সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কোটা সংস্কার আন্দোলনে বাশি তত্ত্ব!


যে তরুণরা কোটাসংস্কারের আন্দোলন করছেন তাঁদেরকে বাম-ঘরানার শিবির, সংক্ষেপে বাশি অভিহিত করেছেন দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের দুটি পায়ের ভাঙ্গা হাড়ের এক্সরের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যপকভাবে ছড়িয়ে গেছে। তার দুটো পাই ভেঙ্গে দিয়েছে ছাত্রলীগের পদধারী হাতুড়িবিদ্যায় পারদর্শী পান্ডারা। পঙ্গুত্বের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ছাত্র তরিকুল ইসলামকে উপাচার্য্য হাসপাতালে দেখতে যান নি। তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যাঁদেরকে বাশি বলে উপহাস করেছেন তরিকুল তাদেরই একজন। তরিকুলের দুই ভাঙ্গা পায়ের এক্সরেটিকে বাংলাদেশের মানচিত্রের ওপর বসালে যে ছবি তৈরি হয় ফেসবুকে তার ছড়াছড়ি। সম্ভাবনাময় তরুণের ভাঙ্গা পায়ের ছবি বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি হোক তা কারোরই প্রত্যাশা হতে পারে না। অথচ, আন্দোলনকারী তরুণদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকদের আচরণ কি আমাদেরকে সেদিকেই ঠেলে দিচ্ছে না? 


আমরা জানি কোটা সংস্কারের দাবিতে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ সরকার আন্দোলনে বিএনপি-জামাতের ইন্ধন বা উসকানির কথা বলেছে। ক্ষমতাসীন দলের কেউ কেউ আন্দোলনের সংগঠকদের দুএকজনকে ছাত্র শিবিরের কর্মী হিসাবেও দাবি করেছেন। কিন্তু, তাঁদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। অনুমানভিত্তিক হলেও তিনি আন্দোলনকারীদের রাজনৈতিক দর্শনের একটি তত্ত্বায়ন করেছেন। তাঁর এই অনন্য কৃতিত্ব জাতি নিশ্চয়ই চিরদিনের জন্য স্মরণে রাখবে।

উপাচার্য্য আব্দুস সোবহান আরও বলেছেন তাঁরা জানতে পেরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের কতিপয় সহকর্মী আড়াল থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করছেন, উসকানি দিচ্ছেন। কোটা সংস্কারের আন্দেলিনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানাতে গত চৌঠা জুলাই ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ ফরিদ খান গত মঙ্গলবার শহীদ ডঃ জোহা চত্বরে নগ্নপায়ে নীরবতা পালন করতে চাইলে তাঁর প্রশাসনের প্রোক্টর তাঁকে নিষেধ করেছিলেন। অর্থনীতি বিভাগের অন্যান্য সহকর্মীদেরও অনেকে তাঁকে ওই প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। আশার কথা অন্য কিছু শিক্ষক তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, ছাত্র-ছাত্রীরাও এগিয়ে এসেছিল। ফরিদ খান ফেসবুকে সেদিনের কয়েকটি খন্ডচিত্র তুলে ধরে সেদিন লেখেন গতকাল থেকে শিক্ষক সহকর্মী ভাইবোন শ্বশুর বন্ধু ছাত্র শুভাকাংখী সবাই একই কনক্লুশন টেনেছে সময় ভালোনা সাবধানে থাকবেন। আমার মনে হয় একটি সুস্থ্য সুন্দর সভ্য জাতি হিসেবে বিকশিত হতে গেলে আমাদের এই ভয়ের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।

উনসত্তুরের গণঅভ্যূত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে পুলিশের বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে ছাত্রদের রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছিলেন শহীদ ডঃ শামসুজ্জোহা। শহীদ অধ্যাপক জোহা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই সমাহিত আছেন। উপাচার্য্য অধ্যাপক সোবহানের কথাগুলো ওই কবর পর্যণ্ত পৌঁছেছে কিনা জানিনা। কিন্তু, এটুকু বুঝতে কষ্ট হয় না যে তিনি যেখানেই আছেন সেখানেই দু:খ-কষ্ট-রাগে হায় হায় করে উঠেছেন।

উপাচার্য্য হিসাবে অধ্যাপক সোবহানের এটি দ্বিতীয় মেয়াদ। এর আগে, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালে প্রথম দফায় তিনি একবার এই দায়িত্ব পালন করেছেন। তারও আগে, ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত সরকারের আমলে অন্য দুজন অধ্যাপকের সঙ্গে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। রাজনীতিতে তিনি অনেকদিন ধরেই সক্রিয় এবং আওয়ামী লীগের সমর্থক। দলীয় রাজনীতির জন্য হাজত খাটায় দল ক্ষমতায় এসে তাঁকে পুরস্কৃত করেছে বলেই জনমনে একধরণের ধারণা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় লোকদের নিয়োগ প্রশ্নে বিরোধের জের ধরে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে যেসব কথা শুনিয়ে এসেছিলেন তা পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশ পেয়েছে। রাজনীতিতে সক্রিয় শিক্ষকের দলীয় আনুগত্য থাকতেই পারে, কিন্তু উপাচার্যের পদ গ্রহণের পর কি তার কোনো সীমারেখা থাকবে না ? দূর্ভাগ্যের বিষয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানও তাঁর দীর্ঘ নীরবতা ভেঙ্গে রোববার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের জঙ্গিদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। পুলিশ কিম্বা ছাত্রলীগও যে অভিযোগ কল্পনা করেনি, তেমন একটা ধারণা আমদানি করলেন তিনি। এতে করে উপাচার্য পদে তাঁর অবস্থান নিশ্চয়ই দৃঢ়তা পেল, কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের কাছে তিনি তাঁর কাঙ্খিত আসনটি হারালেন।

সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের উন্নয়নের রাজনীতিতে শামিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উন্নতিতে যদি কেউ বিস্মিত হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর জন্য আরও বড় বিস্ময়ের নজির তৈরি করেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তরিকুলের ভাঙ্গা পায়ের চিকিৎসা শেষ না করেই তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। অথচ, অন্য চিকিৎসকরা বলেছেন তার পায়ে অস্ত্রোপচার করতে হবে। চিকিৎসকরা হিপোক্রেটিক ওথ (Hippocratic Oath) হিসাবে পরিচিত যে শপথ নেন তাতে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন এমন কোনো রোগীকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ আছে কিনা তা তাঁরাই ভালো জানেন। ঢাকায়ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে যাঁরা আহত হয়েছিলেন তাদের প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং একটি বেসরকারী হাসপাতালের বিরুদ্ধে একইধরণের অভিযোগ উঠেছে। আইনের শাসনে এধরণের অমানবিক দায়িত্বহীনতার জন্য দায়ী ব্যাক্তিদের যে জেল-জরিমানা গুণতে হোত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 

২.
কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে এসে প্রথমে ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে নিগৃহীত হওয়া একজন কলেজছাত্রী তাঁর দু:সহ যন্ত্রণা ও কষ্টের কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেছেন। আন্দোলনকারীদের একজন নেতাকে বেধড়ক পিটুনির হাত থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে যাওয়াই তার জন্য কাল হয়েছিল। তার শরীরের কোনো অংশই তাদের থাবা থেকে মুক্ত ছিল না। সে একটি সিএনজিতে চড়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে ওইসব উন্মত্ত দুর্বৃত্তের কয়েকজন সেই সিএনজিতে উঠে পড়ে তাকে আরও লাঞ্ছিত করে এবং থানায় নিয়ে পুলিশের কাছে দেয়। পুলিশও মেয়েটিকে হেনস্থা করেছে বলে তার অভিযোগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কলেজপড়ুয়া একটা  মেয়েকে এভাবে যৌন হেনস্থা করার ঘটনাতেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোন প্রতিক্রিয়া নেই।

কেন্দ্রীয় শহীদমিনারের নিয়ন্ত্রণ ও কতৃত্ব কি শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে থাকে ? তা নাহলে, এধরণের চরম নিন্দনীয় নারীনিগ্রহ ও লাঞ্চনার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিভাবে নিস্পৃহ থাকতে পারে ?  ক্ষমতাসীন দলের প্রতি রাজনৈতিক আনুগত্য এবং তার ছাত্র সংগঠনের পেশিশক্তির ওপর কর্তাব্যাক্তিদের নির্ভরশীলতাকে এর মূল কারণ হিসাবে যাঁরা চিহ্নিত করেন তাঁরা কি খুব একটা ভুল বলছেন?

কোটা সংস্কারের আন্দোলন মোকাবেলায় সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ এবং পেটোয়া ছাত্রলীগ এর মধ্যে একধরণের অদ্ভূত সমন্বয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই সমন্বয় যে কাকতালীয় নয় সেই সন্দেহ আরও প্রকট হয় যখন আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতি অথবা নিপীড়ণ-নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাতেও নাগরিক সমাবেশে পুলিশ মারমুখী হয়ে ওঠে।

আন্দোলনে উসকানি এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আবিষ্কারের যে কৌশল সরকার গ্রহণ করেছেন সেটাও খুব পরিচিত কৌশল। যেকোনো সমালোচনা এবং ভিন্নমতকে জামাত-শিবিরের ষড়যন্ত্র অভিহিত করার বিষয়টি এখন ক্ষমতাসীনদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে বলে যাদেরকে অভিহিত করা হয় সেই জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে কিন্তু সরকার গত নয় বছরে কখনোই কান দেয়নি। যেসব দলকে নিষিদ্ধ করা হয় নি তারা সমর্থন করলেই কোনো আন্দোলন বা দাবি তার যৌক্তিকতা হারায় না।  সুতরাং, কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র অভিহিত করা বিশ্বাসযোগ্য হয় কিভাবে?

ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও মন্ত্রীরা এবং তাঁদের সমর্থকগোষ্ঠী এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগকেই বরং খাটো করছেন। আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রী ও তরুণ-তরুণীদের ওপর নিষ্ঠুর-নির্মম অত্যাচার-নির্যাতনের বিচার না করে তাদের দেশপ্রেমের প্রতি কটাক্ষ করার নীতি ক্ষোভ প্রশমনের বদলে তাকে আরও উসকে দেওয়ার নীতি নিতান্তই হতাশাজনক।
৩.
লাঞ্চিতা ছাত্রীটির কথায় ফিরে আসি। মেয়েটির ছবি , নাম এবং র্পূণ পরিচয় বাংলাদেশের অধিকাংশ সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেলে প্রকাশ করা হয়েছে। সংবাদমূল্যের বিচারে এধরণের হামলায় বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার মাত্রা তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু, মেয়েটির চেহারা ঢেকে দেওয়া বা আবছা করে দেওয়ার প্রযুক্তিগত সুবিধা সত্ত্বেও এসব গণমাধ্যম তা কেন করলো না সেই প্রশ্নও আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। যৌন নিগ্রহের শিকার কোনো নারী ও শিশুর ছবি ও পরিচয় গণমাধ্যমে প্রকাশ তাকে যে আরও নিগৃহীত করার শামিল এই বোধ  এখন আর অজানা কিছু নয়। দেশের আইনেও সেরকম বিধান আছে।

মেয়েটি যতটা নিগ্রহের শিকার হয়েছে তার মাত্রা বিচারে গণমাধ্যম ব্যর্থ হয়েছে বলেই মনে হয়। যাঁরা এবিষয়ে সচেতন, তাঁরা অবশ্য সতর্ক ছিলেন। কিন্তু, সংখ্যাগরিষ্ঠরা তা মানেন নি। হয়তো সে কারণেই মেয়েটি পরে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হতে বাধ্য হয়েছে।

প্রশ্ন উঠতে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তো যে কেউই এসব ছবি প্রকাশ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে মূলধারার গণমাধ্যম পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি কেন নেবে ? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমকেও এসব নীতিমালা মানতে হয়। কেউ এধরণের ছবি প্রকাশ করলে ফেসবুক/টুইটার/ইনস্টাগ্রামের ব্যবস্থাপকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার ব্যবস্থা আছে যার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তির সামাজিক অবস্থানের ক্ষতি কমানো সম্ভব। 


( ৮ জুলাই, ২০১৮ প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত নিবন্ধ।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

স্বৈরতন্ত্রের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার নিকৃষ্ট পরিণতি

ছাত্র–জনতার অভ্যূত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কথিত মন্তব্যে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। গত ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশ্য দেওয়া ভাষণ এবং সম্প্রতি মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপচারিতায় পরস্পরবিরোধী মন্তব্য – এই দুইয়ের একটি যে অসত্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিতর্ক শুরু হওয়ার পর তাঁর দপ্তর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা–ও অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ। তিনি সর্বশেষ বিবৃতিতেও মতিউর রহমান চৌধুরীকে অসত্য কথা বলার বিষয়টি স্বীকার যেমন করেন নি, তেমনি এমন দাবিও করেননি যে তাঁকে ভূলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।  ৫ আগস্ট যদি তিনি পদত্যাগপত্র গ্রহণের প্রশ্নে অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তা খুবই গুরুতর হিসাবে বিবেচিত হতে বাধ্য। কেননা তা ছিল জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের তথ্য। আবার যদি তিনি মানবজমিন সম্পাদকের কাছে আলাপচারিতায় অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তাঁর কাছে যে দেশবাসী প্রশ্নের জবাব চাইতে পারে, তা হলো অর্ন্তবর্তী সরকার যখন সবকিছু গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছে, দেশে স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টা চলছে, তখন তিনি কেন এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন? তাঁর উদ্দ...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...