সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নির্বাচনী ব্যবস্থায় উদ্বেগজনক সংযোজন


গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন দল এখন পরোক্ষে হলেও মেনে নিয়েছেন যে তাঁদের আমলে নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং মহাজোটের সমন্বয়কারী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন একেবারে নিখুঁত নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকারসমর্থক সাংবাদিক ও কলামিস্টদের কয়েকজন লিখেছেন খুলনা এবং গাজীপুরে আওয়ামী লীগ প্রর্থীর বিজয় নিশ্চিত ছিল। সুতরাং, যাঁরা ভোটকেন্দ্রে বাড়বাড়ি করেছেন, ব্যালটে ইচ্ছেমতো সিল মেরেছেন তাদের এটুকু করা উচিত হয় নি। এগুলো না করলে নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করার সুযোগই পেতেন না। এসব যুক্তির মানে দাঁড়ায় অনিয়ম হয়েছে তবে, তাঁদের দাবি অনুযায়ী সেগুলো ফলাফল বদলে দেওয়ার মত নয়। 

অনিয়মগুলোর একটি বিবরণ বলছেওপরে সুনসান ভিতরে গড়বড়(সোহরাব হাসান, প্রথম আলো, ২৭ জুন, ২০১৮)আর গণমাধ্যমে যেসব চিত্র উঠে এসেছে তাতে বেশিরভাগই বলেছেন গাজীপুর ছিল খুলনার চেয়েও ভালো। ভালো বিশেষণটি অবশ্য ব্যবহৃত হয়েছে ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণ অর্থে। খুলনায় দলীয় কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ ছিল চোখে পড়ার মত। আর ,গাজীপুরে নিয়ন্ত্রণের পুরোভাগে ছিল পুলিশ এবং প্রশাসন। খুলনায় ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বিতাড়ন করেছেন ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা। আর, গাজীপুরে বিতাড়ন নয়, অভিযোগটা পুলিশের বিরুদ্ধে বিএনপি এজেন্টদেরকে অপহরণের। গুম এবং বিচারবর্হিভূত হত্যা বা ক্রসফায়ারের আতংকে আতংকিত দেশে নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় এ এক নজিরবিহীন এবং উদ্বেগজনক সংযোজন।

একবার ভাবুনতো, সাদা পোশাকের লোকজন জরুরি কথা আছে বলে ডেকে নিয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে সাদা মাইক্রোবাসে কাউকে উঠিয়ে নিয়ে গেলে তিনি তা কিভাবে প্রতিহত করবেন। তাঁর দল যদি আরও একশোজন বিকল্প এজেন্টও ঠিক করে রাখে তাহলেও কি দ্বিতীয় কেউ ওই ঝুঁকি নেবেন? যাঁদেরকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল তাঁদেরকে এবারে রাখা হয়েছিল পুলিশ লাইনে। ভোটের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর তাদেরকে পাশের জেলায় নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গুম বা ক্রসফায়ারের শিকার না হওয়ায় তাঁরা যে অনেকেই এখন সদকা দেবেন সন্দেহ নেই। ভবিষ্যতের নির্বাচনগুলোতে পুলিশ লাইনের বদলে কোথায় ঠাঁই হবে তা কে জানে।

বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে পুলিশ কাউকে আটক করলে তাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার বিধান আছে, যদিও প্রায়শই তা মানা হয় না। বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার বিশেষ করে কারো বাড়ি থেকে এবং রাতের বেলায় - আইনসম্মত নয় তাও অহরহই ঘটছে। কোনো অভিযোগ ছাড়া কাউকে তার স্বাধীনভাবে  চলাফেরা বা কাজে বাধা দেওয়ার এখতিয়ারও পুলিশের নেই। কিন্তু, গাজীপুরের নির্বাচনে পুলিশ সেই কাজগুলোই করেছে। গুম বা বিচারবর্হিভূত হত্যার অভিযোগ পুলিশ ও সরকার যেভাবে অস্বীকার করে থাকেন এখানেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। গাজীপুরের পুলিশ সুপার বলেছেন বিএনপির কোনো এজেন্টকে আটক বা তুলে নেওয়ার কোনো তথ্য তাঁর কাছে নেই। আইনবর্হিভূত কাজে জড়িত থাকলে পুলিশ তার রেকর্ড রাখবে বাংলাদেশে এমন কথা কেউ কখনো শুনেছেন বলে আমাদের জানা নেই। সুতরাং, কাগজে-কলমে এরকম কোনো তথ্য তো থাকার কথা নয়।

নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা এবং যোগ্যতার প্রশ্ন তুলে তাদেরকে আর বিব্রত করার কোনো মানে হয় না। আচরণবিধি লংঘন এবং অনিয়মের অভিযোগের জবাব দেওয়ার দায়িত্ব কমিশন সম্ভবত সরকারের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছে। গাজীপুরের পুলিশ সুপারের ক্ষেত্রে অন্তত সেরকমটিই দেখা গেছে। বিএনপি তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানালে কমিশন তার জবাব দেয় নি, জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কর্তা এইচ টি ইমাম। আবার, খুলনায় রির্টানিং অফিসারের বিরুদ্ধে সরকারী দলের অভিযোগ শুনেই তার ওপর ছড়ি ঘোরানোর জন্য কমিশন ঢাকা থেকে নতুন একজনকে পাঠিয়ে নজির তৈরি করেছেন।

ভোটকেন্দ্র অথবা বাড়ি থেকে পোলিং এজেন্টদের তুলে নেওয়ার বিষয়টি গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ।তাও, একজন-দুজন নয় যে একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যাবে। অন্তত: ৪২ জনকে অপহরণের হিসাব পাওয়া গেছে (সূত্র: প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার)। বিএনপির দাবি এর কয়েক গুণ। নির্বাচনী কর্মকর্তারা বিশেষ করে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তিরা কোনোভাবেই এই অপরাধের দায় অস্বীকার করতে পারেন না। পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনার আইনগত অধিকার না থাকলেও এক্ষেত্রে নির্বাচনী কর্তাদের ভূমিকা সূত্রে মানবাধিকার কমিশন নিশ্চয়ই এসব গুরুতর অপরাধের তদন্ত করতে পারে। আইন এবং মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে উচ্চ আদালত বা সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা তো অসীম। চাইলে পরে অন্য অনেক বিষয়ের মত এক্ষেত্রে আদালতও স্বত:প্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে।

নির্বাচনব্যবস্থার এই ভয়াবহ বিকৃতি ছাড়াও গাজীপুরে ভোটের দিনে এবং নির্বাচনী প্রচারে যেসব অনিয়ম ও অসঙ্গতি দেখা গেছে সেগুলোর প্রতিটিই এর ফলাফলকে প্রভাবিত করার জন্য যথেষ্ট এবং তদন্তের দাবি রাখে।

১. মোট ভোটকেন্দ্রের প্রায় এক-চর্তূথাংশ কেন্দ্রেই ভোটপ্রদানের হার ছিল অস্বাভাবিক। রিটার্নিং অফিসার যে ফল ঘোষণা করেছেন তা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে ৪০টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে অস্বাভাবিক কম ( ১৪ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ) এবং ৬১টি কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ( ৭৩ থেকে ৯৪ শতাংশ) বেশি (ডেইলি স্টার)। ধারণা করা অমূলক হবে না যেখানে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে সেখানে ভোটের হার কম, আর যেখানে ইচ্ছেমত বাক্সে ব্যালট ভরা হয়েছে সেখানে এই হার বেশি।

২. পর্যবেক্ষকদের মতে সাড়ে ৪৬ শতাংশ কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারী পর্যবেক্ষক সংস্থার জোট, ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ, ইডাব্লুজি বলছে তারা ১৫৯টি অনিয়ম দেখেছেন। প্রায় অর্ধেকসংখ্যক ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।

৩. নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা যেসব অনিয়ম প্রত্যক্ষ করেছেন তার মধ্যে আছে পোলিং এজেন্ট এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জোর করে ব্যালটে সিল মারার ঘটনা।

৪. পর্যবেক্ষকরা ৮৮ টি কেন্দ্রে ভোটগণনা প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তার মধ্যে দুটিতে দেখেছেন নির্বাচনী কর্মকর্তা ভোটের সংখ্যা বাড়িয়ে লিখেছেন। বাকি যে ৩১৮টি কেন্দ্রের গণনা পর্যবেক্ষকরা দেখেন নি সেগুলোর কোনোটিতে যে একইধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেনি তা দাবি করা যাবে না। সুতরাং, শুধু জোর করে ব্যালটে সিল মারা নয়, গণনাতেও মনগড়া হিসাবের অভিযোগ আছে।

৫.কেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে প্রচার ও কেন্দ্রে অননুমোদিত কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও সেরকমটি অনেক কেন্দ্রেই ঘটেছে। প্রধান প্রতিদ্বন্দীর এজেন্টদের অনুপস্থিতিতে একপক্ষের সমর্থকদের এধরণের প্রচার ও জমায়েত সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করবে সেটাই স্বাভাবিক।

৬. আইন-শৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা একজন মেয়রপ্রার্থীর দেওয়া খাবার খেয়েছেন বলে নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন। স্পষ্টতই এটি নির্বাচনী আইনের লংঘন এবং সুষ্ঠূ নির্বাচনের পরিচায়ক নয়্।

৭. ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের প্রতিবাদকারীদের ওপর পুলিশের হামলা, যা স্পষ্টতই অনিয়মের হোতাদেরকে উৎসাহিত করে নিরীহ ভোটারদেরকে নিরুৎসাহিত করেছে। 

৮. কয়েকটি কেন্দ্রে দুপুরের আগেই ব্যলট শেষ হয়ে যাওয়া। এর মানে হচ্ছে ওইসব কেন্দ্রের ভোটারদের একটা অংশ ভোট দিতে পারেন নি। উপরন্তু, তাঁদের ভোট তাঁদের অজান্তে অন্য কেউ দিয়ে থাকতে পারেন।

৯.  কমিশনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে পুলিশ বিরোধীদলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের গ্রেপ্তার করলেও কমিশন পুলিশ কর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয় নি।

১০. নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগতদের অবস্থান নিষিদ্ধ হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সেখানে উপস্থিতির জন্য কোনধরণের ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, রিটার্নিং অফিসার তাঁদেরকে তিরস্কৃতও করেননি।

নির্বাচনে অনিয়ম এবং ভোট দখলের অভিযোগ শুধু বিএনপি এবং পর্যবেক্ষকদের নয়। বিএনপির মিত্র নয় এমন দল, বাংলাদেশের কম্যুনিস্ট পার্টি, সিপিবি বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ করেছে যে ক্ষমতাসীন দল ছাড়া অন্য সবার এজেন্টদেরকে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। দলটি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিজয়কে  সাজানো ফল অভিহিত করেছে।

খুলনার পর মনে হচ্ছিলো নির্বাচনের নতুন দুটো মডেল তৈরি হোল। একটি ৫ জানুয়ারির মত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন। অন্যটি, নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন - যেখানে সবকিছুই এমনভাবে সাজানো হবে যাতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনটি হবে শুধু ক্ষমতাসীন দলকে বিজয়ী করার একটি আনুষ্ঠানিকতা। গাজীপুরের সাজানো নির্বাচনের মডেলে যুক্ত হয়েছে ভয়ংকর উপাদান, এজেন্টদের অপহরণ করে ভোটের সময়টুকু আটকে রাখা।


( ২ জুলাই, ২০১৮‘র প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখকের কলাম।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bangladesh is vexed by and wary of Modi’s unstinting support to Sheikh Hasina

In the run-up to Bangladesh’s general election in January 2014, New Delhi took the unusual step of sending a top diplomat from its external affairs ministry to Dhaka to persuade General Hussain Muhammaed Ershad, the country’s former military ruler, to participate in the polls. Big questions had been raised over the fairness of the election. The incumbent government was led by Sheikh Hasina’s Awami League, and the leader of the opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) had been placed under virtual house arrest, with police and roadblocks around her house in Dhaka. The BNP and other opposition parties were threatening to boycott the election. Ershad, the head of the Jatiya Party, was perceived as a potential kingmaker, able to bring to power whichever of Bangladesh’s two main parties he supported, but he was also threatening to withdraw from the election.  After a decade of Modi’s reign in India, people in Bangladesh are angry at their government cosying up to a Hindutva regime ...

অরাজনৈতিক আন্দোলনের করুণ রাজনৈতিক মূল্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের আন্দোলনে  কদিন ধরে যা ঘটে চলেছে, তা যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই নিন্দনীয় ও ক্ষোভের কারণ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে একইদিনে দেশের তিন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে বিরল।  এবার আরও যেসব ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে, অভিভাবকদের চোখ অশ্রুসিক্ত করেছে, এসব মৃত্যুর পরও সরকারের রাজনৈতিক দম্ভ বজায় রাখার চেষ্টা, যা আরও প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ছয়জন তরুণের প্রাণ বিসর্জনের পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকার ”নীতিগতভাবে একমত” – একথাটি বলে  আলোচনায় না ডেকে সময়ক্ষেপণ করেছে। আইনমন্ত্রী কথাটি যখন বললেন, তার আগেই আরও জীবন গেল, শত শত মানুষ আহত হলো, দেশের সম্পদ নষ্ট হলো। রাজনৈতিক গরিমা ছাড়া এর আর কোনো কারণ আছে কি? ছাত্রলীগ পরিচয়ে অন্ত্রধারীদের তান্ডব, পুলিশের চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের গড়পরতা মারধর ও লাঞ্চিত করার যে দৃশ্যগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এসব ঘটনার বিবরণ উদ্ধৃত না করে শুধু নিষ্ঠুর ...

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...