সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অভিবাসীদের বিশ্বকাপ বিজয়!


অনেকেই এবার বিশ্বকাপ ফুটবলের পরাশক্তিগুলোর বিদায়ে আনন্দিত হয়েছিলেন এই আশায় যে রাশিয়ার বিশ্বকাপ ২০১৮ তে নতুন কোনো শক্তির উত্থান ঘটবে। দুর্বলের কাছে শক্তিমানের পরাজয়ও তাই অনেকসময়েই তাঁদেরকে আনন্দ দেয়, যাঁরা নিজেদেরকেও দুর্বলের কাতারে গণ্য করে থাকেন। এবারের বিশ্বকাপের আসরে তেমনটিই ঘটছিল। কিন্তু, পরাশক্তির মধ্যে ব্যাতিক্রম হয়ে রইলো ফ্রান্স। ফ্রান্সের সাফল্য উদযাপনে তাই অনেকেই কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত।

ঢাকার তিনভাগের এক ভাগ জনসংখ্যার দেশ ক্রোয়েশিয়ার সাফল্য দেখতে চাওয়ার আগ্রহের পিছনেও সেরকম একটা মনস্তত্ত্ব কাজ করেছে সন্দেহ নেই। তবে, ফ্রান্সের এই সাফল্য প্রচলিত অর্থে কোনো ইউরোপীয় পরাশক্তির বিজয় নয়। বরং, এটি হচ্ছে অভিবাসীদের বিজয় যারা দেশটিতে অনেকটাই পরবাসী, একঘরে, বর্ণবাদের শিকার। ক্রোয়েশীয় ফুটবলের একজন কর্মকর্তার ভাষায় তাঁর দেশের বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে বহুজাতিক ফ্রান্স।

পাশ্চাত্য জুড়ে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে যখন অভিবাসনবিরোধী বর্ণবিদ্বেষী রাজনীতির উত্থান ঘটছে তখন ফরাসী ফুটবল দলের ছবি পুরো ফ্রান্স এবং ইউরোপকে মনে করিয়ে দেবে যে এই অর্জনে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর অবদানই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বর্পূণ। তুর্কী দৈনিক সাবাহর হিসাবে বিশ্বকাপে ফরাসী দলের হয়ে যাঁরা খেলেছেন তাঁদের ৭৮ শতাংশই হচ্ছে অভিবাসী। এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে ফ্রান্স দলেই অভিবাসীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।  আবার এই অভিবাসীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই মুসলমান। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে চারটি গোলের আত্মঘাতিটি ছাড়া অন্য তিনটির মধ্যে দুটি করেছেন পল পগবা এবং এমবাপ্পে। পগবার জনকরা এসেছেন গিনি থেকে, আর এমবাপ্পের মা আলজেরীয় ও বাবা ক্যামেরুনের।  পগবা এবং কন্টেসহ দলে ছজন ছিলেন মুসলমান।

অভিবাসন  - বিশেষত মুসলমান অভিবাসনের বিরুদ্ধে ইউরোপে বর্তমানে যে রাজনৈতিক হাওয়া উঠেছে, তার সূত্রপাত কিন্তু ফ্রান্সেই মেরি লোপেন এর দল ন্যাশনাল ফ্রন্টের উত্থানের মাধ্যমে। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই বর্ণবিদ্বেষী দলটি দ্বিতীয় এবং তার আগের নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে ছিল। আর, এই দলের রাজনীতি মোকাবেলায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফ্রান্সের মূলধারার ডানপন্থী এবং বামপন্থী উভয় দলই অভিবাসনবিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রটিতে মুসলমানরা আগে যেসব ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করতেন সেগুলোর বেশ কয়েকটিই তাঁরা হারিয়েছেন। এটি শুধু বোরকার ওপর নিষেধাজ্ঞাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, সমুদ্র সৈকতে মেয়েদের শরীর পুরো আবৃত করার ওপরও প্রসারিত হয়েছে ( যেমন বুরকিনি)।

বিশ্ব ফুটবলে চারবছরের জন্য শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপার অধিকারী হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই টুইটার, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় নীতিতে দ্বিচারিতার সমালোচনা ঝড় উঠেছে। অভিবাসীরা এবং মুসলমান তারকারা যে ভূমিকা রেখেছেন তার আলোকে দেশটির প্রতি অভিবাসন নীতি সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে। এঁদের মধ্যে কেউ লিখেছেন অভিবাসীরা ফ্রান্সকে শক্তিশালী করেছে, আফ্রিকান এবং মুসলমানরা তোমাকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছে, তুমি এখন তাদেরকে ন্যায়বিচার দাওইত্যাদি

প্রশ্ন হচ্ছে অভিবাসীদের প্রতি বিদ্বেষ বা বৈষম্যের প্রশ্নটি ইউরোপ জুড়ে যে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে এই বিশ্বকাপে অভিবাসীপ্রধান ফরাসী দলের বিজয় সেই বিতর্কে কি কোন ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে? ওর্য়াল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক প্রকাশনায় ৪ জুলাই বলা হয় এবারে যাঁরা বিশ্বকাপ দেখছেন তাঁরা সম্ভবত অভিবাসীদেরকেই দেখছেন (ফলোয়িং দ্য ওর্য়াল্ড কাপ: দেন ইউ আর ওয়াচিং হাই পারফরমিং মাইগ্রেন্টস অ্যাট ওর্য়াক)। তাদের হিসাবে এবারের বিশ্বকাপে মোট বত্রিশটি দলের মোট ১০৩২ জন খেলোয়াড় অংশ নিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৯৮ জনের জন্ম অন্য কোনো দেশে, যা শতকরা হিসাবে প্রায় দশ এর কাছাকাছি। এমনকি আফ্রিকার দেশগুলোতেও ছিলেন অভিবাসী ফুটবলার। মরক্কো দলে অভিবাসীর হার ছিল ৬১ শতাংশ এবং সেনেগালে ৩৯ শতাংশ। সেমিফাইনালে আসা চারটি দলের মধ্যে একমাত্র ক্রোয়েশিয়া ছাড়া বাকি তিনটিতেই  ( ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম) অভিবাসী ফুটবলারদের প্রাধান্য ছিল চোখে পড়ার মত।

অভিবাসীরা কিধরণের বিদ্বেষের মুখে পড়েন তার একটা দৃষ্টান্ত দিয়েছে ওর্য়াল্ড ইকোনমিক ফোরামের ওই নিবন্ধটি। সুইডেনের মধ্যমাঠের খেলোয়াড় জিমি দারমায সিরীয় বংশোদ্ভূত। জার্মান দল তার কারণে একটি ফ্রি-কিক পেয়ে গেলে সুইডেন হেরে যায়। এরপর গালি হিসাবে তালেবান, সন্ত্রাসী ইত্যাদি হিসাবে ডাকার পাশাপাশি তাঁকে নানাধরণের হুমকিও দেওয়া হয়। পরে সু্‌ইডিশ ফুটবল ফেডারেশন পুলিশের শরণাপন্ন হয়।

বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর যখন চলছিলো তখনই জুনের শেষ সপ্তাহে ইউরোপের নেতারা এক শীর্ষবৈঠকে বসেছিলেন ব্রাসেলসে। তাঁদের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে প্রাধান্য পেয়েছে অভিবাসন এবং তাঁরা আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হয়েছেন। ভূমধ্যসাগরে বিপন্ন অভিবাসনকামীদের উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবিদের নৌযানগুলোকে ইউরোপের দেশগুলো তাদের তীরে ভিড়তে দিচ্ছে না । ফলে, উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ বলছে জীবনরক্ষাকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে সাগরে উদ্ধারকারী জাহাজগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার যেকোনো হুমকির মানেই হচ্ছে উদ্ধারের মূল নীতিকেই আক্রমণ করা। আপনি তখন হয়তো দেখবেন যে জাহাজগুলো বিপদ থেকে উদ্ধারের বার্তা পাওয়ার পরও সাড়া দিচ্ছে না, যা শুধুমাত্র অভিবাসী ও উদ্বাস্তুদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে তা নয়, সাগরের বুকে বিপদে পড়া অন্য সবার জন্যই তা ঝুঁকি তৈরি করবে।

অবশ্য, এর পাশাপাশি ভালো খবরও আছে। এই প্রথমবারের মত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অভিবাসন ব্যবস্থার উন্নত ব্যবস্থাপনা, অভিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করা এবং টেকসই উন্নয়নের বিষয়গুলোর সমন্বয় করে একটি বৈশ্বিক নীতিমালার প্রশ্নে সমঝোতায় পৌঁছেছে। শুক্রবার তেরোই জুলাই সাধারণ পরিষদে এই সমঝোতা হয়, যা আগামী ডিসেম্বরে অভিবাসন বিষয়ক সম্মেলনে অনুমোদিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন মাইগ্রেশন নিয়মমাফিক অভিবাসনের বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সুযোগ করে দেবে এবং একইসঙ্গে তা কোটি কোটি অভিবাসীর অবৈধপথে দেশান্তরি হওয়ার ঝুঁকি কমাবে।

বিশ্বে এখন অভিবাসীর সংখ্যা ২৫ কোটিরও বেশি এবং তাঁরা বিশ্ব জনসংখ্যার ৩ শতাংশ। তবে, বৈশ্বিক মোট উৎপাদনের (গ্লোবাল জিডিপি) ১০ শতাংশ হচ্ছে তাঁদের অবদান। এই তথ্য জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেসের। তিনি বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের কাছে এসব পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছেন যে অভিবাসীরা প্রবৃদ্ধির একটি চমৎকার চালিকাশক্তি। বিশ্বকাপের আসর মাতিয়েছেন যেসব অভিবাসী ফুটবলার, অর্থনীতিতে তাঁদের অবদান কতোটুকু সেই হিসাব পেতে আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

ইউরোপের ফুটবলের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে অভিবাসীরা। বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে সবচেয়ে দক্ষ এবং যোগ্য খেলোয়াড়দেরকে দলে টানতে ইউরোপের ক্লাবগুলো প্রতিবছরই একধরণের প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়। ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে এমন কোনো প্রতিযোগীতা নেই যেখানে অভিবাসী ফুটবলার নেই। ইউরোপে ফুটবলের অর্থও আসে এসব ক্লাবের নানা টুর্ণামেন্ট থেকে। ফুটবলের বাণিজ্যিকীকরণে অভিবাসী ফুটবলারদের মেধা ও দক্ষতা হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বর্পূণ উপাদান। অভিবাসীদের এসব অর্জনকে ইউরোপ নিজেদের সাফল্য হিসাবে তুলে ধরতে যতটা উৎসাহী ঠিক ততোটাই সংর্কীণ অভিবাসীদের প্রতি তাদের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গী। ফ্রান্সের এই বিশ্বকাপ বিজয় থেকে সেই ধারায় পরিবর্তনের সূচনা হলে সেটিই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।

 (১৬ জুলাই, ২০১৮ প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

স্বৈরতন্ত্রের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার নিকৃষ্ট পরিণতি

ছাত্র–জনতার অভ্যূত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কথিত মন্তব্যে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। গত ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশ্য দেওয়া ভাষণ এবং সম্প্রতি মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপচারিতায় পরস্পরবিরোধী মন্তব্য – এই দুইয়ের একটি যে অসত্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিতর্ক শুরু হওয়ার পর তাঁর দপ্তর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা–ও অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ। তিনি সর্বশেষ বিবৃতিতেও মতিউর রহমান চৌধুরীকে অসত্য কথা বলার বিষয়টি স্বীকার যেমন করেন নি, তেমনি এমন দাবিও করেননি যে তাঁকে ভূলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।  ৫ আগস্ট যদি তিনি পদত্যাগপত্র গ্রহণের প্রশ্নে অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তা খুবই গুরুতর হিসাবে বিবেচিত হতে বাধ্য। কেননা তা ছিল জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের তথ্য। আবার যদি তিনি মানবজমিন সম্পাদকের কাছে আলাপচারিতায় অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তাঁর কাছে যে দেশবাসী প্রশ্নের জবাব চাইতে পারে, তা হলো অর্ন্তবর্তী সরকার যখন সবকিছু গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছে, দেশে স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টা চলছে, তখন তিনি কেন এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন? তাঁর উদ্দ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...