সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ট্রাম্প না বাইডেন? আশা-নিরাশার দোলাচলে বিশ্ব

এই লেখা আপনার কাছে পৌঁছুনোর সময়ে হয়তো ফ্লোরিডার ফলাফল জানা হয়ে গেছে, অপেক্ষায় আছেন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের অন্য যেসব রাজ্য, সেগুলোতে কী হচ্ছে, তা জানার জন্য। তবে, অপেক্ষা যে শিগগিরই শেষ হবে তা নয়। এটা আজ দিনের মধ্যেও হতে পারে, আবার অপেক্ষা অনেক দীর্ঘও হতে পারে। মেয়াদ নবায়নের লড়াইয়ে নামা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজের সম্পর্কে বলতে গেলে প্রায়ই বলেন, এরকম আগে কখনো কেউ দেখেনি, কেউ করতে পারেনি। তাঁর কারণেই এই নির্বাচনটির মত নির্বাচন আগে কেউ দেখেনি। 

নির্বাচনের যে ফল জানার জন্য আমেরিকানদের মতো সারা বিশ্ব অপেক্ষায় আছে তা কেমন হতে পারে ? জনমত জরিপ ঠিক হলে ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দী জো বাইডেন জনপ্রিয় ভোট এবং ইলেক্টরাল কলেজ দুটোতেই জিতবেন। কিন্তু, কারচুপির অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক ও আইনী লড়াই শুরু হতে পারে। ব্যবধান যদি অল্প হয়, কিম্বা ট্রাম্প জনপ্রিয় ভোট বেশি পাওয়ার পরও ইলেক্টরাল কলেজে বাইডেন বিজয়ী হন, তাহলে আইনী লড়াই হবে আরও দীর্ঘায়িত হতে বাধ্য। আবার, ২০১৬র পুনরাবৃত্তি হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প রহস্যময় আত্মবিশ্বাস এবং নীরব ভোটারদের সমর্থনে আরও চারবছরের কর্তৃত্ব ফিরে পাবেন। তৃতীয় সম্ভাবনা হচ্ছে বাইডেন বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জিতবেন, যাকে ভূমিধস বিজয় বলা হয় এবং সেই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হবেন। চতূর্থ সম্ভাবনা, যা কখনো হয়নি, দুজনেই সমানসংখ্যায় ইলেক্টরাল কলেজের ভোট পেলেন। তার সমাধান একেবারেই অজানা। 

প্রশ্ন হচ্ছে, এসব ফলাফলের সম্ভাব্য বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে ? এখানে দুধরণের বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়ার কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। একটি নিকটভবিষ্যতের, অন্যটি দীর্ঘমেয়াদী। নির্বাচনের পর যেধরণের সহিংসতা ও অনিশ্চয়তার আশংকা তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর পড়তে বাধ্য। ফলে, ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও অনুভূত হতে পারে। কে জয়ী হলেন তার অর্থনৈতিক নীতির নিরিখে নয়, বরং রাজনৈতিক বিরোধের গতি-প্রকৃতি এবং স্থায়ীত্বই বিশ্ববাজারের অস্থিরতার কারণ হবে।

দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব অবশ্য কে বিজয়ী হবেন, তার ওপরই নির্ভর করবে। গত চারবছরে যুক্তরাষ্ট্র যতটা অর্ন্তমুখী ও স্বার্থপরতা দেখিয়েছে, তাতে পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দেশগুলোয় রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠেছে। তাঁরা কায়মনোবাক্যে পরিবর্তন চান। এসময়ে উত্তর-আটলান্টিক জোট বা নেটোর সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব এতোটাই বেড়েছে, যে অনেকেই মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। চলতি সংখ্যা ফরেন অ্যাফেয়ার্স সাময়িকী দশটি নিবন্ধে বাকি বিশ্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পুননির্মাণে করণীয়গুলো কী তা নিয়ে আলোচনা করেছে। আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনিস্টিটিউটের ফরেন এন্ড ডিফেন্স পলিসি স্টাডিজের পরিচালক কোরি শেক লিখেছেন, ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্ষ্ট নীতি আমেরিকাকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ আর্ন্তজাতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করবে। কীধরণের রুপান্তর ত্বরান্বিত করবে, তার একটা দৃষ্টান্ত হতে পারে ব্রিটেনের ব্রোক্সিট প্রক্রিয়া। ইউরোপের সঙ্গে বিচ্ছেদের পালা কী একটি সমঝোতার মাধ্যমে হবে, না-কি কোনো চুক্তি ছাড়াই? ট্রাম্পের মিত্রদের অন্যতম বরিস জনসন অপেক্ষায় আছেন যুক্তরাষ্ট্রে কে জেতেন, তা জানার জন্য। বাইডেন বলেছেন উত্তর আয়ারল্যান্ডের শান্তিচুক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এরকম কিছু ঘটলে তা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। কিন্তু, ট্রাম্প ইউরোপের সঙ্গে কোনো সমঝোতার প্রয়োজন দেখেন না, তিনি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির জন্য প্রস্তুত।   

বিপরীতে বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে গত চারবছরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে যেসব ক্ষেত্রে উল্টোযাত্রা শুরু হয়েছিল, সেগুলো থামানো এবং নতুন করে গড়ার চেষ্টা। ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় একটি পরিচিতি হচ্ছে তিনি বিশ্বের স্বৈরশাসকদের বন্ধু। যদিও আমেরিকা অতীতে, বিশেষত স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে তার কমিউনিজম বিরোধী নীতির আলোকে সামরিক শাসক ও কর্তৃত্ববাদী নেতাদের কাছে টেনে নিয়ে বিশ্বস্ত মিত্রের মর্যাদা দিয়েছে, কিন্তু গত কয়েক দশকে সেক্ষেত্রে পরিবর্তনের ধারা সূচিত হয়েছিল। উদার গণতন্ত্রের প্রসারে আইনের শাসন ও মানবাধিকারের মত বিষয়গুলোতে গত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্রকে যতটা গুরুত্ব দিতে দেখা গেয়েছিল, তা প্রায় পুরোটাই ট্রাম্প জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন। তাছাড়া, নিজের দেশে তিনি যেভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে উপেক্ষা করে নিজের এবং পরিবারের স্বার্থে কর্তৃত্ববাদি হয়ে উঠছিলেন, তাতে উদার গণতন্ত্রীরা রীতিমতো প্রমাদ গুণতে শুরু করেন। বাইডেন অবশ্য নির্বাচনী প্রচারে বলেই দিয়েছেন যে তাঁর লক্ষ্য হচ্ছে আমেরিকা আবারও বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে। 

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন এই নির্বাচনে ট্রাম্প বিজয়ী হলে মূলত সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে চীন, রাশিয়া, ইজরায়েল এবং ভারত। আমেরিকায় অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা এবং বিভিন্ন বৈশ্বিক ফোরাম থেকে নিজেদের প্রত্যাহারই চীন এবং রাশিয়ার জন্য নতুন নতুন সুযোগ। বস্তুত, চীনে মহামারির সূত্রপাত হলেও তা নিয়ন্ত্রণে তাদের সাফল্য দেশটিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে ফিরে যেতে সাহায্য করেছে এবং তারা আবারও বিশ্ব অর্থনীতির ইঞ্জিনের ভূমিকা ফিরে পাচ্ছে। 

ট্রাম্পের সময়ে সবচেয়ে বেশি এবং অনেকটা অপ্রত্যাশিত সুবিধা পেয়েছে ইজরায়েল। একাধিক আরব ও মুসলিম দেশের সঙ্গে ইজরায়েলর সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে ট্রাম্প যথেষ্ট সফল হয়েছেন। কিন্তু, ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে সমঝোতায় ন্যূনতম অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। ফলে, ইজরায়েলের ফিলিস্তিনী সমস্যার সমাধান সুদূরপরাহত এবং তাতে জটিলতা বহুগুণে বেড়েছে। বাইডেন বিজয়ী হলে তা হবে তাঁর প্রশাসনের জন্য এক জটিল ও নতুন সমস্যা।

দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য ট্রাম্প বা বাইডেন দুজনের মধ্যে যে খুব বড়ধরণের কোনো পরিবর্তন হবে, সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ। কর্তৃত্ববাদী শাসকপ্রীতির কারণে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যাক্তিগত বন্ধুত্বের কথা বাদ দিলে, এশিয়ায় চীনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের গুরুত্ব আলাদা। ভারতের সঙ্গে বিশেষ কৌশলগত সর্ম্পক ও সামরিক সহযোগিতার পালা ডেমোক্র্যাটরাই শুরু করেছিলো। সুতরাং, সেই ধারায় কোনো বদধরণের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে ভারতের এই অবস্থান অব্যাহত থাকার কারণে বাংলাদেশের প্রতিও মনোভঙ্গী তেমন একটা বদলানোর কারণ নেই। 

ট্রাম্প প্রশাসনের নবায়ন ঘটলে অবশ্য বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি দূর্ভাবনার কারণ হবে দুটি - জলবায়ু পরিবর্তন নীতি এবং বাণিজ্য। জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি বহাল থাকার মানে হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির গতিবৃদ্ধি, যা আমাদের ভবিষ্যতকে আরও ঝুঁকির্পূণ করে তুলবে। আর, বাণিজ্যক্ষেত্রে দুইধরণের বিপত্তি দেখা দিতে পারে। চীনের সঙ্গে বিরোধের জেরে চীনা প্রযুক্তি আমদানি বন্ধের জন্য চাপ বাড়বে। বিশেষ করে হুয়াওয়ের মত কোম্পানিগুলোকে ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে কালোতালিকাভুক্ত করেছে, তাতে তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সর্ম্পককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নতুন মহাপরিচালক নির্বাচনে বৈশ্বিক ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে নাকচ করে দিয়েছে, তাতে এই সংস্থার ভবিষ্যত ইতোমধ্যে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আর, যেকোনো বাণিজ্যবিরোধ নিরসনে এই সংস্থার ভূমিকা খর্ব হলে তা রপ্তানিনির্ভর দেশগুলোর জন্য মোটেও ভালো খবর নয়।

এছাড়াও ট্রাম্পের মেয়াদ নবায়ন অবশ্যম্ভবীভাবে ভাগ্যানুসন্ধানী অভিবাসনকামীদের স্বপ্নভঙ্গের কারণ হবে এবং বিশ্বজুড়ে ইসলামবিদ্বেষী রাজনীতিকে চাঙ্গা করবে।

(৪ নভেম্বর, ২০২০-র প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে স্বৈরশাসকের ফেরা সহজ

  গণতন্ত্রে উত্তরণে ব্যর্থতা ও স্বৈরতন্ত্রের নিকৃষ্টতম রুপ প্রত্যক্ষ করার পর অর্ন্তবর্তী সরকারের মেয়াদকালে যে সব বিষয়ে সংস্কারের আলোপ চলছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনকে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যম হিসাবে যেভাবে প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা থেকে প্রধান দুই দলই বিচ্যূত হয়েছিল। পরিণতিতে নির্বাচন শুধু ক্ষমতা দখলের হিংসাত্মক খেলায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নির্বাচনকে নানা রকম প্রহসনে পরিণত করে।  এই সমস্যার এক অতি সরলীকৃত সমাধান হিসাবে বলা হচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে একমাত্র বা চূড়ান্ত সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।  সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে অনুপাতে তারা সংসদের আসন পাবে। এ আনুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থীদের নাম দল আগাম ঘোষণা করতেও পারে, আবার না–ও পারে। নাম প্রকাশ করা হলে সেটা হব...

সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সমঝোতা কি অসম্ভব কিছু

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান নিয়ে যে জনমত সংগ্রহ ও জাতীয়ভিত্তিক সংলাপগুলো করছে, তাতে বেশ ভালোই সাড়া মিলছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বিদ্বজ্জনেরা কেমন সংবিধান দেখতে চান, তা নিয়ে বিতর্ক ও মতবিনিময় করছেন। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণের মৌলিক ভিত্তি তথা রাষ্ট্রকাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস সম্পর্কে নাগরিকদের এতটা উৎসাহ সম্ভবত: এর আগে আর দেখা যায়নি। সংস্কার কমিশনের সূত্র থেকে জেনেছি, অনলাইনে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন এবং মতামত দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকতেই ৩০ হাজারেরও বেশি পরামর্শ তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। নাগরিকদের এ আগ্রহ থেকে যে বার্তাটি স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে তাঁরা চান তাঁদের মতামত যেন গুরুত্ব পায়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে ক্ষমতাধরদের কিছু বলার বা তাঁদের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার সাধারণ মানুষের ছিল না। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে অধিকার, সেটুকুও তাঁরা হারিয়েছিলেন। এই পটভূমিতে নাগরিকদের প্রথম চাওয়া হচ্ছে, তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার, সংগঠন করার...

স্বৈরতন্ত্রের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার নিকৃষ্ট পরিণতি

ছাত্র–জনতার অভ্যূত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কথিত মন্তব্যে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। গত ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশ্য দেওয়া ভাষণ এবং সম্প্রতি মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপচারিতায় পরস্পরবিরোধী মন্তব্য – এই দুইয়ের একটি যে অসত্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিতর্ক শুরু হওয়ার পর তাঁর দপ্তর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা–ও অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ। তিনি সর্বশেষ বিবৃতিতেও মতিউর রহমান চৌধুরীকে অসত্য কথা বলার বিষয়টি স্বীকার যেমন করেন নি, তেমনি এমন দাবিও করেননি যে তাঁকে ভূলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।  ৫ আগস্ট যদি তিনি পদত্যাগপত্র গ্রহণের প্রশ্নে অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তা খুবই গুরুতর হিসাবে বিবেচিত হতে বাধ্য। কেননা তা ছিল জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের তথ্য। আবার যদি তিনি মানবজমিন সম্পাদকের কাছে আলাপচারিতায় অসত্য বলে থাকেন, তাহলে তাঁর কাছে যে দেশবাসী প্রশ্নের জবাব চাইতে পারে, তা হলো অর্ন্তবর্তী সরকার যখন সবকিছু গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছে, দেশে স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টা চলছে, তখন তিনি কেন এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন? তাঁর উদ্দ...