সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

যে নির্বাচনী সাফল্যে স্বস্তি মেলা ভার


ক্রিকেটের মাঠ মাতানোর পর রাজনীতির মাঠেও যে সাফল্য ইমরান আহমেদ খান নিয়াজির কাছে ধরা দেবে এমনটি অনেকেই ধারণা করেছিলেন। এই ধারণার কারণ দেশে-বিদেশে সবারই জানা। সেনাবাহিনীর আর্শীবাদই হচ্ছে  সাফল্যের সেই অদৃশ্য চাবি। রাজনীতিক ইমরান অবশ্য যে নির্বাচনে সাফল্য পেলেন সেই নির্বাচনটি পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান আই এ রেহমান এর ভাষায় দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে নোংরা এবং সবার্ধিক নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন (২০১৮ পোলস টু বি দ্য ডার্টিয়েস্ট অ্যান্ড মোস্ট মাইক্রোম্যানেজড ইন দ্য কান্ট্রিস পলিটিকাল হিস্ট্রি , ১৭ জুলাই , ডন)। নির্বাচনের ফল নিয়ে তাই প্রশ্ন ওঠাও অস্বাভাবিক নয়। ইমরান খান অবশ্য বিজয়ী হিসাবে তাঁর প্রথম বক্তৃতায় পাকিস্তানের ইতিহাসে এটিকে স্বচ্ছতম ও সবচেয়ে সুষ্ঠূ নির্বাচন বলে অভিহিত করেছেন।

যে রাষ্ট্রটির ৭১ বছরের ইতিহাসের অর্ধেকটা কেটেছে সামরিক শাসনে, আর বাকিটা তাদের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে সেই দেশে নানাধরণের সহিংসতার মধ্যেও নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া কম কথা নয়। সরকারে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বেসামরিক পালাবদলের ক্ষেত্রেও এটি দ্বিতীয় নজির।  গণতান্ত্রিক ধারায় বেসামরিক শাসন বজায় থাকলেও একমাত্র পরমাণু শক্তিধর মুসলিম রাষ্ট্রটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দক্ষিণ এশিয়া এবং বাকি বিশ্বের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বর্পূণ। সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে সামরিক বাহিনীর ভূমিকাও বাড়ে এবং তা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতির জন্য আরও বেশি অস্বস্তির কারণ হতে পারে।

নির্বাচনটি হয়েছে বাংলাদেশের বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার আরও একটু উন্নত সংস্করণে, যেখানে অর্ন্তবর্তী সরকার প্রধানের নাম প্রস্তাব করেছে বিরোধীদল। সেনাবাহিনীর প্রভাবমুক্ত নির্বাচন পাকিস্তানে কবে সম্ভব হবে সেই প্রশ্নের উত্তর কারও পক্ষে দেওয়া সম্ভব বলে মনে হয় না। নির্বাচনে নানাধরণের অনিয়ম এবং পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে ফলাফল নিয়ে বিতর্ক হলেও আমেরিকান ইউনিভার্সিটির আর্ন্তজাতিক সম্পর্কের পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত অধ্যাপক আকবর আহমদের ভাষায় পরাজিত রাজনৈতিক দলগুলোর ফলাফল প্রত্যাখ্যান পাকিস্তানে নতুন কোনো ঘটনা নয়। এর আগের নির্বাচনে ইমরান খানের দলও ফল প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং শুরু থেকেই নেওয়াজ শরীফের সরকারকে হটানোর আন্দোলনে নেমে পড়েছিল। অধ্যাপক আহমদের মতে নেওয়াজের মুসলিম লীগ এবং বিলওয়ালের পিপলস পার্টিও ইমরানের পিটিআইএর জন্য একইধরণের সমস্যা তৈরি করতে পারে। কিন্তু, সরকার গঠনের পথে তা কোনো বাধা হবে না।

ইমরান খান সরকার গঠনে সক্ষম হলেও অধিকাংশ বিশ্লেষকই মনে করেন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে দূর্ভল ম্যান্ডেটের এই ফলাফল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারবে না। এখানে স্মরণ করা প্রয়োজন ২০০৮ সালের নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় পিপলস পার্টি নেওয়াজের মুসলিম লীগের সমর্থনে সরকার গঠন করেছিল। সুতরাং, ওই দুই দলের মধ্যে সরকারবিরোধী সমঝোতা ও কৌশলের সমন্বয় প্রায় অবধারিত। মুসলিম লীগ এবং পিপলস পার্টি উভয় দলেই নেতৃত্ব বংশগত উত্তরাধিকারের ওপর নির্ভরশীল বলে অনেকের মতে ইমরানের বিজয় দেশটির রাজনীতিতে এক বড়ধরণের পরিবর্তন আনবে বলে অনেকের ধারণা। নেওয়াজ শরীফের রাজনৈতিক উত্থান যে প্রদেশে সেই পাঞ্জাবেও মুসলিম লীগ সরকার গঠন করতে না পারার যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে তাঁর দূর্গের পতন ঘটার আলামত মিলছে। এর ফলে, মুসলিম লীগ বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে এবং বৃহত্তর সরকারবিরোধী ঐক্য গড়ার উদ্যোগ নিলে তা বড়ধরণের চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। 

পাকিস্তানের এই সাম্প্রতিকতম পালাবদলের করুণ দিকটি হচ্ছে সাবেক সামরিকশাসক জিয়াউল হকের মানসপুত্র হিসাবে নেওয়াজ শরীফের রাজনীতিতে আগমন ঘটলেও কালের ব্যবধানে সেই সামরিকবাহিনীর আরেক বরপুত্র ইমরান খানের আন্দোলনই তাঁকে জেলে পাঠিয়েছে। সেনাবাহিনীর কবজা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টার মূল্য দিয়েছেন নেওয়াজ শরীফ। এখন ইমরান যদি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেন তাহলে সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার কোনো চেষ্টা তিনি করবেন বলে মনে হয় না।

ক্রিকেট তারকা থেকে ইংল্যান্ডে প্লেবয়ের জীবনযাত্রা আত্মস্থ করা এবং তারপর রাজনীতিতে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় পালাক্রমে রক্ষণশীল মতাদর্শে দীক্ষাগ্রহণের কারণে ইমরানকে নিয়ে বিদেশিদের মধ্যে একধরণের অস্বস্তি এবং অস্থিরতা লক্ষ্যণীয়। যুক্তরাষ্ট্রের তালেবানবিরোধী সামরিক অভিযানের কঠোর সমালোচনার কারণে ইমরান খানকে পাশ্চাত্যের অনেক গণমাধ্যম তালেবান খান নামে অভিহিত করে থাকে। খায়বার পাখতুনওয়ালায় তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রাদেশিক সরকার তালেবানদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র বলে পরিচিত হাক্কানিয়া মাদ্রাসাকে ত্রিশ লাখ ডলারের মত অনুদান দিয়ে বিতর্কিত হয়। কট্টর ইসলামপন্থী সামাজিক ও অর্থনৈতিক নীতির পক্ষে তাঁর অবস্থানের কারণে নারী অধিকার সংগঠনগুলোও অতীতে তাঁর সমালোচনা করেছে। তবে, ইমরান খানের জয়কে অনেকেই দেখছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমতের প্রতিফলন হিসাবে। একইসঙ্গে, ভোটে কট্টরপন্থী ধর্মীয় দলগুলো প্রত্যাখ্যাত হওয়ার বিষয়টিও একটি ইতিবাচক ফল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

আর্ন্তজাতিক পরিসরে পাকিস্তান অনেকদিন ধরেই কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। কার্য্যত: চীন ছাড়া এখন অন্য কোনো বৃহৎশক্তি দেশটির পাশে নেই। আফগানিস্তানে তালেবানবিরোধী অভিযান এবং ইরাক যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং নির্ভরযোগ্য মিত্র। যুক্তরাষ্ট্রের সর্ব্বোচ্চ সামরিক সহায়তা এবং উন্নয়ন সহায়তা দুটোরই বড় প্রাপক ছিল পাকিস্তান। কিন্তু, আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করেই সেই সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। চির প্রতিদ্বন্দী ভারতে জঙ্গি হামলায় রাষ্ট্রীয় মদদ দেওয়ার অভিযোগ এবং সন্ত্রাসবাদীদের বিচারের প্রশ্নে বিরোধ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কার্য্যত: ওয়াশিংটনের সরকারী দপ্তরগুলোতে এখন পাকিস্তানী কূটনীতিক ও রাজনীতিকদের পদচারণা এখন আর আগের মত নেই। এই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টাই তাঁর জন্য একটা বড় পরীক্ষা।

কাশ্মীর প্রশ্নে তাঁর অবস্থান যে ভারতের জন্য সুখকর নয় তা ভারতীয় বিশ্লেষকদের কথাতে স্পষ্ট। সাবেক কংগ্রেস মন্ত্রী এবং বিশ্লেষক মণি শংকর আয়ার এনডিটিভি অনলাইনে এক নিবন্ধে লিখেছেন ইমরান যে কাশ্মীর প্রশ্নে জাতিসংঘে যাওয়ার আওয়াজ তুলেছেন তাতে বোঝা যায় যে তিনি সিমলা চুক্তির কথা ভুলে গেছেন যে চুক্তিতে বিষয়টি দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে সমাধানের জন্য উভয় দেশই অঙ্গীকারাবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী মোদি নেওয়াজ শরীফের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আচমকা হাজির হয়ে সম্পর্কের মোড় ঘোরাতে শুরুর দিকে যতটা উৎসাহ দেখিয়েছিলেন ধীরে ধীরে সেই আগ্রহ তাঁর উবে গেছে এবং অবস্থান কঠোর থেকে কঠোরতর হয়েছে। আগামী বছরে ভারতে যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা আছে তাকে কেন্দ্র করে ভারতে হিন্দুত্বের রাজনীতি যে উগ্রতার পথে ধাবিত হচ্ছে তার পটভূমিতে পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশংকাই বেশি। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধই যে নেওয়াজ শরীফের পতনের আসল কারণ সেবিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে খুব একটা ভিন্নমত নেই। সুতরাং, পরমাণু শক্তিধর প্রতিদ্বন্দী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে ইমরান খানের নাটকীয় কিছু করার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবশ্য খুব একটা হেরফের ঘটবে না বলেই ধারণা করা যায়। ইমরান তাঁর প্রথম বক্তৃতায় চীনের সঙ্গে করিডোর প্রতিষ্ঠার প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোর কথা বলেছেন। অর্থনৈতিক সহায়তা ছাড়াও সামরিক এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের প্রতি চীনের সমর্থন-সহায়তার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। সামরিক কিম্বা বেসামরিক প্রশাসন নির্বিশেষেই তা বজায় থেকেছে এবং সেই ধারায় পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নিকট ভবিষ্যতে নেই।

ইমরান খানের নেতৃত্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আর্ন্তজাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যদি তেমন কোনো ইতিবাচক অগগতি অর্জনে সক্ষম না হয় তাহলে ক্রিকেটার হিসাবে তিনি পাকিস্তানীদের কাছে যতটা সমাদৃত হয়েছেন রাজনীতিতে তেমনটা না হওয়ার আশংকা দেখা দেবে। নির্বাচনের প্রচারে সহজে জনপ্রিয় হওয়ার মত অনেক অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মসুচির অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি। যেগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মত কথিত জনতুষ্টিবাদী কর্মসুচির অনুরুপ বলে অনেকে অভিহিত করেছেন। একারণে, পাকিস্তানে কেউ কেউ তাঁকে ডোনাল্ড খান বা ইমরান ট্রাম্প বলেও অভিহিত করেছেন।  জয়লাভের পর প্রথম বক্তৃতায় তিনি সেই কথিত জনতুষ্টিমূলক কিছু পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন। যার মধ্যে আছে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবনে না থাকার কথা, দূর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ চালু রাখার অঙ্গীকার , নিজের সহ সব মন্ত্রীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা,  অর্থনেতিক পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে  নয়া পাকিস্তান গড়ার কথা।

ছাব্বিশ বছর আগের রেকর্ড বলছে ক্রিকেটার হিসাবে বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে ইংল্যান্ডের কাছে তাঁর দল হেরে গেলেও ফাইনালে তাদেরকে হারিয়েই তিনি পাকিস্তানের জন্য শিরোপা জিতেছিলেন। তবে, ক্রিকেটের প্রতিপক্ষ সামনে থাকে এবং তার শক্তি ও দূর্বলতা জানা থাকায় কৌশল ঠিক করে লড়াইয়ে নামা যায়। রাজনীতিতে, বিশেষ করে সামরিকবাহিনীর ছায়ায় অদৃশ্য শত্রুও থাকে, তাই ক্রিকেটের চেয়ে এখানে জটিলতা অনেক বেশি। সফল হওয়ার চ্যালেঞ্জটাও অনেক বড়। তাই, নিন্দুকদের কথাটিও এখানে স্মরণ  করা অন্যায় হবে না, যাঁরা বলছেন তিনবার সংসার টিকাতে ব্যর্থ ব্যাক্তির পক্ষে বৃহত্তর পরিবার দেশ পরিচালনায় সফল হলে তা একটা নতুন নজির তৈরি করবে।
(২৮ জুলাই, ২০১৮‘র প্রথম আলোয় প্রকাশিত নিবন্ধ।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

স্বৈরতন্ত্রের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার নিকৃষ্ট পরিণতি

ছাত্র–জনতার অভ্যূত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কথিত মন্তব্যে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। গত ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশ্য দেওয়া ভাষণ এবং সম্প্রতি মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপচারিতায় পরস্পরবিরোধী মন্তব্য – এই দুইয়ের একটি যে অসত্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিতর্ক শুরু হওয়ার পর তাঁর দপ্তর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা–ও অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ। তিনি সর্বশেষ বিবৃতিতেও মতিউর রহমান চৌধুরীকে অসত্য কথা বলার বিষয়টি স্বীকার যেমন করেন নি, তেমনি এমন দাবিও করেননি যে তাঁকে ভূলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।  ৫ আগস্ট যদি তিনি পদত্যাগপত্র গ্রহণের প্রশ্নে অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তা খুবই গুরুতর হিসাবে বিবেচিত হতে বাধ্য। কেননা তা ছিল জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের তথ্য। আবার যদি তিনি মানবজমিন সম্পাদকের কাছে আলাপচারিতায় অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তাঁর কাছে যে দেশবাসী প্রশ্নের জবাব চাইতে পারে, তা হলো অর্ন্তবর্তী সরকার যখন সবকিছু গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছে, দেশে স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টা চলছে, তখন তিনি কেন এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন? তাঁর উদ্দ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...