সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

'চমৎকার' নির্বাচন ও পর্যবেক্ষণ!


সাধারণভাবে তাক লাগানো বা বিমোহিত করার মত ভালো কিছুতে আমরা চমৎকৃত হই। আর, স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় নয়, কাউকে খুশি করার জন্য অথবা পটানোর উদ্দেশ্যেও চমৎকার কথাটির প্রশংসাসূচক ব্যবহার রয়েছে। রাজনীতিতেও এর ব্যবহার ঘটে মিথ্যাচারের প্রয়োজনে। তবে, সম্প্রতি তার প্রয়োগ আমলা-পেশাজীবিদের মধ্যেও বেড়েছে। এর কারণ মূলত: ব্যাক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য ক্ষমতাধরদের তুষ্টিসাধন। গতসপ্তাহে আমরা দুটোক্ষেত্রে এই শব্দটি প্রযুক্ত হতে দেখেছি একটি হলো জাতিসংঘে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় যেখানে বলা হয়েছে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি চমৎকার। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের মান সম্পর্কে। ঊভয়ক্ষেত্রে এই বিশেষণের প্রয়োগের যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনার তেমন একটা অবকাশ আছে বলে মনে হয় না। আমাদের বরং খোঁজা উচিত যাঁরা একথাটি বলেছেন তাঁদের উদ্দেশ্য বোঝার চেষ্টা করা।
মানবাধিকার পরিস্থিতির মূল্যায়ন প্রসঙ্গটি আমার আজকের আলোচনার বিষয় নয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন মানসম্মত হয়েছে কিনা সে প্রশ্নেও আমি যাবো না। এবিষয়ে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দী, তাঁদের দলগুলো, নির্বাচন কমিশন এবং পর্যবেক্ষকরা তাঁদের মতামত দিয়েছেন যা গণমাধ্যমে মোটামুটি বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীরা ও দলগুলো যে পরস্পরবিরোধী কথা বলবেন সেটা আমাদের জানাই ছিল। বিশেষ করে নির্বাচনে পরাজয়ের পর কারচুপির অভিযোগ করা দলমতনির্বেশেষে যেহেতু একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সেদিক থেকে নির্বাচন কমিশন এবং পর্যবেক্ষকদের মূল্যায়ন অনেকবেশি গুরুত্বর্পূণ। সুতরাং, তাঁদের মূল্যায়নের র্নৈব্যাক্তিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন। এই সুযোগে স্বীকার করে নেওয়া ভালো, গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য যে নিরপেক্ষ আচরণ অতি জরুরি, কিছু সাংবাদিক পেশাগত গোষ্ঠীর পরিচয়ে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে অংশ নিয়ে তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
সংবাদকর্মীদের অল্প কয়েকজনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের ভূমিকা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ছিল। স্থানীয় প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রতিবেদকরা সরেজমিনে বস্তুনিষ্ঠ চিত্রই তুলে ধরেছেন। অনেকক্ষেত্রে অবশ্য শিরোনামে তা প্রতিফলিত হয়নি। খবরের ভিতরে অনিয়ম, ভোটচুর ও কেন্দ্র দখলের যেসব বিবরণ রয়েছে তাতে করে শান্তির্পূণ ভোটে সরকারীদলের প্রার্থীর বিজয়শিরোনাম পাঠককে যে কিছুটা ধন্দে ফেলে দেয় তা অস্বীকার করা যাবে না। আসলে গোলযোগ আর সহিংসতা এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে যাওয়ায় কোনোধরণের মারপিট খুনোখুনি ছাড়া ভোটের দিন পার হওয়াটাই তখন অনেকের কাছে মূখ্য হয়ে ওঠে। আবার টেলিভিশনগুলোর ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে কোনো চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারে ভোটকেন্দ্রের অনিয়ম দেখানো হলেও পরে তা নিয়মিত খবরে বাদ পড়েছে। 
২.
নানাধরণের ঘাটতি অথবা ত্রুটি-বিচ্যূতি সত্ত্বেও গণমাধ্যমের সুবাদে আমরা জানি ১. কমিশন তিনটি ভোট কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দিতে বাধ্য হয়। ২. নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য কমিশনের একজন পর্যবেক্ষক একটি কেন্দ্রে লাঞ্ছিত হয়েছেন। ৩. ৫৪ টি কেন্দ্রে ভোটের হার গড় হারের চেয়ে অস্বাভাবিক। যার মানে দাঁড়াচ্ছে প্রায় প্রতি পাঁচটি ভোটকেন্দের মধ্যে একটিতে ভোটের হার অস্বাভবিক। দশ থেকে ত্রিশ শতাংশের মত ভোটের এই অস্বাভাবিকতা মোটেও উপেক্ষণীয় নয়।  . আগে থেকে ছাপমারা ব্যালটের ব্যাখ্যা দিতে পারেন নি একটি কেন্দ্রের কর্মকর্তা। . ব্যালট বইয়ের মুড়িতে কোনো সই বা আঙ্গুলের ছাপ না থাকা সত্ত্বেও বাক্সে সেই ব্যালট ঢোকানো। . ৮০টি কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীর কোনো এজেন্ট ছিল না। . কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা গিয়ে জানতে পারেন তাঁদের ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। .সকালে ভোটারের চাপ না থাকলেও অনেক কেন্দ্রেই দুপুরের আগেই অর্ধেকের বেশি ভোট সম্পন্ন হওয়া। . কোথাও কোথাও ব্যালটে প্রকাশ্যে ছাপ দিতে বাধ্য করা হয়েছে। ১০. একটি কেন্দ্রে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ১. ভোটের আগে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতারে পুলিশের অঘোষিত অভিযান যা প্রতিকারে কমিশন নিষ্ক্রিয় থাকায় শেষপর্যন্ত দলটিকে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হতে হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এতোসব অনিয়ম ও গলদ সত্ত্বেও এই নির্বাচনটি চমৎকার বিশেষণে বিশেষায়িত হলে এই কমিশন কি তাহলে এর চেয়ে ভালো নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে অক্ষম? সেই অক্ষমতা কি সামর্থ্যের অভাবজনিত? নাকি ক্ষমতাসীনদের তুষ্ট করার চেষ্টা? নির্বাচনের আগে রির্টানিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারীর কথিত অভিযোগের পর সেখানে কমিশনের পক্ষে একজন তদারককারী পাঠানোর মত বিরল নজির সৃষ্টির পটভূমিতে শেষ প্রশ্নটি মোটেও উপেক্ষণীয় নয়। পুলিশ এবং প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় কমিশন আদৌ আগ্রহী ছিল কিনা সেই প্রশ্নও উঠতে বাধ্য। নাহলে, পুলিশের বিরোধীদলীয় কর্মীদের হয়রানি ও ভীতিপ্রদর্শনের বিষয়ে কমিশনের নিষ্ক্রিয়তার আর কি ব্যাখ্যা থাকতে পারে? টিভির পর্দায় ভোটকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যেধরণের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন তাতে স্পষ্টতই ইঙ্গিত মেলে যে একধরণের ভীতিকর পরিস্থিতিতে তাঁরা কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করেছেন। এই ভয় শুধুমাত্র দুর্বৃত্তদের গুন্ডামির নয়, প্রশাসনিক ভবিতব্যেরও।
নির্বাচনের অনিয়মগুলোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের প্রকাশ্য উদ্বেগকে কেউ কেউ একজন অতিউৎসাহী বিদেশি দূতের বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপ বলে নাকচ করে দিতে পারেন। কেননা, একটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান তাও আবার ঢাকার বাইরের একটি শহরের নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের আগ্রহটা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কিন্তু, বিষয়টিকে এভাবে নাকচ করার আগে ভেবে দেখুন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচনও তাঁরা দেখেছেন এবং অনিয়মই স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হতে দেখলে কেউই নিরুদ্বেগ থাকতে পারে না। বাংলাদেশে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্য মডেল হিসাবে তত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর দুটো মডেল এখন দেখা যাচ্ছে একটি হচ্ছে ৫ জানুয়ারির বিনা প্রতিদ্বন্দিতার নির্বাচন। আর, অপরটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের রুপ যেখানে সবকিছুই এমনভাবে সাজানো হবে যাতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনটি হবে শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন দলকে বিজয়ী করার একটি আনুষ্ঠানিকতা। এ দুটির কোনোটিই গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।
৩.
খুলনার নির্বাচন বিষয়ক আলোচনায় আরেকটি গোষ্ঠীর ভূমিকাও বিশেষ গুরুত্বর্পূণ। এঁরা হলেন পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী নাগরিক বা সুশীল সমাজের অংশ। নির্বাচনের ফল প্রকাশের রাতেই তাঁরা প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া দিয়ে জানান যে ভোটগ্রহণ শান্তির্পূণ হয়েছে এবং নির্বাজন মোটমুটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। কিন্তু, পরেরদিন যখন তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের মূল্যায়ন জানালে তখন তাঁরা বললেন এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে। তবে, সেই অনিয়মে নির্বাচনের ফলাফল বদলায় না। তাঁরা আরও জানিয়েছেন তাঁদের প্রতিনিধিরা ১৪৫ টি কেন্দ্রে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন।
ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডাব্লুজি)র হিসাবমতে তাঁদের পর্যবেক্ষকরা খুলনার মোট ভোটকেন্দ্রের মাত্র পঞ্চাশ শতাংশের মত কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ, পরিবেশ ও গণনার মত বিষয়গুলো দেখেছেন। সুতরাং, এমনটি অনুমান করা অযৌক্তিক হবে না যে অবশিষ্ট পঞ্চাশ শতাংশ ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতিও একইরকম ছিল। সুতরাং, তাঁদের প্রতিনিধিরা ত্রিশ শতাংশ অনিয়ম প্রত্যক্ষ করে থাকলে বাকি যে অংশ তাঁদের নজরদারির বাইরে ছিল সেখানেও বেশি না হলেও একইহারে অনিয়ম হয়েছে। তাঁরা ২৮টি কেন্দ্রে ব্যালটে অবৈধভাবে সিল মারতে দেখেছেন ( অনিয়ম হয়েছে, তবে ফল বদলে দেওয়ার মত নয়, যুগান্তর , ১৭ মে, ২০১৮)। তাঁদের নজরদারির বাইরে আরও সমসংখ্যক কেন্দ্রে একই ঘটনার সম্ভাবনা নাকচ করা যায় না। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে গড়ে দেড় হাজার করে ভোটার থেকে থাকলে অন্তত পঁচাত্তুর হাজার ভোটে অনিয়মের আশংকা থেকে যায়।  লক্ষ্যণীয় হচ্ছে বিজয়ী এবং পরাজিত প্রার্থীর মধ্যে ভোটের পার্থক্যের হারও এক তৃতীয়াংশের কাছাকাছি। বিজয়ী পেয়েছেন ১ লাখ ৭৮ হাজার আর প্রতিদ্বন্দ্বী ১ লাখ ৯ হাজার।
প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কি এখনও একটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সামর্থ্য  অর্জন করেনি? কেন তাঁরা সেখানে সবকেন্দ্রে প্রতিনিধি পাঠাতে পারলেন না? গড়ে যদি ত্রিশ শতাংশ ভোটে অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে তাঁরা অত দ্রুত নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কথা বললেন কিসের ভিত্তিতে? নির্বাচরে আগে ধরপাকড় এবং ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়ে তাঁদের অবস্থান কি ছিল? নাকি তাঁদের নজর শুধুমাত্র ভোটের দিনটিতেই ছিল?
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজটি বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। এই গুরুত্বর্পুণ কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়ন একটি বড় বিষয়। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে পারে, সরকারের বিদেশী অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন এক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধক তৈরি করছে না তো?  নাকি, বুদ্ধিজীবিদের (যেমন একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য্য) কারো কারো দলীয় আনুগত্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণকেও প্রভাবিত করছে? আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য এসব প্রশ্নের জবাব প্রয়োজন।
(২০ মে, ২০১৮‘র প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখকের কলাম।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...