সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তোপের মুখে সাংবাদিকতা


বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকতা এখন তোপের মুখে ( অ্যাক্রস দ্য ওর্য়াল্ড, জার্নালিজম ইস আন্ডার ফায়ার) কথাগুলো আমার নয়, জাতিসংঘের সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বৈশ্বিক প্রবণতা বিষয়ে সংস্থা ২০১৭-১৮ সালের যে বার্ষিক প্রতিবেদন (ওর্য়াল্ড ট্রেন্ডস ইন ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন অ্যান্ড মিডিয়া ডেভলেপন্ট গ্লোবাল রির্পোট ২০১৭-১৮) আজ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করছে তার প্রথম বাক্যই এটি। আর, সেই আগুন যে কতটা ভয়ানক এবং প্রাণঘাতি তার সর্বসাম্প্রতিক নজির ৩০ এপ্রিল, সোমবার যেদিন আফগানিস্তানে দুটো পৃথক হামলায় দশজন সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একটি ঘটনাতেই কাবুলে নিহত হয়েছেন নয়জন যা সম্ভবত ইতিহাসে একসঙ্গে সর্বাধিক সাংবাদিক হত্যার ঘটনা। সপ্তাহ দুয়েক আগে ফিলিস্তিনী গণআন্দোলনের খবর সংগ্রহ করার সময়ে ইজরায়েলী সৈন্যদের গুলিতে নিহত হয়েছেন ফিলিস্তিনী সাংবাদিক ইয়াসির মোর্তজা।
আফগানিস্তানের হামলা দুটোর আগেই এবছরে বিশ্বের নানাপ্রান্তে পেশাগত কাজের জন্য প্রাণ দিয়েছেন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)র হিসাবে আরো চৌদ্দজন। ইউনেসকোর কাছে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান নেই। তবে, ২০১২ থেকে ২০১৬ এই পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান সংকলিত করে তারা হিসাব দিয়েছে ওই সময়ে প্রাণ দিয়েছেন মোট ৫৬০ জন সাংবাদিক, অর্থাৎ বছরে গড়ে ১১২ জন করে জীবন দিয়েছেন তাঁদের পেশার কারণে। ওই সময়ে বাংলাদেশে নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা দশজন, অর্থাৎ বছরে গড়ে দুজন। ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনিস্টিটিউট বলছে যে ২০১৭তে বিশ্বে যে ৮৮ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, তার মধ্যে ৪৬ জন দূর্নীতির তদন্তে জড়িত ছিলেন।
অথচ, সত্যি বলতে কি সাংবাদিকতার এখন স্বর্ণযুগ হওয়ার কথা। তথ্য জানার অধিকার এখন একটি মৌলিক মানবাধিকার। আগে তথ্য অধিকার আইন বলে কোনো আইনের অস্তিত্ব ছিল না, এখন আছে। তবে, তা কার্যত কাগজে-কলমে। সরকারী দপ্তরের তথ্য , বিশেষত: অনিয়ম, অদক্ষতা, দূর্নীতি যতরকমভাবে সম্ভব পর্দার আড়ালে রাখার চেষ্টায় আমলারা সদাসতর্ক। রাজনীতিকরা চান শুধুমাত্র তাঁদের বয়ানটাই প্রচার হোক। ফলে, সংসদীয় কমিটির বৈঠকও হয় চোখের আড়ালে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অসাধুতা, অরাজকতা ও দুর্বৃত্তপনার খবর গোপন করতেও কূটকৌশলের অভাব হয় না। ব্যাংকিংয়ের দূর্নীতির খবর আড়াল করতে ব্যাংকমালিকরা চান বিশেষ সুরক্ষা। সরকারী-বেসরকারী সবখাতেই সুবিধামত তথ্য প্রচারই একমাত্র লক্ষ্য।
প্রযুক্তির অভূতর্পূব উন্নয়নের কারণে গণমাধ্যমের বিকাশও হয়েছে চমকপ্রদ। মন্ত্রীদের কথায় বাংলাদেশে এখন সর্বাধিক সংখ্যক সংবাদপত্র, টিভি, রেডিও এবং অনলাইন পোর্টাল চালু আছে। সংখ্যাগত বিচারে এর চাইতে সত্য কথা আর কিছু হয় না। কথাটা শুধু বাংলাদেশের জন্য অনন্য কিছু নয়। সারা বিশ্বেই এটি ঘটছে। তবে, ইউনেসকোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলের পর্যবেক্ষণটি এখানে খুবই প্রাসঙ্গিক। মিস আজুলে বলছেন গণমাধ্যমে বহুত্ব এসেছে ঠিকই কিন্তু মিডিয়া কোম্পানিগুলোর মালিকানার কেন্দ্রীকরণ এবং ইন্টারনেট এর নিয়ন্ত্রণ বড় উদ্বেগের বিষয়। ইউনেসকোর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে গণমাধ্যমের বহুত্বের ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায় লাইসেন্স দেওয়া। বাংলাদেশে গত নয়বছরে চালু হওয়া টিভি, রেডিও, সংবাদপত্র এবং অনলাইনগুলোর দিকে তাকিয়ে একবার ভাবুন তো ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে এমন কাউকে কি দেখা যায়? দেখা যাচ্ছে সরকার তার পছন্দের ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে সবধরণের গণমাধ্যমের অনুমোদন দিচ্ছে, যা প্রতিযোগীতার নীতির পরিপন্থী এবং গোষ্ঠীগত বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক সুবিধালাভের হাতিয়ার। গণতন্ত্রে বহুত্ববাদের মূল কথাই হচ্ছে আপনি যা শুনতে চান না, যা শুনলে আপনার ভালো লাগে না সেই মতটি প্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করা। শুধু পছন্দের কথা শোনার জন্য গণমাধ্যমের লাইসেন্স দেওয়া নয়।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিস্থিতি ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ইউনেসকো বলছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্রমশই খর্ব হচ্ছে। একইসঙ্গে সাংবাদিকতার পেশাগত মানের অবনতি ঘটছে। বলা হচ্ছে এর কারণ দুটি একটি হচ্ছে অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর প্রভাব আর অপরটি হচ্ছে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ভূমিকা। রাজনৈতিক নেতাদের অব্যাহত সমালোচনা এবং চাপের মুখে গণমাধ্যমে স্বনিয়ন্ত্রণ বা সেলফ সেন্সরশিপ বাড়ছে যা তার বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের স্বাভাবিক কাজের ধারায় বড়রকমের বিঘ্ন তৈরি করছে। ফলে, ব্যবসার চালু মডেল অর্থনৈতিক সমস্যার মুখে পড়ছে এবং খবর সংগ্রহ, তা যাচাই করা এবং তার সম্পাদকীয় নিরীক্ষার প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ কমছে। পরিণতিতে অনেকেই সরকার এবং ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোর আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এগুলো কোনোভাবেই স্বাধীন সাংবাদিকতার সহায়ক নয়।
বাংলাদেশের চিত্রটাও একইরকম। বরং, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা প্রকট। রাজনীতিকদের একটা বড় অংশই বস্তুনিষ্ঠ ও বৈধ সাংবাদিকতাকে বেআইনী কার্যক্রম হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। সরকারবিরোধীদের রাজনৈতিক কার্যক্রমের সরাসরি সম্প্রচার আইন-শৃংখলার পরিপন্থী বিবেচিত হয়। সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ থাকে। বিজ্ঞাপন প্রকাশের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক বিবেচনা অগ্রাহ্য করার জন্য বেসরকারী খাতের ওপর অদৃশ্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। রাজনীতিকদের অনিয়ম-অনাচারের খবর প্রকাশ হলে ফৌজদারি আইনে যত্রতত্র মানহানির মামলা হয়।
বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের অবাধ প্রবাহের পথে এখন যুক্ত হয়েছে নতুন এক উপসর্গ ভুয়া খবর বা ফেক নিউজ। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অপদস্থ করার এই হাতিয়ারটিকে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগাচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। অনুগত প্রচারমাধ্যম বিকৃত এবং ভুয়া তথ্য প্রচারের শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠছে। এধরণের খবর প্রথম প্রকাশ পায় কোনো একটি অনলাইন পোর্টালে অথবা সোশাল মিডিয়ায় এবং তারপর মূলধারার মাধ্যমগুলোও তা পুনপ্রচার করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনোধরণের যাচাই-বাছাই ছাড়া। বাংলাদেশে সরকারের প্রধান প্রতিদ্বন্দী বিরোধীদলের ক্ষেত্রে এধরণের প্রচারণার নজির অনেক যেগুলোর কোনো তথ্যপ্রমাণ দেওয়া হয়নি। বিপরীতে, ক্ষমতাসীন দলের দুএকজনের সমালোচনার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা এবং আইন-শৃংখলাবাহিনীর তৎপরতা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। সাইবার জগতের নিরাপত্তায় যেসব আইন হচ্ছে সুকৌশলে সেখানেও নিয়ন্ত্রণ এবং নিবর্তনমূলক বিধি যুক্ত করা হচ্ছে । তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগের প্রতিবাদের মুখে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জুড়ে দেওয়া হয়েছে আরও কঠোর বিধান।
আজ বিশ্ব গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দিবস। ইউনেসকো গত পঁচিশ বছর ধরে এই দিবসটি পালন করে আসছে। ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা: গণমাধ্যম, বিচারব্যবস্থা এবং আইনের শাসন হচ্ছে এবছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য। সুশাসন, স্বচ্ছ্বতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করায় বিচারবিভাগ এবং সংবাদমাধ্যমের সম্পূরক ভূমিকা কি হতে পারে সেদিকটিতে আলোকপাত করাই এবারের এই বিষয়টি নির্বাচনের কারণ। প্রশ্ন হচ্ছে  বাংলাদেশের বিচারবিভাগ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীন ভূমিকাকে কতটা গুরুত্বর্পুণ হিসাবে বিবেচনা করে। ষোড়শ সংশোধনীর মামলার রায়, প্রধান বিচারপতির অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অপসারণ এবং নিম্ন আদালতের স্বাধীনতার প্রশ্নে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা আমাদের উচ্চ আদালত মোটেও ইতিবাচক ভাবে দেখে নি। উপরন্তু, রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বর্পূণ অংশ হিসাবে বিচারবিভাগ নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের কথা বলায় সংশয় জাগে যে ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখায় সংবাদমাধ্যম নি:সঙ্গ হয়ে পড়ল কিনা।
সপ্তাহখানেক আগে সাংবাদিকদের সংগঠন, রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডারস, আরএসএফও তার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বৈশ্বিক সূচক প্রকাশের সময় বলেছে বিশ্বজুড়েই সাংবাদিকদের প্রতি বৈরিতা বাড়ছে।সাংবাদিকদের প্রতি বিদ্বেষ বাড়ানোর কাজটি রাজনৈতিক নেতারাই খোলাখুলিভাবে করছেন উল্লেখ করে আরএসএফ বলেছে  কর্তৃত্ববাদী শাসকরা তাদের দৃষ্টিভঙ্গী রপ্তানি করায় গণতন্ত্রগুলোতে সাংবাদিকতা হুমকির মুখে পড়েছে। রাশিয়া, চীন, তুরস্ক বা মিশরের মত দেশগুলোর কথাই এখানে বলা হয়েছে। তবে, র্দুভাগ্যজনকভাবে গণতান্ত্রিক বিশ্বের নেতৃত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের অভিষেক যে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিয়েছে সন্দেহ নেই। সাংবাদিকরা তাঁর ভাষায় জনগণের শত্রু। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার যে রক্ষাকবচ রয়েছে তার সুবাদে সেখানে সাংবাদিকতা অতীতের চেয়ে আরও বেশি সাহসী হয়ে উঠছে। ফলে,   সেখানকার সংবাদমাধ্যমের প্রতি পাঠক/গ্রাহকের আস্থা বাড়ছে।
বাংলাদেশে সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য যে স্বাধীনতা দরকার, তা অর্জন এবং সুরক্ষায় যে ঐক্য প্রয়োজন তা নেই। সন্দেহ নেই সাংবাদিকতা এখন চরম প্রতিকূলতার মুখে। কিন্তু, এই বাধা অতিক্রমের পথ একটাই স্বাধীন এবং সাহসী সাংবাদিকতা। এই সাহসের কারণে যাঁরা নানাধরণের হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাঁদের প্রতি জানাই শ্রদ্ধা ও সংহতি।
(৩ মে, ২০১৮র দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখকের নিবন্ধ।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...