সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গুমের রহস্য উদঘাটন হবে কি?

মুবাশ্বার এবং উৎপল ফেরৎ এসেছেন এগুলো ভালো খবর। অনিরুদ্ধ, জোহাদের মত আরও কয়েকজন যাঁরা ফিরে এসেছেন তাঁদের ফিরে আসাও আনন্দের। কিন্তু, খারাপ খবর হচ্ছে অপরাধটির কথা আমরা ভুলে যাচ্ছি। এতোবড় ঘৃণ্য অপরাধের বিচারটাও তাঁরা চাইতে পারছেন না। তাঁরা এবং তাঁদের পরিবারগুলো কখনেই কি আতংকমুক্ত হতে পারবে? তানাহলে সত্যও জানা হবে না। এতোটা ঘন জনবসতির দেশে এমন জায়গা কতোগুলো আছে যেসব জায়গায় এতোজনকে মাসের পর মাস আটকে রাখা যায়? অনেকেই যে এখনও ফেরেননি সেকথাটি আমরা ভুলে যাচ্ছি নাতো? কাউকে কাউকে পাওয়া গেছে লাশ হিসাবে, আর কারো কারো পরিবার বছরের পর পর বছর অপেক্ষায় আছে।
অরাজনৈতিক বুদ্ধিজীবিদের কেউ গুম হলে তা নিয়ে নাগরিক সমাজে যতটা কথা হয় রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য ততটা কি হয়? রাজনৈতিক নেতাকর্মী যাঁরা গুম হয়েছেন তাঁদের কেউ ফিরে এসেছেন বলে শোনা যায় না। এঁদের অনেকের পরিবারই সবচেয়ে খারাপ পরিণতিটাই ধরে নিয়ে চোখের পানি সামলাচ্ছেন। 
গুমের রহস্য উদঘাটন হওয়া প্রয়োজন। কেউ স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করে থাকলে তারও জবাবদিহিতা থাকতে হবে। টাকা আদায়ের জন্য কোনো অপরাধীচক্র অপহরণ করে থাকলে সেই অপরাধীদের বিচার করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সুতরাং, অপরাধটি ভোলা চলবে না।
এর চেয়েও বড় পরিহাস হচ্ছে গুমের শিকার পরিবারগুলোর স্পর্শকাতর অনুভূতিকে নিয়মিত আঘাত করে।  ক্ষমতাসীনদের প্রায়শই অবিশ্বাস প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রেও প্রতিদিন মানুষ গুম হয় বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা হয়। 
নিখোঁজ আর গুমের তফাৎ না বোঝার ভাবলেশহীন রাজনীতি বড়ই অমানবিক। এর অবসান হওয়া জরুরি। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...