনে থাবে রাজনীতি। আমাদের দেশে যাঁরা গুম হয়েছেন বলে খবর বেরিয়েছে সেগুলোর অধিকাংশের ক্ষেত্রে পরিবার এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন যে আইন-শৃংখলাবাহিনীর পরিচয়েই তাঁদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর, সাম্প্রতিকতম সংযোজন হচ্ছে পথিমধ্যে গাড়ি থেকে উঠিয়ে নেওয়া যেখানে সাক্ষী পাওয়া কঠিন। কূটনীতিক মারুফ জামান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান কিম্বা সাংবাদিক উৎপল দাস এর মত যাদের অর্ন্তধানের বিষয়ে এখনও ন্যূনতম কোনো তথ্য মেলেনি তাঁদের সম্পর্কেও হয়তো কোনোদিন কোনো একজন কর্তাব্যাক্তির স্বীকারোক্তি শোনা যাবে যে ‘সব কথা বলা যায় না।‘

সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হচ্ছে প্রায় সবক্ষেত্রেই পুলিশের অসহায়ত্ব অথবা নিষ্ক্রিয়তা। অসহায়ত্বের একটি বোধগম্য কারণের ইঙ্গিত পাওয়া যায় ডা. শামীমের ঘটনায়। স্থানীয় পুলিশকে না জানানোয় কোন সংস্থা বা ইউনিট কাকে নিয়ে যাচ্ছে তার কোন খেই ধরা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আর, নিজেরাই যদি কাজটি করে থাকেন তাহলে তাঁরা যে নিষ্ক্রিয় থাকবেন সেটাইতো ম্বাভাবিক। প্রশ্ন হচ্ছে এধরণের উঠিয়ে নিয়ে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে কোন আইনে। আর কোনো আইন না থাকলে এসববাহিনীর কারোরই তো কোনো জবাবদিহিতার প্রশ্ন নেই। জবাবদিহিতার আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলে অনেক দূর্র্নীতিগ্রস্ত অসৎ কর্মকর্তারাও এধরণের অপরাধ করতে পারেন। চট্টগ্রামে কিছুদিন আগে একজন ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টার দায়ে ডিবির কয়েকজন সদস্যকে সেনাবাহিনী আটক করে থানায় সোর্পদ করার ঘটনা এখানে স্মরণ করা যায়।

আইনবহির্ভূত কোনো কৌশল অপরাধ দমনেও যেমন কাঙ্ক্ষিত নয়, তেমনি সন্ত্রাসবাদ দমনের ক্ষেত্রেও তা সমর্থনযোগ্য নয়। আইনের বাইরে শুধু শক্তিপ্রয়োগে সন্ত্রাস মোকাবেলার কৌশলে যেটুকু সাফল্য আসে তা সাময়িক এবং ঠুনকো। অধিকাংশ দেশের অভিজ্ঞতা তাই বলে। আমাদের রাজনীতিকদের তাই এখন  উচিত হবে প্রতিটি গুমের অভিযোগের স্বাধীন এবং স্বচ্ছ্ব তদন্তের ব্যবস্থা করা। উচ্চ আদালতও এক্ষেত্রে স্বতপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসতে পারে। এধরণের স্বীকারোক্তির পর গুমের অভিযোগ উপেক্ষার আর কোনো অবকাশ নেই।

(প্রথম আলোয় বিশ্বায়নের কাল কলামে ১৭ ডিসেম্বর, রোববার প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...